সিরাজী এম আর মোস্তাক ::
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের অভিযোগে ২৫ জানুয়ারী, ২০১৬ তারিখে বেগম খালেদা জিয়ার বিরূদ্ধে যে সমন জারি হয়েছে, তার মূল হোতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় নিজেই। তাই উক্ত সমন যেন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চেপেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৬ই ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে তার বাণীতে উল্লেখ স্পষ্ট করেছেন, “স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনকে, যাঁদের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।” এ বাক্য থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও লাখো শহীদের সংখ্যা প্রসঙ্গে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
উক্ত বাণী প্রকাশের পরদিনই (১৭ই ডিসেম্বর) পত্রিকাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান সংশয়কারী হিসেবে একটি লেখা আসে। তাতে উল্লেখ হয়, প্রধানমন্ত্রীর বাণী অনুযায়ী ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ আত্মত্যাগীর সংখ্যা যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশে মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা ও ৪১ বীরাঙ্গনা তালিকাভুক্ত কেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুখে বত্রিশ লাখ আত্মত্যাগীকে স্মরণ করেন আর বাস্তবে দুই লাখ পরিবারকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সুবিধা দেন কিভাবে? তিনি কি লাখো শহীদকে যোদ্ধা মানেন না? তারা যোদ্ধা না হলে, শহীদ উপাধি পায় কিভাবে? আর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও যোদ্ধা তফাৎই বা কেন? পৃথিবীর কোথাও কি শহীদ ও যোদ্ধার সংখ্যায় এতো ফারাক আছে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খোদ বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করেননি কেন? তিনি কি বঙ্গবন্ধুকে বাঙ্গালি জাতির পিতা মানেন না? তিনি কি মনে করেন যে, দুই লাখ তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাই দেশ স্বাধীন করেছে? তাতে কি অন্য কারো কোনো ভূমিকা ছিলনা? যে হাজার হাজার ভারতীয় সেনা সদস্য সশস্ত্র সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে পাক হানাদারমুক্ত করেছিল, তারাও কি যোদ্ধা নয়? অতএব, ত্রিশ লাখ শহীদ কি কখনোই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হবে না? দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও তালিকা কি কখনোই বাতিল হবেনা? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বত্রিশ লাখ শহীদ ও আত্মত্যাগীকে কি শুধু মুখে মুখেই স্মরণ করবেন, আর বাস্তবে মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েই পড়ে থাকবেন?
বেগম খালেদা জিয়া ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে এক বিবৃতিতে এ প্রশ্নগুলোর জবাব দেন। তিনি শহীদের সংখ্যাটি অনির্দিষ্ট হিসেবে উল্লেখ করেন। মূলত বেগম খালেদা জিয়া নিজেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার ঘোর সমর্থক। তিনিই প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন।
আজ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছে। সরলমনে বিবৃতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার বিরূদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সমন জারি হয়েছে। ৩ মার্চ, ২০১৬ তারিখে আদালতে হাজির হতে আদেশ প্রদান করা হয়েছে।
আশা করা যাচ্ছে, বর্তমান বিতর্ক ও আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনের বিপরীতে মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা ও ৪১ বীরাঙ্গনার অবৈধ কোটা থেকে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পাবে। বাংলাদেশ-ভারত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা পালনকারী সকল বীর শহীদ ও যোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। দেশের ষোল কোটি নাগরিক সবাই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারভুক্ত হবে।
লেখক : এ্যাডভোকেট, ঢাকা