কমাশিসার মুখোমুখি:
আপনার খবর কি? জী আলহামদুলিল্লাহ ! আপনি কেমন আছেন ? ভাল আছি আল্লাহর রহমতে। চলুন উপরে যাই কিছু কথা হবে চা পান করবো একসাথে বলেই সিঁড়ি ভাংতে ভাংতে উপরের দিকে। কয়েকটা সিঁড়ি ডিংগিয়ে রুমের থালা খুলে বললেন বসেন। আপনার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের খবর কি? জী খুব ভালো।এইবার অর্ধ শয়ের কাছাকাছি ৫ম শ্রেণীর ছাত্র/ছাত্রী জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দেয়ার ইন্তেজাম চুড়ান্ত। আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম অবাক বিষ্ময়ে পুণরায় জানতে চাইলাম কী বলছেন। সেই কথাটুকুই আবার উচ্চারণ করলেন। বললাম আপনার প্রতিটি কথা এখন অন দ্যা রেকর্ড। মুচকি হেসে আরো কিছু গুরুত্ব পুর্ণ বিষয় সামনে নিয়ে আসলেন যা আজ কমাশিসার পাঠকদের জন্য বিশেষ উপহার।
তিনি হচ্ছেন হজরত মাওলানা হাফিজ নাজির উদ্দীন সাহেব ইমাম ও খতিব লন্ডন মাইলেন্ড মাজাহিরুল উলুম জামে মজিদ।প্রতিষ্টাতা ভাইস প্রিন্সিপ্যাল জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম বরুণী বিশ্বনাথ। বিচক্ষণ আলেমে দ্বীন মধুর কোরআন তিলাওয়াত ও বুদ্ধিদ্বীপ্ত বয়ানের অধিকারী তরুণ এই মেধার সাথে কিছুক্ষণ। কমাশিসার একনিষ্ট পাঠক ও ভক্ত হলেও তিনির নিজস্ব কিছু চিন্তাধারা লালন করেন। অনেক সময় কমাশিসার বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে কার্পণ্য করেননি। কিন্তু নিজের প্রতিষ্টানে কমাশিসার বাস্তব আমলি নমুনা রূপায়ন যেন আমাদের তিনি তাক লাগিয়ে দিলেন। কমাশিসার প্রচারেই যে তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন একথা না বলে যুগের চাহিদা অনুধাবনের মতো যোগ্য একজন রাহবর হিসাবে আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারি। তিনি বলেন আমাকে বদনাম দিতে চেষ্টা করাহলো যে মাদ্রাসা স্কুল হয়ে যাচ্ছে ? আমি তাদের চিন্তার গভীরতা দেখে নিজে নিজেই হই লজ্জিত।
তিনি বলেন ঢাকায় যখন হিফজ সম্পন্নের পথে ছিলাম তখন ১৯৮৪’র কথা। আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রাহঃ হোটেল পুর্বাণীতে বয়ান রাখলেন। বাংলাদেশের আলেম উলামাদের উদ্দেশ্য বললেন গুরুত্বপুর্ণ অনেক কথা । তিনি আফসুস করে বলেন যে, আমি শোনেছি আপনাদের অনেকেই নাকি বাংলা ভাল করে জানেন না। মনে রাখবেন বাংলা আপনাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা মায়ের ভাষা এই জনপদের ভাষা এই জাতির ভাষা।এই দেশের কৃষ্টি কালচার আদর্শ আখলাক সমপর্কে আপনাদের ভাল করে ধারণা থাকতে হবে।আর এই জাতির কাছে ইসলামের শিক্ষা পৌছাতে বাংলার কোন বিকল্প নেই। উর্দু শিখে আপনাদের কি লাভ হচ্ছে? এক সময়তো ফার্সির ধকল ছিলো । বাংলা ভাষার প্রতিটি শাখাতে যোগ্যতার সাথে আপনাদের দাপিয়ে বেড়াতে হবে।এই বিষয়ে যদি কোন অবহেলা করেন তাহলে তা হবে ঐতিহাসিক ভুল এবং আত্মহত্যার শামিল।
ইমাম ও খতিব নাজির উদ্দীন সাহেব আরো বলেন- আমি আমার মাদরাসায় কঠোর কিছু আইন করেছি। আসলে জরুরী ও গুরুত্বপুর্ণ বললে ভাল হয়। অথচ দেশের কিছু মানুষের কাছে এর কোন মর্যাদা নেই। ছাত্রদের দ্বারা কোন উস্তাজ কোন প্রকার খেদমত গ্রহন করতে পারবেন না। চাহে কাপড় ধোয়া থেকে মাথা কামানো কিংবা শারিরিক সহ যে কোন প্রকার খেদমত নিষিদ্ধ। কারো প্রয়োজন হলে তাদের সন্তানদের ব্যবহার করুক। নতুবা টাকা দিয়ে কর্মচারি রাখুক। অথবা বাসা ভাড়া করে কাছে এনে নিজের স্ত্রীদের কাছ হতে খেদমত গ্রহন করুক।আমি আসাতেজায়ে কেরামকে আরো বলেছি- এরপরও যদি আপনাদের খেদমতের প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে বলুন আমি নিজে হাত পা মাথা ম্যাসেজ করে দেবো তবু দয়া করে শিশুদের দিয়ে এই কাজ করাতে যাইবেন না।
তিনি বলেন- আমাদের প্রতিষ্টানের কোন শিক্ষক অত্র এলাকার লোকদের সাথে কোন প্রকার বিজনেস লেনদেনে শরিক হতে পারবনে না। এমনকি এই এলাকায় বিবাহ করারও কোন পারমিশন নেই। সুবহানাল্লাহ !
বললাম এতো বিধি নিষেদের কারণ কি? বললেন- বাস্তবতা এবং সময়ই আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। বিভিন্ন ফিতনা এবং সমস্যা থেকেই আইনের উৎপত্তি। তিনি জানান- আমি সকল আসাতেজাকে বাংলা এবং ইংরেজী ভাষায় তিনটি কথা মুখস্থ রাখতে তাকিদ দিয়েছি।
শিশু নির্যাতন ৩ প্রকারঃ (ক) শারিরিক নির্যাতন (খ) মানসিক নির্যাতন (গ) যৌন নির্যাতন।
ছোট ছাত্রদের সাথে বড় ছাত্রদের মাখা মাখি অনিবার্য্য ভাবে যৌন নির্যাতনের দিকে ধাবিত করে। শিশু তথা প্রাইমারি বিভাগ কে অবশ্যই সেকেন্ডারী থেকে আলাদা রাখতে হবে।আমার শিক্ষকরা থর থর করে উপরের দিকে উঠতে চান।আমি পরিস্কার বলে দিয়েছি, ঘুম থেকে উঠে স্বপ্নে দেখে দেখে এই প্রতিষ্টান উপরের দিকে উঠবেনা। যখন যা প্রয়োজন তখন সম্পুর্ণ নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রেখেই করা হবে তার আগে নয়। পর্যায় ক্রমে এসএসসি পর্যন্ত যাওয়ার প্লান প্রায় চুড়া্ন্ত বলে জানালেন।
দারুল উলুম হাটহাজারির ফারীগ কওমি চেতনায় উদ্বীপ্ত মদনী প্রেরণায় উজ্জীবীত এই আলেমে দ্বীনের কাছ হতে জাতি আরো অনেক কিছু পাবে বলে আমরা আশাবাদি। তাঁর হাতে গড়া প্রতিষ্টান সিকি দশকে যখন এখানে এসেছে ; আমরা আশা করতে পারি পুরো দশকে সুর্যস্নানে আপ্লুত হবে দেশও জাতি ইনশাআল্লাহ।