খতিব তাজুল ইসলাম::
যত্রতত্র এলোমেলো ভাবে ক্লাস খোলা বন্ধ করুন। বোর্ডের সাথে ঐক্যমতের ভিত্তিতে ক্লাসের স্তর বিন্যাস ও নাম করণ করুন। কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের জোনাল অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে পরবর্তি ক্লাস চালু করুন।
১১ নম্বরের কিছু আলোচনা ১০এর মাঝে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ণ তাই আলাদা করে বর্ণনা করা জরুরী বলে আমরা ভাবছি। আজ পর্যন্ত কওমি মাদরাসার সকল ক্লাসের একক নামকরণ সম্ভব হয়নি। কোথাও ১৫ বছরে টাইটেল কোথাও ১৪ বছরে কোথাও ১২ বছরে এমনকি ১০ এবং ৮ ও ৬ বছরেও টাইটেল পাশ করানোর নজির আমাদের মাঝে আছে। মহিলা মাদরাসায় বালিকাদের মাত্র ৬ অথবা ৮ বছরে টাইটেল পাশ করিয়ে দেয়া হয়। তার মানে মেয়েরা মেধাবী ছেলেদের চেয়ে? কী আজীব তামাশা? দরজা খোলা; যার তার ইচ্ছে মতো ক্লাস বাড়াচ্ছে কমাচ্ছে।
শুধু কি তাই ? ক্লাসের নাম ও সম্পুর্ণ ভিন্ন। কোন কোন মাদরাসায় ক্লাসের নাম ঐ জামাতের গুরুত্বপুর্ণ কিতাবের নামের সাথে। যেমন ছরফ ক্লাসের নাম ছরফ কিতাবের নামে। নাহুবেমীর ক্লাসের নাম নাহবেমীর কিতাবের সাথে এভাবে হিদায়েতুন্নাহু কাফিয়া শরহেজামী মুখতাছার হিদায়া জাললাইন মিশকাত ইত্যাদি। কোথাও আছে ইবতেদায়ীয়াহ প্রথম দ্বীতীয় তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম আবার উপরে আছে আলিয়া আওয়াল দুওম ছুওম চাহারম আরো আছে যেমন ছানুভিয়াহ মুতাওয়াসসিতা ইত্যাদি।
আমরা এর সমাধান চাই। সমাধান একা একা ঘরে বসে হবেনা। সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই পয়েন্টে যে কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের এক ও একক বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তখনই এই সমস্ত ডালপালার সমাধান সম্ভব নতুবা নয়।
বিশেষজ্ঞগণ বসে ক্লাসের একক নামকরণ করবেন এবং কত বছরের পুরো কোর্স হবে তাও নির্ধারণ করে দিবেন। একজন মানুষ কিংবা কিংবা একটি প্রতিষ্ঠান সকল জ্ঞানের মালিক হতে পারেনা। সম্মিলিত ভাবে বহুজনের পরামর্শে অনেক জটিল সমস্যার যেমন সমাধান হয় তেমনি সুন্দর ফয়সালাও আসে।
আমরা যখন একটি একক বোর্ডের অধীনে আসতে সক্ষম হবো তখন প্রতিটি জেলার জোনাল অফিসে আপনার চাহিদার আবেনদন পেশ করবেন।এই জোনাল অফিস ভিজিট করে কেন্দ্রে রিপোর্ট পাঠালে তখন সেখান থেকে পুর্ণ অনুমোদন আসবে। চাহে ক্লাস বৃদ্ধি কিংবা নতুন প্রতিষ্ঠান খোলা অথবা সিলেবাস সংক্রান্ত যে কোন বিষয়।
একক বোর্ডের মাধ্যমে ঐক্যপ্রক্রিয়ার ভিত্তিতে যখন কওমি মাদরাসা পথচলা শুরু করবে তখন হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।বেকারত্ব দূর হবে।অর্থনৈতিক সমৃ্দ্ধি ও আসবে। লেখাপড়ার মান বাড়বে।দেশ জাতির কাছে বিশ্বের দরবারে আপনারা সম্মানিত হবেন দামি হবেন। সরকার তখন ঘুর ঘুর করবে আপনাদের পিছনে সমর্থন লাভের জন্য। তাই আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য যুগান্তকারী এই উদ্যোগ গ্রহন করতে আপনাদের কাছে জোর দাবী পেশ করছি।
আজ ঐকবদ্ধ না থাকার কারণে আমরা সবদিক দিয়ে দুর্বল। আমাদের দুর্বলতার সুযোগে একেকজন একেক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছেন।ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে। কথনো দেয়া হয় জংগী অপবাদ কখনো মুর্খ অশিক্ষীতের বদনাম। কখনো বলা হয় খয়রাতি প্রতিষ্ঠান। পরনির্ভরশীল পরগাছি ইত্যাদি নানান কিছিমের অপবাদ দিয়ে তারা কওমি মাদরাসাকে হ্যায় করছে। আমরা বসে বসে এসব তামাশা শুধু দেখবো? আমাদের করণীয় বলতে কিছু নেই? আমরা কি অযোগ্য? মেধাহীন? অকৃতকার্য? না আমাদের সামাজে মাথা উচু করে দাঁড়াতে হবে।
সত্যিকার অর্থে এসব প্রতিষ্ঠান দেশপ্রেমিক আল্লাহ ওয়ালাই পয়দা করে। সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির শিক্ষা এসব প্রতিষ্ঠানের অলংকার। কিন্তু আমাদের অসর্তকতার কারণে এই বদনাম চোখ বুজে মেনে নিতে হচ্ছে। না আমরা নীরব বসে থাকলে চলবেনা। আজ বদনাম আসছে কাল খড়গ নামবে।পুর্বের ইতিহাস কি আমরা ভুলে গেলাম।
আফগানিস্তানের তৎকালীন বাদশাহ নাদির খানের গাদ্দারির কারণে রেশমি রুমাল আন্দোলন ব্যর্থ হয়। যার ফলশ্রুতিতে কয়েক লক্ষ আলেম উলামাকে গাছে গাছে ইংরেজরা লটকিয়ে দেয়। আজও ইংরেজদের প্রেতাত্মাতারা সক্রীয় আছে। তাই শিক্ষা-দীক্ষায় আমাদের পিছিয়ে পড়া মানে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারা।আফগানরা সেদিন গাদ্দারি না করলে ভারতের ইতিহাস হতো ভিন্ন। কিন্তু তারাও কি এখন আরামে আছে? তাদের পুর্ব পুরুষের গা্দ্দারীর কুফল আজ তাদের উপর বয়ে যাচ্ছে। তদ্রুপ আজকের মধ্যপ্রাচ্য। কেন এই আজাব তাদের উপর? কারণ এই দেশগুলোর জন্মই হলো পাপের প্রয়াশ্চি্ত্তের উপর।তৎকালীন মুসলিম খিলাফতের বিরুদ্ধে গাদ্দারী করেই তারা কিন্ডম সাজিয়েছে। মুসলমানদের নির্মম ভাবে হত্যা করে বিতাড়িত করে একেকজন একেক সাম্রাজ্যের মালিক বনেছেন।সেই গাদ্দারীর কুফল আজ তারা ভোগ করছে করবে।
নিজের ঘর পুড়িয়ে অন্যর জন্য জায়গা করে দেয়া কত বড় বোকামী। আমার ভাইয়ের সাথে আজ বনাবনি হচ্ছেনা হয়তো কাল হবে। কিন্তু ভাইয়ের সাথে দুশমনি মিঠাতে ঘরের ভিতর দুশমনকে ডেকে আনা খাল কেটে কুমির আানার শামিল। এই ফিলিস্তিন সমস্যা গাদ্দারদের সৃষ্টি। আজ সেখানে রক্তের গংগা ভাসছে তবু সুরাহা নেই। একে অপরের রক্ত গোশত কলিজা মগজ হাড্ডি শুদ্ধ খেয়েও সাধ মিটছেনা।
এই আজাব এখন আমাদের ইসলামী রাজনীতি ও কওমি অঙ্গনে পরিলক্ষীত হচ্ছে। আমাদের এই বিচ্ছিন্নতা চতুর্মুখী বিপদ ডেকে আনবে বলে আমরা খুব শংকিত্। তাই পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হওয়ার আগেই আমাদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহ পাকা আমাদের সহীহ পথ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন আমীন।