অনলাইন ডেস্ক :: বাংলাদেশের ইতিহাসে অষ্টাদশ কিংবা ঊনবিংশ শতাব্দীর কথা। বঙ্কিমচন্দ্র কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অথবা নজরুল ইসলামের যুগের সময়ের কথাও ধরা যেতে পারে। ব্যাগভর্তি বই, শার্টের পকেটে কলম আর হাতে খাতা নিয়ে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিয়মিত কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয় যেতেন। এসব উপকরণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের ফাঁকে কিংবা অবসর সময়ে বই পড়ে একাডেমিক পরীক্ষার বিষয়গুলো শেষ করতেন।
কিন্তু সেই যুগ কি আছে এখন? যুগ পরিবর্তন হয়েছে! কালের বিবর্তনে এভাবে পড়ালেখা করতে আর দেখা যায় না শিক্ষার্থীদের। দিন যায়, মাস যায় এমনকি বছরও চলে যায়। তারপরও বর্তমানে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কেনেন না তাদের একাডেমিক বই! এমনকি বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা জানেন না অনার্স কোর্সের বিষয় কয়টি। কিন্তু তারপরও তারা পাস করেন, অনেক সময় ভাল রেজাল্ট করে অনার্সসহ মাস্টার্সও শেষ করে ফেলেন তারা!
কিন্তু প্রশ্ন থাকতেও পারে, সারা মাস বই না কিনে, না পড়ে কিভাবে একজন শিক্ষার্থী অনার্স পরীক্ষায় পাস করেন? বলছি আসল কথা, পরীক্ষার আগে এসব শিক্ষার্থী পুরানো জরাজীর্ণ শিট কালেকশন করেন। পরে ওই শিট পড়েই অনার্স পরীক্ষায় অংশ নেন বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বর্তমানের চিত্র এটি। এ থেকে বাদ যায়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও। বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগসহ ফটোকপির দোকান আছে শতাধিক। এসব ফটোকপির দোকানে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় হাজার খানেক ছাত্র প্রতিদিন শিট ফটোকপি করতে আসেন।
দোকানদাররা বলছেন, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের ফটোকপি থেকে একটি দোকানে প্রতিদিন আয় হয় ৫ হাজার টাকার অধিক।
আল ফাতাহ ফটোকপি দোকানের মালিক জুয়েল বাংলামেইলকে বলেন, ‘শিট বিক্রয় করে দৈনন্দিন আয় প্রায় ৫ হাজার টাকার কাছাকাছি । এতো শিট জমা পড়ে অনেক সময় অর্ডারও নিতে পারি না।’
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব ফটোকপির দোকানে শিক্ষার্থীদের ভিড় থাকে। অনেক সময় লাইন ধরে সিরিয়ালে ফটোকপিও করে বলে জানায় দোকানদাররা।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্ট মোড়। তখনও সকাল ৮টার ঘরে। আসেনি শহর থেকে ছেড়ে আসা প্রথম শাটল ট্রেনটিও। কিন্তু এর মধ্যেই ‘করতোয়া’ ফটোকপির দোকানে ভিড়। ভিড় হওয়ার কারণ একটাই ফটোকপি করতে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এসকল শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন আবাসিক হলের,অন্য সময় ভিড় থাকে বিধায় আগে-ভাগে ফটোকপি করতে এসেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রেহমান শোয়েব। সামনেই তার চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। ‘করতোয়া’ ফটোকপির দোকানে এসেছেন শীট ফটোকপি করতে। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘সামনে পরীক্ষা তাই শিট ফটোকপি করতে আসা। তবে আমার জন্য না আমার বন্ধুর জন্য।’
‘আল ফাতাহ’ ফটোকপির দোকানে বসে থাকা বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামি বাংলামেইলকে বলেন, ‘বই পড়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় কই। সারাদিন টিউশনি করাতে হয়। একাডেমিক বইগুলো কিনে পড়ার সুযোগটা পাই না। তাই বড় ভাইদের করা নোটগুলো ফটোকপি করতে এসেছি।’
এদিকে শিক্ষকরা বলছেন, একাডেমিক বই না পড়লে কোনোকিছু ভাল করে জানা যায় না। শিক্ষার্থীদের এ প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিটনির্ভর হয়ে গেলে মেধা বিলুপ্ত হবে, কোর্সের বিষয়গুলোর প্রতি দক্ষ হয়ে উঠবে না। তাই শিক্ষকরা বই পড়ার প্রতি গুরুত্ব দেন শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল মনছুর বাংলামেইলকে বলেন, ‘মূল বই না পড়ে শিট পড়ে পরীক্ষা দেয়া, এটা তো অবশ্যই খারাপ অভ্যাস। এ প্রথা চলতে থাকলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় মেধাশূন্য হবে। একজন শিক্ষার্থী বই পড়ে যতটুকু জানতে পারবে,শিট পড়ে তার ১০ শতাংশও জানতে পারবে না। এ জন্য শিক্ষার্থীদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর ও আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী বাংলামেইলকে বলেন, ‘পরীক্ষায় ভাল নম্বার না পাওয়ার অন্যতম কারণ শিট থেকে পড়া। অনেক সময় শিট থেকে পড়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাগুলো হুবহু মিলে যায়। শিটে থেকে পড়ার কারণে উত্তরপত্রে একই ভুল অনেক শিক্ষার্থী করে থাকেন।’ সূত্র. বাংলামেইল২৪ডটকম।