শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:৪৮
Home / লায়ন, রোটারি, ইসরাইল, আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামায়াত

লায়ন, রোটারি, ইসরাইল, আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামায়াত

আবুল হুসাইন আলেগাজী::

obama০১. সাম্প্রতিক খবরে প্রকাশ, ভারতে বিএনপি নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরি (বাড়ি মিরেরসরাই) ভারতে এক ইসরাইলী রাজনীতিকের সাথে মিলিত হয়েছেন। এ মিটের ছবি মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে তিনি তা স্বীকার করেন। তবে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করেন। তারপরও সরকার তাকে গ্রেপ্তার করেছে। অনেকে হয়তো জানেন, পশ্চিমের ইহুদীদের একটি অংশ জাইনিজম (ইহুদীদের ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তন ও বাইতুল মাকদিসে সোলেমানী টেম্পল নির্মাণের আন্দোলন) বা ইসরাইল বিরোধী হলেও তাদের বড় অংশটি জাইনাবাদী তথা ইসরাইলপন্থী। আর ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকা কেন্দ্রিক লায়ন ক্লাব Lions Clubs International نوادي ليونز الدولية যারা পরিচালনা করেন, তারা কথিত মানবতাবাদের আড়ালে জাইনিজমের Zionism صهيونية কঠোর সমর্থক এবং তাদের শ্লোগানগুলো সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী। একই অভিযোগ (জাইনাবাদের প্রতি সমর্থন) ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকা কেন্দ্রিক আরেক আন্তর্জাতিক সংস্থা রোটারি ক্লাবের বিরুদ্ধে থাকলেও তারা অভিযোগটি অস্বীকার করেছে। তবে তাদের কথিত সেক্যুলার ও মানবতাবাদী শ্লোগানগুলো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। রাবেতা আলমে ইসলামীর প্রচারিত এক ফতোয়ায় মুসলমানদের জন্য লায়ন ও রোটারির মত সংস্থাগুলোর সদস্য হওয়া হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এটি একেবারে সহজবোধ্য বিষয় যে, যারা লায়ন বা রোটারির শ্লোগানে আন্তরিক আস্থা রাখবে, তারা লায়ন বা রোটারিয়ান না হলেও কাফির হয়ে যাবে।

০২. আওয়ামীলীগ সরকার বিগত ১৯৯৬-২০০১ টার্মে মাফিয়া (ইটালির সিসিলিতে صقلية প্রতিষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক বেআইনী ব্যবসা ও অপরাধ চক্র) সদস্য আজিজ মোহাম্মদ বাহাঈ/ভাইয়ের মালিকানাধীন এটিভি নামক চ্যানেলটি বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ, এটিতে কট্রর বিএনপিপন্থী সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতেন। এ টিভির দ্বিতীয় কর্ণধার ব্যক্তি ছিলেন সালাউদ্দীন শোয়েব চৌধুরী নামের এক ইসরাইলের এজেন্ট (ছবি কমেন্টে)। ২০০১ সালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় এলে এ চৌধুরীকে এমডি বানিয়ে দৈনিক ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ ‘ইনকিলাব টিভি’ চালু করার উদ্যোগ নেয়। সব প্রস্তুতি শেষে সম্প্রচারের আগে ‘ইনকিলাব টিভি’ বাতিল করা হয়। ২০০৪ সালে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া হয়ে ইসরাইল যাওয়ার পথে ঢাকা বিমান বন্দরে আটক করা হয় ইসরাইলের এজেন্ট সালাউদ্দীন শোয়েব চৌধুরীকে। ইনকিলাবে কলাম লিখে জাতিয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত হওয়া এক নিকৃষ্ট গাদ্দারকে চিনতে পারে বাংলাদেশের মানুষ। এ চৌধুরী পরে ছাড়া পেয়ে ‘ব্লিটজ’ নামের একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক চালু করে। এ সময় দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক নাঈমুলের সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তার পত্রিকায় ইসরাইল বান্ধব কলাম লিখে। বর্তমানে সে দেশে না বিদেশে জানি না। তবে ২০০৯ সালে দৈনিক আমাদের সময়ে প্রকাশিত এক লেখায় সে তার জাইনাবাদী হওয়ার কথা স্বীকার করেছিল। তার মতে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তনের অধিকার রাখে এবং এটি তাদের মানবাধিকারের অন্তর্ভূক্ত। তার এ লেখাটি আমি নিজে পড়েছিলাম।

০৩. বর্তমান বা আধুনিক গণতান্ত্রিক জাহেলী রাজনীতি ও পতিতা মনোবৃত্তির মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। পতিতার যেমন যেই হোক খদ্দরের প্রয়োজন, তেমনি বর্তমান রাজনীতিকদের প্রয়োজন, যেভাবে হোক ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় যেতে আওয়ামীলীগ যেমন ভারতের কাছে বিবেক বন্ধক রাখতে রাজি, তেমনি বিএনপি রাজি আমেরিকার কাছে বিবেক বন্ধক রাখতে। আর জামায়াতীরা জ্বালাও-পোড়াও ও নাশকতা কিংবা ভোট কিনেও ক্ষমতায় যেতে রাজি। ২০১৫ সালে ফাঁসিতে ঝোলা তাদের নেতা কামারুজ্জামান ২০০৫ সালে বুশ আমলে হোয়াট হাউসে প্রবেশ করে তাদের দল এন্টি-আমেরিকা না হওয়ার বিষয়টা জানিয়ে আসেন। যাই হোক, জাহেলী রাজনীতির এ মুহূর্তের বিস্ময়ের বিষয়, বহির্বিশ্ব, হিন্দুসমাজ ও মিডিয়ার মন পাওয়ার জন্য বিএনপির জাপা এমপি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এ বিএনপি নিয়ে আমি কোনো সময় তেমন আশাবাদী ছিলাম না। কারণ, লীগ-বিএনপি উভয়ে একই মুদ্রার এপিট-ওপিট। বিগত আমলে (২০০১-২০০৬) বিএনপি-জামায়াত জোট ইসলামের নামে ক্ষমতায় এসে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সাথে বেঈমানি করেছিল। ইসলামের জন্য কিছু না করে তারা ব্যস্ত ছিল লুট-পাট ও আখের গোছাতে। ফলে তাদের উপর এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। সে যাই হোক, আমার আশ্চর্য লাগে সেসব হুজুরদের প্রতি, যারা নত হয়ে আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপির মত জাহেলী সংস্কৃতির দলগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখে ও তাদের প্রতি বিনাশর্তে সমর্থন ব্যক্ত করে। এটা তাদের চরম হীনম্যতার পরিচায়ক ছাড়া আর কিছুই নয়।

শেষ কথা, দুনিয়াতে ভালো-মন্দ যা কিছু ঘটছে, তার সবই মানুষের কর্মফল। একদল মানুষ বিবেকহীন ভাবে সমাজের কোনো একটি অংশের উপর সব দোষ চাপায়। বাস্তবতা হলো, আজকের পৃথিবী, মুসলিম বিশ্ব ও বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা আল্লাহর ইচ্ছায়ই ঘটছে এবং তা মানুষের কর্মফল হিসেবেই ঘটছে। আমার-আপনার দায়িত্ব সারা পৃথিবী বা সারা দেশ নিয়ে অহেতুক চিন্তা ও কথা বলা নয়; নিজের সাধ্য অনুযায়ী সৎ ও বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে আল্লাহর ইবাদত ও বান্দার উপকার করে যাওয়া। সিরিয়া বা ইরাকে কার বোমায় কতজন নিহত হচ্ছে, তা নিয়ে অসার হা-হুতাশ নয়; আপনি আপনার নিজের, নিজের পরিবার ও নিজ দেশের মানুষ নিয়ে ভাবুন এবং সম্ভব হলে সারা বিশ্বের মুমিনদের গুনাহ মাফ ও তাদের মুক্তির জন্য দোয়া করুন।

আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর মর্জি মোতাবেক চিন্তা ও কাজ করার তৌফীক দান করুন।

আবুল হুসাইন আলেগাজী
২৪. ০৫. ২০১৬, মঙ্গলবার

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...