বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:৫২
Home / শিক্ষাঙ্গন / কওমি মাদরাসা সংস্কার: ‎মৌলিক না আংশিক?‎ (৪)

কওমি মাদরাসা সংস্কার: ‎মৌলিক না আংশিক?‎ (৪)

BadshahiMহাফিয মাওলানা ফখরুযযামান : চিন্তার বিষয়

এই প্রাথমিক বিষয়াবলি কি এতই মনোযোগের হকদার ছিল? অবশ্য যা কিছু হয়েছে, তা এক বিশেষ যুগের চাহিদা ছিল। ‎মানুষের আগ্রহের বিষয়ও ছিল। তা পূরণও হয়েছে। এভাবে অন্যান্য শাস্ত্র ও গ্রন্থের কথা অনুমান করুন। এখন সেই উদ্যম ‎‎নেই, নেই পরিশ্রম ও সাধনার মতো মস্তিস্কের যোগ্যতা। সেই সময় সুযোগ স্বস্তি নেই। সবচেয়ে বড় কথা প্রয়োজন নেই। ‎জটিলপ্রিয়তার প্রতি মনের অনীহা এসেছে,নতুন নতুন গ্রন্থ রচিত হয়েছে। রচনা ও সাহিত্যের পদ্ধতি ও ধারা বদলে ‎‎গেছে। পূর্ববর্তী মনীষীদের কিতাবসমূহ প্রেসে আসতে শুরু হয়েছে। সমকালীন লেখকরা সাহস করে যুগের তৃষ্ণা নিবারণের ‎জন্যে নতুন ধাচে মনোরঞ্জনের জন্যে সুন্দর সুন্দর রচনা পেশ করছেন। ‎

এমতাবস্থায় যদি আমরা এখনো এসব অগুরুত্বপূর্ণ উপকরণসমূহ আঁকড়ে ধরে থাকি, তাহলে ইসলামি বিষয়সমূহ থেকে ‎মনোযোগ সরে যাবে এবং আমাদের এ কর্মপদ্ধতি আমাদের পূর্বসূরী ও মুরব্বীদের সেই গর্বীয় উত্তরাধিকার ও সেই ইলমি ‎সম্পদ ও পূঁজি নিঃশেষ করে ফেলবে। এটি প্রকৃতপক্ষে ইলমের কল্যাণকামিতা নয়; বরং নির্বোধ বন্ধুর মতো কাজ হবে। ‎

এবার দারসে নেযামির ফেকাহ শাস্ত্রের কিতাবাদি সম্পর্কে তার মন্তব্য লক্ষ্য করি। তিনি বলেন- ফিকাহ শাস্ত্রে ‎কানযুদ্দাকায়েক, বেকায়া, শরহে বেকায়া ও নেকায়ার উত্তম বিকল্প পূর্ববর্তী মনীষীদের কিতাবসমূহে কি পাওয়া যায়না? ‎জামে সগীর, জামে কবীর ইত্যাদি। ইমাম মুহাম্মদ, ইবনুল হাসান শায়বানির সরাসরি লেখা কিতাবসমূহ কি সকল দিক ‎দিয়ে সঠিক নয়? তাতে যে ইলম ও বরকত হবে,তা পরবর্তীকালের লেখকদের কিতাবসমূহে কোথায় পাওয়া যাবে? ‎আমার ক্ষুদ্র মতে ফিকহে নূরুল ইযাহ, কুদুরী ও হেদায়া ব্যতীত অবশিষ্ট সকল কিতাব পরিবর্তন যোগ্য। ‎

আমরা যদি আমাদের পাঠ্যসূচির মধ্যে বালাগতে ‘মুখতাছার’ আকাঈদে, ‘শরহে আকাঈদ’ উসূলে ফেকাহের ‘হুসামি’ ‎ইত্যাদিকে পরিবর্তন না করি তাহলে এসব বিষয়ে কি আমাদের ছাত্ররা দক্ষ হিসাবে গড়ে উঠতে পারবে? এসব কিতাবের ‎‎কোন বিকল্প কি আমাদের সামনে নেই? এভাবে র্সাফ-নাহু,মায়ানী, ফালসাফা, ফিক্হ, তাফসির, আদব ইত্যাদি সম্পর্কে ‎যদি পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে সবগুলোর সারকথা এই দাঁড়াবে যে, প্রচলিত নেসাবে এমন কিতাব রয়েছে যাতে ‎সুক্ষ্মতার নৈপুন্য দেখানো হয়েছে এবং সংক্ষেপকরণে রেকর্ড সৃষ্টি করা হয়েছে। ‎

নিঃসন্দেহে মেধার প্রখরতা, সুক্ষ্মদৃষ্টি ও চুলচেরা বিশ্লেষণে দক্ষতা অর্জনের জন্যে এগুলো সবচেয়ে উপযুক্ত হলে হতে ‎পারে; কিন্তু তা গ্রহণীয় নয়। ‎

“আমাদের কওমি মাদরাসা সিলেবাসের আরো একটি ত্র“টির প্রতি আঙ্গুলি প্রদর্শন করে আল্লামা বিন্নুরি বলেন- বর্তমান যুগে ‎সাহিত্য ও ইতিহাসের গুরুত্ব বেশি। এজন্যে আমাদের সিলেবাসে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি স্তরে সীরাতুন্নবী সা. তারীখে ‎ইসলাম এরপর সাধারণ ইতিহাস ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসের প্রতি মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ‎

নাস্তিক্যবাদ ও ধর্মহীনতা যেমন ইসলামি বিষয়সমূহ বিকৃত করার চেষ্টা করেছে, তেমনি ইসলামের ইতিহাস ও ধর্মহীন ‎প্রচেষ্টা অনেক বিকৃত করে দিয়েছে। এজন্যে ইসলামের ইতিহাসে গবেষণাসূলভ জ্ঞান অর্জন করা খুবই প্রয়োজন। ‎

পরিতাপের বিষয় হল, আমরা একদিকে নবী-প্রেমের দাবিতে সর্বাগ্রে অথচ নবীচরিত পাঠে মোরা সবার পিছনে। আমাদের ‎সিলেবাসে “সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া” ছাড়া আর কি কোন সীরাত গ্রন্থ আছে? তাই বলি নবী প্রেমের দাবি কি অবান্তর নয়? ‎

আমি সিলেবাস সংক্রান্ত আলোচনাটি শায়খ মাদানির একটি উক্তি দ্বারাই শেষ করতে চাই। শায়খ মাদানির কোন পরিচিতি ‎না তুলে ধরেই উক্তিটি বিবৃত করছি “আমার শিক্ষা জীবনে আমি দারুল উলুমে দেওবন্দের পাঠ্যসূচিকে উন্নতির সোপান ‎এবং ইহাকে যথার্থ বলিয়া মনে করিয়াছি- স্বীয় যোগ্যতানুসারে তাহা হইতে উপকৃত হইয়াছি। কিন্তু পরবর্তীতে মদিনায়, ‎মিশরের জামে আযহার, ইস্তাম্বুল ও বুখারা ইত্যাদির পাঠ্যসূচি হইতে ইহাকে প্রাচীন মনে হইয়াছে।” ‎

তা আজ থেকে কতকাল পূর্বের কথা। আর এখন? তা কি বলতে হবে?‎

কওমি মাদরাসাশিক্ষার প্রতি অনীহার কারণ ‎

‎কোনো একটি শিক্ষা তখনই গ্রহণযোগ্যতা ও সার্বজনীনতা লাভ করে যখন তা মানবজীবনের সফলতার সোপান হয়। ‎মানুষের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সকল ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শন করে। ‎সর্বোপরি একজন মানুষকে সর্বদিক দিয়ে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলে।সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়ে দেয়। আর যে শিক্ষায় ‎এসব বিষয় অনুপস্থিত, তা গ্রহণযোগ্যতা ও সার্বজনীনতা লাভ কনা তো দূরের কথা উল্টো এর প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে ‎ওঠে। অনীহা প্রকাশ করে।সর্বশেষ বিরোধীতায় লিপ্ত হয়। বর্তমানে কওমি মাদরাসাগুলো বহুলাংশে মানুষের চাহিদা পূরণে ‎ব্যর্থ।কারণ বর্তমানে কওমি মাদরাসাসমূহে আগের ন্যায় দ্বীনের সর্বক্ষেত্রে যোগ্য মানুষ তৈরি হচ্ছে না এবং আমলি দিকও ‎একবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মাদরাসা ছাড়া অধিকাংশ মাদরাসার লেখাপড়ার মান ও ‎শিক্ষকদের যোগ্যতা ও পাঠদান পদ্ধতি প্রশ্ন সাপেক্ষ। আর সিলেবাসের দুর্বলতা তো রয়েছেই। পুরনো আমলের অপ্রচলিত ‎ও পরিত্যাজ্য অনেক বিষয় আঁকড়িয়ে ধরার মানসিকতা ও যুগোপযোগী বিষয়য়াবলির প্রতি অনীহা ও এগুলো থেকে ‎নিরাপদ দূরে থাকার আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। এগুলোই হচ্ছে বর্তমান সময়ে কওমি মাদরাসাশিক্ষার প্রতি অধিকাংশ ‎মানুষর অনীহার মূল কারণ।‎

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

জাগতিক ও ইসলামী শিক্ষা

#জাগতিক_ও_ইসলামী_শিক্ষা মানুষের খুদি বা রূহকে উন্নতিসাধনের প্রচেষ্টার নামই হলো শিক্ষা, কথাটি আল্লামা ইকবালের। রবীন্দ্রনাথের মতে, ...