সৌদি এবং এর রাষ্ট্রব্যবস্থা। বিষয়টি এতোই স্পর্শকাতর যে, ছুঁতে গেলে ভূতেও মজা নেয়। তারপরও স্পর্শ করতে হয়, স্পষ্ট করতে হয়। গত ২রা জানুয়ারি সৌদি সরকার ৪৭ জন মানুষকে ফাঁসি দিয়েছে। বরাবরের মতো এই বিচার নিয়েও মতনৈক্য। কেউ হত্যার কারণে সৌদির ওপর বিভিন্ন দেশের চাপাচাপির খবর শোনাচ্ছেন আবার কেউ সৌদির পক্ষে অন্ধ ভক্তের মতো গলাবাজি করছেন। কেউ বিশ্ব-মানবতার ঢোল পেঠাচ্ছেন আবার কেউ সৌদি-নিরাপত্তার বেহালা বাজাচ্ছেন।
আসলে এটা ঘটনাকেন্দ্রিক কোনো পারসেপশন নয়, বরং আদর্শিকভাবে যুগ যুগ ধরেই সাউদি আরবের পক্ষে-বিপক্ষে দু’দলে বিভক্ত হয়ে আছে।
যাদেরকে এখন এই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে মানবাধিকারের প্লেকার্ড নিয়ে দণ্ডায়মান দেখা যাচ্ছে, তাদের অধিকাংশ সর্বদাই সৌদি আরবের ছিদ্রান্বেষণে থাকেন। সৌদির পজেটিভ বিষয়ে কখনো একটা অক্ষর লিখেছেন- তা ইতিহাসে বে-নজির। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কখনো যদি সৌদি আরব কোনো অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, এসব লোকেরা অশ্রুধারায় বন্যার আভাস দেন। তারা মনের গহীনে এক ধরনের ইরান-প্রীতি লুকিয়ে রাখেন। ‘“সকল শীয়াই কাফের নয়”- এটি প্রমাণে বিভিন্ন সময়ে প্রামাণ্যচিত্রও মঞ্চায়ন করেন। আমেরিকা কিংবা ইসরাইলকে ইরানী কেউ হুমকি দিলে আনন্দে লাফ দিয়ে ছাদে উঠেন, ইমাম খোমেনী পশ্চিমাদের বিপক্ষে চিৎকার করলে তারা খলিফাতুল মুসলিমীনের হুংকার মনে করেন। সুতরাং, তাদের এই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা কেবলই সৌদি আরবের বিরোধীতার কারণে, কোনো হত্যার কারণে নয়। তাদের সাথে অবশ্য জীবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কোরাস ধরে আরেক গ্রুপ। যারা মূলতঃ ইসলাম এবং মুসলিম বিদ্বেষী। এই ইসলাম বিদ্বেষীরা আরেকটু এগিয়ে সৌদির দোষগুলোকে পুরো ইসলামের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেন।
অন্য দিকে, এই মৃত্যুদণ্ডের পক্ষ নেয়া দলটির কথাবার্তাও খুব তাজ্জবের। এরা কখনোই সৌদির নেগেটিভ কিছু দেখেন না, খুঁজে পান না। একটা প্রবাদ আছে – প্রেমের চক্ষু অন্ধ। তারা সম্ভবতঃ সৌদির মুহাব্বাতে এতোই হাবুডুবু খাচ্ছেন যে, কোনো দোষকেই তাদের কাছে দোষ মনে হয় না। যেমন, বিগত হজ্বে ক্রেন ভেঙে পড়ে হাজীদের ইন্তিকাল কিংবা পদদলিত হয়ে ইন্তিকালে সৌদির কোনো ধরনের অবহেলা, ত্রুটি কিংবা mismanagement খুঁজে পান নি। তারা কেতনে আল্লাহ এবং মুহাম্মদ সা. দেখে গর্বিত হন কিন্তু ঘোড়ার রেসে জুয়ার মাঠে কালিমা খচিত পতাকার উড্ডয়ন দেখেন না! তারা তৃতীয় বিশ্বে শায়খদের লাখ লাখ রিয়াল সাহায্য দেখেন কিন্তু প্রথম বিশ্বে কোটি কোটি ডলারের ফুলশয্যা দেখেন না!
এজন্য কেউ মধ্যখানে দাঁড়িয়ে Specific ঘটনা নিয়ে কথা বলতে রাজি নয়। দু’দলই আদর্শিক চেতনা থেকে কেইস স্টাডি করছে।
একদল শিয়া নেতা ‘নামার আন-নামার’র জন্য মায়াকান্না করতে গিয়ে সৌদিকে উলঙ্গ করার প্রচেষ্টা করছেন। এদের কেউ বলছেন, উনি শিয়া হওয়ার কারণে নাকি সৌদি সরকার হত্যা করেছে। আবার কেউ তো আরেকটু বাড়িয়ে (যারা মূলতঃ ইসলাম বিদ্বেষী) ইসলামকেই হত্যার ধর্ম ট্যাগ করছেন।
আরে ভাই! শিয়াদের জন্য কেনো এতো দরদ? ইরানে গত এক বছরে ফাঁসি দেয়া সহস্রাধিক সুন্নী’র কথা তো একদিনও বলেন নি! আপাদমস্তক সৌদি কিংবা ইসলামের বিষোদ্গার না করে নির্দিষ্ট কেইস নিয়ে কথা বলুন।
আবার অন্য দল উক্ত শিয়া নেতা (নামার আন-নামার)’র এবং শীয়াদের অপতৎপরতা বিষয়ক কাসুন্দির আড়ালে বাকি ৪৬ জনকে দিব্যি লুকিয়ে ফেলছেন। যেখানে শিরচ্ছেদকৃত ৪৭জনের মধ্যে মাত্র ১জন মতান্তরে ৪জন ছাড়া বাকি সবাই সুন্নী। আপনি “শিয়া কাফের” কিংবা “শিয়া ইসরাইলের চর” ইত্যাদি বলে কি সবগুলো শিরচ্ছেদকে লুকিয়ে ফেলবেন?! বিটিভি কর্তৃক সরকারের সমালোচনা করার মতো সৌদি এবং রাজপরিবারেব সুইট সমালোচনা না করে সত্যটা বলুন।
সাদাকে সাদা বলুন, কালোকে কালো বলুন।
লেখক : ফ্রান্স প্রবাসী।