“বখেদমতে জনাব গভর্নমেন্ট সেক্রেটারী,
আমি আপনার খেদমতে লাইন কয়েক লেখার অনুমতি এবং এর জন্য ক্ষমাও পার্থনা করছি। আমার সম্পাদিত মাসিক ‘এশায়াতুস সুন্নাহ’’ পত্রিকায় ১৮৮৬ ইংরেজিতে প্রকাশ করেছিলাম যে, ওহাবী শব্দটি ইংরেজ সরকারের নিমকহারাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ শব্দটি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ঐ অংশের জন্য ব্যবহার সমীচিন হবে না, যাদেরকে ‘আহলে হাদীস’ বলা হয় এবং সর্বদা ইংরেজ সরকারের নিমকহালালী, আনুগত্য ও কল্যাণই প্রত্যাশা করে, যা বার বার প্রমাণও হয়েছে এবং সরকারী চিঠিপত্রে এর স্বীকৃতিও রয়েছে।
অতএব, এ দলের প্রতি ওহাবী শব্দ ব্যবহারের জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং সাথে সাথে গভর্নমেন্ট বরাবর অত্যন্ত আদব ও বিনয়ের সাথে আবেদন করা যাচ্ছে যে, সরকারীভাবে এ ওহাবী শব্দ রহিত করে আমাদের উপর এর ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক এবং এ শব্দের পরিবর্তে ‘আহলে হাদীস’ সম্বোধন করা হোক।
আপনার একান্ত অনুগত খাদেম
আবু সাঈদ মুহাম্মদ হুসাইন
সম্পাদক, এশায়াতুস সুন্নাহ
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ইংরেজ সরকার তাদের জন্য ‘আহলে হাদীস’ নাম বরাদ্দ করলো। পাঞ্জাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী মিস্টার ডব্লিউ.এম.এন বাহাদুর (চিঠি নং-১৭৫৮ এর মাধ্যমে) ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৬ ইংরেজিতে অনুমোদনপত্র প্রেরণ করলেন। (মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী লাহোরী সম্পাদিত এশায়াতুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৩২-৩৯, সংখ্যা: ২, খ-: ১১)
আহাফিরা ইংরেজদের কাছ থেকে ‘আহলে হাদীস’ নাম নিয়ে নামের আকিকা ছাড়াই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো ইংরেজদের নিমকহালালীতে। শুরু হয়েছিলো খেদমত। কী পরিমাণ পদলেহনে মত্ত হয়েছিলো তারা, দুইটা মাত্র উদাহরণ দেই।
এক.
আহাফি নেতা, (তাদের ভাষায় শায়খুল কুল্লে ফিল কুল) মিয়া নযীর হুসাইন দেহলভির সামনে এক ইংরেজ ম্যাম পড়লেন। মিয়া সাহেব ম্যামকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন নিজের ঘরে। চারমাস নিজের ঘরে রেখে ম্যামের খেদমত(!) করলেন তিনি। কেমন খেদমত, সেটা অবশ্য আমরা বলতে পারব না কারণ, লেখক সেটা পরিষ্কার করে বলেননি। মিয়া নযীর হুসাইনের হালতের উপর লেখা বই ‘আল হায়াত বা’দাল মমাত’ গ্রন্থে লেখক খেদমতের ব্যাপারে এরচে’ বিস্তারিত কিছু আর জানাননি।
চারমাস খেদমত করার পর ম্যামকে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে বললেন, স্যার! আমি ম্যামকে আমার ঘরে নিয়ে গেলাম। কারণ, রাষ্ট্রদ্রোহিরা উনাকে পেলে বেইজ্জত করে মেরে ফেলত। ইংরেজ গভর্নর স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে খুশি হলেন নাকি সন্দেহের চোখে তাকালেন, সেটাও আমাদের জানা নাই। গভর্নর মিয়া সাহেবকে বকশিষ হিশেবে কিছু জায়গা-জমি বরাদ্ধ করলেন। দিতে তো আর সমস্যা নাই, হাওরের গুরু আর মামা শ্বশুরের ধান।
দুই.
নবাব সিদ্দিক হাসান। আহাফিদের আরেক গুরু। ইংরেজ গভর্নরকে কিছুতেই সন্তুষ্ট করতে পারছিলেন না অথচ; কাজ বাগাতে হলে গভর্নরের রেজামন্দি দরকার।
কী করা যায়!
কী করা যায়!
অবশেষে উপায় খুঁজে বের করলেন তিনি। স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিলেন লবিং করার জন্য। নবাবের স্ত্রী গভর্নরের কুটিতে একমাস কাটিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করে ফিরলেন। আর অতীব বরকতময় এই ঘটনাটি আমরা জানলাম নবাব সিদ্দিকের ছেলের লেখা থেকেই।
এই হলো আহাফি। এই হলো তাদের জন্মকথা। উপমহাদেশ থেকে শুরু হলেও এখন তারা ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী। ইন্টারনেটকে বেইজ ধরে যত্রতত্র ফতওয়াবাজী করে বেড়াচ্ছে তারা। এখনই সময় তাদের রুখে দাঁড়াবার। সহজ-সরল মুসলমানদের সামনে তাদের মুখোশ খুলে দেবার। তা নাহলে মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট না করে থামবে না এরা। সূত্র সেই আগেরটাই- لأغوينهم أجمعين ‘আমি তাদের সবাইকে পৃথিবীতে পথভ্রষ্ট করব। (সূরা হিজর /৩৯)।
— প্রকাশিতব্য ‘আহাফি’ গ্রন্থ থেকে।