রবিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৬:১০
Home / বেফাকের মহাসচিব হিসাবে উবায়দুর রাহমান খানের প্রথম অধিবেশনের ঐতিহাসিক জ্বালাময়ী ভাষণ !

বেফাকের মহাসচিব হিসাবে উবায়দুর রাহমান খানের প্রথম অধিবেশনের ঐতিহাসিক জ্বালাময়ী ভাষণ !

ইউসুফ বিন তাশফিন::

বেফাক কমাশিসাহজরত উবায়দুর রাহমান খান নদভী বেফাকের নতুন মহাসচিব। বোর্ডমিটিংগের সর্বপ্রথম অধিবেশনে জরুরী ভিত্তিতে সর্বদলীয় মিটিং আহব্বান করলেন। দল বলতে রাজনৈতিক কোন দলের নয়। কওমি শিক্ষা নিয়ে যত বোর্ড আছে তাদের সকলকে ডাকলেন বেফাক হেডকোর্য়াটারে। সভাপতি আল্লামা জাহানাবাদী। ধীর-স্থীরে ভাব-গাম্বীর্যতা নিয়ে লম্বা গড়নের গোলাপি বর্ণের এক মধ্যবয়সী তেজুদ্বীপ্ত ব্যক্তিত্ব আগাইয়া আসছেন। ডান হাতে কলম বাম হাতে লিখিত নোট। ডায়াসের সামনে দাঁড়াতেই মুহুর্মুহ তাকবীর ধ্বনি। আল্লাহর প্রশংসা রাসুলের উপর দুরুদ সাহাবায়ে কেরামের জন্য দোয়া এবং উলামায়ে কেরামের শুকরিয়া আদায় করে শুরু হলো বক্তব্য।

সম্মানিত উলামায়ে কেরাম, ইন্নামা ইয়াখসাল্লাহু মিন ইবাদিহিল উলামা। আল-উলামাউ ওরাসাতুল আম্বিয়া। আপনাদের সম্মান আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাদের প্রশংসা করেগেছেন। আমাদের রাসুল আরো বলেছেন-আলা’ কুল্লুকুম রায়িন, ওয়া কুল্লুকুম মাসউলুন আন রায়য়াতিহি। আসলে আমাদের যেভাবে সম্মান আছে তেমনি আছে বিরাট জবাবদিহিতা। আজ আমাদের কলেজ ভার্সিটি গুলো যেন বিরান হয়েগেছে। মাদরাসাগুলোতে বিরাজ করছে বন্ধ্যাত্মতা। নাস্তিক্যবাদ এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে দেখা দিয়েছে। একটা ইস্যু শেষ হতে না হতেই আরেকটা ইস্যুর জন্ম। মনে হচ্ছে ইসলামের দুশমনরা চায় আমরা আমাদের সঞ্চিত পুরো শক্তি যেন রাস্তাই নিঃশ্বেষ করে ফেলি। দেশের বড় বড় গুরুত্বপুর্ণ পোষ্টগুলো দখল করে তারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মরিয়া। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের বিপরীত হয়ে চলা। আমাদের শিক্ষাংগন মাদরাসাগুলোও বিভিন্ন বোর্ডের আড়ালে একে অপরথেকে দূরত্বে অবস্থান করছি। আমরা আকাবির আসলাফের দোহাই দেই। তাদের পদাংক অনুসরণের কথা বলি। সত্যিই কি আমরা তাদের অনুসরণ করছি? বিগত শতাব্দির মুজাদ্দিদ আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভীকে সারা বিশ্ব সম্মান করে, আমরাও করি। তাঁর বাতানো মত ও পথে অন্যরা অগ্রসর হচ্ছে আর আমরা শুধু মুখে মুখে খাতায় কলমে সম্মান দেখাই বাস্তবে তাঁর কোন অনুসরণ করিনা। এ কারণেই আমাদের এই দুরাবস্থা। আমাদের মাঝে বর্তমান বিরজমান কওমির উজ্জল নক্ষত্র শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাক্বি উসমানীর কথাই বলি। তিনির চিন্তার সাথে আমাদের চিন্তার মিল ও প্রতিফলন আছেকি?

আপনারা আমাকে মেহেরবানী করে একটি গুরুত্বপুর্ণ পদে সমাসীন করেছেন। যদিও আমি এর উপযুক্ত ছিলামনা। কিন্তু আপনাদের স্নেহ ও ভালবাসা আমাকে সাহস যোগাচ্ছে। তাই আজ বেশি কথা না বাড়িয়ে বলতে চাই আমাদের কওমি অংগনের প্রতিটি মাদরাসাকে একই বোর্ডের আওতাধীন আসা এখন সময়ের দাবী। আমরা স্থানীয় বোর্ডগুলোকে বিলুপ্ত না করে এডজাস্ট করেনিবো। বিভাগীয় পর্যায়ে একেক বোর্ডকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে। বেফাক হবে প্রধান ছাতা। হের্ডকোয়ার্টার হবে ঢাকায়। এখান থেকেই পরিচালিত হবে সকল কার্যক্রম।

ঐতিহাসিক জামেয়া আল-করডোভা আন্দালোসিয়া।
ঐতিহাসিক জামেয়া আল-করডোভা আন্দালোসিয়া।

আপনাদের মনেরাখা উচিত যে অপবাদ দুর্নাম ও জাহেলিয়াতের মোকাবেলা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে করা দরকার তা রাস্তায় মিছিল মিটিং করে কখনো সম্ভব হবেনা। কুফর শিরক নাস্তিক মুর্তাদের কারখানা জিইয়ে রেখে আমাদের এই প্রতিবাদ বোমেরাং হয়ে দেখাদিচ্ছে। তাই সর্বপ্রথম গুরুত্বপুর্ণ কর্তব্য হলো আমাদের কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। যুগের চাহিদা ও জরুত মোতাবিক একটি দুর্দমনীয় সাহসী আত্মত্যাগী প্রত্যয়পুর্ণ প্রজন্ম সৃষ্টির চিন্তাধারা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নিকট অতীতের রক্তের দাগ এখনো শুকিয়ে যায়নি। আজকে আমরা কোথায় অবস্থান করছি একটু ভেবে দেখেছি? যে জাতি দাসত্বের শৃংখলকে নিয়তির নিয়ামত হিসাবে গ্রহন করে নিয়েছে তাদের মুক্তির আশা দুরাশা ছাড়া আর কি হতে পারে? বিশ্বে সেই জাতি বেশি টিকে থেকেছে যারা শিক্ষা দীক্ষায় অগ্রগামী হয়েছে। আজ আমাদের পুরো ১৭কোটি জাতিকে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের করুণার পাত্রে পরিণত করা হয়েছে। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে? আমরা যদি আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে না আসি তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই দুরাবস্থা থেকে কখনো উদ্ধার করবেন না।

ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। আচ্ছা, যাদের জন্য করা হয়েছে তাদের কোন টু-শব্দ আছে কি! তা ভেবে দেখেছেন? স্কুল কলেজ ভার্সিটির কোন ছাত্র শিক্ষক কথা বলছে আন্দোলনে শরিক হয়েছে? আমরা যেন আরেকটি গ্রহে বসবাস করে ভিন্ন গ্রহ নিয়ে লড়ছি। সময়ের অপচয় আর দুরাবস্থা বাড়ানো ছাড়া আর কোন ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবেনা। তাই আমাদের প্রয়োজন এফেক্টিভ একটি শিক্ষাবস্থা গড়েতুলা। যার সুফলে এই জাতি নাজাত পাবে। মুক্তির দিশা খুঁজে পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।দেওবন্দ

বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতে হলভর্তি ডেলিগেটদের চোখের পাতা ভিজে একাকার। নতুন আরেক শাহ ওলিউল্লাহ আরেক থানভী আরেক মদনী আরেক গাজ্জালী আরেক কাসেমীর অনুরণ অনুভুত হলো সকলের প্রাণে। উচ্চস্বরে আবারো তাকবীর ধ্বনিতে প্রকম্পিত হলো বেফাকের পুরো হেডকোয়ার্টার। বুকে বুকে একে অন্যকে বরণ করে নেয়ার এক অনন্য অবিষ্মরণীয় মুহুর্তকে কেমেরা বন্দী করেতে উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের কেমেরায় ক্লিক করতেই টিকরে পড়লো আলোর বন্যা। কমাশিসার ডিজিটাল কর্মিবৃন্দের ভিডিও বাটন গুলো ইতিপুর্বে অন হয়েগেছে। পুরো বিশ্বে মুহুর্তের মধ্যে খবর চাউর হয়েগেল বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যা বাংলাদেশ এখন একক বোর্ড হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তামাম উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বপ্নের এই বাস্তবায়নে সকলের মনে আবার খেলাফতে রাশেদার সোনালীদিনের স্মৃতিগুলো উকি মারতে শুরু করলো। সকলে সমস্বরে গেয়ে উঠলেন ‘নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া-ফাতহুন ক্বারীব।’

চলবে…

ধারাবাহিক – স্বপ্নবিলাস, সাল- ২০১৭ (৩য় পর্ব)

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি কল্যাণ ট্রাস্ট- বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা

খতিব তাজুল ইসলাম: ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...