সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৪:৩৯
Home / আকাবির-আসলাফ / উমর ফারুক ও ইসলামী সমাজ

উমর ফারুক ও ইসলামী সমাজ

omarহে ফারুক! ফারুকে আজম

সাচ্চায়ীর সে খঞ্জর কোথায় তোমার

দেখি আজ চারিদিকে ঘোরিতেছে কু’কাফ-আঁধার

তোমার খঞ্জর-দীপ্তি এখানে কি জ্বালিবে চেরাগ

এখানে কি এনে দিবে আজিকার জীবনের আলোক-পরাগ

-মুফাখ্‌খারুল ইসলাম
হযরত উমর (রা.)-এর খিলাফত ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় অধ্যায়। এ সময়ে সভ্যতার অভিযান যে-ভাবে ও যে-গতিতে পুরাতন জরাজীর্ণ ঘুণেধরা পৃথিবীকে ওলটপালট করে দিয়েছিল তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। যে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছিল রসূলুল্লাহ (সা)-র আমল থেকে তা হযরত আবূ বকর (রা.)-এর খিলাফতের পর হযরত উমর (রা.)-এর স্কন্ধেই ন্যস্ত হয়। দেশ বিজয়ের সাথে সাথে যে সব নতুন নতুন সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল হযরত উমর (রা.)-কে সেই সব সমস্যার মুকাবিলা করতে হয়। তিনি ইসলামের মারফত এগুলোর সমাধান খুঁজেছিলেন; আর তার প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিলেন সমাজ কল্যাণে। সূক্ষ্মভাবে বিচার করলে ইসলামী সমাজ দর্শনের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা না হলেও সেই মধ্যযুগেও যে এক সুষ্ঠ নৈতিক ও সামাজিক বাস্তব সমাজ-ব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয়েছিল তা ইতিহাসের কোথাও খুঁজে পাওয়া কঠিন। খোলাফায়ে রাশেদা বা প্রথম চার খলীফার সম্বন্ধেও একথা বলা চলে তবে সংগঠনের দিক দিয়ে হযরত উমর (রা.)-এর খিলাফতের ভিতরে পাই এক চমকপ্রদ পৌর ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ইতিহাস। ঐতিহাসিক ওয়েল (Weil) হযরত উমর (রা.)-কে তাই ‘The Guiding Spirit of Islam’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

 

সাম্যের অনুপম বিকাশ

হযরত উমর (রা.)-এর শাসনকালে মানুষে সাম্যের অভূতপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়ে। সামাজিক জীবনে প্রতিটি মানুষ মানুষ হিসাবেই বিবেচিত হত সেই সমাজে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক- সব ব্যাপারেই মানসিক মূল্যবোধের অনুপম বিকাশ ঘটেছিল। স্বনামধন্য মুসলিম বীর সেনানায়ক খালিদকে পদচ্যুত করার সময়ে খালেদের পক্ষে জনৈক মুসলিম বিভিন্ন যুক্তি দ্বারা হযরত উমর (রা.)-এর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। হযরত উমর (রা.) সেজন্য তাঁকে তিরস্কার করেন নি। শুধু বলেছিলেন, ‘‘ভাই’ তুমি তোমার বন্ধুর পক্ষে বলতে গিয়ে আবেগের মোহে পড়েছ।’’ যখন এক মহিলা বলেছিলেন- ‘‘হে উমর আল্লাহকে ভয় কর।’’ উপস্থিত আর সবাই যখন তাকে বাধা দিতে গিয়েছিল, খলীফা বললেন, ‘‘ওকে বলতে দাও।’’ তায়েফের সময়ে জাবালার কাপড় মাড়িয়ে দেবার জন্য এক নিরীহ মানুষকে চড় মারবার পালটা শাস্তি হিসাবে খলীফার গালি শুনতে হয়েছিল জাবালাকে। মিসরের শাসনকর্তা আমর বিন আস মসজিদে উঁচু মিনার তৈরির অনুমতি পর্যন্ত পান নি। সামাজিক বিচারে আত্মীয়, অনাত্মীয় শাসক শাসিতকে একই পর্যায়ে ফেলা হত। ‘তোমাদের ভেতরে যে সব চাইতে বেশি কর্তব্যপরায়ণ সে-ই হবে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত। —কুরআনের এই বাস্তব প্রকাশ হয়েছিল তখনকার ইসলামী রাষ্ট্রে ও সামাজে। খলীফা শুধু সংগঠনের মারফতই নয়, নিজের হাতেও সমাজের সেবা করেছেন। আমওয়াছের প্লেগের (১৭১৮ হিজরী) সময় খলীফা নিজেই সাধারণ স্বেচ্ছাসেবকের মত সেবা শুশ্রূষায় রত ছিলেন।

 

খেলাফতী রাষ্ট্র সমাজ 

শাসন ব্যাপারে দুটি মন্ত্রণা সভা ছিল। সাধারণ সভায় সব সমস্যার সাধারণ আলোচনা করা হত। এখানে জনগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারত। প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ, কর্মচ্যুতি ও অন্যান্য বিশেষ সমস্যার ভার এক একটি কমিটির ওপর ছেড়ে দেয়া হত। মফস্বল থেকে মাঝে মাঝে প্রতিনিধিদল এসে দেশের অবস্থা সম্বন্ধে খলীফাকে খবর জানিয়ে যেতেন ও তাঁদের দাবি-দাওয়া পেশ করতেন। প্রাদেশিক শাসনকর্তার নিয়োগের সময় এদেশের অধিবাসীদের মতামত নেয়া হত। কুফা, বসরা ও সিরিয়ার অধিবাসীরা এই মতামত ব্যক্ত করে শাসনকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে শরীক হয়েছিলেন। মাঝে মাঝে শাসন বিষয়ে তদন্ত হত। এই ধরনের এক তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় কুফার শাসনকর্তা সাদকে পদচ্যুত করা হয়েছিল। ব্যবসায়ের নিয়ম না জানায় সেদিন ব্যবসা করা যেতো না। সাধারণ কর্মচারীর বেতন ও খলীফার বেতনে কোনও তারতম্য ছিল না। বিচারালয়ে ছিল শাসক-শাসিতের একই মর্যাদা। উবাই ইবনে কাবের সংগে মোকদ্দমায় খলীফা উমর (রা.) কাযী জায়েদ বিন ইবনে সাবিতের আদালতে হাজির হয়েছিলেন। কাযী যাতে অবিচার না করেন সে বিষয়ে কঠোর দৃষ্টি রাখা হতো। পরিষদের অনুমতি ব্যতীত এতটুকু জিনিসও খলীফা গ্রহণ করতেন না। নিজের শরীরের ক্ষতস্থানে মধু লাগাবার দরকার হলে পরিষদের অনুমতি নিয়ে তারপর অল্প একটুখানি মধু খলীফা গ্রহণ করেন। খলীফা হযরত (রা.) রাসূল (সা.)-এর সালমান নামে এক বিশিষ্ট সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করেন যে, তিনি খলীফা না বাদশা? সালমান বললেন- যদি জোর জুলুম করে জনসাধারণের কাছ থেকে আপনি টাকা-পয়সা আদায় করেন আর বায়তুল মালের টাকা আত্মসাৎ করেন তবে আপনি বাদশা, নতুবা আপনি খলীফা।

বিচার খুব সহজলভ্য ছিল। এ জন্য কোন ফি দিতে হত না। উকিল মোক্তার ছিল না। রাষ্ট্র নিযুক্ত মুফতীরা ‘একতা নামক বিভাগের সাহায্যে জনসাধারণকে আইনের খুঁটিনাটি বিষয় সম্বন্ধে অবহিত করতেন। অমুসলিমের ধর্মেও তমদ্দুনে হাত দেয়া ত দূরের কথা, তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখবার মত অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে তাদেরকে সরাসরি সাহায্য করা হত। জেরুজালেমের পতনের পর সেখানকার খৃষ্টান অধিবাসীদের কোনও জিনিসেই হাত দেওয়া হয়নি— তাদের বিবেক ও উপাসনার স্বাধীনতাও পুরোপুরিভাবে অটুট রাখা হয়েছিল। ইরাকে শাসনের ব্যাপারে পারসী দলপতিদের ও মিসরের মুকাউকিদের (অমুসলিম) কথা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হত। একজন মুসলিম যতি একজন অমুসলিমকে হত্যা করত তার জন্য এতটুকু ক্ষমা ছিল না। হত্যা করার শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডই ছিল তার জন্য বিধান।

 

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙে গেছে: সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী

নাজমুল মনযূর: আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙেছে ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা সেই মুসলমানদের। এমন কথাই ...