বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এক বছরের ব্যবধানে দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ। সে হিসেবে এক বছরে হিন্দু জনগোষ্ঠি প্রায় ১৫ লাখের মতো বেড়েছে বলে ধারনা পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ের আদমশুমারিতে দেখা গেছে বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠির সংখ্যা কমেছে। উনিশ একান্ন সালে যে আদমশুমারি হয়েছিল তাতে বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠির ২২ শতাংশ ছিল হিন্দু। ১৯৭৪ সালের আদমশুমারিতে এটা নেমে আসে ১৪ শতাংশে। আর সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে এটা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশে।
বিভিন্ন আদমশুমারিতে যেখানে ক্রমাগতভাবে হিন্দু জনগোষ্ঠি কমার পরিসংখ্যান রয়েছে, সেখানে পাঁচ বছরে মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠি হয়ে ওঠার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই প্রতিবেদন অনেককেই অবাক করেছে। প্রতি দশ বছর পরপর আদমশুমারি করার কথা থাকলেও দুটি আদমশুমারির মধ্যবর্তী সময়ে প্রতিবছর আরো একটি জরিপ করা হয়। সেটি হচ্ছে ‘ স্যাম্পল ভাইট্যাল স্ট্যাটিসটিকস।’ এই প্রকল্পের প্রধান এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক উল্লেখ করেন ২০১৪ সালে ১৫০০টি জরিপ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে সেটি বাড়িয়ে ২০১২টি এলাকা করা হয়েছে।
তিনি বলেন নমুনা এলাকা বাড়ানোর কারণে হিন্দু জনগোষ্ঠির সংখ্যাও বেড়েছে। তিনি বলেন, “একেকটা নমুনা এলাকায় ১০০-১৫০টি পরিবার আছে। এই নতুন নমুনায় হয়ত বা হিন্দু কমিউনিটির লোকজন বেশি থাকতে পারে।” নমুনা এলাকা বাড়ানো হলেও হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি কতটা সঠিক সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ড: মো: মঈনুল ইসলাম বলেন জরিপের নমুনায়ন যথাযথ হয়েছে কিনা সেটি দেখতে হবে। সে কারণে জরিপের ফলাফল উঠা-নামা করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুদের ক্ষেত্রে জন্মহার কম। সেজন্য হঠাৎ করে যদি হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসে তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে বলে মন্তব্য করেন ড: ইসলাম।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর যুগ্ম পরিচালক আশরাফুল হক বলেন তারা সর্বশেষ যে ২০০০ জরিপ এলাকায় হিন্দু জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৯ হাজার। সেটিকে পুরো বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে গড় হিসেব দেখানো হচ্ছে যে হিন্দু জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৫ লাখ। মি: হক বলেন এটিকে পুরো বাংলাদেশের সঠিক চিত্র হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, “সারা বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা বেড়েছে এটা আমি বলতে পারিনা।” তিনি বলেন ২০১১ সালের আদমশুমারিতে যে তথ্য আছে সেটিকে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হিসেবে ধরতে হবে। আদমশুমারির মাধ্যমে পরিপূর্ণ গণনা উঠে আসে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু জনগোষ্ঠি ৮.৫ শতাংশ এবং মুসলমানদের অনুপাত ৯০.৪ শতাংশ। সে হিসেবে বাংলাদেশে মোট হিন্দু জনগোষ্ঠির সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৩ লক্ষ। অন্যদিকে মুসলমান জনগোষ্ঠির সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি।
সৌজন্যে : বিবিসি বাংলা