শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১২:২০
Home / কমার্স কলেজ শিক্ষার্থীদের কান্ড: নৈতিক অধঃপতনের শেষ কোথায়? (ভিডিও)

কমার্স কলেজ শিক্ষার্থীদের কান্ড: নৈতিক অধঃপতনের শেষ কোথায়? (ভিডিও)

এহসান বিন মুজাহির:

Ahsan Bin Komashisaপাশ্চাত্য প্রসবিত সামাজিক অবক্ষয় আর নোংরামীর নতুন দৃষ্টান্ত দেখলো দেশবাসি। ধর্মীয় মুল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম শৃঙ্খলাকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে জ্ঞানার্জনের পাঠশালা পাড়ায় ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা একি কান্ড ঘটলো! ঘটনাটি শুনতে, দেখতে, বলতে, লেখতে যদিও খারাপ দেখাচ্ছে তবু সঙ্গত কারণেই চিত্রায়িত করতে হচ্ছে কাগজে! সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। ঢাকা কমার্স কলেজের সামনেই ঘটলো এমন নির্লজ্জ ঘটনা!
সবাই কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী, কলেজ ড্রেসও পরা। এদের মধ্যে একজনকে ‘প্রেমের প্রস্তাব’ দিতে বন্ধুরা মিলে করেছে ‘স্মরণীয়’ আয়োজন। প্রথমে হাতে হাত ধরে বৃত্ত বানিয়ে তাদের দুজনকে ভিতরে রেখে চারপাশ ঘুরছে অন্যান্য সহপাঠিরা। এরপর ছাত্রটি হাঁটু গেড়ে ছাত্রীকে প্রপোজ করছে, পরিয়ে দিচ্ছে আংটিও। এরপর সেই ছাত্রী একে অপরকে প্রকাশ্যে খোলামেলা জড়িয়ে ধরে প্রেমনিবেদন করে। বাকি বন্ধুরাও উপভোগ করছে নিলর্জ্জ দৃশ্যটি। সেই ঘটনার ভিডিও চিত্রও মোবাইলে ধারণ করে আপলোড করা হয় ইউটিউবে। একসপ্তাহ আগের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়। কেউ কেউ এমন কাজকে সাবাশি দিয়ে লিখছেন, ‘হাউ সুইট, কত রোমান্টিক একটা মুমেন্ট’। আবার কেউ লিখছেন, তরুণ প্রজন্মের এসব হচ্ছে কী? সব কিছুতে এত শো অফের কী প্রয়োজন? আর কলেজ ড্রেস পরে এসব ভিডিও বানিয়ে কী বোঝাতে চাইছে তারা? ভার্চুয়ালে বা অফলাইনে যে যাই বলুক অন্তত একজন নৈতিক ও বিবেকসম্পন্ন দায়িত্বশীল মানুষের কাছে বিষয়টি মোটেও পছন্দের নয়! একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেস পড়ে কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় খোলামেলা আপত্তিকর দৃশ্য মোটেও ভালো আলামত নয়! বিষয়টি সত্যিই জাতি এবং আগামি প্রজন্মের জন্য বড় অশনি সংকেত।
ঘটনায় অভিযুক্ত ১১ জনই ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসবুরা সামিহা কায়নাত এবং শাফিন আহমেদ খান। বাকি নয়জন দুজনেরই বন্ধু, সহপাঠি। বন্ধু সামিহা এবং শাফিনের বিশেষ মুহূর্তেকে স্মরণীয় করে রাখতে বাকিদের নিয়ে করে এ আয়োজন।
কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছেও বিষয়টি পছন্দ হয়নি। গত বৃহস্পতিবার (১২ মে) অফিস বিজ্ঞপ্তিতে শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে ঢাকা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবু সাঈদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রেমিক যুগলকে বহিস্কার করেছে ঢাকা কমার্স কলেজ। বাকি ৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার, ১৬ মে, ভর্তি বাতিলের শিকার রাজধানীর কমার্স কলেজের সেই ৯ শিক্ষার্থী ছাত্রত্ব ফিরে পেয়েছে। তবে ওই প্রেমিক যুগলের শাস্তি বহাল রয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কলেজে উপস্থিত হয়ে সন্তানরা এমন ভুল আর করবে না বলে কমিটমেন্ট দেন। পরে এ কলেজ অধ্যক্ষ সাইদ তাদের বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেন। তবে বহিষ্কৃতদের (প্রেমিক যুগলের) ক্ষমা করা হয়নি। (দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৬ মে)
একটু পর্যালোচনা করলে দেখা যাক এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদের সমাজকে কী ম্যাসেজ দিলো! এই ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ ফেসবুক, পোর্টাল, ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশের নৈতিকতাসম্পন্ন ছাত্রজনতাসহ সচেতন ধর্মপ্রাণ মানুষ হতবাক হয়ে যান। সামাজিক অবক্ষয়ের এই করুণ চিত্র স্তম্ভিত করে দেয় দায়িত্বশীল শিক্ষক-অভিভাবকদের! ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা-দেশি-বিদেশী ডিস-টিভি চ্যানেলগুলোতে অশ্লীলতার নগ্ন প্রদর্শনী! নারী স্বাধীনতার নামে নারী ভোগের সামগ্রী হিসেবে উপস্থাপন করার তুমুল প্রতিযোগিতাই এই নৈতিক অবক্ষয়ের মূল কারণ! মসজিদের শহর ঢাকা নগরীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেস পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এই নোংরামী, অশ্লীলতা সমাজ কিভাবে দেখছে? যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা শিখানোর কথা এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের পাশেই যদি কুশিক্ষার ফল প্রকাশ পায়; তাহলে এমন লজ্জাজনক ঘটনা প্রজন্মের কাছে কি শিক্ষনীয় নয়? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশের রাস্তায় প্রকাশ্যে একে অন্যকে জড়ানো-চুমাচুমির কথা কল্পনাই করা যায় না!

নির্লজ্জতা এখন স্কুল কলেজের মানদন্ড !
নির্লজ্জতা এখন স্কুল কলেজের মানদন্ড !

এমন ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের দেশের ভাবমর্যাদা অনেক খাটো করে দিলো। শিক্ষার সিলেবাসে ধর্মীয় মুল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার পাঠ না থাকলে এমন ঘটনা বিস্ময়ের নয়! ধর্মীয় শিক্ষার অনুপস্থিতি থাকার কারণেই সমাজের সর্বত্র আজ অনৈতিকতা, বেহায়াপনা! নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাবেই আজ এসএসি পরীক্ষায় অাশানুরুপ ফলাফল না পেয়ে এবং পরীক্ষায় ফেল করার অপমানে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার মতো জঘন্য খারাপ পথ বেছে নেয়! এর প্রমাণ সদ্যপ্রকাশিত এসএসি পরীক্ষার ফল! জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায় গত ১২ মে, বুধবার থেকে ১৬ মে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১জন ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন উপায়ে আত্মহত্যা করেছে! কাজেই ধর্মীয় মুল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতা ফিরিযে আনতে স্কুল-কলেজের সিলিবাসে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামুল করতে হবে। পাশাপাশি ভারতীয় সিরিয়াল স্টার জলসাসহ ডিস, কালচার এবং সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট।

এলজ্জা রাখি ক!ই?

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...