শাহজাদা মুস্তাফার জীবনী
শাহজাদা মুস্তাফা (১৫১৫ -১৫৫৩) সুলতান সুলেমান ও মাহিদেবরানের সন্তান। উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান প্রথম সুলাইমানের প্রথম সন্তান ছিলেন তিনি।
কর্মজীবন :
1/ তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের মানিসার গভর্নর (১৫৩৩-১৫৪১),
2/ আমাসিয়ার গভর্নর (১৫৪১-১৫৪৯) এবং
3/ উসমানীয় সাম্রাজ্যের কোনয়ার গভর্নর (১৫৪৯-১৫৫৩) ছিলেন।
সুলতান সুলাইমানের দুই পত্নী হুররেম এবং মাহিদেভরান মিলে সুলাইমানের ছয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন, যাদের মধ্যে ৪ জন ১৫৫০ সালের মধ্যে জীবিত ছিল: মুস্তফা, সেলিম, বায়েজিদ, ও জাহাঙ্গীর। এদের মাঝে, মুস্তাফা ছিল বয়োজ্যেষ্ঠ উত্তরাধিকারী হিসেবে হুররেমের সন্তানের অগ্রবর্তী ছিলেন। মুস্তফাও সকল ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ বলে অনেকেই তাকে প্রাধান্য দিত।
মৃত্যু :
প্রধান উজির রুস্তম পাশা ও প্রথম সুলাইমানের স্ত্রীর হুরুরেম সুলতান উভয়ই সুলায়মানকে মুস্তফার বিরুদ্ধে উসকিয়ে দেন এবং মুস্তফাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।
১৫৫৩ সালে সফভীয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানকালে রুস্তম পাশা সুলায়মানকে অবহিত করেন মুস্তাফা বিদ্রোহ করেছেন এবং সুলাইমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে সৈনাবাহিনীর একটি অংশ নিয়ে এগিয়ে আসছেন। এই পরিস্থিতিতে সুলতান সুলায়মান মুস্তাফার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। বিপরীতে মুস্তাফাকে বলা হয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য সুলতান সুলায়মান মুস্তাফার সহায়তা চেয়েছেন, যার পরিনতিতে মুস্তাফা সৈন্যবাহিনী নিয়ে সুলতান সুলায়মানকে সাহায্য করার জন্য রওনা দেন। এরপর মুস্তাফা সুলতান সুলায়মানের তাবুতে প্রবেশ করলে প্রথম সুলতান সুলায়মানের দেহরক্ষীরা তাকে আক্রমণ এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টারর পর হত্যা করেন।
মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা :
১৫৫৩ সালে সুলায়মান মুস্তাফাকে প্রাণদণ্ড দেয়ার পর সৈন্যদের মধ্যে একটি বড়মাপের অসন্তুষ্টি ও অস্থিরতার উত্থান হয় যারা রুস্তম পাশাকে মুস্তফার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। এ সময় চৌকশ জেনিসারি ও আনাটোলিয়ান সৈন্য বাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করে কারণ উসমানীয় সাম্রাজ্যের নিয়ম মোতাবেক ভবিষ্যৎ সুলতান হবেন শাহাজাদা মুস্তাফা যিনি ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয় এবং একজন বীর যোদ্ধা। সে সময় ইস্তাম্বুলের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছিল চাপা ক্ষোভ এবং এর ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার মানুষ উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রাসাদে আক্রমণ চালায় যারা এই অন্যায় মৃত্যুদণ্ড মেনে নিতে পারে নি।
মুস্তাফার মৃত্যুর পর উসমানীয় সাম্রাজ্যের অ্যানাটোলিয়া বিশেষ ভাবে আমাসিয়া, মানিসা এবং কোনয়া নামক স্থানে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয় কারণ সেসব স্থানের মানুষ মুস্তাফাকে হবু সুলতান হিসেবে মেনে নিয়েছিল।
অ্যানাটোলিয়ার অধিকাংশ মানুষ মুস্তাফাকে “সুলতান মুস্তাফা” হিসেবে মনে করত কারণ তিনি ছিলেন সিংহাসনের উত্তরসূরি। Taşlıcalı Yahya নামক একটি শোকগাথা শাহাজাদার মর্মান্তিক হত্যাকান্ডকে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়। শাহাজাদা মুস্তাফার জীবনী তুরষ্কের অ্যানাটোলিয়ানের সাহিত্যের অংশ হয়ে যায়।
শাহাজাদা মুস্তাফার মৃত্যুর ঘটনায় উসমানীয় সাম্রাজ্যের জনগণ প্রথম সুলতানের স্ত্রী হুরুরেম সুলতান, জামাতা রুস্তম পাশা এবং কন্যা মেহেরিমাকে দায়ী করে। যার ফলশ্রুতিতে প্রথম সুলায়মান রুস্তম পাশাকে বরখাস্ত করেন এবং ১৫৫৩ সালে কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ঘোষনা করেন শাহাজাদা মুস্তাফাকে ইস্তাম্বুলে রাজকীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হবে এবং পরবর্তীতে তাকে তুরষ্কের বুরসায় সমাধিস্থ করা হয়।
কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগের দুই বছর পর, কারা আহমেদ পাশাও হুররেম সুলতানের নোংরা চক্রান্তের স্বীকার হন, কারণ হুররেম তার জামাতা রুস্তম পাশাকেই আবারও প্রধান উজির হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ১৫৫৫ সালে কারা আহমেদ পাশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং রুস্তম পাশাকে আরও একবার প্রধান উজির (১৫৫৫-১৫৬১) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
১৫৬১ সালে, হুররেমের মৃত্যুর তিন বছর পর,ফরাসি লেখক গ্যাব্রিয়েল বোনিন মুস্তাফার মৃত্যুতে হুররেম সুলতানের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে “লা সুলতানেনামে” একটি ট্র্যাজেডি নাটিকা লেখেন। তুরস্কের বিভিন্ন লোক কাহিনীতে মুস্তাফাকে আজও সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়।
সুত্র: সা উ আ পেইজ