(তৃতীয় পর্ব) দরসে নেজামি ছিল শিল্পবিপ্লব ও আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার গোড়াপত্তনের আগের আমলের শিক্ষা কারিকুলাম। এর মাধ্যমে কেবল ধর্মীয় জ্ঞানের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল কিন্তু একটি আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্রের ও এর নাগরিকদের সবধরনের চাহিদা এর দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়। ইংরেজশাসিত পরাধীন ভারতে ধর্মীয় জ্ঞানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সমকালে এর উপযোগিতা অবশ্যই ছিল। কিন্তু ইংরেজরা এ দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর মুসলমানরা যখন স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করলো তখন সে সাময়িক কারিকুলাম দরসে নেজামির উপযোগিতা আর অবশিষ্ট ছিল না। তখন দরকার ছিল দীন ও দুনিয়াবি জ্ঞানের সমন্বয়ে একটি ব্যাপকভিত্তিক ও সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করা যে শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলিম নাগরিক ফরজে আইন পরিমাণ ইলম অর্জনের পর কেউ আলেম হবে, কেউ মুফতি হবে, কেউ বিচারক হবে, কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে, কেউ সচিব হবে, কেউ প্রফেসর হবে, কেউ ব্যবসায়ী হবে, কেউ কৃষিবিদ হবে, কেউ নাবিক হবে হবে, কেউ পাইলট হবে, কেউ সৈন্য হবে, কেউ পুলিশ হবে ইত্যাদি। দীন ও ‘দুনিয়াবি’ খেদমতের একেক ক্ষেত্রে একেকজন কাজ করবে। এখানে দুনিয়াবি বলতে আক্ষরিক অর্থে দুনিয়াবি বুঝানো হয়েছে। নতুবা মুসলমানের সব কাজই তো দীনি কাজ।
এ কথাটিই আল্লামা তকি উসমানি সাহেব তাঁর শ্রদ্ধেয়পিতা মুফতি সাহেবের উদ্ধৃতি দিয়ে গিত ১৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে এক অনুষ্ঠানে বর্ণনা করেছেন। সে বক্তৃতার বিস্তারিত বিবরণ আমরা আলাদা এক নিবন্ধে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
দীনি ও দুনিয়াবি ইলমের বিভাজন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
এ প্রসঙ্গে হজরত মাওলানা মুফতি মাহমুদ রহ. বলেছেন: ‘দীন ও দুনিয়ার শিক্ষা যেদিন থেকে বিভাজিত হয়েছে সেদিন থেকে উম্মাহর দুর্ভাগ্য শুরু হয়েছে।’ আর সমকালিন মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ সাহেবের ভাষায়: ‘বস্তুত আসমানি ইলম ও দুনিয়াবি ইলম নামে আলাদা দুটি জিনিসের অস্তিত্ব শরিয়তে নেই। কেননা
و علم آدم الاسماء كلها বলে যে সকল জ্ঞানের প্রতি ইঙ্কিত করা হয়েছে তা সবই আসমানি ও জান্নাতি ইলম। তদরূপ و النا له الحديد এবং و ابره الاكمه والابرص বলে যে জ্ঞানের প্রতি ইঙ্কিত করা হয়েছে, সর্বপরি যে জ্ঞানের সাহায্যে ‘বদর ও উহুদের সেনাপতি’ যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন এবং মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে শাসন পরিচালনা করেছেন তা সবেই নববী ইলম। তদ্রূপ যে জ্ঞানের সাহায্যে হযরত ওমর (রা.) ইরাকের ভূমি জরিপ করেছেন সেটাও সাহাবাওয়ালা ইলম।
সুতরাং উম্মাহ যদি বিশ্বের জাতিবর্গের মাহফিলে মর্যাদা ও নেতৃত্বের আসন লাভ করতে চায় তাহলে আসমানি ও নববি ইলমরূপেই ‘সবকিছুর’ শিক্ষা অর্জন করতে হবে। এবং মাদরাসাতুছ্ছুফ্ফার সিলসিলার ধারক ও বাহক যে ওলামায়ে কেরাম তাদের কাছ থেকেই সে শিক্ষা লাভ করতে হবে।’