ইউরোপ-আমেরিকা তথা পাশ্চাত্যে ইসলামের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ক্রমেই বাড়ছে। চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করেই পশ্চিমারা ইসলাম গ্রহণ করছে। কিন্তু পশ্চিমা প্রচারযন্ত্রগুলো এটা প্রচারের চেষ্টা করছে যে, মুসলমান অভিবাসীদের অভিবাসন ও মুসলমানদের সঙ্গে পশ্চিমাদের বিয়ের কারণেই পাশ্চাত্যে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ এটা সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা মাত্র।
শ্যান ক্রিস্টোফার স্টোন পড়াশুনা করেছেন ইতিহাস বিষয়ে। তিনি এমন এক পরিবারের সদস্য যাদের কেউ কেউ খ্রিস্টান ও কেউ কেউ ইহুদি। শ্যানের বাবা অলিভার স্টোন একজন নামকরা মার্কিন চিত্র-পরিচালক। ইসলামের মধ্যে উন্নততর জীবন ও উচ্চতর লক্ষ্য দেখতে পেয়েছেন শ্যান। তাই চিত্র-নির্মাতা, পরিচালক ও অভিনেতা শ্যান স্টোন সম্প্রতি ইসলামকে বেছে নিয়েছেন নিজের ধর্ম হিসেবে।
শ্যান স্টোন ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের তেত্রিশতম বার্ষিকী উপলক্ষে (২০১২ সালে) আয়োজিত বিশেষ উৎসব উদযাপনের দিনগুলোতে ইরানে এসেছিলেন। ‘হলিউড ও চলচ্চিত্র’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্যই তিনি এই সফরে আসেন। ইরানে বিরাজিত আধ্যাত্মিক পরিবেশ ও দেশটির মুসলমানদের পারস্পরিক আন্তরিকতা তাকে মুগ্ধ করেছিল। আর এই সফরই তার জন্য বয়ে আনে জীবনকে লক্ষ্যপূর্ণ করার এক অপূর্ব সুযোগ। স্টোন ইস্ফাহানে আয়াতুল্লাহ নাসিরি’র দপ্তরে উপস্থিত হয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
নও-মুসলিম স্টোনের মতে, ইসলাম সর্বশেষ ঐশী ধর্ম এবং অন্যান্য ঐশী ধর্মগুলোর প্রক্রিয়াকে পূর্ণতা দানকারী। তিনি মনে করেন এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে অলৌকিক এক শক্তি যা মানুষকে দেয় এক ধরনের আধ্যাত্মিক শক্তি। আর এই শক্তি মানুষকে যোগায় ব্যক্তিত্ব ও পরিচিতি এবং দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার অপরিমেয় শক্তি। এভাবে ঈমান বা বিশ্বাস মানুষকে সহায়তা করে। স্টোন এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “যে মুহূর্তে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি সেই মুহূর্তটি ছিল একটি আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার ঘটনা এবং তা ছিল খুবই মধুর ও উল্লেখযোগ্য বিষয়। আসলে সেই মুহূর্তে আমি এক ধরনের ইতিবাচক ও পবিত্র শক্তি অনুভব করেছিলাম। একজন আলেমের উপস্থিতির কারণে সে সময় আল্লাহর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল বলে আমি অনুভব করেছিলাম।”
নও-মুসলিম শ্যান ক্রিস্টোফার আলী স্টোন আরো বলেছেন: “পবিত্র ইসলাম ধর্ম মানুষ ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ককে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে। এ ধর্মে মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, আর এটা খুবই সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি বিশ্বাস করি ইসলাম হযরত ইব্রাহিম (আ.) থেকে হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত চলে আসা সব নবী-রাসূলের প্রচারিত মিশনেরই ধারাবাহিকতা। হযরত মুসা (আ.) শরিয়ত বা ধর্মীয় বিধান এনেছিলেন, হযরত ঈসা (আ.) খোদাভীরুতার জন্য খ্যাত এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আদর্শ।”
নও-মুসলিম শ্যান ক্রিস্টোফার স্টোন আরো বলেছেন: “আমি সব সময়ই আল্লাহর ইবাদতে বিশ্বাসী ছিলাম। ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামের কোলে এসেছি। আমার দুই কলেমার সাক্ষ্য বা শাহাদাতাইন আমার ধর্মেরই বিস্তৃতি। এ দুটি বাক্য উচ্চারণ করে আমি বিশ্বনবী (সা.)-কে নবী ও আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ বলে ঘোষণা করছি। আসলে বিশ্বনবী (সা.) অন্য নবী-রাসূলদের মিশনকেই অব্যাহত রেখেছেন এবং সব নবী-রাসূলই একই পথে চলেছেন, তাঁরা একই মিশনের নবায়নকারী।”
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) ইতিহাসের এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব যার দ্বিতীয় কোনো নজির ইতিহাসে নেই। যারা তাঁর নেতৃত্ব বা ইমামতে বিশ্বাস করে না তারাও এই মহান ইমামের উচ্চতর মর্যাদা ও অনন্য গুণের কথা অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করেছেন। বিখ্যাত আরব খ্রিস্টান চিন্তাবিদ মিখাইল নাঈমা হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলেছেন: “কোনো লেখক বা ইতিহাসবিদ তা যতই প্রতিভাবান ও অসাধারণ জ্ঞানী হন না কেন হযরত আলী (আ.)-এর মত ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ দিক বা ছবি তুলে ধরার ক্ষমতা রাখেন না, এমনকি তাকে যদি এনিয়ে হাজার পৃষ্ঠার বইও লিখতে দেয়া হয় তবুও আলী (আ.)-এর ব্যক্তিত্বের সমস্ত দিকও তাঁর যুগে সংঘটিত বড় বড় ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারবেন না। এই মহান ইমামের যুগের পর বহু কাল গত হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা যখনই মহতী ও সৌভাগ্যময় জীবনের ভিত্তি তৈরি করতে চাইব তখনই এই মহান ইমামের জীবন-পদ্ধতির দিকে আমাদের তাকাতে হবে এবং জীবনের পরিকল্পনা ও বিধানগুলো জানতে হবে তাঁরই আদর্শের আলোকে।”
হলিউড-তারকা শ্যান স্টোনও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে হযরত আলী (আ.)-এর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। তিনি তাঁকে মানুষ ও একজন মুসলমানের জন্য পরিপূর্ণ আদর্শ নেতা বলে মনে করতেন। আর এ জন্যই স্টোন মুসলমান হওয়ার পর নিজের জন্য ‘আলী’ নামটি বেছে নিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “আমার শ্যান নামটি সাধারণ ও দুনিয়াবি নাম। ক্রিস্টোফার নামটি আমার খ্রিস্টান পরিচিতি বহন করে এবং স্টোন নামটি ইহুদি পরিচিতি বহন করে। আমার বাবার ওয়ারিশ হিসেবে এই নাম রাখা হয়েছিল আমার। আর আমার ইসলামী ও আধ্যাত্মিক নাম হল আলী যা ন্যায়কামীতার প্রতীক। হযরত আলী (আ.) থেকে আমি এটা শিখেছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে সিজদা বা মাথা নত করব না। এই মহাপুরুষের পবিত্র ব্যক্তিত্ব আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। তাই আমি সব সময় আমার গলায় হযরত আলী (আ.)এর তরবারির প্রতীক ঝুলিয়ে রাখি। কারণ, তার তরবারি ছিল ন্যায় বিচারের প্রতীক। আল্লাহর প্রতি তাঁর ঈমান, রাসূল (সা.)এর প্রতি তাঁর আনুগত্য, তাঁর ন্যায় বিচার, প্রজ্ঞা ও বীরত্ব বা সাহসিকতা-এসবই আমাকে মুসলমানদের মাওলার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। আমার মনে হয় এই নামটি যেন আগেই আমার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল এবং আমার ভাগ্যেই তা লেখা হয়েছিল।”
স্টোন কৈশোর থেকেই ইসলাম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন। এর কারণ, সম্ভবত তার বাবা ইহুদি ও মা খ্রিস্টান হওয়ায় এবং তিনি নিজে কোনো ধর্ম বেছে না নেয়ায় ইসলাম সম্পর্কে তার মধ্যে আগ্রহ জেগেছিল। স্টোন মনে করেন ইসলাম মানব প্রকৃতির ধর্ম, তাই ইরানে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগেই তিনি মনে মনে মুসলমান হয়েছিলেন। মার্কিন নও-মুসলিম আলী বা সাবেক স্টোন এ প্রসঙ্গে বলেছেন: আসলে ইসলাম এমন এক ধর্ম যার মাধ্যমে হৃদয়ে আল্লাহকে অনুভব করা যায়। আর এ জন্য কোনো পুরোহিত বা পাদ্রির মধ্যস্থতার দরকার হয় না। ইসলাম সবচেয়ে মুক্ত বা স্বাধীন ধর্ম। এ ধর্ম আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনের ধর্ম। খ্রিস্ট ধর্মে খ্রিস্টানরা প্রতি সপ্তাহয় একবার গির্জায় যায়। কিন্তু পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী মুসলমানরা দৈনিক কয়েকবার নামাজ ও দোয়া পড়েন। ইসলামী দেশগুলোর এই দৃশ্য খুবই সুন্দর।
ইসলাম গ্রহণের পর স্টোন অন্য অনেক নও-মুসলিমের মতই অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার মতনানা ধরণেরমারাত্মক সমস্যার শিকার হচ্ছেন। ইসলাম গ্রহণের কারণে তিনি একদল সহকর্মীসহ অনেকের কাছেই ‘মহাঅপরাধী’ ও ‘মহাসন্ত্রাসী’ কিংবা ‘পাগল’ বিবেচিত হচ্ছেন। হলিউডেরে অনেকেই তার সঙ্গে কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। স্টোনের মতে, এই শ্রেণীর মানুষের বোঝা উচিত ক্রেসিয়াস ক্লে মুসলমান বা মুহাম্মাদ আলী হওয়ার ফলে সন্ত্রাসী হয়ে যাননি। ফলে পাশ্চাত্যে ইসলাম-বিদ্বেষ যে কত গভীর এ ধরনের আচরণ থেকে তা স্টোনের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
কিন্তু বর্ণবৈষম্যের শিকার নও-মুসলিম স্টোন সমালোচনা ও নিন্দার প্রবল ঝড়কে তোয়াক্কা করছেন না, ভবিষ্যতেও করবেন না। তিনি সংলাপের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে নিন্দুকদের ও অসচেতন পশ্চিমাদের ভুল ধারণা দূর করতে আগ্রহী। স্টোন বলেছেন: আমি নিশ্চিত যে শক্তিমান ও প্রভাবশালী অনেকেই আমাকে ত্যাগ করবে। কিন্তু আমি ইবাদতের পরিভাষার মত ভাষায় তাদের বলতে চাই: এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর নবী ও রাসূল।
২.
ইব্রাহিমী ধর্মগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ ধর্ম ইসলাম গ্রহণের পর মার্কিন নও-মুসলিম ‘শ্যান স্টোন’ এখন একজন মুসলমানের সবচেয়ে ভালো চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেছেন: ইসলাম ইব্রাহিমী ধর্মগুলোর অব্যাহত যুক্তির অংশ, ঠিক যেমনটি বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, ইব্রাহিমী ধর্মগুলো আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। ইব্রাহিমী বা একত্ববাদী ধর্মগুলোর একজন ভালো প্রচারক হওয়ার আশা করছি আমি। হযরত ঈসা (আ.) বলেছেন, একজন ভালো মানুষের উচিত তার প্রতিবেশীর সেবা করা এবং তা করা উচিত সে কোন ধর্মের লোক তা না জেনেই। আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি এবং এটা মেনে নিয়েছি যে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হলেন ইসলামের নবী। আমি আশা করছি পাশ্চাত্যে মুসলমানের সঠিক ছবি তুলে ধরতে পারব।
‘শ্যান স্টোন’ ইসলাম ধর্মের সঙ্গে তার পরিচয় প্রসঙ্গে বলেছেন,স্কুলে যখন ইতিহাস পড়ছিলাম তখন ইসলামকে স্বৈরতান্ত্রিকরূপে তুলে ধরা হতো আমাদের কাছে। কিন্তু যখন মুসলমানদের সঙ্গে মিশলাম এবং কুরআন পড়লাম তখন ইসলামকে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হলাম। আমি এর মাধ্যমে ধর্মগুলোর মধ্যে সংলাপের পথ খুলে দেয়ার চেষ্টা করেছি। পাশ্চাত্যে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার ও ইসলামকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা রয়েছে। অবশ্য এটা বলতেই হবে যে, ইসলাম ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের মতই কোনো ক্রমেই সহিংসতার ধর্ম নয়।
হলিউডের চলচ্চিত্র মুসলিম বিশ্বে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও ইসলাম-বিদ্বেষী ভাবধারা প্রচারের কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শ্যান স্টোন তারা বাবা হলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতা অলিভার স্টোনের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি হলিউডের চিন্তাধারা এবং সমাজ ও পরিবারের ওপর হলিউডের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন। স্টোন এ প্রসঙ্গে বলেছেন: কার্টুন ও নানা ফিল্মে সব কিছুর প্রতীকিকরণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিশেষ কিছু লক্ষ্য হাসিলের জন্য অনেক গোপন বা পরোক্ষ বার্তা ব্যবহার করা হচ্ছে এসব মাধ্যমে। অনেকের জন্যই বিষয়টি বিস্ময়কর হতে পারে। কিন্তু যারা নিজেই এ গ্রুপে জড়িত তারা এইসব বার্তা ঠিকই বোঝেন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ এসব বিষয় লক্ষ্য করেন না বা বোঝেন না। ফলে এই প্রতীকগুলো মানুষের অবচেতন বা অচেতন মনে কাঙ্ক্ষিত বা প্রত্যাশিত প্রতীক হিসেবে রেকর্ড হয়ে থাকে। অ্যানিমেশন বা কার্টুন নির্মাতা খ্যাতনামা কোম্পানিগুলো বিশ্বকে জনগণের সামনে এমনভাবে তুলে ধরছে যে নারী-পুরুষরা নানা স্বপ্ন-সাধের রাজ্যে ডুবে আছেন। ভালো সব নারীরা রাজকন্যা আর ভালো পুরুষরা সবাই রাজা। আর এইসব কার্টুন বা অ্যানিমেশনের মাধ্যমে তারা শিশুদেরকে বাস্তব দুনিয়া থেকে দূরে রাখছে ও তাদের মগজ ধোলাই করছে। পুরো হলিউডের শিল্প মাধ্যমেরই রয়েছে গোপন বার্তা। কিন্তু মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রে এভাবে প্রতীকিকরণ কেন করছে মার্কিন সরকার? আমি বলব, দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া হচ্ছে এসবের মাধ্যমে যাতে পরে এইসব সংকেত বা প্রতীক ব্যবহার করে দর্শক-শ্রোতাদেরকে নিজের কাজে ব্যবহার করা যায়।
অন্য কথায় দর্শক-শ্রোতাদের চিন্তা-চেতনাকে পশ্চিমা নীতি-নির্ধারকদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষের দিকে পরিচালিত করাই এইসব প্রতীকিকরণ বা সুপ্ত বার্তা তুলে ধরার উদ্দেশ্য।
মার্কিন নও-মুসলিম শ্যান স্টোন পরিবারের ওপর চলচ্চিত্রের প্রভাবকে নেতিবাচক বলে মনে করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: পশ্চিমে অবস্থা এমন হয়েছে যে নারী ও পুরুষ কোনো বাস্তব কারণে পরস্পরকে ভালোবাসেন না। সেখানে নারী-পুরুষের পার্থক্য শেষ হয়ে গেছে। পুরুষরা বীরত্ব ও নারীরা ভালোবাসার শক্তি হারাচ্ছেন। আমেরিকার সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা এমন দিকে গেছে যে তাতে পুরুষের পৌরুষত্ব ও ব্যক্তিত্ব পদপিষ্ট হয়েছে। পাশ্চাত্যে নারী ও পুরুষ আলাদাভাবে কর্মক্ষেত্রে বা অফিসে যান। তারা বলছেন যে, আমাদের পরস্পরের কোনো প্রয়োজন নেই। নারী পুরুষকে বলছে যে, আমি নিজেই জীবনের দায়িত্ব পালনে সক্ষম, কোনো পুরুষের দরকার নেই। এসবই হচ্ছে হলিউড ও অনুরূপ সংস্থাগুলোর সৃষ্ট বিপর্যয় যা মার্কিনীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ অবস্থা চলতে থাকায় নারী ও পুরুষের মধ্যে নানা ধরনের মানসিক রোগ দেখা দিয়েছে।বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মানবীয় প্রকৃতির নানা বৈপরীত্যেরই ফলই হল এইসব রোগ।
মার্কিন নও-মুসলিম স্টোন আরো বলেছেন: পাশ্চাত্য মানুষের মগজ এমনভাবে ধোলাই করছে যে সবাইই ভোগ-বিলাসের পেছনে ছুটছে এবং অনাচারে বা নোংরামিতে জড়িত হওয়াকে একটি শিল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। নারী ও পুরুষ টাকার জন্য যে কোনো কাজ করতে দ্বিধান্বিত হচ্ছে না। পাশ্চাত্যে মানুষকে ছোটবেলা থেকেই এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যে তারা সব সময়ই টাকার পেছনে ছুটছে।
পাশ্চাত্যে তীব্র সহিংসতাও প্রচলিত রয়েছে। এমনকি সিনড্রেলা ও মৎস্য-কন্যার মত বিখ্যাত কার্টুনেও তীব্র সহিংসতা দেখা যায়। অথচ এসব কাল্পনিক কার্টুনআনন্দদায়ক ও চিত্ত-বিনোদনমূলক হওয়া উচিত। এসব ছবিকে খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখা উচিত। এমন মনে হয় যে এসব কাহিনীর শেষাংশ ভালো ও মিলনাত্মক, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আর এসব কার্টুন শিশুদের ব্যক্তিত্ব ও বিবেকের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে।
মার্কিন নও-মুসলিম স্টোন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সম্পর্কে বলেছেন: পাশ্চাত্যে তার বক্তব্য আমাদের কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তিনি কিছুকাল আগে যে বক্তব্য রেখেছেন তা ছিল খুবই সুন্দর। বিশ্বের অন্য কোনো নেতা এরকম কথা বলেন না। তিনি বলেছেন, মানুষ হচ্ছে পৃথিবীতে বা দুনিয়াতে আল্লাহর চেহারার প্রকাশ। এ বক্তব্যের জন্য আমি তার প্রশংসা করছি। আয়াতুল্লাহ খামনেয়ীই একমাত্র নেতা যিনি এ ধরনের কথা বলেছেন। পাশ্চাত্যের জনগণ এ ধরনের বক্তব্যকে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে। মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য কী? মানুষ যদি মূল্যবোধগুলোকে গুরুত্ব না দেয় তাহলে তারা কেবল একে-অপরকে হত্যা করে বাঁচতে চাইবে। ফ্যাসিবাদ ও পুঁজিবাদ সব সময়ই মানুষ হত্যা করছে। কারণ, এসব মতবাদ মানবতার একটি অংশকে বিলুপ্ত করেছে। আরেকটি বিষয় হল, পাশ্চাত্যে সব সময়ই আয়াতুল্লাহিল উজমা খোমেনি (র.) ও খামেনেয়ী (র.)-এর ক্রুদ্ধ চেহারা দেখানো হয়। কিন্তু আমি তেহরানে তাদের খুবই সুন্দর ও স্মিত হাসি যুক্ত ছবি দেখেছি।
ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়নি। বরং প্রথম থেকেই নিজের প্রকৃতিগত শক্তিকে তুলে ধরে মানুষের আত্মা ও চিন্তার ওপর জয়ী হয়েছে। আর এভাবেই ইসলাম পাশ্চাত্যের মুসলিম স্পেন তথা আন্দালুসিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
ইসলামের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি এত জোরালো যে, কেবল প্রচারণা বা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমেই এর মোকাবেলা সম্ভব বলে পশ্চিমা চিন্তাবিদরা মনে করেন। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সত্ত্বেও ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই এই খোদায়ী ধর্ম ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। পশ্চিমের শিক্ষিত যুব প্রজন্মও ইসলামের সৌন্দর্যে অভিভূত হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর আগে ইতালির ফিয়াট কোম্পানির মালিকের ছেলে নও-মুসলিম শহীদ এডওয়ার্ডো অনিল এবং সম্প্রতি বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেতা অলিভার স্টোনের ছেলে আলী স্টোনের মত যুবকরা পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন ওই সমাজের ভেতর থেকেই
সৌজন্যে : পার্সটুডে