কমাশিসা ডেস্ক: বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নেওয়ার ব্যাপারে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে গত বছর। দেশটির সরকার দুই লাখের বেশি নারীকর্মীর চাহিদা জানালেও গত বছর মাত্র ২০ হাজার ৯৫২ জন নারী সৌদি আরবে গেছেন। সৌদি সরকার জানিয়েছে, তাদের পক্ষে এখনো দুই লাখ নারীর জন্য ভিসা প্রস্তুত রয়েছে।
পুরুষকর্মীরা যেখানে টাকা খরচ করে সৌদি যাবার জন্য উদগ্রীব, সেখানে বিনা খরচে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও নারীকর্মীদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
এ নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে। এতে বলা হয়েছে, চুক্তির এক বছরে চাহিদার ১০ ভাগের একভাগ নারী বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গেছেন। কাজ করতে যাওয়ার অল্পদিনের মধ্যে আবার তাঁদের অনেকেই ফিরে এসেছেন।
ঢাকায় সৌদি আরবের একটি নিয়োগকারী সংস্থা আল শারকের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি নারীকর্মী সৌদি আরবে দরকার। গত এক বছরে আমরা মাত্র ১৫০ জনের মতো নারী নিয়োগ দিতে পেরেছি। বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকা সৌদি নাগরিকদের পছন্দের কারণ তারা মুসলিম এবং কাজে বেশ ভালো।’
গত বছর ঋণ করে সৌদি আরবে কাজে যাওয়ার এক মাস পরেই দেশে ফিরে আসা এক নারী গৃহকর্মী জানিয়েছেন তাঁর স্বপ্নভঙ্গের কথা। তিনি বলেন, ‘দশ-পনের দিন ভালোই ছিলাম। কিন্তু আমারে বাড়িতে ফোন করতে দেয় না, বাড়ির বাইরেও যাইতে দেয় না। এ ছাড়া আমি সারা দিন কামকাজ করি, রাইতে ঘুমাইতে যাওয়ার আগে কাপড় ইস্ত্রি করি, ওই সময় উনি (বাড়ির মালিক) আমার ঘরে গিয়া ডিস্ট্রাব করতো। আমার রুমে ও ঘুমাইব। আমি রাজি হইনি, তারপরও জোর করে থাকতে চায়। আমার কথা শুনত না, পরে আমি ওর বউরে ডাক দিতাম।’
এরপর কৌশলে অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফিরে আসেন ওই নারী। তিনি আরো বলেন, ‘আমি তো দেহব্যবসা করতে যাই নাই। আমি তো গেছি কামের জন্য, কাম করমু, ভাত খামু, পয়সা ইনকাম কইরা পোলাপান মানুষ করমু। কষ্টের লাইগা গেছি।’
তিন মাস কাজ করে দেশে ফিরে এসেছেন রূপগঞ্জের রহিমা। তাঁর অভিযোগ সেখানে অতিরিক্ত কাজের চাপ। রহিমা বলেন, ‘কাজের নির্যাতনে পইড়া গেছিগা, সময়তে ওরা ভালো ব্যবহার করত, সময়তে খারাপ ব্যবহার করত। অসুস্থ হয়া কাম করতে পারি না, হেরপরও জোর কইরা করাইত। সইতে না পাইরা আমি কইছি, মা আমি বাংলাদেশে যামুগা।’
ফেরত আসা নারীদের এসব অভিজ্ঞতাও অনেক ক্ষেত্রে সৌদি আরবে নারীকর্মী কম যাওয়ার একটি কারণ বলে মনে করা হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষের চাহিদার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি আবুল বাসার বলেন, ‘নারীদের খুব দ্রুত পাঠানো সম্ভব নয়। তারা তো চায় এক মাস, দুই মাসের মধ্যে পাঠাই। আমাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। নারী তো। দুই লক্ষ পুরুষ তিন মাসের মধ্যে পাঠানো সম্ভব। কিন্তু দুই লক্ষ নারী আমরা দুই বছরেও পাঠাইতে পারব না। আমাদের দেশের নারীরা পর্দাশীল, তাই খুব কম সংখ্যক নারী বিদেশে যেতে কাজের জন্য যেতে চান।’
অত্যাচার বা নিপীড়নের প্রসঙ্গে আবুল বাসার বলেন, ‘নারীদের ক্ষেত্রে নির্যাতনের ঘটনা এখন অনেক কমে গেছে। তবে বিদেশে কেউ নির্যাতিত হলে পাড়া প্রতিবেশীরা সহযোগিতা করতে চায় না। গত বছর যাঁরা গেছেন তাঁদের মধ্যে ফিরে আসার হার ৫ শতাংশের বেশি হবে না।’
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী আবুল কালাম বলেন, রিয়াদে দূতাবাস আছে এবং জেদ্দায় কনস্যুলেট আছে। সাময়িক শেল্টার হাউজও আছে। সেখানে থেকে সে তাঁর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারবে। এ ছাড়া দূতাবাস তাঁকে সাহায্য করবে। নির্যাতনের বিষয়টি যদি খুব গভীরতর হয় সে শ্রম আদালতে মামলা করতে পারবে।এ ব্যাপারেও দূতাবাস তাকে সহায়তা করবে।
আবুল কালাম আরো বলেন, ‘নিরাপত্তা বা তাঁর সমস্যা অ্যাড্রেস করার মতো ব্যবস্থা যে একেবারে নেই তা না। আছে তবে এটা আমাদের কর্মীদের জানতে হবে বুঝতে হবে এবং সেটার সুযোগও নিতে হবে।’
সৌদি আরবে প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছে। সাত বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে নারীকর্মী পাঠানোর মধ্য দিয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির বাজার পুনরায় উন্মুক্ত হয়েছে।
সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারীকর্মীদের সমস্ত খরচ বহন করে সৌদি নিয়োগকারী সংস্থা। নারীদের আকৃষ্ট করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিনা খরচে এক মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়া নারীকর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে স্বল্প খরচে বাংলাদেশে সরকারি ২৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরবি ভাষা, গৃহস্থালির কাজকর্ম এবং সৌদি নিয়মকানুন শেখানো হয়।
সুত্র: নিউজ সময়