রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:৫৫
Home / কবিতা-গল্প / একটি চিরন্তন প্রেমের গল্প

একটি চিরন্তন প্রেমের গল্প

daggerরাসূল সা. মসজিদে নববিতে এসে বসলেন। জানতে পারলেন, কোনো এক ইহুদি রাসূলকে সা. অকথ্য গাল দিয়েছে। নবিজির সা. শানে চরম বেয়াদবি করেছে। এরশাদ করলেন– তোমাদের মধ্যে এমন কে আছো, যে ইহুদির মুণ্ডুপাত করবে ? ইহুদির ঘাড় থেকে ধর বিচ্ছিন্ন করে দেবে ? তাকে হত্যা করবে ?

মজলিসে একজন অন্ধ সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। মসজিদের একদম ওধারে, একেবারে কিনারে ছিলো তার বসার জায়গা। অন্ধ সাহাবি সেখানেই সেজদায় ঢলে পড়লেন। ফরিয়াদি স্বরে আকুতি জানালেন– হে আল্লাহ, আমি বদরের রণাঙ্গনে অংশ নিতে পারি নি। উহুদে খুন ঝরাতে পারি নি। খন্দকে শরিক থাকার শক্তি আমার ছিলো না। আল্লাহ ! এই একটা দায়িত্ব আমাকে পালন করতে দাও। এই একটা খেদমত আমায় দিয়ে করিয়ে নাও।সন্দেহ নেই আমি অন্ধই বটে। তবু নবীজির সা. দুশমনকে আমার হাতে শায়েস্তা করো। আমিই যেনো তাকে খতম করার সৌভাগ্য পাই।

আবেদন মঞ্জুর হলো বুঝি। কবুল হলো অন্ধের প্রার্থনা। সেজদা থেকে মাথা তুলে ঘরে চলে গেলেন তিনি। সঙ্গে নিলেন একটি ধারালো ছোরা। ছোরাটা জামার নিচে গুজে ইহুদি সর্দারের বাড়ি খুঁজতে বেরিয়ে পড়লেন। মদিনা থেকে একমাইল দূরে ইহুদির মহল। দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে সেঁধিয়ে গেলেন তিনি।

–কে তুমি। দারোয়ান হাঁক দিলো।

–আমি তোমার সর্দারের সাক্ষাতে এসেছি। সাহাবি বললেন।

ইহুদি সর্দারের নাম আবু রাফে। বেশ ডাকাবুকো অধিকর্তা। দারোয়ান শুধালো– সন্ধ্যায় নেতাজিকে পাবেন।

সাহাবি ওখানেই বসে রইলেন। দারোয়ান ভাবলো– অন্ধ মানুষ পয়সা-কড়ি মাঁগতে এসেছে হবে।

সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষায় রইলেন সাহাবি। রাত এলো। আঁধার এলো। এশার সময় আবার জিজ্ঞেস করলেন–তোমার নেতাজি কোথায় ?

মহলের উপর তলার এককক্ষে ইহুদি দাবা খেলছে। দারোয়ানের উত্তরে জানা গেলো।

সাহাবি দোতলার দরোজার আড়ালে ওঁত পেতে রইলেন। দুপুর রাত অবধি দাবায় মগ্ন রইলো ইহুদি। তরাপর ছক-গুটি গুটিয়ে শুয়ে পড়লো সে। যেই কক্ষে ঘুমে বিভোর সর্দার, এই নবীপ্রেমি সাহাবি চুপিসারে সেই কক্ষে ঢুকে পড়লেন। ছোরাটা হাতের মুঠিতে আটকানো ছিলো আগে থেকেই। যেইমাত্র ইহুদি নাকডাকা শুরু করেছে, ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ উচ্চকিত হচ্ছে তার নাসিকা ভেদ করে, তিনি হাতের ছোরাটা তীব্রবেগে ইহুদির মুখমণ্ডল বরাবর নামিয়ে আনলেন, ফলাটা মুখের মধ্যে আমূল গেঁথে দিলেন। ইহুদির আর্তনাদ বেরিয়ে এলো। আর্তশব্দটা লক্ষ্য করে কণ্ঠস্থলে বসিয়ে দিলেন খঞ্জরের আরেক ঘা। রক্তে ভেসে গেলো বিছানা। ক্ষণকাল অপেক্ষা করলেন তিনি।রক্তের একটা ধারা তার পা স্পর্শ করার পর আশ্বস্ত হলেন এখন ওর মরণকর্ম সাবাড় হয়েছে। ইহুদির কাতরানিও আর শোনা যাচ্ছে না। সাহাবি এবার ধীরস্থিরভাবে উপর তলার কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। নি:শব্দে দোতলার সিঁড়ি ভেঙ্গে মহলের পাচিলের উপর বসলেন। উঁচু দেয়ালটা একলাফে টপকে নেমে এলেন পৃথিবীর মাটিতে।

ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে এই ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা এসেছে যে, পাচিলের উপর থেকে লাফ দেয়ার ফলে নিচে বেকায়দায় পড়ে তার একটি পা ভেঙ্গে যায়। সেই ভাঙ্গা বহন করে হেঁচড়ে-পাঁচড়ে বহু কষ্টে তিনি ধীরে ধীরে মদিনার দিকে হাঁটছিলেন। ঐ পথ ধরেই তিনি চলছিলেন, যে পথে ইহুদির মহলে এসেছেন। এক সময় মদিনায় এসে পৌঁছলেন। ততক্ষণে মদিনার মিনারে ফজরের আজান বেজে শেষ হয়েছে। তিনি মসজিদের সেই কোণটিতে আপন স্থানে আসন নিলেন, গতকাল যাবার বেলায় যেখানটিতে বসে প্রিয় প্রতিপালকের সঙ্গে ‘সৌভাগ্য অর্জনের’ মামলা চুকিয়ে নিয়েছিলেন। প্রাণপ্রিয় নবীজির সা. জন্য ভালোবাসার নিবেদন পেশ করার বায়না করেছিলেন। হৃদয় উজার করে প্রার্থনা করেছিলেন আল্লাহর শাহি আদালতে।

ফজর নামাজ শেষ হলো। তিনি এবাদত থেকে নিরস্ত হয়ে সেই নিভৃত কোণে নীরবে বসে আছেন। আসমান থেকে নেমে এসেছেন জিব্রাঈল আমিন আ.। রাসূলকে সা. খোশখবরি শোনালেন। বললেন– হে নবি,মোবারকবাদ গ্রহণ করুন। গতরাতে আপনার ভীষণ শত্রুকে নরকের দুয়ারে নিক্ষেপ করেছে আপনারই এক অন্ধ প্রেমিক।

–আপনার আশেক সাহাবির সম্মানে আল্লাহ তায়ালা আরশে মুয়াল্লা থেকে বেহেশতের পয়গাম পাঠিয়েছেন। এই সুসংবাদটাও যোগ করলেন খোদায়ি দূত।

–কোন সাহাবি সে ? রাসূল সা. জানতে চাইলেন।

–তিনি আব্দুল্লাহ বিন আতিক। জিব্রাঈল আ. উত্তর করলেন।

রাসূল সা. চারপাশে নজর বুলিয়ে দেখলেন, আব্দুল্লাহ রা. মসজিদের কোণ ঘেঁষে বসে আছেন। প্রভুর কৃতজ্ঞতায় নূয়ে পড়েছে তার মহিমান্বিত শির।

নবীজি সা. তাকে কাছে ডাকলেন।

বন্ধু, বলো তো কেমন ছিলো তাদের জীবন দর্শন ? এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়েও তিনি কিন্তু আস্ফালন দেখাচ্ছেন না। আত্মম্ভরিতায় নাসিকা কুঞ্চিত করেন নি। নারায়ে তাকবির ধ্বনীর বাতাসে গর্বে বুক ফুলিয়ে বেড়ান নি। চেঁচামেচি আর উল্লাসে নৃত্যগীত জুড়ে দেন নি। বরং খুবই সাদাসিধা বরণে রাসূলের সা. সামনে এসে মাথাটা ঝুঁকিয়ে দিলেন।

–আব্দুল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা সপ্ত আকাশের উপর থেকে তোমাকে বেহেশতের খোশখবরি দিয়েছেন। রাসূল সা. বললেন।

হজরত আব্দুল্লাহর রা. চোখ ভিজে পানি গড়িয়ে পড়লো। বিস্মিত রাসূল সা.।

–কাঁদছো কেন ? জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

–আল্লাহর রাসূল, কবুলিয়াতের এমন সৌভাগ্যই আমার কান্না উথলে দিয়েছে। আমি নালায়েক বান্দা। এতখানি উপযুক্ত ছিলাম না। যা কিছু পাওয়া, সবই আপনার করুণার ভিক্ষা। আপনার দান দক্ষিণা। আপনার ঐকান্তিক ভালোবাসার নাজরানা। হজরত আব্দুল্লাহ রা. শুধালেন।

তারপর…

তারপর মহানুভব নবীর সা. খেদমতে সাহাবি আঁধার চোখে একটিমাত্র অনুযোগ করলেন– হুজুর, আমার পা-টা ভেঙ্গে গেছে।

নবীয়ে রহমত সা. তার ভাঙ্গা পা-টাকে স্বহস্তে ধরে আপনার সান্নিধ্যে টেনে নিলেন। নির্মল থুথু মেখে কোমল হাতে আব্দুল্লাহর ভাঙ্গা পায়ে মলে দিলেন।

তারপর..

যুগান্তর আর বিবর্তনের সব মরিচিকার যবনিকা ঘটিয়ে ইতিহাস সাক্ষ্য দিয়েছে, আব্দুল্লাহ রা. নিজেই বর্ণনা করেছেন– রাসূলের সা. পবিত্র মুখের লালার পরশ পেতেই আমার খোঁড়া পা-টা এমন নিরোগ পায়ে পরিণত হলো, যেনো কোনদিন সেটা ফোলেও নি। এমনকি যেনো সেখানে ফোসকাটুকুও পড়ে নি কোনকালে।

মূল : জিয়াউর রহমান ফারুকি রহ.

অনুবাদ : মনযূরুল হক

 

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

৪৩ টি পতিতালয়ের মালিকের লেখা কবিতা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত?

ফেসবুকীয় মতামত-:: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী রবী ঠাকুরের কবিতা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত? জাতি তা জানতে চায়…… ...