খতিব তাজুল ইসলাম::
শরির চর্চা স্বাস্থ্য সচেতনতা খেলাধুলা প্যারেড ইত্যাদির আয়োজন করুন।সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশে ভুমিকা রাখুন। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কেন্টিনের ব্যবস্থা করুন।
…………..যারা দিনে পাঁচবার মিসওয়াক করে অজু করে। একটু রক্ত পুঁজ বেরুলে নাপাকি অনুভব করে। পেশাবের ফুটা কিংবা পিছনের রাস্তায় বায়ু বেরহলে অজু ভেংগে যায়। নামাজের সময় সামরিক কাযদায় সারিবদ্ধ ভাবে দাড়াঁতে হয় লাইন সোজা করে।যাদের ঘুম সুন্নাত তরীকায় স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে ডানদিকে কাত হয়ে। যারা মনে করে পুরুষ হলেও আরেক পুরুষের সতর দেখা হারাম। একজন নারী আরেকজন নারীর সতর দেখা হারাম। সেই সবকের বরকন্দাজ হয়ে আমরা আমাদের ক্লাস কেম্পাস গুলোকে কিভাবে রেখেছি? আমরা কি স্বাস্থ্য সম্মত বিছানা দেই? আমরা কি স্বাস্থ্য সম্মত অজু গোসলের জায়গা দেই? আমরা কি দেই কোরআন হাদীস চর্চা যেখানে বসে করবে সেই জায়গা টুকু একটু পরিচ্ছন্ন?……….পড়ুন বিস্তারিত…
অনেকে বলেন যে, কওমি মাদরাসা বোবা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এখানে হাসি মানা। শুধু রোঁদন আর রোঁদন। কাঁদা যাবে কিন্তু হাসা যাবেনা। আনন্দ উপভোগের কোন সুযোগ নেই।কৌতুক নাটক ড্রামা নিষেধ। শতকরা দুইভাগ মাদরাসায় হয়তো এই ফ্যাসিলিটি আছে। বাকি গুলো খুব কঠিন আইনের ঘেরাটুপে বাঁধা। টুপি কুর্তা গেঞ্জি অন্তর্বাসও তারা কন্ট্রোল করেন। যতসব হাস্যকর দরকারি নয় এমন সব বিষয় নিয়ে কওমি কর্তৃপক্ষ হরদম মাথা ঘামান।অথচ মুচকি হাসি সুন্নাত! আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতশতবার কৌতুক করেছেন!
সুস্থ্য সংস্কৃতি, খেলাধুলা
টুপি হবে পাঁচ কল্লি। তাও আবার থানভী মসলকের জন্য। দুই কল্লি গান্ধী টুপি হতে হবে যদি তিনি হন মাদানী মসলকের। গেঞ্জি হতে হবে হাতওয়ালা। সিকা গেঞ্জি হলে আর রেহাই নেই। মাথা নেড়া করা ওয়াজিব। যেন এই মাত্র হজ্জ ওমরাহ আদায় করে কুরবানী অথবা সায়ী শেষে মাথা কামালেন? হজরত ওমর রাজিঃ নিয়মিত মাথা কামাতেন কারণ তিনির নাকি ধাতু রুগ ছিলো। এখন তামাম কওমি ছাত্র উসতাজের কি ধাতু রুগ ধরা দেখাতে হবে? কিয়ামতের দিন এই সমস্ত বিদআত কাজের জন্য অনৈসলামিক জিনিসকে বাধ্য করার জন্য তারা কিভাবে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রেহাই পাবেন তা ভেবে না পাই কুল কিনার। যা সুন্নাত নয় তা কিভাবে সুন্নাত কিংবা ফরজের আসনে সমাসীন হয়?
একজন বড় আকারের মুহাদ্দিস! কোন এক প্রাইমারি মাদরাসার এক শিক্ষককে দেখলেন সিকাগেঞ্জি পরে বেডমিন্টন খেলায় ছাত্রদের সহযোগিতা করতে। ব্যাশ বেচারার পিছনে ঈমান হারার ফতোয়া। যাদের ঈমান সিকাগেঞ্জি পাঁচকল্লি দুইকল্লি কিংবা মাথা নেড়া করার মাঝে তারা কত যে দুর্বল ঈমানের অধিকারী তা বলাবাহুল্য। এই সমস্ত উলামাদের কাছ হতে জাতি কি আশা করতে পারে? তাদের অবিবেচক ফতোয়াবাজি কেবল ফিতনা ছাড়া কল্যাণকর কিছু বয়ে নিয়ে আসেনি।
তাই মন থেকে বাহুল্যতা ঝেড়ে ফেলে ছাত্রদের হারাম নয় এমন খেলাধুলায় অংশগ্রহন করতে দিতে হবে। আমাকে একবার এক মাদরাসার বিচারিক মিটিংগে বসতে হলে ছাত্র/ছাত্রিদের পিটি করা নিয়ে। মাদরাসার মেন্যাজিং কমিটির এক সদস্যের অভিযোগ যে এই মাদরাসায় ছাত্রদের নাফরমানি শিখানো হচ্ছে। বল্লাম কিভাবে তাহলে? বললেন এই যে ছাত্র/ছাত্রিদের বাহিরে লাইনে দাড়িয়ে লেফ্ট-রাইট করানো হয়। হাত উপরে নীচে উঠানো হয় ! ইহা কওমির জন্য কলংকজন নয়কি? আমি বললাম-জনাব, পিটি বা শরির চর্চা সাধারণত স্কুলে হয় কওমিতে প্রচলন নেই কিন্তু তা খুবই জরুরী, হওয়া উচিত। ছাত্রদের মননের উৎকর্ষ সাধনের জন্য খুবই উপকারী। বললেন অমুক মাদরাসায় হয়না তমুক হুজুরে করতে নিষেধ করেছেন ? বললাম- কে কি করে বা বলে তা বিবেচ্য নয় দেখতে হবে তা ইসলাম সম্মত কিনা? এখানে ইসলামের কি বিধান লংগন হচ্ছে? নামাজে উঠানামা করা, হাত উপরে তুলা নামানো যদি জায়েজ হয় তাহলে এমন কি সমস্যা হলো যে কেউ নামাজের বাহিরে কিছু হারাকাত করলে নাজায়েজ হয়ে যাবে? সে আবার বললো- ঐযে বড় বড় মেয়েরা হাত উপরে উঠায় নামায়? হ্যাঁ, তখন আমি তার কথায় সায় দিয়ে বল্লাম যে, নিশ্চয় বড় বালিগা কোন মেয়ে এভাবে ছেলেদের সাথে একত্রে পিটিতে অংশগ্রহন করতে পারেনা। যাই হউক পরে দেখাগেল এমন বয়সের কোন মেয়েই অত্র প্রতিষ্ঠানে ছিলোই না। এই হলো আমাদের চলমান পরিস্থিতি ও মন মানসিকতা।
আজকাল দেখা যায় ছোট ছোট কঁচি কাঁচাদের মাথায় শাদা পাগড়ি পরিয়ে দেয়া হয়। ৫-৬-৭-৮ বছরের এই শিশু পাগড়ির মর্যাদা কি বুঝে? পাগড়ি কি শিশু পোশাক? না ইহাতো একটি ডিগ্রি বা উপাধি যা আলাদা বৈশিষ্ঠ্য বহন করে। এভাবে শিশুদের মাঝে পাগড়ি প্রবণতার বাধ্যবাধকতা সুখকর নয় বলে মনে করি। দাড়ি রাখা সুন্নাত বা ওয়াজিব।এখন শিশুদের দাড়ি নেই, তাই তারা যদি বলে যেহেতু দাড়ি সওয়াবের কাজ তাই আমাদেরতো নেই চলো উপরি ফল্স দাড়ি লাগিয়ে নেই; কেমন হবে তাহলে? যে বয়সে যা খাটে তাই করুন। যে আবহাওয়ায় যা মানানসই তাই হউক। প্রাইমারি ও নিম্নমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে যৌ্ক্তিক খেলাধুলার আয়োজন থাকতে হবে। ছাত্রদের মেধা বিকাশে সহায়ক ভুমিকা পালন করুন।
একসময় কাসিদা গজল গাইতে হতো আমাদের। যাই পরিবেশন করা হউকনা কেন কাসিদা গজল বললেই হালাল নতুবা হারাম। এই কাসিদা গজল থেকে এখনো ৫০% মাদরাসা বেরুতে পারেনি। কারণ সংগীত কবিতা ইসলামী গান বললে চাকুরি হারাবে ছাত্রত্ব যাবে? উর্দুর চর্চা করতে করতে উর্দুর প্রতিশব্দ বাংলা শোনলে আমাদের মন সয়না। বরদাশত করতে পারিনা। যাক সমস্যা দূর হচ্ছে আরো হওয়া দরকার দ্রুতগতিতে। কারণ নিজস্ব সাংস্কৃতিক বলয় তৈরী না হলে অপসংস্কৃতির অতল গহব্বরে এই জাতি বিলীন হয়ে যাবে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা
যারা দিনে পাঁচবার মিসওয়াক করে অজু করে। একটু রক্ত পুঁজ বেরুলে নাপাকি অনুভব করে। পেশাবের ফুটা কিংবা পিছনের রাস্তায় বায়ু বেরহলে অজু ভেংগে যায়। নামাজের সময় সামরিক কায়দায় সারিবদ্ধ ভাবে দাড়াঁতে হয় লাইন সোজা করে।যাদের ঘুম সুন্নাত তরীকায় স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে ডানদিকে কাত হয়ে। যারা মনে করে পুরুষ হলেও আরেক পুরুষের সতর দেখা হারাম। একজন নারী আরেকজন নারীর সতর দেখা হারাম। সেই সবকের বরকন্দাজ হয়ে আমরা আমাদের ক্লাস কেম্পাস গুলোকে কিভাবে রেখেছি? আমরা কি স্বাস্থ্য সম্মত বিছানা দেই? আমরা কি স্বাস্থ্য সম্মত অজু গোসলের জায়গা দেই? আমরা কি দেই কোরআন হাদীস চর্চা যেখানে বসে করবে সেই জায়গা টুকু একটু পরিচ্ছন্ন?
কিচেন খেকে শুরু করে বারান্দা রুম সিড়ি দহলিজ বাথরুম টয়লেট সবখানের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। দুর্ঘন্ধে রহমতের ফিরিস্তা আসবেন? ময়লা আবর্জনার স্তুপের পাশে বসে বসে আমি দেখেছি শিশুদের কোরাআন মজিদ মুখস্থ করতে।আমি দেখেছি দারুল হাদীসে প্রবেশের পথে ছাত্ররা টয়লেটের বিকট ঘন্ধে টিকতে পারছেনা। হঠাৎ কিছু হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু অপরিচ্ছন্নতা যেন জীবন সংগী হয়ে থাকে।
আমাদের উজবুক মার্কা কিছু মুহতামিম নাজিম প্রধান শিক্ষকগণ বেশি বেশি খয়রাতের আশায় আয়ের লিপসায় ছাত্রদের গাদাগাদি করে রাখেন। যতনা ইসলামের মুহাব্বাত তারচেয়ে বেশি মতলবের মহব্বত। ভাল পরিবেশের মানুষ এসে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে এসে বসতে অস্বস্থি বোধ করে। আর কর্তৃপক্ষ শুধু বিনয় আর লাজুকতা দেখিয়ে নিজেদের দীন হীনের কথা প্রকাশ করেন। যেন গুরবত তাকে পরিচ্ছন্ন থাকতে দিচ্ছেনা। যাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেনা একথা যেন তাদের মনে থাকে।
কেন্টিন বা খাবার দোকান
কেন্টিন বা খাবার দোকান। ভাল ভাল কিছু প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব কেন্টিন আছে।বাহিরের ভেজাল খাবার থেকে রক্ষা করে এবং ছাত্রদের সময়ের হেফাজত কল্পে অভ্যন্তরীণ কেন্টিন খুব জরুরী। মধ্যবেলায় বিরতির সময় স্বল্প মুল্যে নিজস্ব কেন্টিন থেকে ছাত্রদের পর্যাপ্ত চা না্স্তা ও অন্যান্য খাবার পরিবেশন করা উচিত। বোর্ডিংএর মাদরাসায় তো আরো জরুরী। নামমাত্র কেন্টিন না রেখে একটি স্বয়ং সম্পুর্ণ কেন্টিন থাকা চাই।
একহাজার (১০০০) ছাত্রের একটি প্রতিষ্ঠানে যদি প্রতিজন ছাত্র প্রতিদিন ২০টাকা করে খরছ করে তাহলে প্রতিদিনের বিকি-কিনি ২০হাজার টাকা।একটি দোকানের জন্য বিশহাজার টাকা সেইল কি অতি নগন্য? প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ দোকান থেকে রেন্টও পাবে। স্বাস্থ্য সম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য কেন্টিনের কার্যক্রমের দিকে কর্তৃপক্ষের সর্তক নজর রাখাও নৈতিক দায়ীত্ব বলে মনে করি।