অনলাইন ডেস্ক :: ইসলামের ক্রীতদাস প্রথা কেন? কেয়ামতের চিহ্ন …দাসীর গর্ভে মালিকের জন্ম কি?
গতরাতে লন্ডনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় ছবিটি সংবাদসহ চোখে পড়লো। একজন পুরুষ তার উদোম শরীরে একটি সদ্যজাত শিশুকে জড়িয়ে মায়ের বুকের আদর দিতে চাইছেন। গভীর আবেগ আর মমতায় চোখের পানি ঝরছে তার। কানাডার ফ্রাঙ্ক নেলসন এবং বিজে বারনে দুজনই পুরুষ এবং এই শিশুটির আইন সম্মত পিতা-মাতা। কানাডার রাষ্ট্রীয় আইন অনুসারে তারা বিয়ে করা দম্পতি, মানে সমকামী পরিবার।
মায়া ভরা অসহায় চোখে বিছানাতে আধাশোয়া কোকড়ানো চুলের যে মহিলাটির কনফিউজড মুখমন্ডল দেখা যাচ্ছে, তিনি এইমাত্র বাচ্চাটিকে জন্ম দিয়েছেন, কিন্তু জন্মদাত্রী হলেও তিনি শিশুটির মা নন। তার কোনো অধিকার নেই নিজের পেটের সন্তানের ওপর। কারণ, আগেই তিনি ৪৫ থেকে ৬৫ হাজার ডলার দামে বিক্রি করে দিয়েছেন বাচ্চাটিকে ক্রেতার কাছে।
অর্থ লগ্নিকারী সমকামী পিতামাতা শিশুটির মালিক, তাহলে আইনানুগ উত্তরাধিকারী হিসেবে শিশুটিও একজন মালিক। তাই এই ব্যবসায়ে আইন মতে মা তার মালিকের জন্ম দিলো। জন্মের পরপরই মালিক পক্ষ শিশুটি নিয়ে যাবেন অর্ডারি মালের মতো!
পশ্চিমা বিশ্বের অনেক তরুণ-তরুণী তাদের বীর্য্য আর ডিম্বানু বিক্রি করেন ফার্টিলিটি ক্লিনিকে অনেক মূল্যে। আমাদের দেশের ব্লাড ব্যাংকের মতো। নাম পরিচয় লুকিয়ে রাখা হয়, কার ডিম্বানু, কার শুক্রাণু কিছুই জানবেনা ভাড়াটে গর্ভধারিনী মা। চুক্তি অনুযায়ী যিনি বাচ্চাটি গর্ভে ধারণ করবেন তার কোনো পছন্দ থাকতে পারবেনা। আর দৈহিক মিলন ছাড়াই বাচ্চা হবে। সমকামী দম্পতিরা সন্তান গ্রহণ করতে চাইলে ফার্টালিটি ক্লিনিক থেকে সব কিছুই কিনে নিতে পারেন পছন্দ করে বাজার করার মতো।
কারা এই মায়েরা? এই ধরনের মা-দের সারোগেট মাম বলে। অর্থাভাবে তিনি বিক্রি করেন তার মার্তৃত্ব, তার অধিকার। ঠিক আদি যুগের ক্রীতদাস-দাসীদের মতো, তাদের সন্তানেরা হতো মালিকের সম্পত্তি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ তাকে জোর করেনি, কিন্তু আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা তাকে অভাবী করেছে। বাধ্য করেছে অরিজিনাল ক্রীতদাসীদের মতো হতে। নিজের পেটে ৯ মাস ধরে তিল তিল করে বড় করা সন্তানকে হারাতে। পৃথিবীতে ক্রীতদাস প্রথা শেষ হয়ে যায়নি। সারোগেট মায়েরা আসলে নব্য ক্রীতদাসী ছাড়া আর কিছুই নয়। অভাব মায়েদের ক্রীতদাসী বানাচ্ছে সাময়িকভাবে। দেশের আইন এটিকে সমর্থন করে। নিজের পছন্দ আর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য থাকাই আধুনিক ক্রীতদাসত্ব! পশ্চিমা অর্থনীতিতে বাড়ি গাড়ী বাকিতে নিয়ে মর্টগেজের ক্রীতদাস বনে যায় সবাই, ‘এমপ্লয়মেন্ট’ নামে নব্য দাসত্বের কাছে সারা জীবন বন্দী থাকতে হয় অধিকাংশ মানুষদের।
খাচায় ভরা উলঙ্গ নিগ্রো মানুষ বিক্রি করার নাম ক্রীতদাস, মুসলমানদের যুদ্ধবন্দীরা ক্রীতদাস, এই সংজ্ঞা এখন বদলে গেছে। মানুষদের বুদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ছদ্মবেশে ক্রীতদাসের সংজ্ঞা আর চেহারাও বদলাচ্ছে আর বদলাতে থাকবে। ক্যাপিটালিজম, কমিউনিজম, রাজাইজম কেউ মানুষকে সত্যিকারভাবে দাসত্ব মুক্ত করতে পারেনি।
মানুষ তাদের নিজেদের প্রয়োজনে একে অপরকে কোনো না কোনোভাবে কোনো ধরনের দাস বানিয়ে নিবে, না হয় রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতি কিছুই চলবেনা- এই ফর্মুলাটি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জানা ছিলো। তিনি সেভাবেই হয়তো বানিয়েছেন আমাদের পরীক্ষা করার জন্যে। তাই ইসলাম ধর্ম কেনো দাস প্রথা নির্মূল করেনি, তার কারণ এখন বোঝা যাচ্ছে পরিস্কারভাবে।
এজন্যেই ইসলাম দাসদের ব্যবহারের নিয়ম-কানুন বলে দিয়েছে। তাদের প্রতি সদয় হবার হুকুম দিয়েছে। তোমরা যা খাও তা দাসদের খেতে দাও, তোমরা যা পরো তাদেরকেও তাই পরিধান করাও, পারলে দাসদের মুক্ত করে দাও।
নবী করীম সা. ইন্তোকালের সময়ে এত কথা থাকতে মাত্র দুটি শেষ শব্দ উচ্চারণ করে চলে গেলেন, ‘নামায আর দাস দাসী। মৃত্যু মুহুর্তে তার কণ্ঠ থেকে ঘড় ঘড় শব্দ বেরুলেও ‘সালাত আর আবদ’ উচ্চারণ শুনতে কারো ভুল হয়নি। এটাই ছিলো কেনো তার শেষ কথা?
নবী সা.কে হয়তো জানানো হয়েছিলো, আপনি আপনার মিশন শেষ করে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু এর পরে অন্যরকম সভ্যতা আসবে, বিজ্ঞান আসবে, তাদের অর্থনৈতিক সিস্টেম, তাদের রাষ্ট্রগুলি হবে এমপ্লয়মেন্ট বেজড,- নতুন দাসত্বের জগত, আর সৃষ্টিকর্তা থেকে তারা দুরে চলে যাবে। তাই তারা যেন কায়েম রাখে সালাত আর অধস্থনদের হক ও অধিকারের দিকে খেয়াল রাখে। এটাই হোক আপনার শেষ তাবলীগ।
রাজা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সেনাপতি, ব্যবসায়ী, মালিক, অফিসের বিগবস; যাদের এক ধরনের দাস বাকি সব জনগন, তাদের জন্যে একভাবে বলেছেন ‘আবদ’দের দিকে খেয়াল রেখো, জুলুম করোনা। আর সমগ্র মানব জাতির জন্যে বলেছেন, তোমরা সবাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আবদ, তার দাসত্ব করতে ভুলোনা।
শেষ কথাটি উচ্চারণ করার পেছনে নিশ্চয়ই এ ধরনের গভীর কোনো ম্যাসেজ লুকিয়ে ছিলো, যা এখন বোঝা যাচ্ছে। আবদ কথাটি খাঁচায় বন্দী ইতিহাসের কিছু বিচ্ছিন্ন ক্রীতদাসদের জন্যে বলা হয়নি। আল্লাহর প্রতিনিধি শেষ নবীর শেষ কথা শুধু এটাই হতে পারেনা।
দাসীর গর্ভে মালিকের জন্মের হাদিসটি বোখারী, মুসলিম দুই গ্রন্থেই আছে। হযরত ওমর রা. বলেন, একদিন দুপুরে আমরা অনেকে নবী সা.’র সাথে বসে আছি, তখন ধবধবে সাদা পোশাক আর পরিপাটি কালো চুলের একজন আগন্তুক নবী সা.’র সামনে মাটিতে হাটু স্পর্শ করে বসলেন আর নবী সা.’র দুই উরুর ওপর দুই হতের তালু রাখলেন। আগন্তুক ভদ্রলোকের চেহারায় মরুভূমি থেকে সফর করে এসেছেন- এ রকম কোনো চিহ্ন ছিলোনা। তিসি নবী সা.কে জিজ্ঞেস করলেন,
: ইসলাম কি?
: নবী সা. বললেন- ঈমান, নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত।
: আগন্তুক বললেন- আপনি সত্যই বলেছেন।
(ইসলামের ৫ স্তম্ভের কথা এই হাদিস থেকেই এসেছে, কুরআনের কোথাও এমনভাবে বলা হয়নি)
: এখন বলুন, ঈমান কি?
: নবী সা. বললেন, কয়েকটি বিষয়ে অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে, অংশীদারহীন এক আল্লাহর ওপর, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাব (অবিকৃত) বা এলিয়েন গ্রন্থ সমূহ, সব রসুলদের ওপর, শেষ বিচারের দিন, মানুষের জীবনে ভালো মন্দ দুটোই আল্লাহর তরফ থেকে আসে এই কথার ওপর আর মৃত্যুর পর সবার পুনরুত্থান হবে এটির ওপর।
: আগন্তুক বললেন- ঠিক বলেছেন।
: এখন বলুন এহসান কি?
: নবী সা. বললেন, নামায এমনভাবে পড়া আর জীবনে এমনভাবে চলা, যাতে সবসময় ভাবনা থাকে যে আল্লাহ আমাকে দেখছেন না হয় আমি আল্লাহকে দেখছি।
: মেহমান বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।
: এখন বলুন, সময় অর্থাৎ কিয়ামত কখন হবে?
: নবী সা. বললেন, আমার চেয়ে প্রশ্নকারী ভালো জানেন।
: তাহলে বলুন, সময় বুঝবেন কি করে?
: নবী সা. বললেন, দাসীর গর্ভে তার মালিকের জন্ম হবে। কালো উট পালকেরা ধনী হবে আর উঁচু উঁচু টাওয়ার বানানোর প্রতিযোগিতা করবে। নবী সা. সুরা লোকমান থেকে থেকে পড়লেন, ‘কখন কেয়ামত হবে, তা কেবল আল্লাহই জানেন।’
রহস্যময় আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন। তারপর চলে গেলেন।
আল্লাহর নবী সা. সাহাবীদের বললেন, ইনি ছিলেন জিবরাইল ফেরেশতা। তোমাদেরকে ইসলাম শেখাতে এসেছিলেন। কি মনে পড়ায় বললেন, যাও ওনাকে আবার ডেকে নিয়ে এসো। সাহাবারা বাইরে যেয়ে কাউকে দেখতে পেলেন না। ফেরেস্তা তার নিজস্ব ডাইমেনশনে ঢুকে গেছেন ততক্ষণে, মানুষ হলে তাকে ঠিকই দেখা যেতো বাইরে।
ইসলাম যাদের রাষ্ট্রধর্ম নয়, তারা সমকামিতাকে বৈধতা দিয়েছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এপর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার দাসীদের গর্ভে তাদের মালিকদের জন্ম হয়েছে।
যারা ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বানিয়েছে, তারাও টাওয়ার সংস্কৃতি চালু রেখেছে। মাত্র ৫০ বছর আগেও যারা ছিলো মেষ আর উট পালক, তারা এখন ঠিকই প্রতিযোগিতায় মত্ত। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু টাওয়ারটি এখন দুবাইতে, তার চেয়েও উঁচু যেটি হচ্ছে সেটি জেদ্দাতে। উট পালকেরা ঠিকই বদলে দিচ্ছে তাদের স্কাই লাইন।
আল্লাহর নবী সা. যা বলে গেছেন, তা ঘটবেই। কারণ, তিনি নিজ থেকে কিছু বলেননি। এই বিশ্ব চরাচর যিনি বানিয়েছেন, যিনি আমাদেরকে ভালোবেসে তৈরী করেছেন, তার পাঠানো খবর এগুলি। কেউ আমরা আগে বুঝব, কেউ পরে, তবে কেউ যেন সময় শেষ হওয়ার পরে না বুঝি।
আল্লাহই সব ভালো জানেন।
http://www.independent.co.uk/ C: Arifur Rahman