ট্র্যাম্পের বক্তব্য আমেরিকানিজম বিরোধী।আমরা মুসলমানদের পাশে ছিলাম, পাশেই আছি …
–নিউনিয়র্ক স্টেট সিনেটর ব্র্যাড হোইলম্যান
রশীদ জামিল, আমেরিকা প্রতিনিধি:: ”আমেরিকা হচ্ছে একটি মাল্টি কালচারাল কান্ট্রি। মুসলমানরা আমেরিকায় কন্সটিটিউশনাল সিটিজেন। এদেশের সংবিধানে ধর্ম-বৈষম্যের অবকাশ নেই। যে কেউ তার পছন্দের ধর্ম পালন করতে পারে। কেউ চাইলে কোনো ধর্ম পালন না করার অধিকারও তার আছে। কিন্তু কোনো ধর্ম বিশ্বাসীদের আপনি অপমান করে কিছু বলতে পারেন না। সেই অধিকার আপনাকে দেয়া হয়নি। ডোনাল্ড ট্র্যাম্প এর সাম্প্রতিক বক্তব্য শুধু অসৌজন্যমূলকই নয়, অসাংবিধানিকও। তার এ বক্তব্যের সাথে আমেরিকান গভর্নমেন্ট একমত নয়। ট্র্যাম্প অসংলগ্ন বক্তব্যের কারণে মুসলমানরা কষ্ট পেয়ে থাকবেন। আমরা আপনাদের কষ্টের ভাগ নিতে এসেছি। আর বলতে এসেছি, আমরা আপনাদের সাথে আছি। কারো উস্কানিমূলক বক্তব্যে আতংকিত হবার কোনোই কারণ নেই”
শুক্রবার নিউইয়র্ক সিটির কেন্দ্রিক মসজিদ, মদিনা মসজিদ ম্যানহাটন এ জুমার নামাজের জমায়েতে উপস্থিত হয়ে উপরুল্লিখিত কথাগুলোই বললেন নিউনিয়র্ক স্টেট সিনেটর ব্র্যাড হোইলম্যান।
সিনেটরের নেতৃত্বে বিভিন্ন চার্চ নেতৃবৃন্দ এবং পদস্থ কর্মকর্তাগণ স্ব-প্রণোদিত হয়ে মদিনা মসজিদে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। আগতদের মধ্যে ছিলেন, টাউন এন্ড ভিলেজ সেনেগাগ রাব্বি লারি সেবার্ত, অর্থডক্স ক্যাথেড্রাল অব হলি ভার্জিন প্রটেকশন ফাদার ক্রিস্টেফার কালিন, সিক্স স্ট্রিট কমিউনিটি সেনেগাগ রাব্বি গাব্রিয়েল ব্যালিনো, মোস্ট হলি রিডিমার ক্যাথোলিক চার্চ ফাদার শন ম্যাক জিলিকাডি, দি ক্যাথলিক ওয়ার্কার বার্ড কার্টনি, মিডল কলেজিয়েট চার্চ রেভারেন্ট চাদ প্যাক, ইস্ট ভিলেজ ফেইথ কমিউনিটি কো-অর্ডিনেটর এন্থনি দনেভান, সেন্ট মেরি অর্থডক্স চার্চ ফাদার ডেভিড কোসি প্রমুখ।
মুসলমানদের সাথে সহমর্মিতা জানাতে ছুটে আসা মেহমানদের স্বাগত জানান মদিনা মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফিজ আহমাদ আবু সুফিয়ান। জুমা পূর্ব বয়ানের মাহফিল পরিণত হয় সম্প্রীতির সেমিনারে। ভ্রাতৃত্ব আর সৌহার্দ্যের সাক্ষী হয় মদিনা মসজিদ জুমার নামাজে উপস্থিত হওয়া হাজারো মুসলমান। মাওনানা আহমাদ আবু সুফিয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সিনেটর ছাড়াও বক্তব্য রাখেন টাউন এন্ড ভিলেজ সেনেগাগ মিস্টার রাব্বি লারি সেবার্ত এবং অর্থডক্স ক্যাথেড্রাল অব হলি ভার্জিন প্রটেকশন ফাদার ক্রিস্টেফার কালিন।
মিস্টার রাব্বি লারি সেবার্ত তার সংক্ষিপ্ত অথচ বক্তব্যে মুগ্ধ করেন উপস্থিত মুসল্লিয়ানদের। মুসলমানদের শান্তিপ্রিয় জাতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ”প্রকৃত মুসলমানরা কখনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় না”। তিনি কোরআনের আলোকে হযরত ইউসুফ আঃ এর প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ”নবী ইউসুফ ইজিপ্ট গিয়ে বাদশা আজিজের সহায়তায় তার পাশে দাড়িয়েছিলেন। আজ আমরাও আপনাদের পাশে দাড়াতে এসেছি। ডোনাল্ডের বক্তব্যে আতংকিত হবার বা মন খারাপ করার কোনো কারণ নাই। আমরা অতীতে যেভাবে মিলেমিশে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।
ফাদার ক্রিস্টেফার কালিন বললেন, আমাদের খ্রিস্ট ধর্মের মূল কথা হচ্ছে শান্তি। বোধকরি সব ধর্মই শান্তির কথা বলে। আপনারা অপ-প্রচারে বিব্রত হবেন না। আমরা আপনাদের সাথে আছি।
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি আমেরিকার আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্র্যাম্প মন্তব্য করেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে আমেরিকায় মুসলমানদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হবে”। তার এই বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় খোদ আমেরিকাতেই। অবশ্য অনুল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছাড়া উনার বক্তব্য নিন্দাই কুড়াচ্ছে বেশি।
বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরু-স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং জন-প্রতিনিধিদের এই উপস্থিতি এবং আন্তরিকতা যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টি কালচারাল কমিউনিটির জন্য একটি ভাল সংবাদ। সবশেষে ইমাম আহমাদ আবু সুফিয়ান উপস্থিত মুসল্লিয়ানকে কারো কোনো রকম উস্কানিমূলক কথা বা বক্তব্যে অধৈর্য না হবার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘ইসলাম মানে শান্তি। যে যাই বলুক, আমাদেরকে প্রমাণ করা অব্যাহত রাখতে হবে যে আমরা শান্তির পক্ষে।