শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৭:৪৫
Home / প্রতিদিন / মাদরাসা শিক্ষা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

মাদরাসা শিক্ষা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

madrasaআলী হাসান তৈয়ব : শিক্ষার গুরুত্ব :
যে বৈশিষ্ট্যটি মানুষকে অন্য সব প্রাণীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে তা মানুষের জ্ঞান বা বুদ্ধি। এই জ্ঞান বা বুদ্ধির বিকাশ ও সমৃদ্ধি ঘটে শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষাই মানুষকে মর্যাদার শিখরে পৌঁছে দেয়। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তাই বলা হয় ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। স্বভাবতই ইসলাম তাই এ গুরুত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে গোড়া থেকেই। শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রেরিত প্রথম ওহীই ছিল ‘আপনি পড়ুন’। আর ইসলামের নবী ইলম হাসিল ও জ্ঞানার্জনের প্রতি আরোপ করেছেন অশেষ গুরুত্ব।

জ্ঞান অর্জনের চিরন্তন দুই ধারা :

পৃথিবীর আদি মানব আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা ইহ ও পরজগতের প্রয়োজনীয় সব জ্ঞান শিক্ষা দেন। সে থেকেই মানুষের জ্ঞান উন্নয়নের পথ চলা শুরু। পরবর্তীতে মানুষ ওই আসমানী জ্ঞানের আলোকে নিজেদের প্রয়োজনে জাগতিক জ্ঞানের নানা দিগন্ত উন্মোচন করতে থাকে। আসমানী জ্ঞানের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব যত দীর্ঘ হয়েছে ততই তারা বস্তুর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। তাদের জ্ঞান হয়ে পড়েছে বস্তুনির্ভর। তাই বলা যায় পৃথিবীর প্রায় সূচনা লগ্ন থেকেই মানুষ দুইভাবে জ্ঞান আহরণ করে আসছে। এক. ইলমে ওহী বা সরাসরি জগৎস্রষ্টা আল্লাহর দূতের মাধ্যমে। দুই. মানব গোষ্ঠীর মধ্যে যারা জ্ঞানে অগ্রসর, যারা নিজেরাই অনেক নতুন জ্ঞানের দ্বার উম্মোচন করেন তাদের মাধ্যমে। মানুষ নিজের উদ্ভাবিত জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের জাগতিক অগ্রগতি ও জীবন মানের উন্নতি করতে পেরেছে। কিন্তু রবের প্রেরিত জ্ঞান ছাড়া প্রকৃত শান্তি ও সাফল্য লাভ করতে পারে নি। পরবর্তীতে আরও অনেক উন্নতি করতে পেরেছে। আকাশে উড়েছে, হিমালয়ে উঠেছে, সমুদ্রের বুকে ঢুকে অমূল্য বস্তু আহরণ করেছে, চাঁদে গমন করতে পেরেছে, এমনকি মঙ্গলগ্রহে পর্যটন করেছে। তথাপি একটি জিনিসই পারে নি। পারে নি আদর্শ মানুষ হতে। অকৃত্রিম অপার্থিব আদর্শের বিভায় ধূলির ধরাকে শান্তির নীড় জান্নাত বানাতে পারে নি। হ্যাঁ প্রকৃত শান্তি লাভ করতে হলে, মানুষকে মানুষ হতে হলে, মানবিক গুণ অর্জন এবং চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন করতে হলে অবশ্যই তাকে ইলমে ওহী বা আসমানী জ্ঞান অর্জন করতে হবে। মানুষের জ্ঞান সসীম তাই এর দ্বারা শুধু বাহ্যিক জ্ঞান ও জাগতিক বিদ্যাই অর্জন সম্ভব। এর সমৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন সম্ভব। কিন্তু এই দৃশ্য জগতের বাইরেও যে অনেক কিছু আছে। বর্তমান জীবনের পরেও যে আরেকটি জীবন আছে। অনন্ত এক জীবন। যার শুরু আছে; শেষ নেই। তার জ্ঞান ওহীর মাধ্যম ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়।

মানুষ নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে দেহের বহিরাংশের সব চাহিদা মেটাতে পারে। কিন্তু সব চাহিদা পূরণের পরও তার শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয় না যাবৎ সে দেহের ভেতরাংশ তথা অন্তরের খোরাকও যোগাতে সক্ষম হয়। বলাবাহুল্য, ওহীর বিদ্যা ছাড়া এই খোরাক যোগানো সম্ভব নয়। তাই যুগে যুগে মানুষের মাঝে এ বিদ্যার প্রচার ও বিস্তার ঘটিয়েছেন নবী-রাসূলগণ। আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত মহামানব দল। নবীর অনুপুস্থিতিকাল যখনই দীর্ঘ হয়েছে মানুষ ততই নিজের তৈরি অক্ষম জিনিসের দাসত্বে লিপ্ত হয়েছে। তাদের অর্জিত জ্ঞান এতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। ওহীর জ্ঞানের ধারকরাই যুগে যুগে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন ‘মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি’। তাই সে নিজের হাতে গড়া কোনো কিছুর অর্চনা বা দাসত্ব করতে পারে না। মানুষের স্বকল্পিত জ্ঞান তাকে এতোটা বিপথগামী ও অর্বাচিন বানিয়ে দেয় যে তারা বড় কিছু দেখলেই তাকে পূজা করতে শুরু করে। অহীর শিক্ষাই তাদেরকে এ গোলামী থেকে মুক্তি দিয়েছে।

সত্যি বলতে কি পৃথিবীতে যদি এক খোদার আসমানী বিদ্যা না আসত তাহলে মানুষ কখনো মহাকাশ গমন বা মঙ্গল জয়ের স্বপ্ন দেখতে পেত না। কারণ তারা তো এসব জিনিসকে এতোটা ভয় করত যে এসব জয়ের কল্পনা করার সাহসই তাদের ছিল না। যার দাসত্বের শৃঙ্খলে এরা বন্দি কীভাবে তারা তা জয়ের স্পর্ধা দেখাবে? (চলবে)

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...