মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:৩০
Home / কওমি অঙ্গন / কওমি মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার পথ ও পদ্ধতি (ত্রয়োদশ পর্ব)

কওমি মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার পথ ও পদ্ধতি (ত্রয়োদশ পর্ব)

13450258_491977211013293_2291914300146829271_n৬। আধুনিক বিভিন্ন বিষয়কে জীবিকা উপার্জনের জন্য সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার যে ধারণা, সে সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য পূর্বে বিশদভাবে পেশ করা হয়েছে। কিন্তু এমন কিছু আধুনিক জ্ঞান- বিজ্ঞান আছে বর্তমানের ইসলামের সুদূর প্রসারী প্রচার এবং তার যথাযথ সংরক্ষণ ও বিশুদ্ধ খেদমত আঞ্জাম দানকল্পে একজন আলেম হিসাবে সেসব আয়ত্ত করা বিশেষ প্রয়োজন এবং উপকারী হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। যেমনঃ- ইংরেজি ভাষা, পশ্চিমা দর্শন, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন প্রভৃতি এসবের প্রয়াজনীয়তা নিম্নরূপঃ

(ক) পশ্চিমা নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে বিশ্বব্যাপী যে ভ্রষ্টতা লাম্পট্য, চারিত্রিক অবক্ষয়, নৈতিক অধপতনের খরস্রোত বইতে শুরু করছে তার সবকিছুর উৎসই ইংরেজি ভাষায় রচিত। যদি সে সব ভ্রষ্টতার উৎসমূল সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞাত না হয়ে সেসব চিন্তাধারা বিরোধীতা ও সমালোচনা করা হয় তবে তা যারা সরাসরি পশ্চিমা দর্শন ও ফিলোসফি পড়ে প্রভাবিত ও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে সামান্য কোন প্রভাব ফেলবে না। বর্তমান অবস্থা অনেকটা আব্বাসী শাসনামলের প্রেক্ষাপটের মতই। তখন গ্রীক দর্শনের ব্যাপক প্রচলন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। সব বিভ্রান্তি ও ফেৎনার উৎস ছিল গ্রীক দর্শন ও ফিলোসফি। যারা এসব পড়ে বিভ্রান্ত ও পদঙ্খলিত হয়ে পড়েছিল, তাদের সব সন্দেহ ও সংশয় যথাযথ নিরসনের জন্য আলেম সমাজ গ্রীক যুক্তিবিদ্যা ও দর্শনকে মাদরাসার পাঠ্যসূচীভুক্ত করে তারা এ বিষয়ে তীক্ষ্ন বিচক্ষণতা ও সর্বোচ্চ পারদর্শিতা অর্জন করেছিল। পরে যুগের সব ফেতনা ও চ্যালেঞ্জকে তারা এভাবে প্রতিহত করেছিল যে, সব ফেতনা ধীরে ধীরে নিজেই নিজের কবর রচনা করতে বাধ্য হয়েছিল। সেসময়ে গ্রীক দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা পাঠ্য তালিকাভুক্ত এজন্য করা হয়নি যে, তা দ্বারা আলেম সম্প্রদায় জীবিকা অর্জন করবে বা এ বিষয়কে একমাত্র গবেষণা ও চর্চার বিষয় সাব্যস্থ করবে বরং সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবীকে পূর্ণ করার জন্যই তা সিলেবাসভুক্ত করা হয়েছিল। অনুরূপ পাশ্চাত্য  থেকে বিকশিত দর্শন ও মতবাদগুলো এবং সেসবের অশুভ প্রতিক্রিয়া সারা বিশ্বকে অক্টোপাশের মত করে ঘিরে আছে। মুসলিম বিশ্বের নব্য শিক্ষিত শ্রেণি যারা সমাজে বিশেষ প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে বিবেচিত, তারাও সেগুলো দ্বারা দারুন প্রভাবিত এবং অনেকটা তাদের রঙ্গে রঞ্জিত। এখন পর্যন্ত পাশ্চাত্য দর্শন ও মতবাদের প্রতিরোধে যে প্রচেষ্টা চলছে, তা ঐ সব গোষ্ঠির ঈমান আকীদা সংরক্ষণ করতে কিছুটা সক্ষম যাদের ধর্মের বন্ধন পূর্ব থেকেই সুদৃঢ়। কিন্তু যাদের ধর্মের বন্ধন শিথীল তাদেরকে নিজধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য সে তৎপরতা মোটেও যথেষ্ট নয়। এ শ্রেণির সংশোধনের জন্য গ্রীক মতবাদকে মানুষের মন মগজ থেকে সম্পূর্ণ উৎখাত করার জন্য মুসলিম দর্শনিকরা যে কর্মপন্থা গ্রহণ করেছিলেন বর্তমানেও আলেম সমাজকে অনুরূপ কর্মসূচী হাতে নেয়া উচিত। আর এটা আলেম সমাজের উপর একটি ফরজ দায়িত্বও। এ দায়িত্ব পালনে যতই কালক্ষেপণ হবে পাশ্চিমা ভ্রষ্টতার পরিধি ততো প্রবলবেগে বিস্তৃত হবে। সর্বত্র জেঁকে বসবে।

(খ) যেহেতু পশ্চিমা দর্শন ও সংস্কৃতির কঠোর প্রতিরোধের জন্য মূল উৎস সম্পর্কে অবহিত হওয়া আবশ্যক। এজন্য এতদিন যাবৎ এ কাজ ঐসব ব্যক্তিবর্গ সম্পাদনা করেছে। যারা পশ্চিমা সংস্কৃতির মূল উৎস সম্পর্কে তো অবগত কিন্তু তারা ধর্ম সম্পর্কে কোন শিক্ষকের কাছে নিয়মিত  জ্ঞান অর্জন করেনি। বিক্ষিপ্ত গবেষণা ও অধ্যয়নের দ্বারা ধর্ম সম্পর্কে কিঞ্চিত কিছু ধারণা লাভ করেছে মাত্র। সে ধারণাও অপূর্ণাঙ্গ। প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অল্প। ফলে তারা পাশ্চাত্য দর্শনের বিপরীতে ইসলামকে যে আকৃতি ও ব্যাখ্যায় উপস্থাপন করছে তা ভ্রান্তিময় ও ক্রুটিপূর্ণ। সেসব নতুন ভুল ব্যাখ্যা নিয়ে আবার মুসলমানদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব- সংঘাত,বিভেদ-বিচ্ছেদ সৃষ্টি হচ্ছে। এ নতুন ভুল বুঝাবুঝির মুলোৎপাটন শুধু নেতিবাচক পন্থায় হতে পারে না বরং এইজন্য প্রয়োজন এলেমের গভীরতা ও দৃঢ়তা সম্পন্ন আলেমগণ স্বয়ং ইতিবাচক পন্থায় ঐকাজ করবে যা ভুল পন্থায় সম্পাদনের ফলে নতুন নতুন ভ্রষ্টতা ও ভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।

(গ) পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদগণ আরবি ও ইসলামি জ্ঞানে গবেষণার নামে এমন বিষাক্ত গ্রন্থের স্তুপ নির্মাণ করেছে যার মূল লক্ষ্য হল ইসলামের অনবদ্য, অনস্বীকার্য বিষয়গুলোকে ক্রমশঃ সন্ধিগ্ধ করে তোলা। সেসব বিশাল বিশাল গ্রন্থগুলো আধুনিক ও চমৎকার এমন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানো যা মানুষের চেতনাকে প্রবলভাবে নাড়া দিতে পারে। মুসলিম বিশ্বের নিভৃত এমন কোন প্রান্তর নেই যেখানে এ বিষ ছড়িয়ে পড়েনি। এ বিষের ওষুধ সরবরাহ করা আলেম সমাজেরই দায়িত্ব। আর এ শুরু দায়িত্ব পালনের জন্য ইংরেজি ভাষা ও আধুনিক যুগসম্মত জ্ঞান অর্জন করা পরিহার্য। এর দ্বারা পশ্চিমা দর্শনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী তৎপরতা পরিচালনা করা সহজতর হবে।

(ঘ) মুসলমানদের বৃহৎ একটি অংশ ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া ও দূর প্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্রে বসবাস করছে। তাদেরকে বিশেষ করে তাদের নতুন প্রজন্মকে ইসলাম সম্পর্কে অবগত করানোর কোন মাধ্যম ইংরেজি ভাষা ছাড়া নেই। সেসব ভূখণ্ডের মুসলমানদের জন্য তাদের আগামী প্রজন্মকে ইসলামের সাথে পরিচিত করার বিষয়টি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এজন্য অনেক চেষ্টা সাধনা ও শ্রম ব্যয় করে প্রচুর মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। কিন্তু সেগুলো পরিচালনার জন্য এমন আলেম প্রয়োজন যারা ধর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও যথেষ্ট পণ্ডিত। কিন্তু এ ধরনের আলেমের প্রচণ্ড অভাব।

এখনো সম্ভবতঃ এমন কোন মাস ছিল না, যে মাসে সে সব রাষ্ট্র হতে এ ধরণের ইংরেজি ভাষাজানা আলেম প্রেরণের চাহিদা ও আবেদন পেশ করা হয়নি। কিন্তু এ শ্রেণীর আলেমতো আমাদের মধ্যে আটার ভেতর লবণের পরিমাণের মতও নেই। ফলে সেসব স্থানে এমন লোক পৌঁছছে, যারা ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী কিন্তু তাদের ধর্মীয় জ্ঞান স্থল, সীমিত বা তাদের ধারণা প্রচুর ভুল-ভ্রান্তিতে ঠাসা।

(ঙ) উল্লেখিত রাষ্ট্রগুলোর অধিবাসী মুসলমানদের দীন সংরক্ষণের জন্য ইংরেজি ভাষায় বিশাল বিশাল গবেষণা গ্রন্থের প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক অবস্থা হলো ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কোরআনের এমন কোন ব্যাখ্যা গ্রন্থ নেই যা সম্পর্কে চোখ বন্ধ করে মানুষকে অধ্যয়ন করার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া দৈনন্দিন জীবনের ধর্মীয় প্রয়োজন পূরণের জন্য ফেকাহ শাস্ত্রের এমন কোন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ইংরেজিতে আজ পর্যন্ত প্রণীত হয়নি যার সাহায্যে ইংরেজি ভাষাভাষি লোকজন ধর্মের শিক্ষা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বর্তমানে কিছু উর্দু কিতাবের ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে যার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আদৌ কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া অমুসলিমদের রচিত গ্রন্থাবলীর ব্যাপক ছড়াছড়ির ফলে মুসলমানরা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তা পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। এসব মুসলমান জনগোষ্ঠিকে ইসলামের সাথে সঠিকভাবে পরিচিত করা, তাদের দীন ঈমানকে হেফাজত করা কি আলেম সমাজের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত নয়? কিন্তু এ দায়িত্ব কি ইংরেজি ভাষার মাধ্যম ছাড়া পালন করা সম্ভব?

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে জরুরী কিছু কথা!

কমাশিসা ডেস্ক: শুক্রবার ২৫সেপ্টেম্বার ২০২০. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি যখন কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ...