লাবিব আব্দুল্লাহ::
খসড়া প্রস্তাব (৫২)
মাদরাসায় কিন্ডার গার্টেন দারুল উলূম করাচী৷
আল্লামা রাফী উসমানী মুহতামিম৷ তিনি পাকিস্থানের গ্রান্ড মুফতী৷ টিভিতে আলোচক৷ দেশে দেশে পর্যটক৷ লেখক৷ চিন্তক৷ এই মাদরাসার শাইখুল হাদীস হলেন মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী৷ তিনি শাইখুল হাদীস৷ আন্তর্জাতিক দীনী ব্যক্তিত্ব৷ লেখেক৷ ফকীহ৷ অর্থনীতিবিদ৷
এই দুই হযরতের ছেলেরা মাওলানা এবং ডক্টর৷ অর্থনীতিতে ডক্টরেট করেছেন৷ তকী উসমানী 1960 সালে দাওরা শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়ে নিয়মিত এল এল বি করেছেন৷ আরবী ভাষা ও সাহিত্যে ইউনিভার্সিটি থেকে সার্টিফেকেট অর্জন করেছেন৷
এই দুই জনের পিতা মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ৷ মুফাসসির৷ দারুল উলূম দেওবন্দের মুফতীয়ে আযম৷ দাদা দেওবন্দের মুহাদ্দিস৷ জন্ম দেওবন্দে৷ 1947 সালে মুফতী শফী রহ পাকিস্থানে হিজরত করেন৷ নতুন দেশে তিনি নতুন আঙ্গিকে শিক্ষার কথা বলেন৷ সরকারকে বোঝাতে চেষ্টা করেন৷ সে শিক্ষাব্যবস্থাটি দেওবন্দ, আলীগড় বা নদওয়ার মতো নয়৷ তিনি মনে করতেন ইসলামের প্রথম শতাব্দির আদলে হবে পাকিস্থানের শিক্ষাব্যবস্থা৷ দীন দুনিয়ার সমন্বয় থাকবে৷ বিজ্ঞানকে দীনী শিক্ষার আবহাওয়ায় শিক্ষা দেওয়া হবে৷ মুসলিমরা শিক্ষাকে বিভাজন করবে না৷ সরকার তা মানে নি৷ তিনি নিজেই উদ্যোগ নেন৷ প্রতিষ্টা করেন দারুল উলূম দেওবন্দের আদলে দারুল উলুম করাচী৷ সাথে এস এস সি লেভেলের স্কুল৷ মেয়েদের জন্য বালিকা মাদরাসা৷ এইসবগুলো একই সীমানায়৷ বিশাল আয়তনে৷
চলতি মাসে দারুল উলূম করাচীর স্কুল শাখা থেকে 21 স্টুডেন্টকে হাফেযে কুরআনের পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠান হয়েছে৷ আল্লামা তাকী উসমানী ছিলেন স্কুলের ছাত্রদের হিফজুল কুরআন শেষ করার পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠানে আলোচক৷ তিনি তাঁর আব্বার শিক্ষাভাবনার কথাগুলো বলেন৷
মুফতী শফি রহ ছিলেন থানুবী রহ এর খলীফা৷ হাকীমুল উম্মতের খলীফা, দেওবন্দের মুফতী হয়েও ছেলে তকীকে কেন কলেজে পডতে দিলেন? কেন সরকারী সনদের প্রয়োজন মনে করলেন? তাকী সাহেব আল্লামা হয়েও কেন ছেলেকে ডক্টর বানালেন? প্রশ্নগুলো মাথায় রাখি আমরা৷
দুই
আমরা এবার নদওয়াতুল উলামার বর্তমান মুহতামিমের জীবনী দেখি৷ তিনি বিনয়ী ও বুজুর্গ আলেম মাওলানা রাবে হাসান নদভী৷ আল্লামা আবুল হাসান নদভী রহ এর বংশের লোক৷ তিনি লেখক৷ দাঈ৷ গবেষক৷ উর্দু ও আরবীতে কালজয়ী কিতাবের লেখক৷ তিনি মাওলানা এবং ডক্টর৷
মাওলানা ডক্টর রাবে হাসান নদভী৷ কী সুন্দর চেহারা ও মানসিকতা! এই পরিবারে আলী মিয়াঁর বড় ভাই ডাক্টার আব্দুল আলী৷ পিতা হলেন আব্দুল হাই৷আল্লামা৷ নুযহাতুল খাওয়াতি নামে আরবীতে কালোত্তীর্ণ গ্রন্থের লেখক আব্দুল হাই রহ৷ নিজে মাওলানা হয়েও কেন ছেলেকে ডক্টর বানালেন এবং মাওলানাও৷ নদওয়ার মতো একটি দীনী প্রতিষ্ঠানে সরকারী সনদধারীকে কেন রেক্টর বানানো হলো? কেন তিনি মাওলানার পর আবার ভার্সিটির সনদের জন্য গেলেন? এই পরিবার বালাকোটের শহীদ সাইয়্যিদ আহমদ বেরলোবী রহ এর উত্তরসুরী৷
তিন
জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া পাকিস্থানের বর্তমান মুহতামিম একজন ডক্টর৷ তিনি দেশের শীর্ষ আলেম৷ ডক্টর হাবীবুল্লাহ মুখতার ছিলেন পাকিস্থানের শীর্ষ আলেম৷ ডক্টরেট অর্জন করতে হয় ভার্সিটিতে৷ ভার্সিটির বারান্দায় যিনি গেলেন তিনি কেন মাদরাসার মুহতামিম হবেন?
চার
এবার বাংলাদেশের কওমী মাদরাস৷ কওমী বনাম আলিয়ার লড়াই৷ কওমী বনাম কলেজের সম্পর্ক নিয়ে এক মিনিট ভাবতে থাকি৷
আমরা ভাবতে পারি সকালের মকতবগুলো মৃত কেন? কেন সাবাহী মকতবগুলোকে কোনো অবস্থাতেই জীবীত করা যাচ্ছে না?
আমরা ভাবতে পারি মাদরাসার হাজার হাজার ফারেগীনদের কতজন জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখছেন? দেশের যে সেক্টরের বাগডোর হাতে রাখলে পরবর্তী জেনারেশন মুসলমান থাকতে পারে সেসব কোন সেক্টরে এই হাজার হাজার এবার যারা মাওলানা হলেন তাদেরকে আমরা পাঠাতে পারি এবং তারা যোগ্য সেসব সেক্টরে৷ সামরিক? বেসামরিক? শিক্ষার কোন দফতরে? সচিবালয়ের কোন চেয়ারে?
আমাদেরকে ওয়াজ মাহফিলে পাওয়া যাবে এবং মিম্বর ও মেহরাবে৷ এই মাহফিলগুলো কে আয়োজন করে? স্বাধীনভাবে বক্তাগন কি সব বলতে পারেন?
মিম্বর ও মিহরাবের ইমাম ও খতীবের বেতন ও অজিফা কে নিয়ন্ত্রণ করে?
আমরা মাদরাসায় পড়েছি এটি বিশেষায়িত শিক্ষা সুতরাং আমাদের আর কোনো সেক্টরে যেতে হবে না এটি কতটুকু ঠিক এই যুগে?
তাহলে কেন কওমী নাম? কওম কওমী অর্থ যদি জাতি ও জাতীয় হয় তাহলে জাতীর কোন প্রয়োজনে কওমীর শিক্ষার্থীরা অবদান রাখছেন? কওমী মাদরাসা যদি জাতীয় শিক্ষা হয় তাহলে জাতীয় সংসদ থেকে জাতীয় সকল পর্যায়ে নেই কেন আমরা?
কোনো ব্যাক্তি বা বোর্ডকে দোষারোপ না করে আমরা ঠান্ডা দেমাগে ভাবতে থাকি জাতীর কোন সেক্টের এই জাতীয় শিক্ষার লোকগুলো অবদান রাখছেন?
আগামীতে মসজিদের মতো মাদরাসাগুলোও ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তার লোকদের দখলে চলে যাবার সমূহ লক্ষন প্রকাশমান৷
আপনার আমার মাদরাসার কমিটির সদস্যদের চেহারাগুলো দেখলেই চিনতে পারবো কাদের অধীনে চলছে কওমী মাদরাসা৷ সামান্য খয়রাতি টাকা দিয়ে কমিটির শীর্ষ পদগুলো কীভাবে দখল করে রেখেছে সেই সব জালেমরা যারা কোরআনের উনত্রিশটি হরফও শুদ্ধ করে পড়তে পারে না৷ খতমে বোখারীতে একটি গরু পাঠিয়ে দাড়িহীন সেই লোকগুলো মাদরাসার হর্তা কর্তা৷
চাটায়ে বসে গাছ তলায় পড়িয়েও হলেও মাদরাসাগুলোকে সেই চিন্তার লোকদের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে৷ হারাম টাকা, এক ট্রাক ইট দিয়ে সেই হারামখোররা কওমীর ভবনগুলোও দখল করে নিচ্ছে৷ এখন আর বৃটিশ আসার প্রয়োজন নেই ঘরে ঘরে বৃটিশ আমাদের৷
কীভাবে মুক্ত হবে কওমী মাদরাসা আমি জানি না তবে শিক্ষার সকল বিভাগে বিচরণ করতে হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে কারোর মহতাজ না হয়ে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে আলেমদেরকে আরও সচেতন হতে হবে কওমী মাদরাসার নেজাম, নেসাব নিয়ে৷ অন্যথা কালের গর্ভে কওমীর স্বকীয়তা হারিয়ে যাবে থাকবে শুধু ঝকঝে বাথরুম৷ তকতকে মেহমানখানা৷ সেসবে বিড়ির ধূমায়িত পরিবেশে ইলম বিদায় নেবে৷ মাদরাসা হবে বোখারা সমরকন্দের মতো উজাড়৷ যা হয়ে ছিলো ভলশেভিক বিপ্লবের পর৷ যা হয়ে ছিলো শ্বেতভল্লুকদের আমলে রাশিয়ায়৷ আল্লাহ না করুন৷
প্রস্তাবনাঃ
মাদরাসায় বা আলেমদের নিয়ন্ত্রণে কিছু কিন্ডার গার্টেন স্কুল করা হোক মুসলিম বাচ্চারা সরকারী পাঠ্যপুস্তকের সাথে কুরআনুল কারীম পড়বে বিশুদ্ধভাবে এবং কিছু আরবী ও ইসলামের বিশুদ্ধ চিন্তা৷ এটি হবে একুশ শতকের মকতব৷ তা হোক দ্রুত৷
21/4/2016
মাদরাসা ইবনে খালদুন ময়মনসিংহ