হাকীম সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ::
আপনি অবাক না হলেও আমি অবাক হয়েছি। কোন খ্যাতনামা স্যলবেটির কিংবা মিডিয়ার লাইক পেইজ নয়। কওমী মাদরাসার একজন সাধারন শিক্ষক স্নেহস্পদ মঈনুদ্দীন খান তানভীর এর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডির একটি স্ট্যটাসে এপর্যন্ত ২৪ঘন্টার ভেতরে তার লাইকের সংখ্যা 51,319 · Like · 2,203 Comments অর্ধলক্ষের উপরে। যা কওমী অঙ্গনে অনলাইনের ইতিহাসে উল্ল্যেখযোগ্য ঘটনা।সেটি আরো ছাড়িয়ে যেতে পারে। যা সচারাচর তার কিংবা এঅঙ্গনের কারো আইডিতে হয় না। কিন্তু এই পোষ্টে এত লাইক বন্যার পেছনে মূল কারন ছিল, দাওয়াত ও দাওয়াতের মেহনতের সফলতার প্রচার। বিষয়ে ছিল, “চলচিত্র তারকা মিশা সওদাগার এবার তিন দিনের জন্য তাবলীগে গেছেন।” আমি চ্যলেন্জ করে বলতে পারি কওমী অঙ্গনে তাবলীগ ছাড়া আর এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে লিখে কেউ এমন সাড়া ফেলতে পারবেন। এটা কি প্রমান করে না দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত সময়ের সবচেয়ে বড় চাহিদা। যার প্রর্যাপ্ত যোগান ও চাহিদা মেটাতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।
আমার বিশ্লেষন
এক
অফলাইনে অনলাইনে আমরা যে সব বিষয় নিয়ে কাজ করছি ও কথা বলছি, সে বিষয়ে উম্মতের সর্ব সাধারন বিশেষ করে তরুনদের আগ্রহ কতটুকো? তারা বিষয়গুলোকে কতোটুকো নিচ্ছে। না কি কেবল, বার্ষিক সাংগঠনিক রির্পোটের মতো, ঘাটতি আর সংযোক্তির হিসাবই করছি উম্মতকে নিয়ে। ইসলাম সম্পর্কে তাদের মেজাজ ও চাহিদা নিয়ে আমাদের ভাবনা কতটা সচ্ছ আর কতটা জবাবদাহী মূলক। অপর দিকে আমাদের প্রচলিত দলীয় দাওয়াত, গনতান্তিক রাজনৈতিক জিহাদ, পারস্পারিক যুক্তি তর্ক, বিরোধকে উম্মাহ কতটুকো গ্রহন করছে! তাদের চাহিদে বা আগ্রহ কোন দিকে? তারা ব্যক্তি বিশেষের দল ও গোষ্টির দিকে আসতে চায় না, সর্বজনীন ইসলামের দিকে তারা ঝুকতে চায়। সেই বিষয়টা যতো বেশি তাড়াতাড়ি বুঝব উম্মতের হেদদায়ত ততো বেশি দ্রুত হবে। যতো দিন উম্মত আমভাবে দাওয়াতের উপর ছিল তোদিন উম্মত আমভাবে দ্বীনের উপর ছিল। আর যখন দ্বীনী দাওয়াত বন্দ করে নানান মতবাদ, থিউরি, দর্শন ও রেওয়জি মেহনতে ঝুকে পড়েছে তখনি উম্মত বাতিলের দাওয়াতের মুখে পড়ছে। দাওয়াত দেয়ার বদলে সামগ্রিক জিন্দেগীতে নানান ব্যখ্যা বিশ্লষন করে অন্যের দাওয়তকে গ্রহন করছে। আপনি যদি দাঈ না হন তাহলে মদউ হবেন।
আমাদের কাছে সাধারন মানুষ এখন কেবল উম্মাহর কল্যানকামী পজিটিভ কিছু দেখতে চায় এবং শুনতে চায়। তানভীরের এই ছোট্ট স্ট্যটাস আবার এটাই প্রমান করেছে। এটা যে যুগের পিপাসা তাকি এই ঘটনা থেকে আমরা উপলব্দি করতে পারি না? দলাদলী আর দল উপদলে ভিবক্ত হয়ে একেক নীতির দলীয় প্রচারনা আর জনগন শুনতে চায় না। এটা সময় ও যুগের চাহিদা। বিশ্বব্যাপি ইসলাম গ্রহনের জয় জয়কার সেই একই সূত্রে গাথা। মানুষ কোন ইসলামী পার্টিতে নয় বরং দলে দলে এখন ইসলামের পথে আসতে চাচ্ছে।
দুই
নবীওয়ালা নকশে সাহাবার এই কদম, কদম সর্বজনীন ইসলামের দিকে দাওয়াতের আহবানটি বর্তমান যুগ ও সময়ের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরেও আমাদের ইসলামিক তরুনরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। যাদের দিকে চেয়ে আছে গোটা দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষ তারা কেবল নানান দল, গোষ্টির ব্যনারে নিজেদের য্যোগ্যতাকে ব্যায় করছেন, এর চেয়ে বড় আফসোস আর কি হতে পারে। একেক তরুনের অনলাইন অফলাইনের য্যোগ্যতা ইসলামের আম দাওয়াতের কাজে ব্যয় হলে তাদের দ্বারা এদেশ কেন গোটা দুনিয়াতে সমাজ বিপ্লব ঘটে যেত। আপন অঙ্গন থেকেই আমরা এর প্রযোজনীয়তা হৃদয়ে অনুভব করে দাওয়াতের কাজের প্রতি কি মনোযোগী হতে পারি না? হয়তো অনলাইন অফলাইনে নানানভাবে আমিও খাছ অনেক দাওয়াতের কাজ করছি। তবে এটা উম্মত কতোটা আন্তরিতার সাথে গ্রহন করছে ব্যাপকভাবে তাকি আমি কখনো গভীরভাবে অনুভব করছি। কিন্তু আমার য্যোগ্যতা তো খরচ হতে পারতো লাখো উম্মতের হেদায়তের পেছনে।
আর দুঃখ জনক সত্য জেহাদ আর রাজনীতির নামে আমরা নিজের দলীয় ব্যানারে গন- বিপ্লবের মোহে ক্রমশ মোহ গ্রস্থ হয়ে পড়ছি। আমার দল এটা করে ফেলবে, ওটা করে ফেলবে, এমন অলিক ধারনা আজ অনেক মেধাবী তরুনদের ভেতর জগদ্দল পাথরেরর ন্যায় চেপে বসেছে। দলের বাহিরে উম্মতকে নিয়ে ভাবার সময় পাচ্ছি না। কিন্তু কাজের কাজ যা হচ্ছে তা তো চোখের সামনেই। কেবল দল বদলের টানাটানি দ্বীনদ্বার তালেবে এলেম আর তলবওয়ালাদের নিয়ে। আর ৯৯% ভাগ বেতলব, বে-ফিকির উম্মতকে নিয়ে আমরা না ভাবলে কে ভাববে? কিন্তু হ্যায় আমাদের সে সসয় কই। কতকাজে আমাদের দামী সময় ব্যায় হয়। হযরতজী বলতেন, তাবলীগের কাজের অন্যতম উদ্দ্যেশ্য হল দাওয়াতের দ্বার সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমে রাজনীতি ও ইসলামী শাসনতন্ত্র খেলাফত তৈরির পরিবেশ তৈরি করা। আমভাবে দাওয়াতের কাজে যত তাড়াহুড়া ও দুর্বলতা হবে রাজনীতি ততো মেরুদন্ডহীন হবে।
তিন
আজ এক মিশা সওদাগার, আর শাকিব খানের দ্বীনের রাস্তায় আসার খবর শুনে যদি উম্মতের এতো দরদ আর আগ্রহ তৈরি হয়। তাহলে আমরা যদি সবাই দলীয় ও গোষ্টির দাওয়াতের বাহিরে কেবল দ্বীনী দাওয়াতের কাজে জাপিয়ে পড়তাম, প্রত্যেকটা উম্মতকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর ফিকির ও মেহনত করতাম তাহলে আমাদের হাত ধরে গোটা দুনিয়ার হাজার হাজার মিশা সওদাগররা দ্বীনের উপর চলে আসত। কত উম্মত তওবা করে জাহান্নামের আগুন থেকে বেচে যেত। একটা মানুষ যদি আমার মেহনতের ফলে বদলে যায় এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কামাই হবে। একেক তরুন আলেমের ভেতর হাজারো উম্মতের হেদায়তের য্যোগ্যতা লুকিয়ে আছে। তাদের দিকে চেয়ে আছে গোটা ইউরোপ, আমেরিকা আফ্রিকা সহ পুরো পৃথিবীর পথহারা বনী আদম। হযরতজী মাওলানা ইলিয়াছ রহ বলতেন, একেক দায়ী যদি তার গাফলাতী, আর বেহুদা কাজের সময়কে পাহারা দেয় তাহলে, একেক দায়ী সাড়া দুনিয়ারম তাকাজা ( দ্বায়িত্ব) পুরা করতে পারবে। এখন আমরাই চিন্তা করি, আমাদের কত সময় অকাজে, আড্ডার চলে, নানান ভাবে ব্যায় হচ্ছে অপরিকল্পিত। আমাদের দাওয়াতী জীবন কতটা ফিকর ওয়ালা , প্রতিটি মানুষের জন্য কতোটা ব্যথা ও দরদওয়ালা? কতোটা পরিপাটি এবং পরিকল্পিত? আমি কতোটা চেষ্টা করছি আমার চারপাশের মানুষকে দ্বীন আর দ্বীনের মেহনতের বুঝানোর জন্য। আমি তাদের কাছে যখন দলের দাওয়াত নিয়ে যাই তারা কতোটা গ্রহন করছে। আর তাকে জাহান্নাম থেকে বাচানোর, তার মধ্যে দ্বীন আসার দাওয়াত নিয়ে গেলে সে কতোটা সহজভাবে কবুল করত। নিজেকে কি কখনো জিজ্ঞাসা করেছি। আমার দিকে তো চেয়ে আছে লক্ষ কোটি মিশা সওদাগর আর এরকম অগনিত ইসলাম প্রিয় লাইকাররা।
প্রিয় দ্বীনী ভাই যুক্তি, তর্ক করলে অনেক করা যাবে। এবার একটু ভাবুন। কি করার ছিল আর কি করছি আমি। আমার কাজ আর দাওয়াতের ময়দান এতো সংকোচিত কেন? আমি কি আরেকটু প্রসশ্ত জীবনের দিকে ধাবিত হতে পারি না। আমি যা বুঝাতে চেয়েছিলাম, নিজের অযোগ্যতারর ফলে হয়তো আপনাদের বিঝাতে পারি নি। ক্ষমা কর প্রভু।
সর্বশেষে, হাজী আব্দুল ওয়াহাব ছাহেবের ভাষায় বলছি, কাহা যা রহা হ্যায় ভাই, আপতো হুজুর সা কা উম্মতি হ্যায়।