এহসান বিন মুজাহির ::
একজন তালেবে ইলম সে জীবনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ লেখাপড়া করে কাটিয়ে দিয়ে বাকি জীবন যদি লক্ষ্য হাসিলের মূল ধারায় পরিচালিত না করে নিজেকে অনবিজ্ঞ ও অদক্ষের মত জাতির কাছে প্রদর্শন করে,তবে তা ভাবার বিষয়!
বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) দেয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সারা দেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদরাসা এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। প্রায় ১৪ হাজার কওমি মাদরাসায় অধ্যয়নরত ১৪ লাখ শিক্ষার্থী। (সুত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ১৬ মে’১৫) ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, মোট কওমি মাদরাসার মধ্যে ১২ হাজার ৬৯৩টি পুরুষ ও ১ হাজার ২০৯টি মহিলা মাদরাসা রয়েছে। এসব মাদরাসায় ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৩৬ জন ছাত্র ও তিন লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে। সারা দেশে শিক্ষক আছেন ৭৩ হাজার ৭৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৬ হাজার ৯০২ জন এবং মহিলা ৬ হাজার ৮২৯ জন।
এছাড়াও দেশের আনাচে-কানাচে ছোট-বড়, ইবতেদাইয়্যা, নূরানী, হাফিজিয়া মাদরাসার সংখ্যা আরো কয়েক হাজার হবে। কওমি মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস (সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর সমমান) সমাপ্ত করে (ডিগ্রী) প্রতিবছর হাজার হাজার আলেম (মাওলানা, মুফতি, মুফাসসির, মুবাল্লিগ, মুসান্নিফ হচ্ছেন)। বিভিন্ন ডিগ্রী নিয়ে তাঁরা ছড়িয়ে পড়ছেন দেশের আনাচে কানাচে। যে যেখানে যেভাবে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন চাকুরি নিচ্ছেন। অনেক যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকার পরও তারা দেশের উন্নয়নের মূল শ্রুতধারা যুক্ত ও দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ কোন ডিপার্টমেন্টে চাকুরি নিতে পারছেন না। তাদেরকে বলা হচ্ছে যোগ্যতা অর্জন করো। সরকারি চাকুরির যোগ্যতা তোমাদের নেই। তাহলে দীর্ঘ ১৬ বছর পড়া-লেখা করেও অর্জিত সার্টিফিকেট নামক কাগজটির কি কোন মুল্য নেই? কওমি শিক্ষার সার্টিফিকেট যতক্ষণ না সরকারিভাবে মূল্যায়ন করা হবে, ততক্ষণ কওমি শিক্ষিতরা সরকারি খাতায় মুর্খদের কাতারেই গণ্য হবে।
কওমী মাদরাসা জাতিকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার মারকাজ। কয়েক বছর থেকে কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন চলছে। সনদের স্বীকৃতি না থাকায় শিক্ষার্থীরা আজ দিশেহারা। তারা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত সার্টিফিকেট অর্জনের দিকে দলে দলে ধাবিত হচ্ছে। তাই কওমী সনদের স্বীকৃত প্রয়োজন অপরিসীম। আমাদের দেশে প্রচলিত কওমি মাদরাসা সমূহ ভারতের ঐতিহ্যবাহী বেসরকারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মাদরাসায়ে ‘দারুল উলুম দেওবন্দের’ অনুসরণে পরিচালিত ১৮৬৬ সালে দেওবন্দ মাদরাসার সূচনা।
‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস। এ মাদরাসা থেকে উত্তীর্ণ আলেম-ওলামা বিভিন্নভাবে দেশ-জাতি ও ইসলামের খেদমতা করে যাচ্ছেন। রাজনৈতি ময়দান, তা’লীম, তাবলীগ, সমাজ সংস্কারের আন্দোলনেও তাদের বিরাট অবদান রয়েছে। দেওবন্দের অনুসরণে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার কওমি মাদরাসা পরিচালিত। (চলবে)
লেখক: সাংবাদিক, আলেম ও কলামিস্ট