শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:০৭
Home / আমল / (তারাবীহর রাকাত নিয়ে আহলে হাদেছ ও লালবানীর সৃষ্ট বিভ্রান্তির একাডেমিক জবাব- তৃতীয় পর্ব)

(তারাবীহর রাকাত নিয়ে আহলে হাদেছ ও লালবানীর সৃষ্ট বিভ্রান্তির একাডেমিক জবাব- তৃতীয় পর্ব)

bookবিশ রাকাত তারাবীহর অকাট্য দলীল সমূহ

০১. গত পর্বে আমরা ২০ রাকাত তারাবীহ সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে সরেজমিনের আমল/বাস্তবতা দেখিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে এ ব্যাপারে পৃথক ছাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনের ৯টি হাদীছ/আছার উল্লেখ করেছি (একইজনের একাধিক বর্ণনা উল্লেখ করে সেলফী নির্বোধদের মত দলীলরে ভূয়া সংখ্যা বৃদ্ধির প্রতারণা করা হয়নি)। তার আগের পর্বে নবীজির ছঃ এর ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া সংক্রান্ত চারটি মুসনদ হাদীছ গ্রন্থে স্থান পাওয়া ইবনে আব্বাস (রদিঃ) এর একটি হাদীছও উল্লেখ করেছি। তাতে আরো বলেছি, ইজমায়ে ছাহাবা (অনুরুপ ইজমায়ে ওলামাও) উম্মতের জন্য অনুসরণীয়। এর বাইরে যাওয়ার অর্থ হলো সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া। কারণ, নবীজি ছঃ তার উম্মতের বিরোধের সময় তাঁর সুন্নত/নিয়মের সাথে খোলাফায়ে রাশেদীনের (সঠিক পথপ্রাপ্ত উত্তরসূরী) সুন্নত/নিয়ম/পথকেও মাঢ়ীর দাঁত النواجذ দিয়ে শক্ত করে আকড়ে ধরতে বলেছেন।এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটির মূল টেক্সট হলো, سترون بعدى اختلاف شديدا، فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين، عُضُّوا عليها بالنواجذ দেখুন সুনানে আবু দাউদ (হাদীছ নম্বর ৪৬০৭), সুনানে তিরমিযী (হাদীছ নম্বর ২৬৭৬), সুনানে ইবনে মাজা (হাদীছ নম্বর ৪২), সুনানে বাইহাকী কোবরা (হাদীছ নম্বর ২০১২৫), ছহীহ ইবনে হিব্বান (হাদীছ নম্বর ৫), আল-হাকেম (হাদীছ নম্বর ৩২৯), দারেমী (হাদীছ নম্বর ৯৫)।

উল্লেখ্য, উপর্যুক্ত হাদীছ দ্বারা উম্মতের বিভেদ, বিরোধ, বিবাদ ও বিকৃতিসহ সকল ধরণের ফিতনার সময় খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত/নিয়ম/পথকেও আকড়ে ধরার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে খোলাফায়ে রাশেদীন থেকে উদ্দেশ্য শুধু চার খলীফা নয়; বরং সকল যুগের হক্কানী আলেম ও রব্বানী শাসকেরাও অন্তর্ভূক্ত। কারণ, সাধারণ মানুষের পক্ষে কোরআন, হাদীছ, কোরআনের তাফসীর, হাদীছের ব্যাখ্যা, ফিকাহ এবং ছাহাবা, তাবেয়ী, তাবেয়ীদের আছার/আকওয়াল ও ইসলামের বিশাল ইতিহাস ঘেঁটে কোনো বিরোধপূর্ণ বিষয়ে সঠিক/উত্তম সিদ্ধান্তে পৌঁছার সুযোগ হয় না। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে তাদের মাঝে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ঈমানী শক্তির কোনটাই থাকে না। তাই সাধারণ মানুষের কর্তব্য হলো, তাদের কাছে যে আলেমগণ সর্বাধিক বিশ্বস্ত, তাদেরই অনুসরণ করা। একই সাথে তাদের মনে রাখা উচিত, বোখারী ও মুসলিমে বর্ণিত বিভিন্ন হাদীছে নবীজি ছঃ আরব উপদ্বীপের ভূগর্ভস্ত সম্পদ ও সে সম্পদ নিয়ে উট-ছাগলের রাখালদের ভবন/বুরজ নিয়ে প্রতিযোগিতার কথা ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন এবং এটিকে তিনি চরম নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে এবং কেয়ামতের আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ নিয়ে আমি কয়েকদিনের মধ্যে পৃথক পোস্ট দেবো এবং আমি নিশ্চিত যে, এতে আমার জেনারেল শিক্ষিত দীনদার ভাইয়েরা অবাক হয়ে যাবেন। কারণ, কথিত সুন্নাহপ্রেমী (মূলত তারা অভিজাত শিন্নীপ্রেমী) জাহেল ও হীনমনা টিভি মোল্লা-শায়খেরা এসব হাদীছ নিয়ে ভুলেও কোনো আলোচনা করে না।

আমি আগেও বলেছি, ইসলাম যুক্তি-তর্ক, কূটচাল ও ভোগ-বিলাসধর্মী দীন নয়; এটি সহজতা, সরলতা, ভক্তি-শ্রদ্ধা, দুনিয়াবিমুখতা ও পরোপকারের দীন। যুক্তি-তর্কের পিছনে পড়েই আজাজীল বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়েছে। এ যুগের নাস্তিক ও কথিত মুক্তমনাদের সমস্যাও তাই। বেইসলেস যুক্তি-তর্ক দিয়ে শুধু মাযহাব বা তছউফকে নিয়ে ঠাট্রা করা যায় তা নয়; ইসলামকেও বাতিল প্রমাণ করা যায়। জনৈক খ্রিষ্টান ‘কোরআনের আলোকে জান্নাতে যাবার উপায়’ নামে একটি বই লিখেছে। সে এতে কোরআনের আয়াত দিয়ে প্রমাণ করেছে, জান্নাতে যেতে হলে মসীহ/যিশুর অনুসারী হতে হবে। এটি সে পেরেছে তার ওই দাবি বিরোধী কোরআনের অসংখ্য আয়াতকে পাশ কাটিয়ে তথা গোপন রেখে। সুতরাং জেনারেল শিক্ষিত ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা সেলফী ও আহলে হাদেছ সম্প্রদায়ের কোরআন বা হাদীছের উদ্ধৃতি দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। কারণ, তারা ওই খ্রিষ্টানের মত অসংখ্য আয়াত ও হাদীছ গোপনকারী শাহওয়াতপূজারী এবং অনেক ক্ষেত্রে জাহেলে মোরাক্কাব (নিজের অজ্ঞতার ব্যাপারে বেখবর)।

অন্যদিকে সারাবিশ্বে মুসলমানদের আজ যে দুর্দশা, তার প্রধান কারণ জুহদ زهد ও জিহাদ جهاد বিমুখতা (প্রচলিত জঙ্গিবাদ সঠিক জিহাদ নয়)। জিহাদ এবং এর বাস্তবতা ও অপরিহার্যতা নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে আগামীতে।

০২. যাই হোক, আগের দুই পোস্টে ২০ রাকাত তারাবীহের বাস্তবতার পক্ষে হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদের ছহীহ হাদীছসহ ১০টি পৃথক দলীল দিয়েছি। আজকে এ নিয়ে ইমাম বোখারীর একটি হাদীছসহ আরো ১৪টি সম্পূর্ণ পৃথক দলীল উল্লেখ করছি।

عن أبى الخصيب قال: كان سويد بن غفلۃ يؤمنا في رمضان عشرين ركعۃ. أخرجه البخاري في كتاب الكني (رقم ٢٣٤) من التاريخ الكبير والبيهقي في الكبرى (رقم ٤٢٩٠).
অর্থঃ তাবেয়ী আবুল খুছাইব বলেন, হযরত হযরত সুওয়াইদ বিন গাফলাহ (তিনি বয়সে নবীজির ছঃ দুই বছরের ছোট এবং নবীজির জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তবে তিনি নবীজিকে জীবিত দেখতে পাননি) রমজান মাসে আমাদেরকে নিয়ে ২০ রাকাত নামাজ পড়াতেন। [ইমাম বোখারীর আত-তারীখুল কবীরের কিতাবুল কোনা -উপনাম অধ্যায়-, হাদীছ নম্বরঃ ২৩৪ ও সুনানুল বাইহাকী কোবরা, হাদীছ নম্বরঃ ৪২৯০]
عنْ جابر بن عبد الله رضي الله عنه، قال: خرج النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فى رمضان فصلى بالناس اربعا وعشرين ركعة واوتر بثلاث. أخرجه حمزة السهمي (المتوفى عام ٤٢٨ الهجرى) فى كتابه الشهير ‘تاريخ جرجان’ (رقم ٤٣٦).
অর্থঃ হযরত জাবের (রদিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমজান মাসের এক রাতে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে মসজিদ তাশরীফ নিয়ে এলেন। অতঃপর ছাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে ২৪ রাকাত (সম্ভবত চার রাকাত এশাসহ- অনুবাদক) নামায পড়ালেন এবং তিন রাকাত বিতির পড়ালেন। [তারীখে জুরজান, হাদীছ নম্বরঃ ৪৩৬]
عن يونس بن عبيد عن الحسن أن عمر بن الخطاب جمع الناس على أبي كعب فى رمضان، فكان يصلي بهم عشرين ركعة. أخرجه أبو داود (رقم ١٤٢٩) وذكره الذهبي في سير أعلام النبلاء (١/٤٠٠) طبع مؤسسة الرسالة، وابن كثير في جامع المسانيد والسنن (١/٥٥) طبع دار الفكر.
অর্থঃ হযরত হাসান বসরী (তিনি হযরত আলীর শিষ্য ও শ্রেষ্ঠতম তাবেয়ীদের একজন) বলেন, খলীফা উমর ফারূক (রদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) রমজানের (তারাবীহ) নামাজে লোকজনক হযরত উবাই ইবনে কা’বের ইমামতিতে একতাবদ্ধ করেছেন। আর তিনি (ইবনে কা’ব) ২০ রাকআত নামাজ পড়াতেন। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নম্বরঃ ১৪২৯ এবং আরো দেখুন ইমাম জাহাবী সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ১ম খণ্ড, পৃষ্টা ৪০০-৪০০১ ও ইবনে কাসীরের জামেউল মাসানীদের প্রথম খন্ডের ৫৫ পৃষ্টা]
عن أبي بن كعب أن عمر بن الخطاب أمره أن يصلي بالليل في رمضان فقال: إن الناس يصومون النهار ولا يحسنون أن يقرأوا فلو قرأت عليهم بالليل، فقال: يا أمير المؤمنين هذا شيء لم يكن، فقال: قد علمت ولكنه حسن. فصلى بهم عشرين ركعة. (كنز العمال ٢/٢٨٤، ورقمه 23471 بمكتبة الشاملة الإلكترونية).
অর্থঃ হযরত উবাই বিন কা’ব (রদিঃ) বলেন যে, হযরত ওমর (রদিঃ) তাকে রমজানের রাতে নামাজ পড়ানো নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, লোকজন সবাই রোজা রাখে কিন্তু কোরআন ভালো করে মুখস্ত/পড়তে জানে না। তাই আপনি যদি তাদের নিয়ে নামাজ পড়াতেন, তাহলে ভালো হতো। উবাই বললেন, আমীরুল মুমিনীন, এরকমতো আগে পড়ানো হয়নি! হযরত ওমর বললেন, তা আমি জানি। তবে এটা (জামাআত) করলে ভালো হয়। তখন তিনি (উবাই বিন কা’ব) লোকজনকে নিয়ে ২০ রাকাত নামাজ পড়ালেন। [কানজুল উম্মাল, ২/২৬৪, ওয়েব সংস্করণে মাকতাবা শামেলার নম্বরঃ ২৩৪৭১]
عن عبد الرحمن السلمي عن على رضي الله عنه، قال: دعا القراء في رمضان، فأمر منهم رجلا يصلى بالناس عشرين ركعة. قال: وكان على يوتر بهم. أخرجه البيهقي الكبرى (٤٦٢٠).
অর্থঃ আবদুর রহমান সুলামী বর্ণনা করেন যে, হযরত আলী (রদিঃ) রমজানে কোরআনের হাফেজদেরকে ডাকলেন। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে একজনকে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাজ পড়াতে বললেন। আর বিতিরের নামাজে হযরত আলী নিজেই ইমামতি করতেন। [ইমাম বায়হাকী কৃত ’সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীছ নম্বর ৪৬২০]
ﻋَﻦْ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ، ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ، ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ، ” ﺃَﻧَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻡِ ﻓِﻲ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬِﻢْ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ، ﻳُﺴَﻠِّﻢُ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ، ﻭَﻳُﺮَﺍﻭِﺡُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻛُﻞِّ ﺃَﺭْﺑَﻊِ ﺭَﻛْﻌَﺎﺕٍ ” . أخرجه زيد بن علي في مسنده، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻓﻰ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ (رقم ١٥٥).
অর্থঃ হযরত জাইদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রমজানে রাতের নামাজ তথা তারাবীহতে যে লোক ইমামতি করতো, তাকে নির্দেশনা দিতে গিয়ে হযরত আলী বলেছেন, তা (তারাবীহ) যেন লোকজনকে নিয়ে ২০ রাকাত পড়ে ও প্রতি দুই রাকাত পরপর সালাম ফিরায় এবং প্রতি চার রাকাত শেষে নতুন চার রাকাত শুরু করার মাঝখানে যেন বিশ্রাম ترويحة করে। [মুসনদে জাইদ, হাদীছ নম্বরঃ ১৫৫ ]
عن أبى الحسناء أن على بن أبى طالب أمر رجلا أن يصلى بالناس خمس ترويحات عشرين ركعة. أخرجه البيهقي في السنن الكبرى ، (رقم ٤٦٢١)، وابن أبي شيبة (رقم ٧٧٦٣).
অর্থঃ হযরত আবুল হাসনা থেকে বর্ণি। তিনি বলেছেন, হযরত আলী (রদিঃ) এক ব্যক্তিকে লোকজনকে নিয়ে পাঁচ তারবীহা (তরবীহা থেকেই তরবীহাত ও তারাবীহ -বহুবচন- এবং এর অর্থ বিশ্রাম) সাথে ২০ রাকাত নামাজ পড়ানোর হুকুম দিয়েছেন। [সুনানুল কোবরা লিল-বায়হাকী, হাদীছ নম্বরঃ ৪৬২১, ৪৮০৫, ৪৩৯৭ ও মুছন্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীছ নম্বর ৭৭৬৩]
عن وكيع عن نافع ، قال: كان ابن أبى مليكة يصلى بنا فى رمضان عشرين ركعة. أخرجه ابن أبي شيبة (٥/٢٢٣، رقم ٧٧٦٥).
অর্থঃ হযরত নাফে (তিনি হযরত ইবনে ওমরের ছাত্র ও বিখ্যাত তাবেয়ী) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, হযরত ইবনে আবি মুলাইকা (তিন বিশিষ্ট তাবেয়ী এবং হযরত ইবনে আব্বাস ও আয়েশার ছাত্র। মূল নাম আবদুল্লাহ) রমজান মাসে আমাদের নিয়ে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। [মুছন্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীছ নম্বরঃ ৭৭৬৫]
عن عبد الله بن قيس عن شتير بن شكل-وكان من اصحاب على- انه كان يؤمهم فى رمضان بعشرين ركعة والوتر بثلاث. أخرجه البيهقي في السنن الكبرى (٢/٤٩٦) وابن أبي شيبة في المصنف والمروزي في قيام الليل.

অর্থঃ আবদুল্লাহ বিন কাইস বলেন, হযরত আলীর একজন সাথী হযরত শুতাইর ইব্নে শাকাল রমজানে লোকজনকে নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ্ ও তিন রাকাত বিতির নামাজের ইমামতি করতেন। [সুনানুল কোবরা লিল্ বায়হাক্বী ২/৪৯৬]
عن أبي إسحاق عن الحارث أنه كان يؤم الناس في رمضان بالليل بعشرين ركعة ويوتر بثلاث ويقنت قبل الركوع . أخرجه ابن أبي شيبة (رقم ٧٧٦٧).
অর্থঃ হযরত আবূ ইসহাক হযরত হারেছ থেকে বর্ণা করেন যে, তিনি রমজানে লোকদেরকে নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহর নামাজ ও তিন রাকাত বিতির আদায় করতেন এবং রুকূর পূর্বে দোয়া কুনূত পড়তেন। [মুছন্নাফে ইব্নে আবী শায়বা, হাদীছ নম্বরঃ ৭৭৬৭]
عن خلف عن ربيع وأثنى عليه خيرا عن أبي البختري أنه كان يصلي خمس ترويحات في رمضان ويوتر بثلاث . أخرجه ابن أبي شيبة (٢/٣٩٤).
অর্থঃ মুহাদ্দিছ রবী কর্তৃক হযরত আবুল বখতারী থেকে বর্ণিত। তিনি জানিয়েছেন যে, রমজান মাসে তিনি পাঁচ তারবীহা অর্থাৎ বিশ রাকাত তারাবীহ্ ও তিন রাকাত বিতিরের নামাজ পড়তেন। [মুছন্নাফে ইব্নে আবী শায়বা, ২/৩৯৪]
عن أبى حنيفة عن حماد عن إبراهيم النخعي أن الناس كانوا يصلون خمس ترويحات فى رمضان. أخرجه القاضي أبو يوسف فى كتاب الآثار.
অর্থঃ হযরত আবু হানীফা তার শায়খ হাম্মাদ এবং তিনি তার শায়খ ইব্রাহীম নখয়ী থেকে বর্ণনা করেন যে, লোকজন (অর্থাৎ, ছাহাবা কেরাম) রমজানে পাঁচ তরবীহা তথা ২০ রাকাত নামাজ পড়তেন। [সূত্রঃ ইমাম আবু ইউসুফ কর্তৃক রচিত কিতাবুল আ’ছার]
عن سعيد بن أبي عبيد أن علي بن ربيعة كان يصلي بهم رمضان خمس ترويحات ويوتر بثلاث. أخرجه ابن أبي شيبة (٢/٣٩٤).
অর্থঃ হযরত সাঈদ বিন আবু ওবাইদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, হযরত আলী বিন রবীআ রমজান মাসে লোকদের নিয়ে পাঁচ তরবীহা তথা ২০ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতির নামাজ পড়তেন। [মুছন্নাফে ইব্নে আবী শায়বা, ২/৩৯৪]
عن زيد بن وهب قال: “كان عمر بن الخطاب يروحنا في رمضان يعني بين الترويحتين قدر ما يذهب الرجل من المسجد إلى سلع”. قال: “ولعله أراد من يصلي بهم التراويح بأمر عمر” . أخرجه البيهقي في السنن الكبرى (٢/٧٠٠، رقم ٤٦٢٢). (كنز العمال ٤/٨٤ ورقمه 23472 بمكتبة الشاملة الإلكترونية).
তাবেয়ী জাইদ বিন ওয়াহাব বলেন, “হযরত ওমর আমাদেরকে রমজানের নামাজে আরাম/বিরতির সুযোগ দিতেন। অর্থাৎ, তিনি প্রতি দুই তরবীহার মাঝে কেউ মসজিদ থেকে বাইরে গিয়ে কোনো কিছু নিয়ে আসা পর্যন্ত সময় দিতেন।” ইমাম বাইহাকী বলেন, এ দ্বারা তিনি হয়তো হযরত ওমরের নির্দেশে চার রাকাত পরপর তরবীহা (আরাম/বিরতি) করার বিষয়টিই বুঝাতে চেয়েছেন। [সুনানুল বাইহাকী কোবরা, ২/৭০০, নম্বরঃ ৪৬২২]

এ পর্যন্ত আমরা ২০ রাকাত তারাবীহ সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে সরেজমিনের আমল/বাস্তবতা দেখিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে এ ব্যাপারে ছাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীন তথা সালাফে সালেহীন السلف الصالح থেকে বর্ণিত পৃথক ২৪টি দলীল উল্লেখ করেছি। আশা করি, যারা এ পর্যন্ত সালাফের নামধারী অনুসারী সেলফীদের ছড়ানো বিভ্রান্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, তাদের চোখ খুলে যাবে এবং ‘নফল তাহাজ্জুদ’ ও ‘সুন্নত তারাবীহ’কে একই বিষয় বলে ভাবা থেকে বিরত থাকবেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমাদেরকে সকল ধরণের ফিতনা-ফাসাদের মোকাবেলা করে দীনের উপর টিকে থাকার তৌফীক দান করুন।

(আগামী পোস্টে সলফীদের ছড়ানো আরো কিছু বিভ্রান্তি নিরসন এবং দুইভাবে বর্ণিত হযরত জাবের (রদিঃ) একটি হাদীছের ব্যাখ্যায় যাবো, যেটিকে কেন্দ্র করেও সেলফী ও আহলে হাদেছ সম্প্রদায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে)

আবুল হুসাইন আলেগাজী
১০. ০৬. ২০১৬, জুমাবার

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...