আর মাত্র দুই মাস তারপর শুরু হবে কওমি মাদরাসার ফাইন্যাল পরীক্ষা। আশ্চর্য ঘটনা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ছাত্রদের কোন সময়ই দেয়া হয় না । সর্বোচ্চ এক মাস বা তার চেয়ে কম সময় পায় ছাত্ররা। গড়ে আট বিষয়ে তাদেরকে পরীক্ষা দিতে হয়। সারা বছর উস্তাযরা শুধু পাঠদানই করেন, আর ছাত্ররা বসে বসে ঝিমুয়। কিতাবে তেমন মাহির হয় না। উপর দিকের জামাতের ছাত্ররা তো পড়া-মুতালাআলার সুযোগই পায় না।
তবে এ ক্ষেত্রে একটা সুবিধা পায় ছাত্ররা। প্রশ্ন প্রায় পরিচিত হয়ে গেছে। তাই ফলাফল ভালই হয়। সামান্য ব্যতিক্রম বেফাক। প্রশ্নটা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে উত্তোলন করা হয়।
প্রশ্নপত্রের ক্ষেত্রে আরেকটা ব্যাপার- চাইলে ২ ঘন্টায় জবাব লেখা সম্ভব। প্রশ্ন হয় সংক্ষেপ, মার্ক হয় বেশি। তাই একটু লম্বা প্রশ্ন হলে ছাত্ররা ভয় পেয়ে যায়।
এবার আসি পরীক্ষার মাস নিয়ে। আরবী শাবান মাসে হবে এবারের ফাইন্যাল পরীক্ষা বা মরকযি ইমতেহান। বাংলা মাসের নাম জৈষ্ঠ। জানা কথা, জৈষ্ঠ ঝড় তুফানের মাস । রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ির অবস্থা থাকে খারাপ। মৌসুমটায় রুগ বালাই থাকে বেশি। সব মিলিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি।
এহেন পরিস্থিতিতে কোমল মতি শিশু সহ অনেককেই জীবনের ঝুকি নিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের মানুষের কি দূর্গতি বলে লাভ নেই ।
এ ছাড়া সব শ্রেণীর ফাইন্যাল পরীক্ষা এক সাথে শুরু হয়। পরীক্ষার হলে ৫ম শ্রেণির ছাত্রের পাশে দাওরায়ে হাদিসের ছাত্রের সিট। এতে বাচ্চারা বসার ক্ষেত্রে নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়। অবাক করা ঘটনা হল, একেক ডেডেস্ক বা বেঞ্চে ৫-৬ জন ছাত্র বসে পরীক্ষা দিতে হয়। সে কি যে মানসিক কষ্ট ! ভুক্ভোগীরাই বলতে পারে তা। তবে মনে রাখতে হবে সময় এখন ২০১৬।
এ নিয়ে আওয়াজ তোলার দরকার আছে। অনেক কিছু পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার প্রয়োজন আছে। এমন সময় পরীক্ষা নেয়া দরকার, যাতে পরীক্ষা দেয়ার মত পরিবেশ থাকে।
এছাড়াও স্থরভিত্তিক পরীক্ষা পৃথক পৃথক নেয়া দরকার। মধ্যখানে বিরতিও দেয়া চাই। পরীক্ষার আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির সময় চাই। কিন্তু দেখা যায় কওমি মাদরাসায় ভর্তি হবার পর টাইটেল পর্যন্ত শ্বাস নিঃশ্বাস বন্ধ। সময় নাই। ছাত্রদের পড়ার সুযোগ কই? হুজুরদের পাঠদানই যে শেষ হয় না!
এমন জগাখিচুড়ি মার্কা পিরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে ছাত্রদের মন মেজাজ হয়ে ওঠে তিক্ত। চাপ সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। ধৈর্য্যহারা হয়ে যায়। এ জন্যই উনিশ থেকে বিশ হলে একজন আরেকজনকে অনেক কিছু বলতেও দ্বিধাবোধ করে না।
শিক্ষা সফরের সুযোগ নেই। সব শ্রেণীর মানুষের সাথে মিশার নিয়ম নেই। ফলে ওরা সমাজের মানুষের দুঃখি হয় না, সমাজসেবাকে গুরুত্ব দেয় না, পাপকে ঘৃণা না করে পাপীকে ঘৃণা করে। দরদি মন নিয়ে কারো পাশে দাঁড়ায় না। সব সময় নিজের দলান্দ্বতায় অন্ধ থাকে, নিজেদেরকে জান্নাতি আর অপরকে জাহান্নামী ভাবতে থাকে।
তাই সময় এখনি বিশদভাবে ভাবার। আপনার একটু ফিকির নতুন প্রজন্মকে মাদানি, থানভি হতে সহায়তা করবে। এখানেও আরেকটা সমস্যা, কেউ সাহাবী হতে চায় না। আরবের দিকে যেতে চায়না। সবাই দেওবন্দ গিয়েই থেমে যায়। আমাদেরকে মক্কা মদিনায়ও যেতে হবে । আবু বকর, ওমর, আলি, উসমান রা. হতে হবে । হতে হবে নবিজীর মত। তবেই আসবে সফলতা। নাসরুম মিনাল্লাহ ওয়া ফাতহুন কারিব।