সিরাজী এম আর মোস্তাক ::
পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে সবর বা ধৈর্য্য ধারণের বিভিন্ন পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে। মুলত সবর বা ধৈর্য্য ছাড়া পৃথিবীর কোনো কার্য্য হাসিল হয় না। যে কোনো কাজে ধৈর্য্যরে প্রয়োজন। তাই মহান সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্ট মানব জাতিকে নানাভাবে এ ধৈর্য্যরে পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা তার প্রেরিত গ্রন্থ আল কোরআনে স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন- ‘এবং অবশ্যই আমি তোমদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।’ (সুরা আল বাক্বারা, আয়াত-১৫৫)। যারা এমন পরীক্ষায় ধৈর্য্য ধারণ করেন, স্বয়ং আল্লাহ পাক তাদের পরিচয় প্রদান করত: অফুরন্ত পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন- ‘তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েতপ্রাপ্ত।’ (সুরা আল বাক্বারা, আয়াত-১৫৭)। মহান আল্লাহপাক সবরকারীদের সুস্পষ্ট প্রতিদান প্রসঙ্গে আরো ঘোষণা করেছেন, ‘যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরষ্কার পায় অগণিত।’ (সুরা আল যুমার, আয়াত-১৩-আংশিক)। হযরত আনাসের রেওয়ায়েতে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, কেয়ামতের দিন ইনসাফের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। দাতাগণ আগমন করলে তাদের দান খয়রাত ওজন করে সে হিসাবে পুর্ণ সওয়াব দান করা হবে। এমনিভাবে নামায, হজ্জ্ব ইত্যাদি এবাদতকারীদের এবাদত মেপে তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে। অতঃপর বালা-মুসিবতে সবরকারীরা আগমন করলে তাদের জন্যে কোন ওজন ও মাপ হবে না, বরং তাদেরকে অপরিমিত ও অগণিত সওয়াব দেয়া হবে। ফলে যাদের পার্থিব জীবন সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে অতিবাহিত হয়েছে, তারা বাসনা করবে- হায়, দুনিয়াতে আমাদের দেহ কাঁচির সাহায্যে কর্তিত হলে আজ আমরাও সবরের এমনি প্রতিদান পেতাম। (তাফসীর মাআরেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা-১১৭৫)।
যারা দুনিয়াতে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সাজা ভোগ করে থাকেন, মূলত তাদের জন্যই সবরের আয়াত ও হাদিসসমূহ সবচেয়ে বেশী প্রযোজ্য। আল্লাহ তায়ালা অফুরন্ত প্রতিদান প্রদানের জন্য তাদেরকে সবরের মাধ্যমে স্বীয় সাহায্য প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা আল বাক্বারা, আয়াত-১৫৭)। যুগে যুগে বহু নবী-রাসুল সম্পুর্ণ মিথ্যা অভিযোগে সাজা ভোগ করেছেন। তারা ধৈর্য্যরে পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে মহা পুরস্কার লাভ করেছেন। এতে স্পষ্ট হয় যে, বর্তমানে যারা রাজনৈতিক জুলুমের শিকার হয়ে জেলের প্রকোষ্ঠে বন্দি রয়েছেন, তাদের জন্য সবরের পুরস্কার হাতছানি দিচ্ছে। বর্তমানে জেলখানার অসংকুলান, অমানবিক ও করুণ অবস্থায় যারা ধৈর্য্য ধারণ করে রয়েছেন, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের উক্ত ঘোষণা অনুযায়ী শেষ বিচারের দিন এ ধৈর্য্যশীলদের প্রতিদান সত্যিই ঈর্ষনীয় হবে ইনশা-আল্লাহ। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সবরের প্রতিদান লাভের তাওফীক দিন। আমিন।
লেখক : এ্যাডভোকেট, ঢাকা।