আজ অনেক আনন্দ লাগছে। অনেকদিন পর দেশের ইসলামী ব্যক্তিত্বগণ আনন্দ অনুভব করছেন। আমরা অনেক কিছুই হারিয়েছি। ইসলামের বিরুদ্ধে এদেশে একের পর এক চক্রান্ত, ষঢ়যন্ত্র হয়েছে, হচ্ছে। তারপরও আজ যে টুকু অর্জন, তার জন্য মহান রবের দরবারে শুকরিয়া আদায় করবো না? যে বিচারপতিগণ সাহস করে কলমের এক খোঁচাতেই রীট খারিজ করে দিয়ে আমাদের আনন্দের উৎস হলেন, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাবো না? যে সকল আইনজীবি, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ, অনলাইন এক্টিভিষ্ট, উলামা, তুলাবা, ফুজালাগণ এ রীটে বিজয় অর্জন করার জন্য চেষ্টা সাধনা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হবো না? অবশ্যই হবো। আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। মাননীয় বিচারকগনের প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি। অন্যান্য সকল সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
২৮বছর ধরে চলে আসা এই জঞ্জাল বিচারপতি নাইমা হায়দার ১০মিনিটেই শেষ করে দিলেন। ইসলাম বিদ্বেষী অনেক কুচক্রী মহলের স্বপ্নসাধ ধুলোই মিশিয়ে দিলেন। এরজন্য তাঁর প্রশংসা অবশ্যই প্রাপ্য।
প্রশ্ন হচ্ছে : আমরা এই বিজয়টা কিভাবে উদযাপন করবো? আজকের এই বিজয়ের সুফল লাভ করার জন্য আমাদের কী করণীয়? এই বিজয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমাদের কী চিন্তা করা উচিত? এ বিজয় অর্জন করার পথে যারা মেধা, শ্রম, শক্তি, অর্থ, বুদ্ধি ব্যয় করলেন, তাদেরকে আগামী দিনে আরও বড় কিছু অর্জনের জন্য কিভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে কি ভাববো না? রীট খারিজের মাধ্যমে আমরা কি অর্জন করলাম, এর সুদূর প্রসারী ফলাফল, প্রতিক্রিয়া কী? তা নিয়ে আমরা কি গবেষণা করবো না? রীট খারিজ না হলে তাগুত শক্তি আমাদের বিরুদ্ধে কী ধরণের ভাষা ব্যবহার করতো, কী ধরণের আস্ফালণ করতো, প্রথম অন্ধকার গোষ্ঠী কী ধরনের মচৎকার (!) আর্টিক্যাল তৈরী করতো, তা কি আমরা একটু বিবেচনায় নিবো না? তাহলে এখন আমাদের কী করা উচিত?
ওরা যা যা করতে পারতো তার বিপরীত কাজই করতে হবে। রীট খারিজ না হলে ওরা শাহবাগে মিষ্টির বন্যা বয়ে দিতো। আমরা সেটা করবো না। মিষ্টি খেলেও ঘরে বসে খেয়ে নিবো। প্রকাশ্যে এই নিয়ে কোন উচ্ছাস করবো না। ওরা নৃত্য করতো, মদ-গাঁজার আসর বসাতো। হোলি উৎসব করতো। আমরা এগুলোর চিন্তাও করতে পারি না।
তাহলে আমাদের যা করতে হবে, তা নিয়ে একটু ভাবা দরকার। আমি কিছু প্রস্তাব রাখছি। আপনারা বিবেচনা করতে পারেন।
ক। সকল বিভাগীয় শহরে আমাদের মুরুব্বীদের নেতৃত্বে শুকরিয়া মিছিল করতে পারি। এর দ্বারা ইসলাম বিদ্বেষী অপশক্তির চেহারা মলিন হবে।
খ। একটি জাতীয় সেমিনার হতে পারে। ”রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল : এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব” শিরোণামে ঢাকায় একটি সেমিনার হতে পারে। যেখানে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামা, আইনজীবি, রাজনীতিবিদগণ উপস্থিত থেকে আগামীর পরিকল্পনা প্রদান করবেন।
গ। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রক্ষার আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে একটি স্মারক বের করতে পারি। যেখানে এই আন্দোলনের আদ্যোপান্ত বিবরণ থাকবে। কবে থেকে রাষ্ট্রধর্ম হলো, কিভাবে সংবিধানে এটা অন্তর্ভুক্ত হলো, এটা নিয়ে কারা কখন রীট করেছিল, রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করতে কারা কারা চক্রান্ত করেছে, কী ধরণের চক্রান্ত হয়েছে। ২৮ বছরের পুরনো একটি বিষয়কে আবার কারা জাগিয়ে তুললো, এই রীট নিয়ে প্রতিবাদ মুখর উলামায়ে কেরাম কি ভুমিকা পালন করলেন, হেফাজতের ভুমিকা, অন্যান্য ইসলামী দলের ভুমিকা, মিডিয়ার ভুমিকা, ইত্যাদি তুলে ধরা যেতে পারে।
ঘ। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রক্ষার লড়াইয়ে অনলাইন কর্মীদের ব্যাপক ভুমিকা রয়েছে। পল্টনে কোথাও তাদের একটি মিলনমেলা হতে পারে। আমরা একসাথে বসতে পারি। আলোচনা করতে পারি। একটি বিজয় যখন অর্জন হলো, আগামীতে কিভাবে আমরা অনুরূপ আরো বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারি। আমাদের কর্মপন্থা কী হতে পারে, রীট নিয়ে আন্দোলনে আমাদের কোন ত্রুটি ছিল কি না? ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। একসাথে বসে সবার সাথে সবার মতবিনিময়, পরিচিত হওয়া এই কাজটিও করা যেতে পারে।
ঙ। আমাদের এই আন্দোলনের অন্যতম রূপকার আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দা.বা. রীট খারিজের কথা শুনে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তা আমাদের স্মরণ রাখা উচিত। উনি রীট খারিজের কথা শুনে চোখের পানি ফেলে দিয়ে মহান প্রভুর শুকরিয়া আদায় করেছেন। দু’ রাকাত শুকরিয়া নামায আদায় করতে বলেছেন। আমরাও তাই করতে পারি।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে মুসলিম উম্মাহর একজন সাহসী কর্মী হিসেবে কাজ করে যাওয়ার তৌফিক দান করুন।