বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:৪৪
Home / অনুসন্ধান / থার্টিফাস্ট নাইটে আমাদের যা করণীয়

থার্টিফাস্ট নাইটে আমাদের যা করণীয়

11960152_1481782708808587_82266365721584312_nতাজ উদ্দিন হানাফী ::
থার্টিফাস্ট নাইট শীতল রজনী তপ্ত করবে  নিশি কন্যারা ২০১৫ সালকে বিধায় দিয়ে ২০১৬ কে সাদরে বরণ করে নেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো আমাদের দেশও সাঁজছে তার আপন মহিমায়।  পাঁচতারা হোটেলগুলো থেকে শুরু করে ছোটখাটো অনেক পার্টি অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবে তপ্ত রমনীরা। থার্টিফাস্ট নাইটে বেহায়পনা, বেলেল্লাপনা, নগ্নতার সকল উপকরণে সজ্জিত এই রজনী। যুব চরিত্র ধ্বংসের যেন এক কালজয়ী মিশন। থার্টিফাস্ট নাইটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্ষতিকর কাজটি হয় রাতের বেলায়। রাত যত গভীর হয় ততই জমে ওঠে উদাযাপন নামি নাচ গান। নাচ নামে মেয়েদের নগ্ন নাচে মগ্ন হয় সমাজের একাংশ তরুণ। নগ্ন নাচ দেখতে দেখতে বসে মদ, ফেনিসিডিল ও গাঁজার আসর । প্রায় সারা রাত ধরে চলে এ নগ্ন উৎসব। ক্ষণিকের মোহে মানুষ তার বিবেক বিসর্জন দেয়।  ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই নগ্ন নাচ  বন্ধ হলেও এর প্রভাব বন্ধ হয়না। যে তরুণ-যুবকের সারা রাত নগ্নতা উপভোগ করে তার প্রভাব কি খুব দ্রুত শেষ হতে পারে? তাইতো ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পরকীয়া, ইভটিজিংসহ নানা ধরণের অপরাধ সমাজে বাড়তেই থাকে। অবশ্য নারীর প্রতি এ জাতীয় অপরাধ দমনে রাষ্ট্রের আইন আছে এবং মিডিয়ায় বেশ আলাপচারিতাও চলে কিন্তু অপরাধের কারখানায় অপরাধ উৎপাদন অব্যাহত রেখে তো ভোক্তাকে ফিরিয়ে রাখা যাবে না। বিদেশি সংস্কৃতি জামায় আদরে মেহমানদদারি করে, দেশের নতুন প্রজন্মের তরুণ-যুবকদেরকে ধ্বংসের এ আয়োজন কেন ?
আজ অশ্লীলতা আমাদের যুব সমাজকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। সদা ক্রিয়াশীল এ সম্প্রদায়কে রুগ্ন করে দিচ্ছে অশ্লীলতা। পৃথিবীময় সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদীরা  যুব সমাজকে এক শ্রেণীর যৌন জীব হিসাবে পরিচিত করানোর,এবং সেই হিসাবে বাঁচিয়ে রাখার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। শোবিজ তারকাদের যুব সমাজের কাছে স্বপ্নের মানুষ হিসাবে উপস্থাপন ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষদেরকে তাদের মতো জীবন যাপনে অভ্যস্ত করানোর অপপ্রয়াস চলছে সর্বত্র। যুব সমাজের চরিত্র ধ্বংসের জন্য যৌন উত্তেজক উপকরণ,অশ্লীল সিডি,ভিসিডি,ম্যাগাজিন,ক্যাবল টিভি নেটওর্য়াক,পত্রপত্রিকা,পর্ণো ইত্যাদি গুলোকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
এর মাধ্যমে যুব সমাজের মনুষ্যত্বের শক্তিকে গলাটিপে হত্যা করে পশুত্ব শক্তিকে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে। ফলে দেশ ও সমাজ অবয়ের যাঁতাকলে নিপীড়িত হচ্ছে। অশান্ত গোটা পৃথিবী। বেড়ে যাচ্ছে খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, সন্ত্রাস ও যৌন নির্যাতন।
যাদের আপ্যায়নে আজকের থার্টি ফাস্ট নাইট তাদের তরে কিঞ্চিৎ ক্ষোভঃ
আগুন জ্বালব বলে অনেক দিন ক্ষেটে কাঠ খড় জোগাড় করা, জ্বালিয়ে দিয়েছি সমাজ, সাংস্কৃতিতে। যুবক-যুবতীর বুকে আগুন দেখার সাধ অনেক দিনের, লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলছে, জ্বালাচ্ছে আগুন জ্বললে কারও লাভ, কারো পকেট ভরে। আমাদেও সমাজ, সাংস্কৃতির শত্রুও পয়সায় শ্রদ্ধায় অবনত মীরজাফরের মাথা, ইংরেজ চলে গেছে,  মীরজাফর তার হাড়গোড় নিয়ে মাটি হলেও জানতে পারলোনা যে,
ইতিহাস একের পর এক, কতো শত মীরজাফরকে ধারন করলো। জ্ঞানীর রুপ ধেও, সুন্দরের বেশ ধরে শয়তানের পথ চলা আজকের নয় সেই শুরু থেকে সভ্যতাকে অসভ্য বানানোই তার কাজ শয়তানও হাসে, মানুষের কর্মকান্ড; নিষ্ঠুরতা, অপকর্মেও দেয়াল পেরিয়ে ধ্বংষের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলে ভাবে এ কি মানুষ! আমাকেও ছাড়িয়ে যায়? শয়তানকে ছাড়িয়ে গিয়েছি অনেক আগেই। নোংরামীকে বুকে নিয়ে আমাদের থার্টিফাষ্ট হলিখেলা ইারীর পোশাক এখন আদিম হিংস্রতায় ভরা পুরুষের চোখ নৈতিকতা বির্সযন দিয়ে তারই বোনের দিকে তাকায়।
মুখ, হাত-পা দিয়ে আহব্বান করে-ধ্বংষের পথে। আগুন জ্বলে ঘরে ঘরে জ্বালিয়েছি আমরাই- নোংরামির খড় কুটার আগুন। ইভটিজিং বলে চিৎকার দিয়ে লাভ কি! টেনে এনেছি, সেই সুদুর থেকে, অসভ্যতাকে সভ্যতা বলে। এই জন্যই শেখ সাদি বলেন, নিউই ইয়ার কিভাবে একজন মুসলমানের কাছে হ্যাপি হয়? “আপনার জীবন থেকে তো একটা বছর চলে গেল । আমরা সবাই কিছু  শেষ হলে অখূশী হই, আর জীবনের আয়ু কমার কারণে খূশী হই কিভাবে?  বাস্তবতা এটিই, আজ আমাদের আনন্দ উল্লাস, মেতে উঠা বর্ণীল সাজে সজ্জিত,পাচতারকা হোটেলে পশ্চিমাদের সংস্কৃতি আননে আমাদের দৌড়যাপ,এসকল কি প্রমাণ বহন করে, আমরা নিজেরাই তার ব্যাখা দিতে পারব।
খ্রিষ্টীয় বড় দিন পালনে আমাদের কি একটু মন কাপেনা আমরা যে মুসলমান, আমাদের পরিচয় মুসলিম, এটি আমরা ভূলে যাই কি করে,আজ আক্ষেপসূচক বাক্য বলতে হয় আমাদের,হিজরী সনের আগমনের কালে কোন পশ্চিমা খ্রিষ্টীয়দের আমাদের মত সাজতে দেখা যায়না।এরা দিকই অনুধাবন করতে পারে যে,এটি মুসলমানি রীতি সংস্কৃতি।
আমাদের এসব পালনে প্রয়োজন নেই,কিন্তু হায়!আজ আমরা ধর্মীয় রীতি  মূলোচ্ছেদ করে,নগ্ন উল্লাসী হয়ে পশ্চিমা পতিতা সংস্কৃতি আমদানি করতে ব্যস্ততম হয়ে পড়ি।
থার্টিফাষ্টে আমাদের করনীয়ঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত”। আবু দাউদ: (৩৫১৪) অন্য হাদীসে নবী করিম (সাঃ) বর্ণনা করেণ যে, তার উম্মতদের একদল লোক আচরণ, অভ্যাস ও জীবনাচারের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট ইহুদী-খৃষ্টান জাতিকে হুবহু অনুসরণ করবে । আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না আমার উম্মত পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতির হুবহু অনুসরণ শুরু করবে । এমনকি তারা যদি একহাত সামনে গিয়ে থাকে, আমার উম্মতও যাবে । এক গজ পেছনে গিয়ে থাকে, আমার উম্মতও তাই করবে । সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, “পারস্য ও রোম জাতির মত?  জিজ্ঞেস করা হলে নবীজী (সাঃ) বললেন – তা না হলে আর কাদের মত ? (বুখারী)
অন্য আরেকটি হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেছেন- “অবশ্যই তোমরা পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতির হুবহু অনুসরণ শুরু করবে । তারা যদি একহাত সামনে গিয়ে থাকে, তোমরাও যাবে । একগজ পেছনে গিয়ে থাকলে তোমরাও তাই করবে । এমনকি তারা যদি কোন সাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে , তোমরাও সাপের গর্তে প্রবেশ করবে । সাহাবারা আরজ করলেন- ইহুদী-খৃষ্টানদের মত? নবীজী (সাঃ) বললেন, তা না হলে আর কাদের মত ?’ (বুখারী-মুসলিম)
ওলামাগণ এই হাদিসদ্বয়ের ব্যখ্যায় বলেন, এখানে হাত, গজ , সাপের গর্তে প্রবেশ দ্বারা মূলতঃ তাদের পরিপূর্ণ এবং অন্ধ অনুসরণই বুঝানো হয়েছে।তাই আসুন পশুবৃত্তিকে প্রণোদনাকারী থার্টিফার্স্ট নাইট নামক বেহায়াপনা থেকে নিজে বিরত থাকি এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সতর্ক করি। থার্টিফার্স্ট নাইটের মতো উৎসব কখনো আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সংস্কৃতিতে ছিল না। তবে এসব অশ্লীলতা ও কামোদ্দীপক প্রোগ্রামকে যদি এতো সহজে গ্রহণ করি, তবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম নিশ্চিত বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে। সমাজে বিস্তর লাভ করবে, এইডস নামি আল্লাহর লা’নত, আজকের শিশু হয়ে উঠবে যেন কোন কালনাগিনী সাপের দর্পে, বিষাক্ত হবে হবে সমাজ,ধ্বংস হবে আমাদের সংস্কৃতি, পাপে নিমজ্জিত হয়ে আমাদের ধ্বংসের পথ আমরাই রচনা করব, তাই আসুন আমরা সকলেই এমন অসুস্থ সংস্কৃতিকে না  বলি। আদর্শ সমাজ নির্মাণে নিজ থেকে ভূমিকা রাখি।এই প্রত্যাশায়।
কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...