সংস্কার স্বীকৃতি ও স্বকীয়তার বিষয়ে কারো সাথে কোন আপোস নেই
কমাশিসা ডেস্ক:: আমাদের মুরব্বী বুজুর্গ হজরাত উলামায়ে কেরাম । আজ ২০১৬ যখন আমি আপনাদের সাথে কথা বলছি তখন আমরা দেখছি আমাদের মাদরে ইলিম তথা কওমি মাদরাসা গুলো দাঁড়িয়ে আছে ১৮৬৭ সালের চাহাত নিয়ে। দেড়শত বছর আগের হাঙ্গামি সিলেবাস আজ স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের উপর চাপিয়ে দেয়া দেখে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ মুফতীয়ে আ’জম আল্লামা মুহাম্মাদ শফী রাহমাতুল্লাহ বলেন ‘আমাদের আর দেওবন্দ আলীগড় লকনৌর মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। আমরা স্বাধীন এই দেশে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা চাই যা হবে খোলাফায়ে রাশেদীনের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের মাধ্যমে পরিচালিত একটি মুকাম্মাল ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা।’
তখন স্যাকুলার জিন্নাহ সাহেব বললেন যে, পাকিস্তান এখনো বালিগ হয়নি। তাই পুর্ণাঙ্গ ইসলামি শিক্ষা বাস্তবায়নের সময় এখনো হয়ে উঠেনি। তখন দুখঃভরে দারুল উলুম করাচি কায়েম করলেন।যেখানে পুর্ণাংগ একটা ইসলামি সিলেবাস আলোর মুখ দেখলো। ছেলে তাক্বি উসমানীকে এলএলবি সহ আইন বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনের তাগিদ দেন। আজকের শাইখুল ইসলাম একদিন পাকিস্তানের শরীয়া বোর্ডের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তাদের পরিবারের প্রতিটি ফরজন্দ একদিকে কওমির টাইটেল পাশ অন্যদিকে জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্ত। দারুল উলুম করাচি আজ দুনিয়ার সেরা একটি প্রতিষ্টান। যেখানে পুর্ণাঙ্গ ইসলামি শিক্ষা চালু রয়েছে। আজ নিছক ধর্মীয় শিক্ষার বাধ্যবাধকতার কারণে আমাদের কওমি অঙ্গনের মেধাবীরা দেশের বৃহত্তর পরিশর থেকে ছিটকে পড়ছে। বিশ্বের অন্য কোন দেশে গিয়েও তারা হচ্ছে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। আজকে সরকারি মসজিদ গুলোতে কিংবা ধর্মীয় পজিশনে কওমির সন্তানদের কোন জায়গা নেই। স্বীকৃতিহীন এই সনদের আজাব থেকে মুক্তির জন্য আমরা বারবার আপনাদের কাছে ধর্ণা দিয়েছি। আমরা বই লিখে প্রবন্ধ লিখে আপনাদের কাছে বিনীত ভাবে আবেদন করেও সংস্কারের কথা জানিয়ে দিয়েছি। আমরা বলেছি অন্ততঃ প্রাইমারি থেকে উর্দু হটান। বাংলা আরবির গুরুত্ব দিন। ইংরেজি পড়ান। পাঠ মাধ্যম বাংলা হউক। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ও আরবিতে হউক। ফজিলত ও টাইটেলে শুধু আরবি মাধ্যম হউক । কিন্তু আপনারা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেন না। সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হলো মক্তব পঞ্চমের মেয়েদের জন্য এসো আরবি শিখি আর ছেলেদের জন্য উর্দু ৩য় খন্ড?
আমরা সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি বই যাচাই বাছাই করে দেখেছি যে, শিশু মননের প্রতি মোটেই খেয়াল হয়নি। বয়সের সাথে বইর কোন মিল নেই। ভুগোল ইতিহাস বিজ্ঞান সমাজ পাঠ অতি স্যাকেলে। প্রাইমারিতে এমন ইংরেজি ও অংক জুড়ে দেয়া হয়েছে যা সাধারণত মাধ্যমিকে পড়ানোর কথা। আরো দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যাই লেখাপড়া করুক এইসব ছেলে-মেয়েদের গন্তব্য কোথায়, তারা তা বলে দিতে পারেন না? যে কারণে দিনদিন মক্তব গুলো বিরাণ হতে চলেছে। গ্রামের সচ্ছল মানুষ সন্তানদের কোন ক্রমেই এইসব মক্তবে দিতে চায়না এইবলে যে তার কোন ভবিষ্যৎ নেই। মফস্বল ও শহরের অধিকাংশ মাদরাসায় প্রাইমারি বিভাগ নাই। ২০১৬ সালকে ১৮৬৭ সালের মতো করে দেখলে যে অবস্থা দাঁড়ানোর কথা তাই বাস্তব হয়ে দেখাদিয়েছে। বালাকুট থেকে শাপলা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হলোনা। আগে ছিলাম বৃটিশের দখলে এখন আমরা কার দখলে আছি?
কেন আমাদের প্রজন্মদের রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখা হচ্ছে? আপানারা কি দেখেননা যারা আগে দাখিল মেট্রিক দিতো তাদের বহিষ্কার করাহতো। এখন বগলের নীচে রেখে পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। অনেক মাদরাসায় দাখিল মেট্টিকের প্রকাশ্যে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যে ফটোর বিষয়ে এতো কঠোরতা আজ ফেবুর দিকে নজর দিয়ে দেখুন কওমি প্রজন্মরা কিভাবে নিজের ছবিতে মজেছে। ভিডিও টিভির বিষয়ে ছিলো খাটি হারামের ফতোয়া। আজ দারুল উলুম দেওবন্দের হাদিসের উসতাজ আল্লামা আরশাদ মাদনি দামাত বারাকাতুহুম বললেন-এখন এগুলোতে অবদান রাখা ফরজ। আগের হারাম করা সকল ফতোয়া এখন অবলিলায় হালাল হচ্ছে আর আমরা বসে আছি হাসির খোরাক হয়ে। কেন আমাদের চিন্তা এতো পিছনে? আমরা কিভাবে এখনো শিক্ষা দীক্ষায় সিলেবাসে ১৮৬৭ সালে অবস্থান করে ফলাফল দাবী করছি ২০৫০’র!
আজ বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। কাল প্রেসকন্ফারেন্স করবেন। তারপর রাস্তায় নামবেন। মিছিল মিটিং করবেন এইতো? আমাদের যখন দেয়ালে পীঠ টেকে গেছে প্রয়োজনে রাস্তায় শুয়ে পড়বো তবু আপোস হবেনা এই বিষয়ে। যত আগে বুঝবেন তথো ভাল। আপনারা যদি দাবি করেন আবুল হাসান আলী নদভী, হুসাইন আহমদ মাদানী, থানভী, মুফতী শফী, তক্বী উসমানী থেকে বেশী বুঝেন তাহলে তা প্রমাণ করে দেখাতে হবে। নতুবা লাখ লাখ মুসলমানদের সন্তানদের জীবন নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলার সুযোগ দেয়া হবেনা।
ইহা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার যে আপনারা বলছেন একটি কুচক্রীমহল মাদরাসা শিক্ষার দুশমনরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিসংগ্রামের সময়ও পাক হানাদাররা এভাবে মজলুম বাংলাদেশীদের উপর কুচক্রী, দেশের দুশমন, শান্তি শৃঙ্খলা বিরুধী বলে বুলেট গুলী বোমা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো। ৫২’র ভাষা আন্দোলনেও তারা চেয়েছিলো ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে। কিন্তু তারা পারেনি। আপনারা আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। এই আগুন নিভানো যাবেনা। কারণ ইহা মাজলুমানের কান্না। বঞ্চিতদের আহাজারি। দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থের কান্না। আপনারা যদি না বোঝেন যারা বোঝে তাদের সাথে কথা বলুন। যারা মেধা মননে এগিয়ে আছে তাদের দ্বারস্থ হন। বিশ্বাস করুন সবই আপনারা মানবেন করবেন তবে পানি অনেক দূর গড়িয়ে যাবার পর। বিজ্ঞপ্তির পর কি দেখলেন কমাশিসা স্তব্ধ হয়েগেছে। না আরো প্রাণ পেয়েছে। দুর্বার গতিতে বিজয়ের গান গেয়ে যাবে। আপনাদের পদক্ষেপের দিকে আমরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছি। প্রেসকন্ফারেন্স সাংবাদিক সম্মেলন সহ আদালত পর্যন্ত যাওয়ার চুড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। তাই আমাদের দুর্বল ভেবে একটি মহান জিম্মাদারির প্রতি অবহেলা দেখাবেন না। নতুবা প্রজন্ম কাউকে ক্ষমা করবেনা। আজ দেশের ৯৫% নাগরিক কুফরি শিক্ষার নাগপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর আপনারা নিজেরা নিজেদের পায়ে শেকল বেঁধে বলছেন অন্যরা শেকল পরাতে বাধ্য করছে। আমি সবীনয়ে অনুরোধ করবো সময় থাকতে উদ্যোগ নিন নতুবা গণআন্দোলনের মুখোমুখী হবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সুমতি দান করুন তাই কামনা করি।