“তোমরা আমাকে প্রেশার দিও না, দোয়া করো”
তিনি রোজা ভাঙ্গবেন না, নামাজ দাড়িয়েই পড়বেন৷
বয়স আশি ছুঁয়েছে৷ বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ মেলেনি জীবনে খুব একটা৷ মাদরাসা, মসজিদ, বড়দের সাহচর্য, জমিয়ত, খতমে নবুওয়ত নিয়েই বিরামহীন দৌড়েছেন সাড়ে পাঁচদশক৷ নিজের মুরব্বী মুজাহিদে মিল্লাত হজরত মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী রহঃ এর হাত ধরে সত্তরের দশক থেকে জমিয়তের সাথে সংশ্লিষ্টতা৷ এইসময়ে ঢাকায় সম্ভবত সবচেয়ে প্রবীণ জমিয়ত কর্মী তিনিই৷ বর্তমানে তাকে কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহসভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে৷ যদিও গত তিন/চার বছর যাবত সাংগঠনিক কাজে সময় দিতে পারেন না৷
শায়খুল ইসলাম সায়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহঃ এর খান্দান তথা হজরত ফিদায়ে মিল্লাত সায়্যেদ আসআদ মাদানী রহঃ, অতঃপর সায়্যেদ আরশাদ মাদানী দাঃবাঃ এবং সায়্যেদ আসজাদ মাদানী দাঃবাঃ এর খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন চার দশক যাবত৷
গুলিস্তান গোলাপ শাহ মসজিদ রক্ষায় তার গুরু মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী রহঃ জেল খেটেছেন৷ আর তিনি স্বৈরাচারী এরশাদের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর বেয়নেট চার্জে রক্ত ঝরিয়েছেন মসজিদের সামনের রাস্তায়৷ মাসের পর মাস তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে৷
তিনি ঢাকা সহ দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের সাথে সূচনালগ্ন থেকে জড়িত ছিলেন৷ ১৯৭০ এ ছোট্ট পরিসরে রাজধানীর মিরপুরে আরজাবাদ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন৷ যা মুহতারাম হজরত শামছুদ্দীন কাসেমী রহঃ এর হাত ধরে আজ ‘জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ’ নামে দেশবিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে৷
তিনি এখনো আরজাবাদের শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন৷ আমরা তাকে বিশ্রামের জন্য বললেও তার ইচ্ছা তিনি জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটুকু অস্তিত্বের সাথে মিশে যাওয়া প্রিয় আরজাবাদেই নিবেন৷ আরজাবাদ কর্তৃপক্ষও তাকে এখনো যথাযথ সম্মান এবং কদরের সাথে মূল্যায়ন করছে৷ আমরা সেজন্যে আরজাবাদের সুযোগ্য মুহতামিম, উস্তাযে মুহতারাম হজরত মাওলানা মোস্তফা আজাদ সাহেব এবং নায়েবে মুহতামিম, উস্তাযে মুহতারাম মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া সাহেবের নিকট কৃতজ্ঞ৷
বার্ধক্যজনিত কারণে তার শরীরে অসুস্থতা বাসা বেঁধেছে৷ মাঝেমাঝে দুর্বলতায় শরীর কাঁপে৷ নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে অষুধ খেতে হয়৷ গত শবেবরাতে রোজা রেখে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে ঐ সময় বাংলাদেশে সফররত আওলাদে রাসূল হজরত মাওলানা সায়্যেদ আসজাদ মাদানী দাঃবাঃ তাকে কঠোরভাষায় শরীরের অসুস্থতার প্রতি লক্ষ রেখে রোজা না রাখার পরামর্শ দেন৷
বাসা ছয়তলার উপরে৷ কিন্তু বাসা থেকে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়তে মসজিদে তাকে যেতেই হবে৷ গতকাল জুমার জন্য অতিকষ্টে মসজিদে যান৷ দাড়ানোর মতো শক্তি কিংবা সুস্থতা কোনোটাই শরীরে ছিলো না৷ দুবার দাড়াতে চেয়ে পড়ে যাবার উপক্রম হলে অন্যদের পীড়াপীড়িতে অনিচ্ছা সহ বসেই নামাজ পড়েন৷
ডাক্তার তাকে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন৷ তবু তিনি আজকেরটা সহ সবগুলো রোজাই রেখেছেন৷
আরজাবাদ মাদরাসার শায়খুল হাদীস এবং প্রধান মুফতী, উস্তাযে মুহতারাম হজরত মুফতী তাজুল ইসলাম সাহেবও গতকাল তাকে বলেছেন, “আপনি এখন বসে বসেই নামাজ পড়তে পারেন৷ অসুস্থতা অনুভব করলে রোজা না রেখে ফিদয়া আদায় করে দিবেন৷” তিনি জবাবে বলেছেন, “হুজুর আমার জন্য দোয়া করেন৷”
“আব্বার শরীর ভালো না” শুনে গতকাল জুমার পর হন্তদন্ত মিরপুরের বাসায় গিয়ে তাকে বয়োবৃদ্ধ এবং অসুস্থদের জন্য শরীয়তের মাসআলায় শিথিলতার কথা বললে তিনি বললেন, “আমাকে তোমরা প্রশার দিও না, আল্লাহর কাছে দোয়া করো৷” এরপর আর কি বলবো তাকে?
তিনি আমার আব্বা, আজন্ম পরিশ্রমী কারী আব্দুল খালিক আসআদী দাঃবাঃ৷ অনেক বেশী অসুস্থ৷ কিন্তু তার জন্য দোয়া চেয়ে পোস্ট দিতে কেমন যেনো বিব্রতই লাগে আমার কাছে যে, ‘নিজের বাবার প্রচার করে বেড়াচ্ছি৷’ কিন্তু এবার উপলব্ধি হচ্ছে যে, দোয়া চাইতে বিব্রত বোধের কিছুই নেই৷ দ্বীনের এই নিঃস্বার্থ খাদেমের সুস্থতায় মহান আল্লাহর নিকট দোয়ার জন্য আপনাদের কাছে মিনতি রাখছি৷