ফাহিম মুহাম্মাদ আতাউল্লাহ ::
একবার হযরত উমর রা. এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন শুনতে পেলেন, সেই ব্যক্তি দোয়া করছে “ হে আল্লাহ!! আমাকে আপনার অল্প সংখ্যক লোকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিন।“ তখন হযরত উমর রা. বললেন, তুমি এই দোয়া কোথা থেকে শিখেছো? লোকটি জবাবে বললো, আল্লাহর কুরআন থেকে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “আমার বান্দাদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই কৃতজ্ঞ।“ [সূরা সাবা,১৩] উত্তর শুনে হযরত উমর রা. হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। নিজেকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে উমর!! তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী মানুষ আজো পৃথিবীতে বিদ্যমান। সাথে সাথে তিনিও দোয়া করতে লাগলেন, হে আল্লাহ !! আমাকেও আপনার অল্প সংখ্যক বান্দাদের মাঝে গন্য করে নিন।
বন্ধুরা !! আজকে আমরা সংখ্যাধিক্যের পূজারীতে পরিণত হয়েছি। যেনো সংখ্যায় অধিক হলেই সব যথার্থ হয়ে যায়। সমাজের সবাই আজ গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসাতে তৎপর। উল্টোশ্রোতে চলার মানুষের উপস্থিতি তেমন নেই বলেই চলে। কোনো গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকে যদি আপনি পাপকাজ ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন, তাহলে দেখবেন সে জবাবে আপনাকে বলবে, এই কাজ তো অনেকেই করে। অমুক-তমুক মহান ব্যক্তিও করেন। শুধু আমি একা করি না। সে তার কথার দ্বারা একথা প্রমাণ করতে চায়, যে কাজে অধিকাংশ মানুষ লিপ্ত তা পাপ বা অন্যায় হতে পারে না। অথচ আমরা যদি অধিকাংশ মানুষ সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো, কুরআন বলছে “অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞ।-সূরা আরাফ, ১৮৭। “অধিকাংশ মানুষ অকৃতজ্ঞ।“ [সূরা বাকারা, ২৪৩]। তোমাদের অধিকাংশই পাপাচারী [মায়েদা, ৫৯]
আর অল্প সংখ্যার ব্যাপারে কুরআন বলছে, আমার বান্দাদের মাঝে অল্প সংখ্যকই কৃতজ্ঞ- সূরা সাবা-১৩। “অল্প সংখ্যকই তার সাথে ঈমান এনেছিলো, [সূরা হূদ-৪০]
বন্ধুরা!! কুরআন কিন্তু অধিকাংশের নিন্দা করেছে। প্রশংসা করেছে অল্প সংখ্যকের। সুতরাং বেশী মানুষ যা করে তা মন্দ হতে পারে না। এটা শুধু মাত্র শয়তানের ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বন্ধু !! আমরা যদি ইসলামের প্রাথমিক অবস্থার দিকে লক্ষ্য করি তাহলেও আমরা দেখতে পাবো, দ্বীনের বিজয় বেশী সংখ্যক নয় বরং স্বল্প সংখ্যার দ্বারাই হয়েছে। প্রথমে একদিকে রাসূল সা. একা। আরেকদিকে সারা বিশ্ব। বদরে মুসলমান ৩১৩জন। কাফের ৯৫০ জন। উহুদে তদ্রুপ। বিজয় ইসলামের হয়েছে।
বন্ধু!! আমিও যদি বেশী সংখ্যার ধোঁকায় না পড়ে, আমার অবস্থান থেকে হকের আওয়াজ তুলতে পারি তাহলে বিজয় আমাদেরই হবে। বাতিল যতই শক্তিশালি হোক। জিহ্বা একা । দাঁত ৩২ টা। তবু জিহ্বার ধাক্কায় অবশেষে দাঁতেরই পতন হয়।
তাই আসুন!! আমরাও হযরত উমরের মতো দোয়া করি হে প্রভু!! আমাদেরকেও তোমার অল্প সংখ্যক কৃতজ্ঞ বান্দাদের মাঝে শামিল করে নাও। আমীন।।
Tags আত্মার খোরাক (০২)
এটাও পড়তে পারেন
কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ
খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...