বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:৪১
Home / আমল / ঈদাইনের সালাতে মহিলাদের উপস্থিতি ও ইসলামের শিক্ষা

ঈদাইনের সালাতে মহিলাদের উপস্থিতি ও ইসলামের শিক্ষা

13607712_500730160137998_1170150458_nএম এস হিলালী সুহেল:
ঈদ মুসলমানদের একটি ধর্মীয় উৎসব। অন্য ধর্মের উৎসবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে, তাদের সম্মিলিত ধর্মীয় অনুষ্টানে নারী পুরুষ সবাই সমবেত হয়ে এমন উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি করে, এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়, ধর্মীয় জ্ঞানে অজ্ঞ বা ধর্মীয়বিধি পালনে উদাসীন অনেক মুসলিম গিয়েও তাদের অনুষ্টানে সমবেত হয়। উৎসব মুখর পরিবেশ দেখে যে এলাকায় এসব ধর্মীয় অনুষ্টান উদযাপিত হয় মনে হয় যেন, এই এলাকার সবাই এই ধর্মের লোক। মুসলমানদের দুই ঈদের অনুষ্টানও এর ব্যতিক্রম নয়। ঈদগাহ ময়দানে সবাই সমবেত হয়ে এমন উৎসব মুখর পরিবেশে তৈরি করবে যাতে বোঝা যায় এটি একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। মুসলামানদেরই এখানে জয় জয়কার। আর একারণেই হয়ত ফুক্বাহায়ে কেরাম ঈদকে মুসলামানদের ধর্মীয় শিআর বা প্রতিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। একারণেই নবী করীম (সা.) ঈদের জামাআতে মহিলাদের উপস্থিতির গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্যান্য সালাতের বেলায় আমরা দেখি যে, নবী করীম (সা.) মেয়েদেরকে মসজিদে এসে জামাআতে সালাত আদায় করার অনুমোদন দিলেও তাদেরকে ঘরেই সালাত আদায় করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু ঈদের সালাতে ঈদগাহ ময়দানে আসতে তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। বিভিন্ন হাদীসের দিকে তাকালে ঈদের সালাতে মেয়েদের উপস্থিতির গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়। ঈদের সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাতের আলোচনায় উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে আমরা দেখেছি যে, কীভাবে সব ধরণের মহিলাকে ঈদের সালাতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাদীসটি আমাদের এখানকার আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এখানেও আবার উল্লেখ করছি।
উম্মে আতিয়্যাহ রাদি আল্লাহ আনহা বলেন,
” أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِى الْفِطْرِ وَالأَضْحَى الْعَوَاتِقَ وَالْحُيَّضَ وَذَوَاتِ الْخُدُورِ فَأَمَّا الْحُيَّضُ فَيَعْتَزِلْنَ الصَّلاَةَ وَيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُسْلِمِينَ. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِحْدَانَا لاَ يَكُونُ لَهَا جِلْبَابٌ قَالَ لِتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا ( صحيح مسلم، صلاة العيدين، باب ذكر إباحة خروج النساء فى العيدين إلى المصلى وشهود الخطبة…، رقم: ২০৯৩)
“রাসূল (সা.) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন সাবালিকা, ঋতুমতী ও পর্দানশীল মেয়েদেরকে ঈদের সালাতের যাওয়ার জন্য বের করতে। তবে ঋতুমতী মহিলারা সালাতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। তারা কল্যাণ কর্ম ও মুসলামানদের দু‘আতে অংশগ্রহণ করবে। আমি আরয করলাম হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের কারো কারো ওড়না থাকে না (সে কী করবে?), তিনি বললেন, তাকে তাঁর বোন ওড়না পরিধান করতে দিয়ে সাহায্য করবে।”
ঈদের সালাতে মেয়েদের উপস্থিতির গুরুত্ব বোঝার জন্য এই একটি হাদীসই যথেষ্ট। এখানে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, হায়েযা ব ঋতুমতী মহীলার উপর সালাত নেই বরং তার জন্য সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। তবুও তাকে ঈদগাহ ময়দানে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখান থেকে আমরা সবাই উপস্থিতির যে কারণটি উপরে উল্লেখ করেছিলাম সেটিরও গ্রহণযোগ্যতা উপলদ্ধি করতে পারি। হায়েয বা ঋতুবতী সালাত না পড়ার একটি ওজর। তবে আমরা দেখছি যে, ঈদের মাঠে উপস্থিতির বেলায় এই ওজর রাসূল (সা.) এর কাছে গৃহীত হয়নি। হাদীসে আরেকটি ওজরের কথা আমারা দেখতে পাচ্ছি যে, কারো ওড়না না থাকা। কারণ মেয়েরা ঘরের বাহিরে বের হতে হলে তার পুরো শরীর আবৃত করে বের হতে হয়। ওড়না না থাকলে সে বাহিরে বের হতে পারবে না। রাসূল (সা.) মেয়েদের এই ওজরের কারণে তাদেরকে ঈদগাহে না গিয়ে বাড়িতে থাকার অনুমোদন দিলেন না। বরং এই ওজরের সমাধান করার পথ বাতলে দিয়ে তাদেরকে ঈদের সালাতে সব মুসলমানদের সম্মিলিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ দিলেন। ঈদের সালাতে মেয়েদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মধ্যে ওয়াজিব, মুস্তাহাব, জায়েযের ইখতিলাফ থাকলেও হাদীসের আলোকে মহিলাদের অংশগ্রণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা অবশ্যই বোঝতে পারছি।
কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় এই যে, রাসূল (সা.) যে বিষয়ে এত বেশি গুরুত্ব দিলেন সে বিষয়ে আমরা একেবারেই উদাসীন। মেয়েদের জন্য এ ধরণের দ্বীনী অনুষ্ঠানে উপস্থিতির ব্যাপারটিকে আমরা মোটেও গুরুত্ব দিই না। বরং উল্টো তাদের জন্য ঈদের সালাতে উপস্থিত হওয়াকে অবৈধ মনে করি। রাসূল (সা.) এর কথা ও নির্দেশের উপর নিজ থেকে তৈরী যুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়াই এর মূল কারণ। হানাফী মাযহাবে যুবতী মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে আদায়ের ব্যাপারে একটু কড়াকড়ি করে মাকরুহ বলা হলেও ঈদের সালাতের বেলায় এমনটি বলা হয়নি। যুবতী মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে আদায় মাকরুহ বলার পর ঈদের সালাতে মেয়েদের উপস্থিতি মাকরুহ না হওয়ার কারণ হিসেবে হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব হেদায়ায় বলা হয়েছে,
وَالْجَبَّانَةُ مُتَّسِعَةٌ فَيُمْكِنُهَا الِاعْتِزَالُ عَنْ الرِّجَالِ فَلَا يُكْرَهُ . (الهداية، كتاب الصلاة، باب الامامة)

“আর মাঠ (ঈদের) প্রশস্ত, ফলে মেয়েদের জন্য পুরুষ থেকে পৃথক থাকা সম্ভব, তাই (ঈদের সালাতে উপস্থিতি) মাকরুহ নয়”।
পুর্ববর্তী আলেমদের ফাতওয়া এমন হলেও পরবর্তিতে শুধুমাত্র যুক্তির ভিত্তিতে ফাতওয়ার পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। ধর্মীয় বিষয় থেকে আমরা অনেকটা নিজেরাই মেয়েদেরকে দুরে রাখছি। তাই ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের অজ্ঞতার জন্য আমরা আমাদের দায়কে এড়াতে পারি না। ঈদের মাঠে মেয়েদের উপস্থিতির কথা বললে আমরা অনেক অজুহাত দাড় করি। আমাদের উচিত বা কর্তব্য এই সব সমস্যা দুর করা। কিন্তু সমস্যা দুর করার কোন পথ তালাশ না করে রাসূল (সা.) থেকে মেয়েদের প্রাপ্ত অধিকারের উপর আমরা হস্তক্ষেপ করছি। ফিতনার আশংকার ফাতওয়া শুধু রাসূল (সা.) থেকে অনুমোদিত ও নির্দেশিত বিষয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ। আর যত সব কর্ম মেয়েদের রয়েছে সে সবের বেলায় ফিতনার কোন ফাতওয়া নেই। বিভিন্ন ওজুহাতে মহিলা মাদ্রাসার আবাসিক অনাবাসিক সবকিছুর অনুমোদন থাকলেও সমস্ত ফিতনা শুধু একদিন কিছু সময়ের জন্য ঈদের সালাতে উপস্থিতির বেলায়। এভাবে আমরা রাসূল (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত সমাজের যে রূপরেখা ছিল তা থেকে কতটুকু দূরে সরেছি একটু ভাবা দরকার। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে শরীয়তকে বোঝা এবং তার উপর আমল করার তওফিক দিন। আমাদের সমাজকে রাসূল (সা.) এর সমাজের নমূনায় নিয়ে যাওয়ার তওফিক, কমপক্ষে তার চেষ্টার তওফিক দান করুন। আমীন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...