(নবম পর্ব) উপরোক্ত নিবেদনের মানে কখনো এই নয় যে, মাদরাসা শিক্ষার বর্তমান প্রচলিত পাঠ্য ও পদ্ধতিতে কোন ধরনের সংস্কার সাধনের প্রয়োজনীয়তা আমরা অনুভব করি না। বরং উদ্দেশ্য হল মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্য ও পদ্ধতিতে সংস্কার সংযোজনের পূর্বেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও ফর্মূলা তৈরী করে নিতে হবে। যার অধীনেই সংস্কার ও সংযোজন কাজ পরিচালিত হবে। যদি লক্ষ্য পূর্ব আলোচিত তিনটির কোন একটি হয়, তাহলে তার নিমিত্তে কোন সংস্কার সাধনের যে আমরা শুধু প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করি তা নয় বরং তার তীব্র প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করি। হ্যাঁ, যদি মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাস নিয়ে পূনর্বার বিবেচনা এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে করা হয় যে, এসব মাদরাসা থেকে শিক্ষা সমাপ্তকারী ব্যক্তিগণ একজন আলেম হিসাবে কিভাবে আরো অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ও সুপণ্ডিত হতে পারে এবং আরো ব্যাপক পরিসরে সূদুর প্রসারী দীনি খেদমত সম্পাদন করতে পারে তাহলে এটা যে শুধু সাধুবাদ পাবার যোগ্য তা নয় বরং তা সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় দাবি। এ জন্য চিন্তা থেকে উপরোক্ত তিনটি ধারণাকে সম্পূর্ণ বিতাড়িত করে শুধু এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে যে, একজন দীনি আলেমের প্রকৃত প্রয়োজন কি? এবং তা বর্তমান পাঠ্য ও পদ্ধতি দ্বারা পূর্ণ হচ্ছে কি- না? যদি পূর্ণ না হয় তবে তার নেপথ্য কারণ কি? এবং তা দূর করে কিভাবে কাঙ্খিত মান অর্জন করা সম্ভব হবে?
দীনি মাদরাসাগুলোর এলম ও আমলের মান অব্যাহত অবনতির শিকার এ অনস্বীকার্য সত্যটি প্রমাণের জন্য কোন দলিল- দস্তাবিজের প্রয়োজন নেই। মাদরাসা শিক্ষার সফল আলেমগণ নিজেদের যোগ্যতা ও গুণের দিক দিয়ে ক্রম-অধপতনের দিক দ্রুত ছুটেছেন। যার ফলে শিক্ষা সমাপ্তকারীদের বৃহত্তম অংশ আলেম হিসেবে তাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা প্রয়োজন ছিল তা পালনে দুঃখজনকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে সারা পৃথিবীতে উচ্চপর্যায়ের দক্ষতা ও কৃতিত্বসম্পন্ন আলেমের প্রয়োজনীয়তা যতো প্রকট হচ্ছে ততই আমাদের দীনি শিক্ষাকেন্দ্রের ডিগ্রী অর্জনকারীদের মান অব্যাহতভাবে কমে যাচ্ছে। আগে সমাজে একজন আলেমের যতটুকু প্রভাব প্রতিপত্তি ভাবমূর্তি, ব্যাপক গণসংযোগ গণপ্রীতি ও গ্রহনযোগ্যতা ছিলেএখন আর তা নেই। যদি এ কথাকে অস্বীকার করা হয় তাহলে এক মহা বাস্তবতাকেই অস্বীকার করা হবে। অবশ্য এর এটিও একটি কারণ যে, পূর্বের চেয়ে মানুষের মানসিকতায় বস্তুবাদের নোংরা চাপ সুদৃঢ় হয়েছে এবং সামগ্রিক বিবেচনায় মানুষের কর্মকাণ্ডে, চিন্তা চেতনায় ধর্মীয় বন্ধন দিন দিন শীথিল হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ত্রুটি বিচ্যুতিও বড় একটি কারণ। যতক্ষণ পর্যন্ত এসব ত্রুটি বিচ্যুতি প্রশস্ত মন ও উদার মানসিকতা নিয়ে পরযালোচনা করে বিমুক্ত না করা হবে ততদিন পর্যন্ত এ দুঃখজনক পরিস্থিতির মোকাবিলা করা আমাদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হবে না। এসব পর্যালোচনার বহু দিক আছে সেসব দিক নিয়ে যদি আলোচনা শুরু করা হয় তাহলে পদস্খলনের আশংকা আছে। এজন্যই আমরা আলোচনাকে শুধু মাদরাসা শিক্ষাপদ্ধতির সাথে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। এখানে সেসব দিক নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে যেসবের কারণে মাদরাসা শিক্ষা প্রত্যাশিত মানে উন্নীত হতে পারছে না এবং এর উপকারিতা দিন দিন সংকুচিত হতে চলেছে। মাদরাসা শিক্ষার দর্শন, সিলেবাস,পঠন ও পাঠদান পদ্ধতি ও এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাদের এ নিবন্ধটি চার অংশে বিভক্ত হবে। (আল্লাহ তাআলা আমাদের সহায় হোক।)
মূল : আল্লামা তকি উসমানি
ভাষান্তর : কাজী মোহাম্মদ হানিফ
শাইখুল হাদিস, জামিয়া আরাবিয়া মারকাজুল উলুম, কাঁচপুর, নারায়ণগঞ্জ