কমাশিসা ডেস্ক ::
বাঙালীর বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আজ রোববার মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ত্রয়োদশ দিবস। একাত্তরের এই দিনে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অনেক দূর এগিয়ে যায়। বলা যায়, কেবল আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল। দলে দলে মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ, পলায়ন এ অঞ্চলের মানুষকে দারুণভাবে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। বিজয়কে একরকম নিশ্চিৎ করেছিল।
দেশের অধিকাংশ অঞ্চলই কার্যত স্বাধীন। চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বীর বাঙালি। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন একটি দেশের অভ্যূদয় ঘটার ঠিক আগ মুহূর্তে পাক হানাদারদের পক্ষে নগ্ন হয়ে মাঠে নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। প্রভাবশালী এ দুটি দেশ পাকিস্তানীদের পরাজয় ঠেকাতে মরিয়া তখন। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে এ দুটি দেশের শেষ চেষ্টা আবারো ব্যর্থ হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বক্তব্যের পর অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। স্বাধীনতার পথে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে যায়।
একাত্তরের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী একযোগে ঢাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, চারদিক থেকে ঢাকাকে ঘেরাও করা। কেননা সারাদেশে থেকে পলায়নপর পাক বাহিনী ঢাকায় সমবেত হচ্ছিল। দেশের অধিকাংশ স্থানেই উড়ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা। বাঙালির বিজয় কড়া নড়ছিল দোরগোড়ায়। শুধু অপেক্ষার পালা। কখন আসবে আত্মসর্মনের চূড়ান্ত ঘোষণা! দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে মুক্তিপাগল মানুষের তখন একটাই শুধু অপেক্ষা, কখন আসবে বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ? এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মনোবল বলতে আর কিছুই ছিল না। তারা সাহায্য চায় ইসলামাবাদের কাছে কিন্তু ইসলামাবাদ তাদের কোনো আশার আলো দেখাতে পারে নি। যে কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পর্যদুস্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভিতরে ভিতরে আত্মসমর্পসের প্রস্ততি নিচ্ছিল। পাকিস্তানের ৩৬ ডিভিশনের সেনাধ্যক্ষ জেনারেল জামশেদ মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর আক্রমণ থেকে প্রাণে বেঁচে ঢাকায় আশ্রয় নেয়। ঢাকায় লে. জেনারেল নিয়াজির কাছে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেয়। পরাজয়ের এই লগ্নে এদশেীয় দোসররা গা ঢাকা দিতে শুরু করে। তবে সক্রিয় ছিল রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনী। তাদের হিংসার প্রকাশ ঘটে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী নিধন।
৭১’র এদিন রামগতিতে পাকিস্তানী সেনাদের পরাজয় ঘটেছিল। ফেনী মুক্ত করার পর মুক্তিবাহিনীর একটি দল চট্টগ্রামের উদ্দেশে কুমিল্লা পৌঁছেছিল দুপুর ১২টায়। চতুর্থ ও নবম বেঙ্গলের মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামকে শত্রুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে। সাত নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা হিলি থেকে বগুড়া হয়ে দিনাজপুরের দিকে অগ্রসর হয়েছিল।
নাটোরের লালপুর সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পদ্মা নদী পার হয়ে এ সময় রাজশাহী আক্রমণ করেন। পরাজিত হয় পাকবাহিনী। তারা রাজশাহী ছেড়ে নাটোরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। শেখপাড়া সাব-সেক্টরের মুক্তিবাহিনী পাবনা অভিমুখে এগিয়ে যায়। চার নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনী সেদিন সিলেটের পথে হরিপুর মুক্ত করেছিল।
একাত্তরে আজকের এই দিনে মুক্তিবাহিনীর অব্যাহত অগ্রযাত্রায় স্বাধীন পতাকা ওড়ানো হয় বগুড়া জেলা শহর ও কাহালু উপজেলা, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, মানিকগঞ্জ শহর ও ধামরাই উপজেলা, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও নাটোরের লালপুরসহ আরো কয়েকটি জনপদে। দখলদারমুক্ত হওয়ায় ঘটনাগুলো প্রতি মুহূর্তেই মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকদের মনে উদ্যম ও শক্তি সঞ্চার করে।
তথ্য সহায়তা. উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই।