কমাশিসা ডেস্ক:: বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যা বাংলাদেশ।বাংলাদেশ বৃহত্ত কওমি মাদরাসা বোর্ড হলো বেফাক। বেফাকের গঠন প্রণালী হলো তিন স্তরের। মজলিসে আম।মজলিসে শুরা। মজলিসে আমেলা। প্রতি পাঁচবছর পরপর নতুন ভাবে কাউন্সিল ডেকে বেফাক পুর্ণগঠন হয়।বছরে একবার শুরা বৈঠক। প্রায় দেড়শতাধিক শুরা সদস্য আছেন দেশব্যাপী। শুরা সদস্য হতে হলে টাইটেল মাদরাসার মুহতামিম এবং একজন গ্রহনীয় ব্যক্তিত্বপুর্ণ পারছন হতে হবে। শুরার কাজ কি তা বিস্তারিত ভাবে আমরা জানিনা।তবে সাধারণ সদস্যদের নিয়ে প্রতি পাঁচবছর পরপর যে কাউন্সিল হয় এবং তা থেকে গঠিত হয় মজলিসে আমেলা বা কার্যকরী পরিষদ। এবিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
প্রায় ৬হাজার ছোটবড় মাদরাসা নিয়ে বেফাক পরিবার। মোটামুটি একটা বড় সড় বোর্ড। ৬হাজার মুহতামিম হলেন এই কাউন্সিলের সাধারণ সদস্য।উনারা ভোটাধিকার পান। কিভাবে ভোট হয় ? বিশাল শামিয়ানার মাঝে মঞ্চে যারা আছেন তারাই মাইকের মালিক। হঠাৎ করে একজন মুরব্বী মার্কা কেউ দাঁড়িয়ে বললেন আমি অমুককে সভাপতি পদে প্রস্তাব করছি। সংগে সংগে নির্ধারিত শিখিয়ে রাখা কিছু লোক উঁচু আওয়াজে বললো জী জী হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা তমুককে সমর্থন করছি। মাইকের কাছে তারাই যারা প্রস্তাবকারীর লোক। সারা হলে হ্যাঁ’র আওয়াজই শোনা গেল। যারা না করলো তাদের আওয়াজ মিশেগেল বাতাসে। তারপর মহাসচিব বা মহা ব্যবস্থাপক কে হবেন? সেই আগের নাটক! তিনিও উতরে গেলেন। যারা আগে ক্ষমতায় ছিলেন উনারাই সিংহাসনের আশে পাশে বসে কল-কবজা নাড়েন। তাদেরই বাতলিয়ে দেয়া বুলি কেবল আওড়ানো হচ্ছে মঞ্চে। ৫৫জনের মজলিসে আমেলার বাকি ৫৩জনের দায়ীত্ব আগের ক্ষমতায় যারা ছিলেন তাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। মজলিসে শুরার কিছু সদস্যের নামও প্রস্তাব করা হয় তবে সবই আগের ছকমতো। এভাবে একটা ঢাহা নাটক দিনে দুপুরে তারা করেন সকলের চোখে আংগুল দিয়ে? খোলা চোখে অনেকে দেখছেন কথা বলার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কার কথা কে শোনে? শেখ হাসিনার ক্ষমাতায়ন আর বেফাকের ক্ষমতায়নের মাঝে ফারাক কি তাহলে? এখন কেউ কিছু বললেই বলা হয় এইযে আপনি অমুক হুজুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বেআদবি করছেন।এতবড় একজন বুজুর্গের খেলাপ! এভাবে বুজুর্গীর গেড়াকলে ম্লান হয়ে যায় প্রতিবাদী কণ্ঠগুলো। এই যদি হয় একটা বোর্ডের অবস্থা তাহলে জাতি শিক্ষা দীক্ষায় কি দিক নির্দেশনা পাবে? এই সমস্ত কারণেই বলা যায় বোর্ডগুলো বন্ধ্যাত্মতায় ভোগছে।
আমরা এইসব মনোপলিপনার অবসান চাই। নির্বাচন চাই ধোঁয়াসা কুয়াসা মুক্ত স্বচ্ছ। কোন প্রকার কানাকানি ছাড়া মেধা যোগ্যতায় যারা সেরা তারা যাতে স্থান পায় সেভাবেই বেফাককে চালাতে হবে। বেফাককে প্রচলিত রাজনীতি মুক্ত করতে হবে। ইসলামি রাজনীতির ময়াদানে যেভাবে উলামাগণ ৩২ টুকরা হয়ে আছেন তারই প্রভাব এখন বোর্ডগুলোতে। স্কুল কলেজ ভার্সিটি যেমন ধংস হচ্ছে রাজনীতির লাঠিয়ালিতে তেমনি ইসলামিক দলগুলোর একমাত্র ভরসা মাদরাসা। মাদরাসায় দ্বীনি শিক্ষার নামে চলে পেট এবং পিঠের রাজনীতি। এই সব ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর যদি মাদরাসা না থাকতো তাহলে একপয়সার মুল্য তাদের কে দিতো? সাধারণ জনগণের সুখে দুখে তারা নেই। তারা থাকেন কখন কে আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে কটুক্তি করলো তার প্রতিবাদের আশায়? আল্লাহ এবং তার রাসুলের বিরুদ্ধে যাতে কটুক্তিকারীর জন্ম না হয় সে দিকে তাদের কোন নজর নেই। আসলে ইসলামিক দলগুলো প্রকৃত পক্ষে চায়না তারা এসব বন্ধ হউক। যদি তারা চাইতো তাহলে নাস্তিক মুর্তাদ বনার উৎস বন্ধের প্রচেষ্টা করতো। সস্তা জনসমর্থন লাভই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য।
কওমি ঘরানার ইসলামিক দল ও জামাত বিএনপি আওয়ামীলীগের মাঝে বাহ্যিক আদর্শগত ফারাক দেখাগেলেও তারা ক্ষমতা অর্থ রাজনীতির ক্ষেত্রে সমান কারেক্টারের অধিকারী।
আমি পরিস্কার করে বলতে চাই, আমাদের স্কুল কলেজ ভার্সিটি থেকে দলীয় রাজনীতি নিষি্দ্ধ করতে হবে। ছাত্রদের হাতে খাতা কলম তুলে দিতে হবে। রামদা বন্দুক সংস্কৃতির মূলুৎপাটন নাহওয়া পর্যন্ত দেশের ভবিষ্যত অন্ধকারই থেকে যাবে। আর যারা মাদরাসা কেন্দ্রিক রাজনীতি করেন তারা যেন জনগনের কাছে গিয়ে রাজনীতি করেন। পাবলিকে প্লেইস হউক রাজনীতির জায়গা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দয়া করে লেখাড়ার জন্য ছেড়ে দিন। পীর সাহেবের রাজনীতির সখ থাকলে আপন খানকা থেকে পলিটিক্স করুন।
বিশেষ করে যারা কওমি মাদরসা পরিচালনা করেন তাদের উদ্দেশ্য বলবো যে, বর্তমান রাজনীতির পরিবেশ খুবই ভয়ানক। আগে যে মারামারি রাস্তা-ঘাটে হতো এখন ঘরে দোয়ারে এসেগেছে। এখন যেভাবে রাস্তায় গাড়ি পোড়ে তেমনি গলিতে এসে নারী শিশু সহ বাসাবাড়ি পোড়ে।কলেজ ভার্সিটতে আগুনতো প্রায়ই লাগে। তা এখন মাদরাসা মসজিদে আসতে সময় বাকী নেই।অতএব কোন মুহাতামিম নাজিম সাহেব প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহন করতে পারবেন না। শিক্ষকগণ তাদের ইচ্ছাধীন। কিন্তু মাদরাসা কেম্পাসে কোন দলীয় রাজনীতি নয়। জাতীয় ইস্যুতে সবাই অবদান রাখুক। অন্যায়ের প্রতিবাদ করুক। কিন্তু রাজনীতির ব্যানারে নয়।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এই সমস্ত রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করা ফরজের পর্যায়ে চলে এসেছে। ছাত্ররা যারা বের হচ্ছে তারা নিজের হুজুর আর বুজুর্গ ছাড়া অন্য কাউকে শ্রদ্ধা করতে শিখেনা। কারণ সেভাবে শিখানোও হয়না।
ছোট বড় বোর্ডগুলোর তাই হওয়া উচিৎ। যারা প্রকাশ্যে দলীয় রাজনীতিতে জড়িত নয় তাদেরকে নির্দলীয় ভাবে বোর্ড পরিচালনা করতে দিন। বেফাকে কার্যক্রম স্তবীর হওয়ার বড় একটি কারণ হলো দলীয় রাজনীতি। কে কোন পদ দখল করবে, কে পাওয়ার কতটুকু খাটাবে এসব বিষয় নিয়ে টানাটানি করে বেফাকের অবস্থা বেহাল।
ফরীদ উদ্দীন মাসুদ টানেন আওয়ামীলীগের দিকে।নুর হোসেইন কাসেমী টানেন জমিয়তের দিকে।জুবায়ের মাহফুজ সাহেবদ্বয় টানেন মজলিসের দিকে। হজরত আহমদ শফি টানেন হেফাজতের দিকে। লালবাগ চায় বেফাক জামাত বিএনপির হয়ে কাজ করুক। এই সব টানাটানিতে মহাসচিব আব্দুল জব্বার সহ তিনির কিছু সাথীরা বেজায় খুশি। কারণ মাঝখানে তাদের মধু চুষতে খুব সুবিধা।
অতএব নিম্নের প্রস্তাবাবলী বিবেচনার জন্য আমরা জোরদাবী জানাচ্ছি:
ক- বেফাকের নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চাই। পুরোপুরি শুরা ও গঠনতন্ত্র ফলো করে নির্বাচন চাই।
খ-সভাপতি সেক্রেটারি সাংগঠনিক সম্পাদক গুরুত্বপুর্ণ প্রথম ৩টি পদের জন্য প্রতিটি বিভাগের ডেলিগেট সদস্যদের পক্ষথেকে একেকজনের নামের প্রস্তাব আসবে।৮ বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৮টি করে নামের প্রস্তাব ২৪জনের আসবে। এরাই হবেন প্রার্থী। স্বেচ্ছায় কেউ না আসতে চইলে বা প্রত্যাহার করেনিলে অসুবিধা নেই।
গ- প্রত্যক্ষ বেলট পেপারের মাধ্যমে ভোট হবে।
ঘ-কেন্দ্রীয় প্যানেলের আয়তন কমিয়ে এনে সর্বোচ্চ ১৯টি পদ রাখুন।
ঙ-প্রতিটি বিভাগ থেকে বিভিন্ন পদের জন্য নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে। প্রতিটি বিভাগ থেকে কতজনের নামের প্রস্তাব করা যাবে তা কেন্দ্র নির্ধারণ করবে।
চ-স্বাধীন নির্বাচন কমিশন থাকবে। তারাই নির্বাচন পরিচালনা করবে।
ছ- কেন্দ্রীয় পরিষদ বা আমেলা বা বোর্ড কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত হওয়ার পর তারাই বিভাগীয় জেলা ভিত্তিক অফিসার্স নিযোগ দিবেন।
জ- শিক্ষার উন্নয়ন সিলেবাস সংস্কার ও সংশোধনী সহ যাবতীয় কাজের জন্য আলাদা একটি গবেষণা কমিটি থাকবে। দেশের সেরা মেধাবীদের ডেকে এনে সেই কমিটিতে কাজে লাগানো যেতে পারে।
ঝ- গবেষকদের দিয়ে মাস্টার প্লান করুন।ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজে গতি নিয়ে আসুন। নেতৃত্ব যার হাতেই আসুক তিনি বিচক্ষণ মেধাবী চিন্তাশীলদের নিয়ে কাজ করবেন।
আমাদের সুপারিস আপনাদের কাছে হাস্যকর মনে হলেও জেনে রাখুন দুনিয়ায় যারা কর্তৃত্ব খাটাচ্ছে এখন তারা কিন্তু ঠিকই এভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই সময় থাকতে ব্যক্তি স্বার্থকে পিছনে রেখে দেশও জাতির বৃহ্ত্তর স্বার্থে যোগ্যদের জন্য জায়গা খালি করে দিন।এটাই আমাদের প্রত্যাশা আগামির আশা।