শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:৩৪
Home / আন্তর্জাতিক / মুসলিমগণ কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়

মুসলিমগণ কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়

canada- muslim1মঈনুল আলম : কানাডায় বসবাসকারী মুসলিমদের ওপর সর্বপ্রথম করা জরিপে কানাডার মুসলিম সম্প্রদায়ের মৌল এবং প্রশংসাসূচক ছবি ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি প্রকাশ পেয়েছে মুসলিমদের সম্পর্কে অমুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত ধারণাগুলোর বিপরীত বিস্ময়কর অনেক সত্য এবং তথ্য।

‘অ্যানভেরোনিক্স ইনস্টিটিউট’ পরিচালিত এই নির্ভরযোগ্য জরিপ সম্পর্কে কানাডার বৃহত্তম সংবাদপত্র ‘টরন্টো স্টার’ প্রধান সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে ‘মুসলিম কানাডিয়ানরা কানাডাকে বাসভূমি বলতে গর্ব বোধ করে’ (মুসলিম কানাডিয়ান্স্ প্রাউড টু কল কানাডা হোম) এই শিরোনাম দিয়ে। সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘এই মূল্যবান জরিপ থেকে পাওয়া হৃদয়গ্রাহী সারাংশ হলো, কানাডায় ১০ লক্ষাধিক মুসলিম অধিবাসীর মনোভাব প্রচলিত কিছু বিশ্বাস এবং ভ্রান্ত ধারণাকে প্রকৃতই মিথ্যা প্রমাণিত করেছে।

জরিপ-পরবর্তী সময়ে মিডিয়াতে মুসলিমদের আচার-আচরণ, হিজাব-পরিচ্ছদ ইত্যাদি সম্পর্কে যখন একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে তখন বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক্স্’ বিশ্বে ভ্রমণরত তাদের ফটোগ্রাফারদের তোলা ছবির বার্ষিক প্রতিযোগিতায় ২০১৫ সালের সেরা চারটি ছবির মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কিত একটি ছবিকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের মুসলিমদের অভাবিতভাবে বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টিতে নিয়ে এলো।

প্রকাশিত ছবির নিচে ক্যাপশান দেয়া হয়েছে : ‘বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্ত হলে এক যাত্রী লম্ফ দিয়ে আরেক ট্রেনে আরোহণ করছে!’ ছবিটি তুলেছে ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফি’র ফটোগ্রাফার ডেভিড ন্যাম লিপ ই।

জরিপে বলা হয়, সর্বশেষ ২০১১-এর জনসংখ্যা গণনায় দেখা যায়, কানাডায় মুসলিম অধিবাসীর সংখ্যা ১০ লাখের অধিক, যা কানাডার মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ২ শতাংশ। মুসলিমরা কানাডায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়। জরিপে বলা হয়েছে, কানাডায় মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ মুসলিম অধিবাসীর সংখ্যা বর্তমান সংখ্যার তিন গুণ হবে।

জরিপে মৌল চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, কানাডায় মুসলিমদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ৮৩ শতাংশ নিজেদের ‘কানাডীয়’ বলতে ‘অত্যন্ত গৌরব’ বোধ করে। কানাডার অমুসলিমরা তার চেয়ে কম সংখ্যাগরিষ্ঠতায় (৭৩ শতাংশ) এ রকম গৌরব বোধ করে! মুসলিমদের ৯৪ শতাংশ বলেছে, তাদের কানাডার সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী। ৮৪ শতাংশ বলেছে, অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় কানাডায় মুসলিমরা অধিকতর সুব্যবহার পাচ্ছে।

‘টরন্টো স্টার’-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘এসব তথ্য-উপাত্ত এই শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয় যে, এই (মুসলিম) সম্প্রদায় এ দেশের গভীরে শিকড় প্রোথিত করেছে এবং এই সম্প্রদায়ের মাথার উপরে সন্দেহের মেঘ ঝুলিয়ে রাখা অথবা অন্যদের অপরাধের জন্য এদের দায়ী করা সঙ্গত নয়।

জরিপে আরো প্রকাশ, মুসলিমরা তাদের প্রতিবেশীদের আচরণ ও মূল্যবোধকে সমর্থন ও গ্রহণ করে। কানাডার স্বাধীনতাবোধ এবং গণতন্ত্র মুসলিমদের অহঙ্কারের প্রধানতম উৎস। এরপর কানাডার বহু সংস্কৃতি ও বহুজাতিকতা মুসলিমদের অনুপ্রাণিত করে।
আরো প্রকাশ, মুসলিমরা ভালো কানাডীয় নাগরিক হওয়া এবং ভালো মুসলিম হওয়ার মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব দেখে না। ৮০ শতাংশের অধিক মুসলিম বলে তাদের আত্মপরিচয়ের মধ্যে কানাডার নাগরিকত্ব এবং তাদের স্বধর্ম সম দৃঢ়ভাবে বিরাজ করে।

জরিপের তথ্য উল্লেখ করে ‘টরন্টো স্টার’-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘যেহেতু ইসলাম, খ্রিষ্টানরা এবং হিন্দুত্ব তিনটিই বর্ধিষ্ণু ধর্ম, এটা আশ্চর্যের ব্যাপার নয় যে, মুসলিম উপসনালয়গুলোতে ধর্মানুসারীদের সংখ্যা বাড়ছে। এখন কানাডায় মুসলিমদের ৪৮ শতাংশ প্রতি সপ্তাহে এক বা একাধিক বার উপাসনায় সামিল হয়। একইভাবে ৪৮ শতাংশের বেশি মুসলিম নারী মাথায় হিজাব পরছে বলে জানায়। তিন শতাংশ মুসলিম নারী শরীর আবৃত করা ‘চাদর’ এবং মুখ আবৃত করা নিকাব পরছে।’

সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, ‘নবীন প্রজন্মের মুসলিমরা বিশেষভাবে তাদের ধর্মের প্রতি অনুরাগী হচ্ছে। এদের ৬১ শতাংশ মনে করে তারা যে মুসলিম এটাই তাদের আত্মপরিচয়ের চাবিকাঠি এবং এরা মসজিদে যায়। তবে এটার অর্থ এই নয় যে, এরা ধর্মবোধসম্পন্ন ক্রিশ্চিয়ান, হিন্দু, ইহুদি প্রমুখ সম্প্রদায়ের তুলনায় কানাডীয় জাতিত্ববোধের সাথে কম সম্পৃক্ত।’

জরিপে প্রকাশ পায়, ‘২০১৫ সাল পর্যন্ত কনজার্ভেটিভ দলীয় প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পারের দশ বছরের শাসন ছিল মুসলিমদের জন্য অন্ধকার যুগ। মুসলিমদের প্রতি উপেক্ষা ও নিগৃহ মুসলিমদের জাগিয়ে তোলে নির্বাচনে অংশ নিতে এবং ভোটদানে অংশ নিতে।

জরিপে প্রকাশ, ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত কানাডার ফেডারেল সাধারণ নির্বাচনে বিস্ময়কর ৭৯ শতাংশ মুসলিম ভোট দেয়। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ ভোট দেয় লিবারেল পার্টিকে (নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পার্টি), ১০ শতাংশ দেয় নিউ ডেমোক্র্যাট পার্টিকে এবং মাত্র ২ শতাংশ দেয় (বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী হার্পারের) কনজার্ভেটিভ পার্টিকে। অবশিষ্ট ২ শতাংশ প্রকাশ করেনি তারা কাদের ভোট দিয়েছে।

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, কানাডাবাসী
moyeenlalam@hotmail.com

সৌজন্যে : দৈনিক নয়াদিগন্ত

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

ইদলিবের মাধ্যমেই সিরিয়ার বিজয় সুচিত হবে ইনশাআল্লাহ!

ইদলিবে শিয়া মুনাফেক রুশ কাফেরদের এক কথায় তুলাধুনা চলবে……. প্রস্তুত তুরস্কের নৌবাহিনী সেনাবাহিনী বিমানবাহিনী। ইতিমধ্যেই ...