উসামা ইবনে যায়েদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, তার পেটের নাড়িভুড়িগুলো ঘুরপাক খেতে থাকবে। ফলে সে গাধার মত ঘুরতে থাকবে। গাধা যেমন চরকার পাশে ঘুরে থাকে। জাহান্নামের অধিবাসীরা তাকে দেখার জন্য জড়ো হবে। তারা তাকে বলবে, এই! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি সৎ কাজের আদেশ করতে না আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করতে না? সে বলবে: হ্যা, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম কিন্তু তা নিজে করতাম না। আর অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু নিজে তাতে লিপ্ত হতাম। (বর্ণনায় : বুখারী ওমুসলিম)
এই হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ ও ইমাম আহমাদ ইবনুূে হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ এটিকে ‘এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক দ্বীন’ বলে অভিহিত করেছেন।
এটিকে ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর গ্রন্থ সহীহ বুখারীতে সাত জায়গায় বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক স্থানে এই হাদীসটি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল কর্মের বিশুদ্ধতা ও কর্মের প্রতিদান নিয়তের সাথে সম্পৃক্ত; সে কথা প্রমাণ করা। সহীহুল বুখারী হাদীস নং ১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিযী ১৬৪৭, নাসায়ী ৭৫, ৩৪৩৭, ৩৭৯৪, আবূ দাউদ ২২০১, ইবনে মাজাহ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২।
আল্লাহ্ সুবানাহুতালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেনঃতোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? (সুরা বাকারা-৪৪) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।” [সুরা সাফ: ০২-০৩]
প্রকাশ্য ও গোপনীয় আমল (কর্ম) কথা ও অবস্থায় আন্তরিকতা ও বিশুদ্ধ নিয়ত জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম।” (সূরা বাইয়িনাহ্ ৫নং আয়াত)
তিনি আরো বলেন, “আল্লাহর কাছে কখনোও ওগুলির মাংস পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া (সংযমশীলতা)।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩৭ নং আয়াত) তিনি আরো বলেন,“বল, তোমাদের মনে যা আছে তা যদি তোমরা গোপন রাখ কিংবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন।” (সূরা আলে ইমরান ২৯ নং আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃআর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না। (সুরা বাকারা-৪৮)
নিশ্চয়ই একজন বুদ্ধিমান মুসলিম নিজেদের মধ্যে বিভেদ বাড়ায় না বরং মুসলিমদের মধ্যে মতানৈক্য , বিভেদ বা বিরোধ হলে সেগুলো নিষ্পত্তি করে দেয় এবং নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধন তৈরির চেষ্টায় মশগুল থাকে । আর ইসলামে নেতা সেই হবে যার অনেকগুলো গুনের একটি হল বুদ্ধিমত্তা ।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ “আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।“ (সুরা আলে ইমরানঃ ১০৩) তাই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে পথভ্রষ্টতা। আর পথভ্রষ্টতার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম।
তাই ঐসব পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য আকড়ে ধরুন ও অনুসরন করুন শুধু মাত্র তাই যা আল্লাহ ও তার রাসূল সা. আমাদেরকে বলেছেন। আল্লাহর রাসূল সা. বলেন- “তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস ছেড় যাচ্ছি; তা যদি তোমরা শক্তভাবে ধারণ কর, তবে কোন দিন পথভ্রষ্ট হবে না; তা হল- আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ’’। (মুয়াত্তা মালিক , মেশকাত ১ম/হাঃ ১১৭)
উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যাবতীয় কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (সবদেশত্যাগ) আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।”
তাই দা’ইয়ী ভাইদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, আসুন আমরা নিজেরা আগে সৎ আমল করি, অসৎকর্ম থেকে বিরত থাকি এবং এর পাশাপাশি অন্যকে দাওয়াহ দিই। নিজেকে পরিশুদ্ধ না করে আগেই আমরা অন্যকে সংশোধনের জন্য উঠে পরে লাগব না।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে বিষয়টা জেনে এবং মেনে সঠিক ভাবে আমল করার তৌফীক দান করুন। আমীন ।