পরম শ্রদ্ধেয় সভাপতিমণ্ডলী, মাননীয় মহাসচিবগণ ও গুরুত্বপুর্ণ সকল কর্মকর্তাবৃন্দ ও কওমি উলামায়ে কেরাম-
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
আপনারা নিশ্চয় জানেন যে, আমরা বই প্রবন্ধ সহ বিভিন্ন ভাবে সংস্কারের বিষয়ে সকল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বিশেষ করে বেফাক ও অন্যান্য কওমি শিক্ষাবোর্ডগুলোর অফিসে কমাশিসার পক্ষথেকে সিরিজ আকারে প্রকাশিত বই গুলোও পৌছানো হয়েছে। কিন্তু বাহ্যত বেফাক ও অন্যান্য কওমি শিক্ষাবোর্ড অভ্যন্তরে কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছেনা। উপরন্তু যারা বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিতেছেন তাদের ভুল বুঝা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হচ্ছে কিছু কুচক্রীমহল বিভ্রান্তী ছড়াচ্ছে। আমরা গোপনে নয় প্রকাশ্যে যা বলার বলছি। আমাদের মিশন ও ভিশন পরিষ্কার। সংস্কার স্বীকৃতি ও স্বকীয়তার প্রশ্নে কোন আপস হবেনা। ২১দফার মাধ্যমে বিস্তারিত আগে লিখে জানানো হয়েছে। আবারও আমরা অতি সংক্ষেপে বিষয়টি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
বেফাক ও অন্যান্য কওমি শিক্ষাবোর্ড সমীপে আমাদের দাবী সমুহ:
১- যেহেতু বেফাক বৃহত্তর একটি কওমি বোর্ড। তাই সকল বোর্ডকে ডেকে এনে একত্রে বসে জাতীয় ভাবে একক বোর্ড গঠন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করুক।
২- স্বীকৃতির নামে কওমি শিক্ষাকে আলিয়ার পরিণতি হউক তা আমরা চাইনা। তাই বেফাক ও অন্যান্য বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিটি মক্তবে সরকারি সিলেবাস অনুসরণ অন্তর্ভুক্ত করণ বাধ্যতা মূলক করা হউক। কওমির সিলেবাস সাথে থাকবে। তবে মানানসই ও এডজাস্ট থাকতে হবে। আর এটাই হবে প্রথম ও মৌলিক কাজ।
৩- মক্তব বিভাগ তথা প্রাইমারী থেকে উর্দু ও ফার্সি ভাষা উঠিয়ে নিতে হবে। পরিমাণ মতো বাংলা আরবি ইংরেজি ভাষা সংযোজন করতে হবে। সাথে সাথে ইবতেদায়ী মারহালা থেকে পুর্ণাংগ বাংলা ও আরবি ভাষার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ৫ম ক্লাসে ছেলেদের জন্য উর্দু ও মেয়েদের জন্য এসো আরবি শিখি মূলক এমন হাস্যকর বৈষম্য দূর করতে হবে। প্রাইমারী ও মাধ্যমিকে বাংলা হবে পাঠ মাধ্যম।
৪- উচ্চমাধ্যমিক বা ছানুভিয়া বিভাগেও সরকারি সিলেবাসের অনুসরণ বাধ্যতামুলক। ছাত্র/ছাত্রীরা যাতে অনায়াসে ক্লাস এইট ও দশমে ভাল ভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারে তার আয়োজন করতে হবে।একটি প্রজন্মকে রাষ্ট্রের মূল কাঠামো থেকে দূরে রাখার অপরিণামদর্শি এই ধারাবাহিকতা আর চলতে দেয়া যায়না।
৫- মেট্টিকের পর কওমি মাদরাসায় কেবল নিজস্ব সিলেবাস অনুযায়ী আরবীতেই পড়ানো হবে কোরআন হাদীসের উচ্চতর কিতাবগুলো। এই স্তরকে ৪বছর ব্যাপী সাজানো উচিৎ। যাতে কোরআন হাদীস ফিকহ আকায়ীদ তাফসীর পড়ে একজন শিক্ষার্থী ভাল আলেম বা আলেমা হয়ে বের হয়। এই স্তরকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আমরা সরকারের কাছে জোরদাবী জানাবো। ইহা হবে ইসলামী স্টাডির উপর সর্বোচ্চ ডিগ্রি স্নাতক বা তার সমমান।
৬- গ্রামে গ্রামে ইসলামি কেজি প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেফাক ও কওমি সকল বোর্ড ও উলামার পক্ষথেকে বিশেষ কর্মসুচি হাতে নিতে হবে।
৭- বেফাক ও অন্যান্য বোর্ডের পক্ষথেকে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার একটা রূপরেখা প্রণয়ন করে প্রচার করতে হবে। যত্রতত্র ইচ্ছা মতো টাইটেল উচ্চমাধ্যমিক মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিতে হবে। যারা সে আইন মানবেনা তাদের বিরুদ্ধে বোর্ড কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিবে। বোর্ডের কাছ হতে অনুমোদন স্বাপেক্ষ কেউ তা প্রতিষ্ঠা করুক।
৮- শিক্ষার মান ও স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ প্রতিষ্ঠানে রক্ষা করা হচ্ছে কিনা তা বোর্ড নিয়মিত মনিটরিং করবে।
৯- টিসি ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। মেট্টিকের রিজাল্ট ভাল না হলে উপরে উঠার সুযোগ বন্ধ করে দিতে হবে।
১০- কলেজ ভার্সিটিতে যারা পড়ে তাদের জন্য সান্ধ্যকালীন মাদরাসা ক্লাস চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
১১- শিক্ষা ও সিলেবাস সংস্কারের জন্য প্রখর যোগ্য দ্বীনদার মেধাবীদের নিয়ে একটি গবেষণা পরিষদ গঠন করতে হবে।
১২- সবার সাথে আলোচনা করে এই আইন পাশ করতে হবে যে, যারা চলমান প্রচলিত রাজনীতিতে স্বক্রীয় থাকবেন তাদের কেউই বেফাক বা ক্ওমি মাদরাসা বোর্ডের পরিচালনা পরিষদে থাকতে পারবেন না। উপদেষ্টা হিসাবে ভুমিকা রাখতে কারো কোন আপত্তি নেই।
১৩- প্রতিটি মাদরাসার প্রিন্সিপাল বা মুহাতামিম মহুদয় এবং শাইখুল হাদিস ও নাজিমে তা’লিমাত বা শিক্ষাসচিবগণকে প্রচলিত রাজনীতিতে স্বক্রীয় ভুমিকা পালন করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহি হওয়া উচিৎ।
নোট: বাংলাদেশের জনগণের মধ্যথেকে মাদরাসায় আছে মাত্র ৫% শিক্ষার্থী। স্কুল কলেজে পড়ছে ৯৫%। এই সুযোগে পুরো জাতিকে ইসলাম ও মুসলমানিত্ব থেকে সরিয়ে ফেলার সকল আয়োজন এখন চুড়ান্ত। এই মহাবিপদ থেকে জাতিকে বাঁচাতে হলে উলামায়ে কেরাম দ্বীনদার মানুষের কলেজ ভার্সিটি ও অফিস আদালতে যোগদান করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। তাই জরুরী ভিত্তিতে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার জন্য আমরা আবেদন জানাচ্ছি। আপনারা উদ্যোগ গ্রহন করুন আমরা আপনাদের পাশে আছি। গোটা জাতি আপনাদের পাশে থাকবে। অন্যথায় সচেতন দেশবাসীকে নিয়ে আমরা অনলাইন অফলাইন আন্দোলন আরো জোরদার করবো। প্রয়োজনে আদালত পর্যন্ত যাওয়ার প্রস্তুতিও আমাদের আছে সে কথা আপনাদের জানিয়ে রাখলাম। আশাকরি উম্মাহর এই ক্রান্তিলগ্নে আপনারা সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহন করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
বিনীত কমাশিসা কর্তৃপক্ষ