হে আমার বীর মুজাহিদ সাথীরা! পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “হে নবী, আপনি আপনার উম্মতদেরকে কিতালের প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন।”
নবীয়ে কারীম (সঃ) যখন এ আয়াতে কারিমার আলোচনা করতেন, তখন কোন মুসলমানই স্থির থাকতে পারতেন না। জিহাদের নেশায় শিরায় শিরায় শোণিতধারার ন্যায় ছুটাছুটি আরম্ভ হয়ে যেত।
মদীনার মিনার থেকে যখন ধ্বনিত হত হাইয়া আলাল জিহাদ, হাইয়া আলাল জিহাদ- এসো জিহাদের দিকে, এসো জিহাদের দিকে। তখন যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী, ছেলে-মেয়ে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ধনী-গরিব, সর্বস্তরের মুসলমান বিবি-বাচ্চা, বাড়ি-ঘর, ক্ষেত-খামার, দোকান-পাট, আত্মীয়-স্বজন সবকিছু ফেলে ছুটে আসতেন মসজিদের পানে-জিহাদে যাওয়ার অদম্য নেশা নিয়ে।
নবীর ঘোষণার সাথে সাথে সাহাবারা তীর, ধনুক, বর্শা, অশ্ব, ঢাল-তলোয়ার, জেরা, শীরস্তান ও মিনজানিক নিয়ে হাজির হতেন। তারা একে অপরকে সাহায্য করতেন।
এক মহিলা তার নবজাতক শিশু সন্তানকে এনে মহানবী (সঃ) কে বললেন, ওগো আল্লাহর নবী! জিহাদে পাঠানোর মতো আমার ঘরে কেউ নেই। দয়া করে আমার কলিজার টুকরা নয়নের মণি এই বাচ্চাটিকে জিহাদের জন্য কবুল করুন।
মহানবী (সঃ) মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, এই শিশু দ্বারা আমি কিভাবে জিহাদ করব? মহিলা উত্তর দিল, কাফেররা যখন আপনাকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করবে, তখন আমার সন্তানটিকে ঢাল হিসেবে সামনে ধরবেন। তীর এলে সন্তানের গায়ে লাগবে, আপনি রক্ষা পাবেন। আর আমি শহীদের জননী হিসেবে কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে হাজির হব।
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) দ্বীনকে এত ভালবাসতেন যে, নিজের জীবন, সন্তান-সন্তুতিও তাদের কাছে এত প্রিয় ছিল না। অনেক পিতা-মাতার এমন ইতিহাসও রয়েছে যে নিজের সন্তানকে যুদ্ধের সাঝে সুসজ্জিত করে নবীর নিকট নিয়ে আসতেন এবং সুপারিশ করতেন যেন তার সন্তানকে গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
কী ছিল তাদের দ্বীনের দরদ! ছোট বালকদের জিহাদী জযবা দেখে দয়ার নবী বলতেন, তোমরা এখনও ছোট, আরও বড় হয়ে জিহাদ করবে। বালকরা কুস্তি লড়ে, তীর-ধনুক নিয়ে নিশানাবাজি করে নবীকে রাজি করানোর চেষ্টা করত। এমনকি পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলত, ইয়া রসুলাল্লাহ (সঃ) দেখেন তো আমি কত বড় হয়ে গেছি!
তাদের কাকুতি মিনতিও জযবা দেখে মহানবী (সঃ) যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এতে বুঝা যায়, জিহাদের জন্য বালেগ হওয়া শর্ত নয়।
আজকাল দেখা যায় অনেকেই বলে থাকেন যে, আগে আলেম হও তারপর জিহাদ করো। কেউ বলেন, চিল্লা বা সাল লাগিয়ে ঈমান মজবুত করো, তারপর জিহাদ করবে।
আফসোস! আমাদের নবীর কথার সাথে এদের কথার কোন মিল নেই। নবী (সঃ) এমন কিছুই বলেননি।
হে তরুণ বন্ধুরা! জিহাদ করলে ঈমান বাড়বে, আমল বাড়বে, সাহস বাড়বে, মা-বোনদের ইজ্জত এর হেফাযত হবে, মসজিদ মাদ্রাসা সংরক্ষণ হবে। অর্থাৎ জিহাদের মাধ্যমে গোটা দ্বীনের হেফাযত ও সংরক্ষণ হবে। আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবে।