যে রাজাকার-কমিনা বলে, আলেমরা দেশপ্রেমিক নন, আলেমদের দেশপ্রেমের সিলসিলা (নসবনামা) তার জন্য চপেটাঘাত
হাকীম সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ ::
আমাদের জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় হলো স্বাধীনতার সংগ্রাম। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জীবনে এক মহত্তম ঘটনা। অসীম সাহসিকতা, বীরত্ব, আত্মত্যাগ, আর অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট উৎরে যাওয়ার এক বড় ক্যানভাস এই মুক্তিযুদ্ধ।
আমাদের দেশ বাংলাদেশ। সোনার দেশ বাংলাদেশ। সবুজ শ্যামল এই দেশ। প্রাণের চেয়েও প্রিয় আমাদের এই মাতৃভূমি। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ আমাদের প্রিয়ভূমি। অনেক রক্ত দিয়ে আমরা অর্জন করেছি এই স্বাধীনতা। পেয়েছি লাল-সবুজের এক মনোরম পতাকা। রক্তিম এই পতাকা আমাদের রক্ত ঝরার কথা বলে। সবুজ মাটিতে গড়িয়ে পড়া লাখো মানুষের এই রক্ত আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতার পেছনে আমাদের আত্ম দানের ইতিহাস। আমাদের এই স্বাধীনতা অতো সহজে আসেনি। এজন্য আমাদেরকে অনেক লড়াইয়ে অংশ নিতে হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে বারবার ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে।
১৭৫৭ সালে ইংরেজরা আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল। এজন্য আমাদেরকে দুইশ’ তের বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে। যেকোনো কিছু বর্ণনা করতে হলে সেটি একটু আগে থেকে বলতে হয়, তাই বাংলাদেশের ইতিহাস জানার জন্যেও একটু আগে গিয়ে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করা যেতে পারে। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলটিকে প্রায় দুইশ’ বছর শাসন-শোষণ করেছে। তাদের হাত থেকে স্বাধীনতার জন্যে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে, জেলখেটেছে, দ্বীপান্তরে গিয়েছে।ভারতবর্ষের মানুষ কখনো তিতুমীরের বাশেঁর কেল্লায়, কখনো শামেলি রণাঙ্গনে আত্মহুতি দিয়েছে, কখনো রেশমী রুমাল আন্দোলনে নিবার্সিত হয়েছে, মীরাটের বন্দিশালায়, কখনো বাহাদুর শাহ পার্কে, কখনো অমৃতসরের বাগানে আবার কখনো দিল্লির রাজপথে বন্দুকের গুলি খেয়ে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে, ক্ষুদিরাম হয়ে ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছে। এর সংগ্রামীদের সিংহভাগ ও প্রধান ও প্রথম সারির সংগ্রামীরা ছিলেন আলেম উলামা। আলেমরা এদেশে উড়ে এসে জুড়ে বসেন নি।তাদের রক্ত সাগর বেয়েই অজিত আমাদের স্বাধীনতা।
পলাশীর যুদ্ধ
১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন মীর জাফর আর জগৎশেঠ, রায় দুলর্ভ, উর্মি চাঁদের মত দেশিয় কিছু মতালিপ্সু স্বার্থান্বেষী বিশ্বাসঘাতকের চরম বিশ্বাসঘাতকতায় চতুর ব্রিটিশ বনিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলা পলাশীর আমকাননে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। আর ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেওবন্দের সন্তান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে মেহেরপুরের আমকাননে মুজিবনগর সরকারের শপতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য ফের উদিত হয়। পলাশীর বিপর্যয়ের সাথে সাথে এদেশের আকাশে নেমে আসে দুর্যোগের ঘণঘটা; বাংলার জমিনে নেমে আসে দুর্ভেদ্য অমানিশা; এদেশের মানুষের উপর চেপে বসে পরাধীনতার জগদ্দল পাথর। সেই থেকে সমগ্র ভারতবর্ষ ১৯০ বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল।
বক্সার যুদ্ধ
পলাশীর যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সংঘটিত হওয়া দ্বিতীয় যুদ্ধ বক্সারের যুদ্ধ। ১৭৬৪ সালের ২২ অক্টোবর বিহারের বক্সার নামক স্থানে নবাব মীর কাসিম ও তার মিত্রশক্তির সঙ্গে ইংরেজদের এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। স্বাধীনচেতা নবাব মীর কাসেমকে দিয়ে ইংরেজরা প্রথম স্বার্থ হাসিল করার স্বপ্ন দেখলেও তিনি কিছুদিনের ভেতরই তিনি ইংরেজদের ক্ষমতা দখলের দূরভিসন্ধির বিরেদ্ধে পথের কাটা হয়ে দাড়ান।তিনি একে একে ৭টি যুদ্ধ করে পরাজিত হয়ে বাংলার পথে প্রান্তরে ছদ্মবেশি ফকির হয়ে বায়লার স্বাধীনকা পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষে কাজ করেন। সে পথ ধরেই জন্ম হয় স্বাধীনতা সংগ্রমী ফকির মজনু শাহ রহ।
টিপু সুলতানের লড়াই
১৭৯৯ সালে শাহওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর শিষ্য নববা হায়দার আলী ইংরেজবিরোধী স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু করেন। নবাবের মৃত্যুর পর তার পুত্র নিবেদিতপ্রাণ মহীশূরের বীর বুযুর্গ হযরত শাহ সুলতান টিপু রহ (টিপু সুলতান) ইংরেজদের বিরোদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই শুরু করেন। অবশেষে ইংরেজরা থাকেও নানান ষড়যন্ত্রের মাধ্য পরাজিত ও শহীদ করে কর। তার দেশপ্রেম আজও ইতিহাসের পাতায় অক্ষয় হয়ে আছে। সর্বশেষ সম্রাট শাহ আলমকে জায়গীর হিসাবে লাল কেল্লা ছেড়ে দিয়ে ১৮০৫ খৃঃ দিল্লী হস্তগত করে ইংরেজরা সমগ্র ভারতে নিজেদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করলো।
পীর দররবেশদের লড়াই
অস্টাদশ শতকের মাঝামাঝি মাওলানা শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভীর চিন্তা -চেতনার একনিষ্ট অনুসারী দরবেশ হযরত ফকির মজনু শাহ রহ ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রবল স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকে। এ লক্ষ্যে তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে বিশাল এক মুক্তিবাহিনী গঠন করেছিলেন। ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই মুখোমুখি সংঘাত বাঁধত। ১৭৮৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের কাছে এক তুমুল যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যদের কাছে মজনু শাহ রহ শহীদ হন হন। যুদ্ধে তাঁর বহু সংখ্যক অনুসারী পীর দরবেশ নিহত হয়। ইংরেজরা এই স্বাধীনতা সংগ্রামকে ” ফকির বিদ্রেহ’ নাম করন করে।
বালাকোটের মুক্তিযুদ্ধ
উপমহাদেশের মুক্তির লড়াইয়ে বালাকোট এক চিরস্মরণীয় নাম। এর সঙ্গে জড়িত মুসলমানদের স্বাধীনতা, অস্তিত্ব ও জাগরণের ইতিবৃত্ত; পথহারা উম্মতের সঠিক পথের নির্দেশনা। ইংরেজ আমলে পরবর্তী সময়ে সংঘটিত প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রাম, গণঅভ্যুত্থান বালাকোটের চেতনার ফসল। বালাকোটের ঐতিহাসিক ট্রাজেডির মাধ্যমে সূচিত সংগ্রামের সিঁড়ি বেয়েই এ দেশের মুসলমানরা ফিরে পেয়েছিল তাদের স্বাধীনতা। সেই অনাগত বিপ্লবের হাতছানিই যেন ঊনবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী রহ সরাসরি ছাত্র ও শিষ্য সৈয়দ আহমাদ শহীদের ‘তরীকায়ে মুহাম্মাদিয়া’ আন্দোলনের হাত ধরে উপমহাদেশের শিরক-বিদ‘আতী জঞ্জালের অন্ধকার গহ্বরে তাওহীদী নবপ্রভাতের সূচনা ঘটায়। এই আন্দোলনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ঘটে যায় বালাকোট যুদ্ধ । ১৮৩১ সালের ৬ মে সংঘটিত ঐতিহাসিক এই বালাকোট যুদ্ধ একদিকে যেমন ছিল এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের জন্য চরম বিপর্যয়ের, অপরদিকে বিদেশী বেনিয়াদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য উপমহাদেশের বুকে পরিচালিত সর্বপ্রথম সুসংঘবদ্ধ সবচেয়ে বড় রণডঙ্কা।
মাওলানা তিতুমীরের বাশর কেল্লা
মজনু শাহ যখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে রত -সেই সময় ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার জেলার বশিরহাটের চাঁদপুর গ্রামে মাওলানা নেসার উদ্দীন তিতুমীরের জন্ম হয়।১৮২২ সালে হজ্জব্রত পালনের জন্য মক্কাশরীফ যান। বিখ্যাত ইসলামি ধর্মসংস্কারক ও বিপ্লবী নেতা সায়্যিদ আহমদ বেরেলভী সে সময় মক্কা শরীফে ছিলেন। মাওলানা তিতুমীর তাঁর চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিত হন এবং তার শিষ্যত্ব লাভ করেন।পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৮৩১ সালে অক্টোবর মাসে নারকেল বাড়িয়ায় একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন তিতুমীর। যদিও ঐ বছরই ব্রিটিশ সৈন্যরা কামানের গোলায় কেল্লাটি মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়।
শরীয়ত উল্লাহর মুক্তির লড়াই
হাজি মাওলানা শরিয়তুল্লাহ ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ‘ফরাজি’ নামে একটি ধর্মীয় বিপ্লবী কাফেলা গঠন করেন । তিনি মক্কা শরীফে ইলমে হাদীসের উচ্চতর ড্রিগ্রি অর্জন করেন।এই সংগ্রামের লোকজনদের নিয়ে তিনি সংস্কার ও সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আন্দোলন গড়ে তোলেন । ১৮৩৭ সালে হযরত হাজি শরিয়তুল্লাহ মারা গেলে তাঁর পুত্র পীর মুহসিন উদ্দীন দুধু মিঁয়া এই আন্দোলনের হাল ধরেন । দুধু মিঁয়া রহ ফরাজি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বাধীনতাআন্দোলনে পরিণত করেন।
বালাকোটের মুক্তিযোদ্ধারা দমে যাননি
আলেম উলামা পপীর দরবরবেশ দ্বীনদ্বার কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের দেশপ্রেমের মুক্তি সংগ্রাম একের পর এক ব্যর্থ হওয়ার পরেও তারা দমে যান নি। শাহ ওয়ালিউল্লাহর সুযোগ্য বংশধর মওলানা শাহ ইসহাক সাহেবের নেতৃত্বে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালিত হয়। ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের পূর্বেই মওলানা শাহ ইসহাক আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে তাঁর ভ্রাতা মওলানা এয়াকুবকে নিয়ে অন্যান্য স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র সফর করে স্বাধীনতার পক্ষে আনন্তর্জাতিক কুটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। এ দিকে দিল্লীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দানের উদ্দেশ্যে মওলানা শাহ ইসহাক দিল্লী কলেজের প্রধান শিক্ষক মওলানা মামলুকুল আলীর সভাপতিত্বে মওলানা কুতুবউদ্দীন দেহলভী, মওলানা মুজাফফর হোসাইন কাসুলকী ও মওলানা আবদুল গণী মোজাদ্দেদীর সমন্বয়ে একটি কর্মপরিষধ গঠন করে যান। এই কমিটি মক্কায় অবস্থানরত মওলানা ইসহাকের ইঙ্গিত ও নির্দেশে ভারত ভর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের কাজ পরিচালনা করতে থাকে। ওয়ালিউল্লাহ আন্দোরনের এই কর্মপরিষদ শাহ ওয়ালীউল্লাহর চিন্তাধারা ও বালাকোটের প্রেরণা নিয়ে দুর্বার গতিতে কাজ করে যায়। মওলানা ইসহাব দেহলভী নির্দেশেই পরবর্তী পর্যায়ে মওলানা মামলুকুল আলীর পরিবর্তে হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজেরে মক্কী (রহঃ) উক্ত কর্মপরিষদের প্রধান নেতা নিয়োজিত হন।
আযাদী আন্দোলন
১৮৫৭ সালে হাজী এমদাদুল্লাহ, হযরত নানা সাহেব, হযরত হাফেজ জামেন শহীদি, শাহ আহমদুল্লাহ, কাসেম নানুতভী, রশিদ আহমদ গাংগোহী প্রমুখের মাধ্যমে স্বাধীনতার যে সংগ্রাম চলে আসছিল তা বৃহৎ আকারে সিপাহী জনতা মিলে ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতার মহা আন্দোলনে রুপ লাভ করে। আযাদী আন্দোলনে ভারতীয় সিপাহী প্রথমদিকে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পলন করলেও এক সময় অন্ত কলহ ও প্রসাদ ষড়যন্ত্রের ক্রনে তারা পিছপা হয়ে যান, কিন্তু তখন আলেমরা জীবন বাজী রেখে ১৮৫৭ সালের মুকক্তি সংগ্রামকে দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় আঞ্চলিক ভিত্তিকমুক্তিযোদ্ধাদদের নেতৃত্বে ছিল মওলানা এনায়েত আলীর হাতে এবং ভারতের অভ্যন্তরে এ বিপ্লবের মূল নেতৃত্ব দেন ভারতস্থ মুক্তিবাহিনীর নেতা মওলানা ইয়াহইয়া আলী। মওলানা ইয়াহইয়া আলী ঐ সময় পাটনাস্হ মুক্তিসেনা ক্যম্প থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে সস্বাধীনতা ও জেহাদেরর আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন।
চার বুযুর্গের সশ্রস্ত্র সংগ্রাম
এখানকার মুক্তি সংগ্রামে হাজী এমদাদুল্লাহ ছিলে ‘আমীরে মোজাহেদিন বা চীপ কমান্ডার । হাফেজ জামেন শহিদীকে প্রধান সেনাাপতি। হযরত মওলানা কাসেম নানতুবী এবং হযরত মওলানা রশিদ আহমদ গংগোহী সহকারী সেনাপতি করা হয়। শামেলী রানাঙ্গনে দীর্ঘদিন একের পরর এক এলাকা দখল করেরে তাঁরা যে দক্ষতা ও রণ-কৌশলসহকারে এই স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রামে পরিচালনা করেছিলেন, সেই সংগ্রামী স্মৃতি আমাদের জন্য চিরদিন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ১৮৫৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির বাদশাহ শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর স্ত্রী জিনাত মহলের চক্রান্তে ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পন করে বসেন এবং ইংরেজরা দিল্লিকে পূনর্দখল করে নেয়। এরপর তারা থানাভনে প্রচণ্ড আক্রমণ চালালে
এই স্বাধীনতা যুদ্ধেথানাভবন ফ্রন্টে মওলানা কাসেম নানতুবীর মস্তকে গুলির আঘাত লেগেছিল কিন্তু তা মারাত্মক ছিল না বলে কোন প্রকার তিনি রক্ষা পেয়ে যান। এতে হাফেজ জামেন শহিদী নিমর্ম ভাবে এযুদ্ধে শাহদতের অমিয়শূধা প্রান করেন।মওলানা রশীদ আহমদ গংগোহী এই মুক্তি সংগ্রামের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ইংরেজদের হাতে নির্মমভাবে ছয় মাস কারাগারে অন্তরীণাবদ্ধ ছিলেন। হযরত মওলানা কাসেম নানতুবী এবং হাজী এমদাদুল্লাহর বিরুদ্ধেও গ্রেফতার পরওয়ানা জারি হয়েছিল। হাজী ইমদাদুল্লাহর বিরুদ্ধে যখন কঠোরভাবে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়, তখন ঐ পরিস্থিতিতে পাল্টা জেহাদের কোনো সুযোগ নেই দেখে তিনি মক্কাতে হিজরত করা সমীচীন মনে করেন।
স্বাধীনতাকামি আলেমদের উপর।
নির্যাতনের স্টিমরোলার
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের নেতৃত্বের জন্য আলেম সমাজকে দায়ী করে রিপোর্ট প্রদান করেন উইলিয়াম লিওর।এরপর শুরু হয় ওলামা নির্যাতনের নির্মম ও দুর্বিষহ অধ্যায়। অর্ধ লক্ষাধিক আলেম-ওলামাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। কালাপানি, সাইপ্রাস, আন্দামান ও মাল্টায় দ্বীপান্তরে সাজা পায় হাজার হাজার আলেম। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত,ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া ছিলো একেবারে সাধারণ ঘটনা। প্রায় সবকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই সময়ে শুধু দিল্লীর আনাচে কানাচেই চার সহস্রাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চালু ছিল। ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে স্বাধীনতাকামী আলেম সমাজ আবার সংঘবদ্ধ হবার চেষ্টা করলেন।
দারুল উলূম দেওবন্দ
১৮৫৭ সালের গোলযোগের সময় যখন ইংজের সরাসরি দিল্লীকে নিজেদের করায়ত্তে নিয়ে নিলো এবং সম্রাটদের নামে মাত্র আধিপত্যটুকুও খতম করে দিল, তখন ওয়ালিউল্লাহ আন্দোরনের সক্রিয় নেতৃত্ব দানের দায়িত্ব হাজী এমদাদুল্লাহর সহকর্মী শিষ্যদের উপর অর্পিত হলো। তাঁরা মক্কায় অবস্থানরত প্রধান পৃষ্ঠপোষখ হাজী ইমদাদুল্লাহর নির্দেশে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রেখে এ আন্দোলনের ধারাকে আক্রমণমূলক না করে প্রতিরক্ষামূলক করার দিকে মনযোগী হলেন। এ উদ্দেশ্যে ওয়ালিউল্লাহ আন্দোরনের কর্মপরিষদ দিল্লীস্থ ওয়ালিউল্লাহর রহীমিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নমুনায় একটি ইসলামী শিক্ষা ও প্রচারকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেন। এ সঙ্গে তাঁরা এও সিদ্ধান্ত নিলেন যে, দিল্লতে ইংরেজদের নাকের ডগার উপর থেকে এ আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল বাইরে নিয়ে যেতে হবে।
আটার সাতান্নর স্বাধীনতা সংগ্রমী কয়েকজন মনীষারা মাওলানা কাসিম নানুতবী, মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গোহী, মাওলানা ইয়াকুব নানুতবী, মাওলানা জুলফিকার আলী, (শায়খুল হিন্দের আব্বা), হাজী আবিদ হুসাইন, মাওলানা শাহ রবি উদ্দীন, এই ছয় মহানায়ক ১৮৬৬ সালের ৩০শে সেপ্টম্বর বৃহস্পতিপার ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্টা করেন। দেওবন্দের প্রথম শিক্ষক মোল্লা মাহমুদ ও প্রথম ছাত্র মাহমুদ হাসান।
ইংরেজ ইতিহাসবিদ কেনেথ ডবলিউ মরগান সম্পাদিত ইসলাম ও আধুনিক চিন্তাধারা গ্রন্থেন ৩২৫ পৃষ্টা পপাকিস্তান ও ভারত অধ্যায়ে লিখেছেন, শাহ ওয়ালি উল্লাহর ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করার ও ইসলামী আযাদীর নয়া আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেওবন্দের বিখ্যাত ধর্মিয় শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্টা করা হয়। প্রকৃত পক্ষে দেওবন্দ ছিল নয়া আযাদী আন্দোলনের জন্য শৈন্য সংগ্রহের কেন্দ্র। শিক্ষাদান ছিল সেখানকার গৌণ কর্মসূচি। এতে বুঝা যায় দেওবন্দ থেকে একটি স্বাধীনতার লড়াইয়ের ভেতর গত প্রস্তুতি চলছিল। ফলে দেওবন্দের একেক ছাত্র স্বাদীনতা আন্দোলনের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে উপমহাদেশের আনাচে কানাচে চড়িয়ে পড়েছিলেন।
শায়খুল হিন্দের পূর্নরায় স্বাধীনতা সংগ্রাম
শিক্ষা সমাপ্ত করে মাত্র ২২ বছর বয়েসে ১৮৭৩ সালে মাওলানা মাহমুদ হাসান (শায়খুল হিন্দ) দারুল উলুম দেওবন্দের সহকরী অধ্যাপক রূপে শিক্ষকতা শিরু করেন।২৯ বছর বয়েসে দেওবন্দের অধ্যক্ষের দায়িত্বে সমাসীন হন। দারুল উলূম দেওবন্দন শিক্ষকতার ৫ বছরের মাথায় শায়খুল হিন্দ হজরত মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দি তাঁর প্রজ্ঞা ও নিরলস কর্ম তৎপরতার ছোঁয়ায় উলামায়ে হকের মৃতপ্রায় বিপ্লব,ও স্বাধীনতা সংগ্রামকে পুনরায় সরগরম হয়ে ওঠে৷জাতীয় চেতনাকে শানিত করে স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবানের জন্য তিনি কর্মজীবনের শুরু থেকেই নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন৷ হুজ্জাতুল ইসলাম হজরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী রাহ.’র অভিষ্ট লক্ষ্য ও মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে হজরত শায়খুল হিন্দ ১৮৭৮ সালে দারুল উলূমের সাবেক ছাত্রদের কে নিয়ে ‘সামারাতুত তারবিয়্যাহ’ নামে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন৷ তার ছাত্র শিষ্যদের অন্যতম, শায়খুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমদ মদনী, হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী, মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানী, হযরতজী মাওলানা ইলিয়াস কান্ধালবী, মাওলানা ইবায়দুল্লাহ সিন্ধি, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মুফতি কেফায়তুল্লাহ’র মতো বিশ্ব বিখ্যাত মনীষীরা ছিলেন শায়খুলহিন্দের হাতে গড়া ছাত্র।
স্বাধীনতাকামীদের প্রথম সংগঠন- জমিয়তুল আনসার
আটার সাতান্ন সালের মহা বিপ্লবের শামেলী রানাঙ্গনের দুই সিপাহশালার মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গোহী ও মাওলানা কাশেম নানুতবীর বিপ্লবী ও আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার উত্তারাধিকার লাভ করেছিলেন হয়রত শায়খুল হিন্দ মাহমিদ হাসান। এরই প্রেক্ষাপটে বৃট্টিশ সাামজ্রবাদী শক্তির বিরোদ্ধে যখন কথা বলার মতো যখন কোন সংগঠন ছিল না, তখন শায়খুল হিন্দ ১৯০৯ সালে দারুল উলিম দেওবন্দের প্রাক্তন ছাত্রদের ডেকে একটি দস্তারবন্দী সম্মেলেনর আযোজন করেন। সিন্ধির এক বিপ্লবী বুর্জুগ হযরত শায়েখ আবুস সেরাত গোলাম মোহাম্মদ দীনপুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সম্মেলনে দেওবন্দের প্রায় ৩০ হাজর প্রাক্তন ছাত্র, কর্মী হিসাবে এই সম্মেলনে যোগদান করেন। এই সম্মেলনেই তিনি এদেরকে নিয়ে ‘জমিয়তুল আনসার’ প্রতিষ্টা করেন এবং সেখানে সবাই শায়খুল হিন্দের হাতে প্রথম বায়াতে জিহাদ ও স্বাধীনতার শপত নেন। ইতিহাসখ্যত রেশমী রুমাল আন্দোলন, খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন, বিপ্লবী সেনা বাহিনী গঠন ও গোপনে স্বধীন সরকার গঠন ছিল,সেই প্রচেষ্টারই একেকটি বহিঃ প্রকাশ মাত্র। তৎকালিন সময়ে নেতৃস্থানীয় চিন্তাবিদ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর, ডা মুখতার আনসারী, নবাব ফখরুল মুল্লুক, মাওলানা প্রমুখ বিপ্লবী মনীষীরা জমিয়তুল আনসারে যোগদান করেন। শায়খুলহিন্দের বিপ্লবিক আর্দশেরর প্রধান সেনানী’ মাওলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধিকে এর সেক্রেটারী করা হয়।
স্বশস্ত্র বিপ্লবী কাফেলা
জমিয়তুল আনসারের বিশেষ কর্মিদর নিয়ে একটি বেসামরিক বিশেষ বাহিনী তৈরি করে তার নাম দিয়েছিলেন ‘জুনুদে রববানীয়াহ।’ জুনদে রব্বানিয়কে তিনি আরো ব্যপক করে তুলতে যে স্বাধীন সরকার গঠনের লক্ষ্য সর্ব ভারতীয় জননেতাদের নিয়ে “আযাদ হিন্দ মিশন)” নামে আরেকটি গনমূখি প্লাট ফর্ম তৈরি করেন। বিপ্লব ও স্বাধীনতার লড়াইকে দেওবন্দ আন্দোলন ও আলেমদের ভিতর সিমাবদ্ধ না রেখে শায়খুল হিন্দ তার উদার নীতি ও দূরদর্শি চিন্তারদ্বারা গনমূখি বিপ্লবে রূপ দিয়েছিলেন। যে মিশনে স্বাধীনতার প্রশ্নে মহাত্না গান্ধি, জহুরলাল নেহারু, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র সহ সর্ব ভারতীয় হিন্দু নেতারা পর্যন্ত এসে শামিল হয়েছিলেন। শায়খুল হিন্দ রাহ. সর্বাত্মকভাবে আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য তিনটি প্রধান মুলনীতি নির্ধারণ করেন।এক. উপমহাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ।দুই. সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদ। তিন. প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর জন্য নিজ নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতি রার পরিপূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা। এই তিনটি মুলনীতির ওপর আস্থা নিয়ে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
রেশমী রুমাল আন্দোলন
প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ে শায়খুলহিন্দ হযরত মওলানা মাহমুদুল হাসান হিন্দুস্তানকে ইংরেজের শাসনমুক্ত করে এখানে নতুন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বুনিয়াদ রাখার জন্য যে আন্দোলন পরিচালনা করেন। ইতিহাসে তা রেশমী রুমাল আন্দোলন নামে খ্যাত। এই আন্দোলনই মূলত দেশ বিদেশ ও শায়খুলহিন্দের এই আন্দোলনে তাঁর প্রধান লেফটেন্যান্ট হিসেবে আমরা দেখি মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীকে। বিদেশ থেকে আন্দোলন পরিচালনা ও বিদেশী মুসলিম শাসকদের সাহায্য-সহায়তা গ্রহণ করার জন্য শায়খুল হিন্দ মওলানা সিন্ধীকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পাঠান। মওলানা সিন্ধী কাবুল থেকে তাঁর যাবতীয় তৎপরতার রিপোর্ট দেওবন্দে অবস্থানরত শায়খুল হিন্দকে নিয়মিতভাবে পাঠাতেন। কাবুলে অস্থায়ী ভারত সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রেশমী রুমালে লিখে শায়খুল হিন্দের কাছে পাঠান মাওলানা সিন্ধি কাবুল থেকে শায়খুল হিন্দকে তিন টুকরো হলুদ রেশমী কাপড়ে ইত্যাকার বিষয়ে যাবতীয় সংবাদ জানিয়ে চিঠি লিখেন। তারপর এই চিঠিগুলো শেখ আবদুর রহীম সিন্ধির নিকট পাঠিয়ে বলে দেন যে, তিনি যেন শীঘ্রই চিঠিগুলি হযরত শায়খুল হিন্দের নিকট পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেই চিঠি হযরত শায়খুল হিন্দের কাছে পৌঁছেনি। কতিপয় গাদ্দারের কারণে এগুলি পৌঁছে যায় পাঞ্জাবের গভর্নর মাইকেল ওডায়েরের হাতে। এভাবেই শায়খুল হিন্দের এতদিনের গোপন আন্দোলন ইংরেজদের কাছে ফাঁস হয়ে যায় । অবশেষে ইংরেজ গোয়েন্দারা এই সুত্র ধরে অতিরিক্ত তদন্ত চালাতে থাকে এবং বেশ ক’জন কর্মীর নাম উদ্ধার করে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ পরিণামে শায়খুল হিন্দ প্রমুখকে মক্কা শরীফ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রেশমী রুমাল আন্দোলন হিন্দুস্তানে ইংরেজের সাথে যুদ্ধ করার সেনাদল তৈরি করে তার নাম দেয় ‘জুনুদে রব্বানীয়াহ।’ নিম্নোক্ত নেতৃবর্গ ছিলেন এ সেনাদলের প্রথম সারিতে –
প্রধান পৃষ্ঠপোষক : তুরস্কের সুলতান, ইরানের সুলতান আহমদ শাহ কাচার, আফগানিস্তানের বাদশাহ আমীর হাবিবুল্লাহ খান।
সহকারী পৃষ্ঠপোষক : আনোয়ার পাশা, তুরস্কের যুবরাজ, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী, আফগানিস্তানের সহকারী রাষ্ট্রপ্রধান সরদার নসরুল্লাহ খান, হায়দরাবাদের নিজাম, ভূপালের নওয়াব, রামপুরের নওয়াব, বাহাওয়ালপুরের নিজাম, ইয়াগিস্তানের মুজাহিদ দলের প্রধান।
প্রধান সেনাপতি : শায়খুলহিন্দু মওলানা মাহমুদুল হাসান এবং সহকারী সেনাপতি মওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধী।
বিভাগীয় সেনাপতিবৃন্দ : মওলানা আবদুর রহীম, মওলানা গোলাম মুহাম্মাদ দীনপুরী, মওলানা তাজ মাহমুদ আনরুজ, মওলবী হুসাইন আহমদ মাদানী, মওলবী হামদুল্লাহ, হাজী তরঙ্গ যই, ডা. মুখতার আহমদ আনসারী, মুল্লা সাহেব বাবড়া, জান সাহেব বাজোড়, মওলবী মুহাম্মাদ মিয়া, হাকিম আবদুর রাজ্জাক, মওলবী উবাইদুল্লাহ গাজীপুর, মওলবী আবদুল বারী ফিরিঙ্গী মহলী, মওলানা আবুল কালাম আযাদ, মওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর, মওলানা শওকত আলী, মওলানা জাফর আলী খান, মওলানা হাসরাত মোহানী, মওলবী আবদুল কাদের কাসুরী ও পীর আসাদুল্লাহ শাহ সিন্ধী।
ভারতের অস্থায়ী সরকার
১৯১৫ সালের ১ ডিসেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় কেন্দ্রীয় শক্তির সমর্থনে আফগানিস্তানের কাবুলে ভারতীয় মুসলিম জাতীয়তাবাদী নেতাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল একটি প্রবাসী সরকার। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য এই সরকার আফগান আমির, জারশাসিত (পরে বলশেভিক) রাশিয়া, চীন ও জাপানের কাছ থেকে সমর্থনের জন্য কাজ করে। কাবুল মিশনের সমাপ্তির পর বার্লিন কমিটি , জার্মানি ও তুরস্কের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সরকার গঠিত হয়। এতে মহেন্দ্র প্রতাপ রাষ্ট্রপতি, মাওলানা বরকতউল্লাহ প্রধানমন্ত্রী, উবাইদুল্লাহ সিন্ধি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মৌলবি বশির যুদ্ধ মন্ত্রী ও চম্পকরমন পিল্লাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
শায়খুল হিন্দ মুক্তি আন্দোলন
শায়খুল হিন্দ মুক্তি আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত পূর্ণ মাইল ফলক হিসাবে কাজ করে। শায়খুল হিন্দ মাল্টা কাগেপ্তারেরপরই ভারতবর্ষের আলেমরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ভারতের সব এলাকা থেক। এক যোগে শায়খুল হিন্দ, ও শায়খুল ইসলাম
মদনীর মুক্তির গন দাবী উত্থাটিত হতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে তাদের মুক্তির দাবীতে সভা সমাবেশ অনুষ্টিত হতে থাকে।জায়গায় জায়গায় হাজার হাজার জনগন তার মুক্তির জন্য সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করতে থাকে। এ দিকে ডাক্তার মুখতার আহমদ আনসারী শায়খুল হিন্দের শিষ্যদের নিয়ে শায়খুল হিন্দের মুক্তি গন-দাবী পরিষদ গঠন করেন “আন্জুমানে ই’আনাতে নযরবন্দানে ইসলাম” নামে একটি আন্জুমান প্রতিষ্টা করেন।
(সূত্র,তাযকীরাযে শায়খুল হিন্দ,মুফতি আজিজুর রহমান বিজনৌরী পৃষ্টা২০৫-২০৬) মাল্টার কারাগারে থাকা অবস্থায় তারা যখন নির্মম, নিষ্টুর নির্যাতনে শিকার হন।
খেলাফত অসহযোগ আন্দোলন
১৯১৯ মওলানা মোহাম্মদ আলী, মওলানা শওকত আলী ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও আধুনিক ধারার ইসলামী নেতাদের নেতৃত্বে বৃটিশ সরকারের ন্যাক্কারজনক নানান কমর্কাণ্ডের নিন্দা করে শক্তিশালী একটি আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ১৭ অক্টোবর খেলাফত আন্দোলন নামে একটি বৃহৎ মোর্চা যাত্রা শুরু করে। একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ এবং মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলমাবাদীর নেতৃত্বে বাংলায় খেলাফত আন্দোলন গড়ে ওঠে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নৃভেম্বর খিলাফত বৈঠকের প্রথম অধিবেশন দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। খেলাফত আন্দোলনের পাশাপাশি শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। কলিকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে ৪ সেপ্টেম্বর ১৯২০ মহাত্মা গান্ধী ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব করে। সর্বস্মতিক্রমে প্রস্তাব গৃহীত হয়। খেলাফত ও অসহযোগের যুগপৎ আন্দোলন দুর্বার গতিলাভ করে এবং ইংরেজ শাসকের ভিত কাঁপিয়ে তোলে।
ভারতের প্রথম পুর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ঘোষণা
খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্টার মাত্র ১৫/১৬ দিন পরেই আরো কিছু তরুণ আলেমদের নেতৃত্বে ১৯১৯ সালের ডিসেম্বরের প্রথমদিকে “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” নামে নতুন আরেকটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের অর্মিত শহরে মাওলানা আবদুল বারী ফিরিঙ্গী মহল্লীর সভাপতিত্বে জমিয়তে হিন্দের প্রথম অধিবেশন অনুষ্টিত হয়। ব্যক্ত করা আব্যশক যে, তৎকালিন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দই প্রথম ভারত বর্ষের পুর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব পেশ করে।
শায়খুলহিন্দ ও মহাত্মা গান্ধি
তিন বছর পর ১৯২০ সালের মার্চে মাল্টা থেকে ছাড়া পেয়ে বোম্বে পৌঁছে দুর্দমনীয় স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে মাাওলানা আজাদের আমন্ত্রনে খেলাফত কন্ফারেন্সে যোগ দেন৷ এসময় সেখানে আযাদ তাকে ‘শায়খুল হিন্দ’ উপধিতে ভূষিত করেন৷ শায়খুল হিন্দ খেলাফত অসহযোগ এসম্মেলনে এলে তাঁর আন্দোলনের প্রতি মুসলমানদের সমর্থন নিশ্চিত করার জন্য করম চান্দ গান্ধী খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন করেন এবং কেন্দ্রীয় খিলাফত কমিটির সদস্য হন। ঐ সমাবেশে করম চান্দ গান্ধীকে শায়খুল হিন্দ “মহাত্না গান্ধি” উপাধি প্রদান করেন। যিনি পরবর্তিতে ভারতের সস্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়কে পরিনত হন।সর্ব ভারতীয় কংগ্রেসের নাগপুর সম্মেলনে (১৯২০) গান্ধী ‘স্বরাজ’ কর্মসূচিকে খিলাফত আন্দোলনের দাবির সঙ্গে যুক্ত করেন এবং উভয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য শায়খুল হিন্দ অসহযোগ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
শায়খুল ইসলাম মাদানীর গেপ্তারী
১৯২১সালের ১৮ই সেপ্টম্বর ইংরেজ বিরোধী গন আন্দোলনকে বেগবান করার অপরাদে বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সিপাহসালার শায়খুল ইসলাম মাদানী রাহ.’র নামে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী হয়। মাদানীর গ্রেফতারী পরওয়ানার কথা প্রচার হওয়া মাত্র সমগ্র দেওবন্দ শহরে স্বতঃস্ফুর্ত ধর্মঘট পালিত হয় এবং অল্পক্ষণের মধ্যে হাজার হাজার লোক তাঁর বাসভবনে এসে জমায়াত হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষের আশংকায় সরকার তাৎক্ষনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, পরদিন শহরবাসী শোভাযাত্রা সহকারে মওলানাকে ষ্টেশনে পৌছিয়ে দেবে তিনি আদালতে হাজির হবেনতাকে জামিন দেয়া হবে । কিন্তু গভীর রাত্রে দেখা গেলো, একজন গুর্খা ও কতিপয় গোরা পুলিশ কর্মচারী এসে তাঁর বাসভবন ঘিরে ফেলে এবং রাত ৩টার সময় তাঁকে গ্রেফতার করে স্পেশাল ট্রেনে করে নিয়ে যায়। তাতে পরদিন আবার তার গ্রেফতারির প্রতিবাদে ও মুক্তির দাববীতে গোটা ভারত বর্ষে ক্ষুব্ধ জনতা স্বতঃস্ফুর্ত ধর্মঘট পালন করে। সারা ভারতে আন্দোলন দাবানলের ন্যায় ছড়পগে। এসময় মহাত্মা গান্ধি শায়খুল ইসলাম মাদনীর মুক্তির দাবী সহ বৃটিশদের বিরোদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের আহববান জানালে, খিলাফত নেতৃবৃন্দ গান্ধীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এভাবে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় একটি সম্মিলিত ফ্রন্ট গড়ে তোলে। জমিয়াতুল উলামা-ই-হিন্দের নেতারা তখন শায়খুলহিন্দ ও আযাদের সাথে খেলাফত অসহযোগ সমর্থনও করেন এবং কাজ শুরু করেন। জমিয়ত নেতা আযাদ সোবহানী ও ফিরিঙ্গী মহল্লী খেলাফতের কেন্দ্রীয় নিবর্হী কমিটিতে স্থান পান। এতে করে কিছি দিনের জন্য হলেও শায়খুল হিন্দের গন বিপ্লব খেলাফতের ব্যনারে পুরো ভারত এক স্রোতে মিশে যায়। ঐ কমিটির কেন্দ্রীয নির্বাহি ও সাংবিধানিক কমিটিতে বাংলার মওলানা আকরম খাঁ একজন সদস্য ছিলেন।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস
১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগেস প্রতিষ্টিত হলেও সংগঠনটি প্রথম থেকেই ববৃটিশঘেষা ছিল। ১৯২০সালে কংগেস করম চান্দ গান্ধির নেতৃত্বে ইংরেজদের বিরোদ্ধে প্রথম কথা বলে। হিন্দুদের প্রধান রাজনৈতিক সংগঠন ছিল কংগেস। কিন্তু মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ছিলেন দীর্ঘকাল এর প্রধান ব্যক্তি। তিনি একজন নিষ্টাবান ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী। স্বাধীন ভারতে শিক্ষাবিস্তারে তাঁর উজ্জ্বল ভূমিকার কথা স্মরণে রেখে তাঁর জন্মদিনটি সারা দেশে “জাতীয় শিক্ষা দিবস” হিসেবে পালন করা হয়। ১৯২৩ সালে মাত্র ৩৫ বছরে তিনি নিখিল ভারত কংগ্রেসের কনিষ্ঠতম সভাপতি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রান্তিকালীন সময়ে ১৯৩৯-৪৬ সাল পর্যন্ত নিখিল ভারত কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে ভারতকে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতার বন্দরে। মালানা আজাদ আমৃত্যু হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশনে গান্ধীজী স্বরাজলাভ এবং খেলাফত সমস্যার সন্তোষজনক মীমাংসার জন্য অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ করেন। এই সময় গান্ধীজী এবং মাওলানা আজাদ সারা ভারতবর্ষে ব্যপকভাবে সফর করে অসহযোগ আন্দোলনের জন্য জনসমর্থন আদায় করেন। ১৯২০ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত নাগপুরে এবং এই অধিবেশনেই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ চূড়ান্তভাবে কংগ্রেস ত্যাগ করেন।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কতৃক প্রস্তাবিত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ভারত-ভাগকে তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি। তিনি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন ভারত-ভাগ ঠেকানোর। “ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম” বইটি মৌলানা আবুল কালাম আজাদের আত্নজীবনীমূলক রচনা হলেও, ভারতীয় ইতিহাসের পাতায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে মৌলানা আজাদের অন্যতম প্রধাণ ভূমিকা ছিল। এই গ্রন্থে তিনি ভারত-ভাগের পটভূমিসহ ১৯৩৫-৪৮ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলীর অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা দিয়েছেন। অনেক ইতিহাসবিদের কাছেই বইটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি নির্ভরযোগ্য দলিল হিসেবে অনন্য স্থান করে নিয়েছে।
মুসলিম লীগ
১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক দল, যা বৃটিশ ভারত এবং ভারত উপমহাদেশে মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান তৈরির পেছনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। ১৮৭৭ সালে আমীর আলীর উদ্যোগে ‘সেন্ট্রাল মোহামেডান এ্যাসোসিয়েশন’ গঠনের সাথে স্যার সৈয়দ আহমদ দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি মুসলমানদেরকে রাজনীতি থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস আত্মপ্রকাশ করার পর হিন্দি এবং উর্দুর বিরোধ সৃষ্টি হলে মুসলমানদের স্বার্থের ব্যাপারে সৈয়দ আহমদ সচেতন হয়ে উঠেন এবং ১৮৮৯ সালে রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডিফেন্স এ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করেন (১৮৮৯)। ১৮৯৩ সালে উত্তর ভারতে মোহমেডান ‘এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অরগানাইজেশন অব আপার ইনডিয়া’ গঠিত হয়। ১৯০৩ সালে সাহরানপুরে মুসলিম রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে পাঞ্জাবে ‘মুসলিম লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়।
১৯১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের একাদশতম অধিবেশনে সর্বপ্রথম খেলাফত অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।
দেশভাগ
ইংরেজেরা ভারত ছাড়ার মুহুর্তে দেশ ভাগের নামে ভারতকে খন্ড বিখন্ড করার নতুন ষড়যন্ত্র করে। মুসলিম লীগে জিন্নাহ যোগ দেয়ার পর বড় লাট তাকে হাত করে নেন। তিনি তখন নতুন ইসলামী রাষ্ঠ কায়েমের দাবী তুলেন। অপরদিকে নেহারু সহ কংগেসের কিছু স্বার্থপর নেতাকে দেশ ভাগের পক্ষে হাত করে নেয়। কিন্তু মহাত্মা গান্ধি, কংগ্রেসের সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি শায়খুল ইসলাম সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী এর প্রচণ্ড বিরোধীতা করেন। জিন্নাহ আলেমদের সামনে কোরআন নিয়ে কসম খেয়ে আলাদা ইসলামী রাষ্ঠ গঠনের শপথ করেন। এতে করে মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ও তার শিষ্য শাগরেদসহ আলেমদের একটি অংশ দেশভাগের পক্ষে চলে যান এবং তীব্র সংগ্রাস শুরু করেন। এদিকে দেশভাগ নিয়ে কংগেসের ভেতর বিরোধ দেখা দিলে মাওলানা আযাদ কংগেসের সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ পদ নেতৃত্ব থেক সরে দাড়ান।আযাদ ও মদনী রহ অখণ্ড ভারতের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিলে পাকিস্তানে আলাদা ইসলামী রাষ্ট প্রতিষ্ঠর স্বপ্ন নিয়ে ১৯৪৫ সালে কলকাতাতে মাও শিব্বির আহমদ উসমানীর নেতৃত্বে “জমিয়তে উলামা ইসলাম” গঠিত হয়ে মুসলিম লীগের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়।
স্বাধীন পতাকা উত্তোলন
১৯৪৭ সালে পাকিস্থানের স্বাধীনতা লাভের পেছনেও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অগ্রণী ভুমিকা | হাজার হাজার আলেম ছিলেন সংগঠনটির মিছিলে। ১৯৪৭ সালে ১৪ ও ১৫ আগষ্ট পাকিস্তান ও ভারত নামে দুইটি স্বাধীন রাষ্টের জন্ম হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ হয়, পূর্ব পাকিকিস্থান, পশ্চিম পাকিস্থান। পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে স্বাধীন দেশের প্রথম জাতীয় পতাকা তুলেন মাওলানা শিব্বির আহমদ উসমানী আর পূর্ব পাকিস্থানেন ঢাকাতে জাতীয় পতাকা উত্তলন করেন মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী।
এভাবে দুই শত বছর আলেমদের রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার বিজয় আসতে থাকে। অতঃপর ৫২র ভাষা আন্দোলন হয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।এখানেও আলেমরা স্বাধীনতার চালকের আসনে। বাকিটা নিয়ে আসছে শ্রীর্ঘই “আলেম মুক্তিযোদ্ধা”।