এরশাদ শেষমেষ স্বীকার করেছেন যে তার কোন ছেলে সন্তান নেই! আটকুঁড়ে বাদশাহর অপবাদ ঘোচাতে সুস্থ্য সবল ও বয়স্কা স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সন্তান জন্মদানের নাটক সাজান। পুরো ঘটনাটিই ছিল একটি মহা প্রতারণা। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, “কেউ কেউ অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।”
পতিদের মত বিচারপতিদেরও শপথ নিতে হয়। বিচারপতিগণ শপথের মাধ্যমে যে অথরিটি পান- অবসরের পর তা থেকে মুক্ত হয়ে পড়েন।
তাই অবসরের পর লেখা রায় আর তালাকের পর প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে সহবাস অনেকটা একই ধরণের নৈতিকস্খলন ও একই কিছিমের আইনের বরখেলাপ। এর ফলে উৎপাদিত সন্তান কিংবা মামলার ভারডিক্ট উভয়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। বিষয়টি সবারই জানা থাকলেও তা বলার সুযোগ ছিল না। মাননীয় প্রধান বিচারপতি সেই সুযোগটি সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
বিশেষ ধামা দিয়ে চাপা দেয়া দুটি ঐতিহাসিক সত্য গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। এই পরম সত্যের একটি বলেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। অন্যটি বলেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
এরশাদ শেষমেষ স্বীকার করে ফেলেছেন যে তার কোন ছেলে সন্তান নেই! ১৯৮২ সালে বন্দুকের নল দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করে এদেশের বাদশা বনে যান। তারপর আটকুঁড়ে বাদশাহর অপবাদ ঘোচাতে সুস্থ্য সবল ও বয়স্কা স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সন্তান জন্মদানের নাটক সাজান। পুরো ঘটনাটিই ছিল একটি মহা প্রতারণা। তজ্জন্যে শিল্পী কামরুল হাসান তাকে যে বিশ্ব বেহায়া উপাধি দিয়েছিলেন, তার যথার্থতা আজ আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। তার পরম অনুগতা ও ব্যক্তিত্বহীনা সেই স্ত্রীই হয়েছেন আজ বিরোধী দলীয় নেত্রী। ছাই ফেলতে যেন ভাঙা কুলাই ব্যবহৃত হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের একুশতম বিচারপতি তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বাণীতে বলেন, “কোনো কোনো বিচারপতি রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন। আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।”
তাঁর এই বক্তব্যের পর সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। এর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে বর্তমান সরকার যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিল, তা ছিল অবৈধ। তার ফলে সরকারের বৈধতাও মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে।
এই ঘটনার পরে অাবারো প্রমাণিত হলো যে সত্য কোনদিন চাপা থাকে না। কোন না কোন ভাবে, কারো না কারো মুখ দিয়ে তা বেরিয়ে পড়ে। সত্য পন্থীদের জন্যে এটাই পরম সান্ত্বনা। onb24.com
লেখক :: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার