শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৩:০২
Home / কওমি মাদ্রাসা সংস্কার সময়ে দাবী- আল্লাহ তায়ালা কি শুধু কওমিতে পড়লেই রাজি এবং খুশি হন?

কওমি মাদ্রাসা সংস্কার সময়ে দাবী- আল্লাহ তায়ালা কি শুধু কওমিতে পড়লেই রাজি এবং খুশি হন?

ফারহান আরিফ::

10955795_367890473398751_6019677659337997175_nআজ যারা একথার বিপক্ষে বিরোধিতা করেন আমি তাদেরকে পরিষ্কার করে দিতে চাই।কেন সংস্কার  প্রয়োজন, কোথায় কোথায় সংস্কার প্রয়োজন। আমরা যারা কমাশিসার হয়ে সংস্কারের কথা বলছি, সংস্কার নিয়ে লেখালেখি করছি, মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। আমাদেরকে বলা হয় বেয়াদব! আমরা কওমি বিরোধী, আমরা ষর্যন্ত করছি, আমাদের উদ্দেশ্য ভাল নয়।আমি তাদেরকে যথাযত সম্মান দেখিয়ে বলতে চাই। এক সময় মাদ্রাসার পরিক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে কলমে লেখা হত, সময় ও যোগের চাহিদা অনুভব করে এখন কম্পিউটার টাইপিং করে প্রশ্নপত্র তৈরী করা হচ্ছে। এক সময় মাদ্রাসার জরুরত মিটানোর জন্য চাঁদা করা হত- ধান-চাল মৌসুমী ফল কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে, আর এখন তার পাশাপাশি মুহতামিম সাহেবরা মাদ্রাসার খরচে ইউরোপ, মিডিলিষ্টে গিয়ে চাঁদা সংগ্রহ সহ অনেক ডিজিটাল প্রদ্ধতিতে চাঁদা করে যাচ্ছেন। এক সময় মাদ্রাসার টয়লেট-বাথরুম, অজুখানা ততটা মানসম্মত ছিলনা, মাদ্রাসার মসজিদ ছাত্রাবাস বিল্ডিং এর আধুনিকায়নের দিকে নজর দেওয়া হতনা ফরহেজগারি দেখিয়ে, আর এখন সময়ের প্রয়োজনে সবগুলোকে ঢেলে মানসম্মত করা হচ্ছে।আরো অনেক উদাহরণ আছে দেখানো যাবে যে, সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে আমরা বাধ্য হয়েছি। রাস্থাঘাট বাড়ি-গাড়ী, খাবার-দাবার, পোষাক-পরিচ্ছেদ সবগুলোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আসলে প্রকৃতি অপ্রকৃতি মানুষের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যোগের প্রয়োজনে পরিবর্তনশীল।এটা এমন এক প্রক্রিয়া যেগুলো প্রয়োজন মনে করে কিছু মানুষেও করে নেয় আর কিছুটা এমনিতেই হয়ে যায়। কিয়ামত অবধি সব খাতে পরিবর্তন প্রক্রিয়া চলবে এটা সাভাবিক এটা হবেই কেউ এটাকে আটকিয়ে রাখতে পারবেনা।

বিভিন্ন সময়ে কিছু প্রয়োজন কিছু চাহিদা মানুষকে বলে দেয় সময় সুযোগে তা করে নিতে , নেওয়াটা হল বুদ্ধিমানের কাজ, আর না নিলে পিছিয়ে পরা ছাড়া কোন উপায় নেই। আজ কমাশিসা কওমি মাদ্রাসার সিলেবাস সংস্কারের আন্দোলনে নেমেছে। সময় উপযোগী সিলেবাস প্রনয়ন, এযোগের ছাত্রদের ধ্যান ধারনাপুষ্ট শিক্ষানীতি, যোগের চাহিদা মিটাতে কওমিকে নতুন করে সাজাতে কাজ করছে।দেখতে পাবেন- মাদ্রাসার পুরাতন বিল্ডিং ভেঙ্গে নতুন করে পরিবর্তন করা হচ্ছে, মাদ্রাসায় বিদেশী আদলে মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে, স্পিকারের সাহায্যে ক্লাসে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে,শহরের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষকরা পায়ে হাটা ছেড়ে দিয়ে দামী দামী কারে ছড়ে মাদ্রাসায় প্রবেশ করছেন। যেটার জন্য এত আয়োজন এত দৌড়যাপ এত পরিবর্তন সেটার কোন খবর কেউ রাখেনা। সেটার মধ্যে কোন নতুনত্ব নেই। আজ অবধি সিলেবাস পরিমার্জন পরিবর্তন করে যোগের চাহিদা মিটাতে কোন প্রদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা। একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কওমিতে কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছেনা। ছাত্রদের ধ্যান ধারনা, রুচি মানসিকতা চাওয়া পাওয়া মেটানোর মত কোন সিলেবাস কওমিতে নেই। প্রাচীন দরসে নেজামির সিলেবাস প্রক্রিয়ার জালে আবদ্ধ করে এযোগের ছাত্রদের জ্ঞান ও মেধাকে বিকশিত করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যে যোগের ছাত্ররা তাদের মনন চিন্তা চেতনা প্রতিভা দিয়ে জ্ঞান বিজ্ঞান ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মিছিলে শরিক হয়ে কতভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলছে আর আমরা কওমিরা ১৬ বছর দরছে নেজামির পাঠ থেকে শিক্ষা নিয়ে হায়হুতাশ করা ছাড়া কিছুই করতে পারছিনা। ১৬ বছর পড়াশুনা করে হিসাব মিলিয়ে দেখা যায় “না ইদহর না উদহর। একমাত্র লিল্লা ছদকা পরনির্ভর হয়ে বাকী জীবন অতিবাহিত করতে হয়। কওমিতে শিশু থাকা অবস্থায় বলে দেওয়া হয়” আমরা দুনিয়া পাবার জন্য মাদ্রাসায় লেখাপড়া করিনি, আল্লাহ কে রাজি খুশি করার জন্য ইলিম শিখি” আমি বলতে চাই যারা কওমিতে দ্বীনের খেদমত করছেন তাহলে বেতন নেন কেন? কম বেতন দিলে চাকরি ছেড়ে দেন কেন? মুহতামিমের নামে এত অভিযোগ অনুযোগ, তাঁকে নিয়ে এত সমালোচনা কেন? যেহেতু আল্লাহ কে রাজি খুশি করার জন্য কওমিতে পড়াশুনা করা হয় তাহলে বেতনের ব্যাপারটা আসে কেন? একটিবার চিন্তা করে দেখেন কথাটা কি? ছোটকালে আমাদের মগজে কি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল? একজন স্কুলের ছাত্র যদি বলে আমি আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য ডাক্টার হব মানুষের সেবা করব, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য বিচারক হব, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য ব্যাবসায়ী হব, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য শিক্ষক হব, এরকম কথা বলাকি তার জন্য অমুলক হবে? তার জ্ঞান আহরণ করতে কি আল্লাহ তার উপর খুশি হবেন না? শুধুযে আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য মাদ্রাসায় পড়তে হবে, মুহাদ্দিস,মুফাসসির, মুফতি হতে হবে এমনত কোন কথা নয়।komashisha-Madania-Biswanat-02

আল্লাহকে রাজি খুশি করা যায় অনেক ভাবে।ইসলামের শিক্ষা হল একজন ব্যাক্তির ইলিম হাসিল করা ফরজ যতটুকু তার জীবনে প্রয়োজন। মুসলমানদের সব কিছুইত আল্লাহর জন্য।শুধু মাদ্রাসায় ইলিম হাসিল করলেই আল্লাহর জন্য হবে, অন্য সব কিছু করলে কি আল্লাহর জন্য হবেনা? এবার বলুন আমরা কি করছি? যে উস্তায ছাত্রদের শিখিয়েছেন এতদিন যে, আখেরাতের জন্য পড়েছেন দুনিয়ার জন্য নয় সেই তিনিইত জীবনের প্রতিটি পদে পদে মানুষের কাছে হাত পাতেন। ছাত্রদের কাছে যাচনা করেন, ঘর বানিয়ে দিতে, মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করতে, চিকিৎসার জন্য টাকা দিতে। তার শিখানো উসূলের খেলাফ তিনি নিজেই। তাহলে মিছেমিছি কেন তারা বলেন যে, দুনিয়ার কোন জরুরত তাদের নেই।খুব চমৎকার ভাবে খতিব তাজুল ইসলাম এই কথাগুলো বলে কওমির চোখ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সুতরাং একগুঁয়েমি পরিত্যাগ করে যোগের চাহিদা ও প্রয়োজনের দিকে নজর দিন।একবিংশ শতাব্দির চাহিদার দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করুন।যোগোপযোগী সিলেবাস প্রনয়ণ করে এযোগের ছাত্রদের জ্ঞান ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে আগামির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ছাত্রদের সহায়তা করুন। আমি মনেকরি সর্বপ্রথম আমাদের চিন্তা চেতনা ও মানসিকতার সংস্কার প্রয়োজন। তখন দেখবেন ধীরে ধীরে আমরা সংস্কার করতে, কওমির শিক্ষা ও সিলেবাসকে নতুন করে সাজাতে সবাই এগিয়ে আসবো।কমাশিসা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখে, কমাশিসা সোনালী যোগের স্বপ্ন দেখে, কমাশিসা একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মত ছাত্র কওমিতে দেখতে চায়। আল্লাহ তালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ, সময় উপযোগী সঠিক চিন্তা, কওমিকে নতুন ভাবে সাজানোর মত হিম্মত ও সুমতি দান করুন।

লেখকঃ ফারহান আরিফ এম,সি কলেজ,সিলেট।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...