খতিব তাজুল ইসলাম::
উর্দু আপনাদের কোন কাজে লাগে ? বাংলা ভাষার প্রতিটি শাখাতে যোগ্যতার সাথে আপনাদের দাপিয়ে বেড়াতে হবে।এই বিষয়ে যদি কোন অবহেলা করেন তাহলে তা হবে ঐতিহাসিক ভুল এবং আত্মহত্যার শামিল। -আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ।
পাকিস্তান একটি ইসলামী রাষ্ট্র। এখানে দারুল উলুম দেওবন্দ কিংবা লকনুউ অথবা নদওয়ার মতো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। আমরা এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই যেখানে ধর্ম এবং জাগতিক শিক্ষার সমন্বয় হবে। খোলাফায়ে রাশেদীনের জামানের মতো প্রজন্ম গড়ে উঠবে।– আল্লামা মুফতী শফী রাহ পাকিস্তান।
ধর্মহীন কর্মশিক্ষা এবং কর্মহীন ধর্মশিক্ষা জাতিকে পংগু করে দিচ্ছে। ইহা জাতির জন্য একটি অভিশাপ।– ছদরে মিল্লাত আল্লামা শামছুল হক্ব ফরিদপুরী রাহ।
আব্বাজান মুফতী শফী রাহ’র পরামর্শে দারুল উলুম করাচীকে আমরা জাগতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয়ে গড়ে তুলেছি। বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে আমাদের বহুমুখী প্রতীভা অর্জনের বিকল্প নেই।– আল্লামা তাক্বী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম।
এবার আসুন আমরা আমাদের কর্মগুলোকে মিলিয়ে দেখি। আমাদের আকাবির আসলাফের বার বার সতর্কবাণী শুধু আমরা উপেক্ষা করিনি বরং ইহাকে অনর্থক এবং অনৈসলামিক বিষয় রূপে গন্য করতে শুরু করেছি। সংস্কারের কথা বললে বেআদব।জাগতিক শিক্ষার কথা বললে দুনিয়াদার।
আমাদের চারিদিকে এখন যে প্রতিকুল পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে আমরা ভাবি ইহা আমাদের কর্মফলের জন্য নয় । হঠাৎ করে কোটি কোটি লোকগুলো নাস্তিক মুর্তাদ হতে চলেছে। হিজাবের বিরুধীতা করতে শুরু করেছে। আলেম উলামাকে জংগী মাদরাসা শিক্ষাকে জংগীবাদ বলে আখ্যাদিতে থাকে। আমরা দেখি হু হু করে বাংলা ভাষার উপর খোদাদ্রুহী লিখার সয়লাব। কবিতা গানে সাহিত্যে ইসলামী আদর্শ নিয়ে বিদ্রুপ। স্কুল কলেজ ভর্সিটি গুলোতে নাস্তিক্যবাদী মতবাদের প্রাদুর্ভাব। হিন্দু শিক্ষক । হিন্দু সাহিত্য।হিন্দুয়ানী কালচারে গোটা পরিবেশ এখন ভয়ংকর। ঠিক এই মুহুর্তে এখনো আমরা আমাদের করণীয় ঠিক করি নাই।
আমরা আমাদের ১লা বৈশাখ আসলে ফতোয়ার তুফান তুলি। গেল গেল বলে রব উঠাই। অথচ একসময় ১লা বৈশাখ নিয়ে তেমন মাতামাতি ছিলোনা। এখন হয়েছে কি? ১লা বৈশাখের পুরোটাই এখন বিজাতীয় কালচারের দখলে। কোটি কোটি তরুণ তরুণীরা আজ অপসংস্কৃতির কালো থাবার শিকার। কিন্তু আমরা তার কোন বিকল্প উপহার দিতে সক্ষম হইনি। আমাদের ফতোয়াও কাজে আসেনি।
বাংলা ভাষার জন্য ৫২তে আন্দোলন হয়েছে। মুসলমানরা রক্তদিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রবিন্দ্রনাথ মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় বলে টিটকারী মারতেন। আজ ফলাফল কি দাড়িয়েছে? মাসআলা মাসাইলের বই দেখলে জংগীবই বলে জেলে পুরে। হিজাবী বোনদের জংগী মেয়ে বলে নির্যাতন করে হল থেকে তাড়িয়ে দেয়। এসব আমাদের চোখের সামনে।
আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঘৃণা করি। সরাকরী পড়াকে মন্দ বলি। পরিণাম কি হয়েছে তাহলে? জায়গাতো ফাকা থাকেনা। কেউ না কেউ দখল করে নিবে। আজ তারা সবই দখলে নিছে। আর আমরা কখনো নারীর জন্য আন্দোলন করি। কখনো রাসুলের অধিকার নিয়ে। কখনো আল্লাহর সম্মান নিয়ে। কখনো কোরআন অপমানের বিরুদ্ধে ময়দান কাঁপাই। ১৩ দফার জন্য শাপলা হয়েছে। এর আগেও তাসলিমা দাউদ হায়দার আলাউদ্দীনদের নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। এখন আপনি কতজনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন? গোটা দেশ যেন কুফরে ছেয়ে গেছে।
আমাদের আকারির আসলাফগণ বাংলাসন আবিষ্কার করলেন খাজনা যাকাত উশুর কর কালেকশনের সুবিধার জন্য। আমরা বাংলা সনকে প্রায়্ই ঘৃণা করি যেভাবে করতাম বাংলা ভাষাকে আগে। আমাদের আকাবির বলছেন তোমরা উর্দুর পিছনে পড়ে সময় নষ্ট করোনা। আমরা খামাখা উর্দু নিয়ে ভিজি। আমাদের মাদরাসা সন বা সাল কি দিয়ে হবে এ নিয়ে আমাদের মাঝে বিস্তর ফারাক। কারণ আমরা সবসময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। যেভাবে টিভি নিয়ে ছিলো আমাদের মাঝে দা কুমড়া। এখনতো অনেকে আগ বাড়িয়ে বলছেন যে, টিভি ইন্টারনেট ভিডিও ব্যবহার করা ফরজে আইন। যাতে বাতিলের মোকাবেলা করা সহজ হয়। দেরী অনেক হয়ে গেলনা?
আরবি মাস হিজরি সন আমাদের ইসলামের ঐতিহ্য ও ডকুমেন্ট। হজ্জ রামাদ্বান ইত্যাদিতো এই মাসের মাধ্যমে নির্ধারীত হয়ে থাকে। এই মাসের প্রচলন এবং হিসাব রাখা ঈমানী কর্তব্য। এখন তা কিভাবে? শুধু শাওয়াল থেকে রামাদান শিক্ষা বছর ফলো করলেই কি হক্ব আদায় হয়ে যায়? অথচ বাকি সকল কাজ যেমন ওয়াজ মাহফিল দোয়া দুরুদ মিলাদ বেতন সবি সৌরবছর মোতাবিক করি। শিক্ষা বছর হিজরী সনের সাথে হতেই হবে তা কে বলেছে? আরবের আবহাওয়া ও পরিবেশ এমন যে সেখানে চান্দ্রমাস গ্রহন করলে কোন ব্যত্যয় হয়না। কিন্তু ভারত বাংলাদেশ ৬ রিতুর দেশ। দুইমাস পরপর আবহাওয়ার পরিবর্তন। শীত বন্যা মেঘ বৃষ্টি বাদল। পড়ালেখা পরীক্ষা গ্রহন যদি চা্ন্দ্রমাসের গণনায় চলে তাহলে ভরা বন্যা বা ভারী বৃষ্টিতে তা সম্পাদন বার বার বাধাগ্রস্থ হতে দেখেছি।
সাহাবাগণ রামাদ্বানে জিহাদে অংশ গ্রহন করতে পারেন। আমরা রামাদ্বানে দারস নিলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়? পিছিয়ে পড়াই কি আমাদের নিয়তি? হক্বীক্বত বুঝবোনা। বাস্তবতা মানবোনা। চাহে দেশ ধংস হউক । জাতির বিপর্যয় ঘটুক। ইসলামের ক্ষতি হউক। ১৭কোটি বাংলাদেশী হিন্দুদের জবর দখরে চলে যাক তাতে আমাদের কিছু যায় আসেনা? সত্যিই কি আপনি উম্মাহর দরদী? ইসলামের খাদেম? রাসুল প্রেমিক? প্লীজ প্রমাণটা পেশ করুন।