বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:৪৭
Home / আকাবির-আসলাফ / কওমী সিলেবাস প্রয়োজনীয় সংস্কার ভাবনা

কওমী সিলেবাস প্রয়োজনীয় সংস্কার ভাবনা

সংগ্রহে: শাহ আব্দুস সালাম ছালিক

লিখেছেন:আতাউর রহমান খসরু

booksইংরেজি চর্চা করা ফরজে কেফায়া পর্যায়ের একটি কাজ, তবে ইংরেজ হওয়া যাবে না
মুফতি আবুল বাশার নোমানী
প্রিন্সিপাল, জামেউল উলুম মাদরাসা মিরপুর ১৪ ঢাকা।
প্রশ্ন : দরসে নিজামী সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর : ভারত উপমহাদেশে দীনের খেদমত হয়েছে তিনটি মাধ্যমে। এক. হক্কানী পীরের খানকা। দুই. দরসে নিজামী। তিন. দাওয়াত ও তাবলিগ।
এই তিনটির মূলভিত্তি হলো দরসে নিজামীর তালিম বা শিক্ষা। এখনো পৃথিবীর যতো জায়গায় দ্বীনের সহি খেদমত হচ্ছে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দরসে নিজমীর অবদান।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে প্রচলিত দরসে নিজামীর শিক্ষা সিলেবাস দ্বারা দীনী শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য যথা, কুরআন, হাদীস ফেকাহ, উসূলে ফেকাহ, উসূলে হাদিস ও উসূলে তাফসিরের ইলম অর্জিত হচ্ছে?
উত্তর : দরসে নিজামীর মৌলিক বিষয় তেমন কোনা পরিবর্তন হয়নি। বর্তমান যুগের ছাত্রদের মেধা ও প্রতিভা অনুযায়ী এটা একটি ভারসাম্যপূর্ণ সিলেবাস। তবে আমি মনে করি এর সঙ্গে আরো কিছু সংযোজন প্রয়োজন।
প্রশ্ন : কওমী মাদরাসার শিক্ষা সিলেবাস সংস্কারের যা হযরত ইউসুফ বিননূরী রহ.সহ অনেকে বলেছেন বা সাধারণ শিক্ষার সংযোজন যা হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. বলেছেন-এর প্রয়োজন মনে করেন কি না?
উত্তর : মৌলিক বিষয়ে তো পরিবর্তন আনার কোনো সুযোগ নেই। আর বর্তমান সিলেবাসে অমৌলিক বিষয় আছে খুব সামান্য যা না হলে নয়। সিলেবাস সংস্কারে হযরত ইউসুফ বিননূরী ও আল্লামা মাদানীর বক্তব্য ছিলো, পুরাতন সিলেবাসে নতুন কিছু সংযোজন করা। তবে তা এমনভাবে যেনো ছাত্রের ইলমী যোগ্যতা নষ্ট না হয়। এ ব্যাপারে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. কে বলতে শুনেছি, ‘আমি এটা বলি না সম্পূর্ণ নতুন হয়ে যাও। তবে দুনিয়া থেকে বিমুখ ও বেখবর হওয়া উচিত হবে না।’
সাধারণ শিক্ষার সংযোজন আমি মনে করি ক্লাস এইট পর্যন্ত হলে যথেষ্ঠ। এর বেশি হলে কওমী মাদরাসা ভবিষ্যতে আলিয়া মাদরাসার ভাগ্য বরণ করবে।
প্রশ্ন : পাকিস্তানের যাহেদ রাশেদী’র শিক্ষা সিলেবাস অনুসরণ করে আমাদের দেশে কিছু প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। আসলে তা কতোটা অনুসরণযোগ্য?
উত্তর: আমার জানা মতে বাংলাদেশে এমন প্রতিষ্ঠান কেবল হয়েছে। জামেয়াতুর রাশাদ। আশা করি ফল ভালো হবে। তবে কতোদিন মূল ধরে রাখা যাবে। বা মূলের সঙ্গে সংযুক্ত তা বলা যাচ্ছে না। প্রত্যেক সিলেবাসই নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূল্যায়ণযোগ্য। যে কোনোটাকেই অনুসরণ করা যেতে পারে। ইচ্ছা করলে নিজেরা তৈরি করে নেয়াও যায়।
প্রশ্ন : কিন্তু বর্তমান সমাজে শিক্ষা সিলেবাস নিয়ে যে নৈরাজ্য চলছে তা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
উত্তর : আমি অত্যন্ত দুঃখিত। যা হচ্ছে। যে কয়টা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানি কোনো ভালো ফলাফল আশা করতে পারি না বা পারছি না।
প্রশ্ন : মাদানী নেসাব সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ণ কি?
উত্তর : মাদানী নেসাবের রূপকার অত্যন্ত যোগ্য ও মাকবুল একজন মানুষ। তার একজন যোগ্যতম ছাত্র যিনি হুজুরের অনুমতি নিয়ে মাদানী নেসাবের বড় একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন। তাকে আমি একান্তে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা! আপনি তো মাদানী নেসাবের একজন কৃতি ছাত্র। আপনার উস্তাদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ ভালো। দিল থেকে উত্তর দিবেন, মাদানী নেসাবে পড়ে ছাত্ররা কি স্বাভাবিক ধারার কওমী মাদরাসার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারে? তিনি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন, আরবিতে মাশাল্লাহ তারা ভালো করে কিন্তু কুরআন-হাদিস বোঝার জন্য মৌলিক যে যোগ্যতা বা আবকারিয়্যাতের প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে।
প্রশ্ন: যদি আপনাকে বলা হয়, উর্দু-ফার্সি না ইংরেজি। আপনী কোনটি গ্রহণ করবেন?
উত্তর : পাকিস্তানের নিউটাউন মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিসের দরসে হযরত সাঈদ আহমদ পালনপুরী দা.বা. বলেছিলেন, উর্দু সাহিত্য না হলেও উর্দু সম্পর্কে এতোটুকু বুৎপত্তি থাকা প্রয়োজন যেনো আকাবিরে দেওবন্দের কিতাবাদি পড়ে তাদের ফাহম গ্রহণ করতে পারে।
ফার্সি আমি খুব গুরুত্বের সঙ্গে পড়লেও আমি তা পড়া-পড়ানোর বা চর্চার প্রয়োজন অনুভব করি না। ইংরেজি সম্পর্ক বলি, ইংরেজি চর্চা করা ফরজে কেফায়া পর্যায়ের একটি কাজ। যা মেধা-প্রতিভায় এগিয়ে থাকা ছাত্ররা করতে পারে। যাদের দ্বারা দীনের বহুমুখি খেদমতের সম্ভবনা আছে। ব্যাপকভাবে নয়।
প্রশ্ন : হযরত মানাজের আহসান গিলানী রহ. লিখেছেন, হযরত কাসেম নানুতবী রহ. দেওবন্দের এক অনুষ্ঠানে এই আশা ব্যক্ত করেছিলেন, দেওবন্দের ছাত্ররা পড়া-লেখা শেষ করে সাধারণ শিক্ষাগ্রহণ করবে। তিনি আফসোস করে ছিলেন, বয়সের কারণে দিল্লি কলেজ মাদরাসার ছাত্ররা ভর্তি হতে পারছে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনি কি ছাত্রদেরকে কলেজে ভর্তির অনুমতি দিবেন?
উত্তর : কলেজে ভর্তির অনুমতি দিতে আমার কোনো কার্পণ্য নেই। উদারতার সঙ্গেই আমি ছেলেদেরকে অনুমতি দেই। তবে বলি ইংরেজি পড় কিন্তু ইংরেজ হয়ো না। দুঃখ পাই যখন তারা ইংরেজ হয়ে যায়।
প্রশ্ন : ভারতবর্ষ পরাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত একই প্রতিষ্ঠানে পড়ে একজন মানুষ ধর্মীয় ও জাগতিক উভয় জ্ঞান অর্জন করত পারতো। বর্তমানে সে সমন্বয় সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?
উত্তর : আমি মনে করি, পূর্বকার সে সমন্বয় এখন আর সম্ভব নয়। কারণ তখন সব কিছুতেই ধর্মের প্রভাব ও ছায়াটা প্রবল ছিলো আর বর্তমানে সবকিছুতেই দুনিয়া ও ধর্মহীনতার প্রভাব প্রকট। আর আমাদের মাঝে এমন কোনো মনীষী নেই যিনি সবকিছু আমূলে পরিবর্তন করে নতুনভাবে বিন্যস্ত করবেন। সুতরাং জাগতিক বিষয়ের প্রধান্য যতো বেশি হবে ধর্মের ভূমিকা ততো গৌণ হবে।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

বিকৃত যৌনতায় দিশেহারা জাতি: সমাধান কোন পথে?

শাইখ মিজানুর রাহমান আজহারী: বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। নারীকে বিবস্ত্র করা ...