(আকাবির-আসলাফ ১৭)
“ইসলাম সে তো পরশমানিক তারে কে পেয়েছে খুঁজি?/পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরই মোরা বুুঝি!”
কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন যে, ইসলাম হচ্ছে পরশমানিক, তাকে পাওয়া সুকঠিন। তবে ইসলামের স্পর্শে এসে যারা সোনার মানুষে পরিণত হয়েছেন, তাদেরকেই আমরা দেখতে পাই। হযরত উমর ফারুক রা., হযরত হামজা রা., হযরত হুজায়ফা রা. প্রমুখ প্রথম জীবনে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মদ সা.’র ঘোরবিরোধী ছিলেন। কিন্তু ইসলাম কবুল করে ইসলামের রোশনাইতে তারা সবাই সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। বিগত শতাব্দীতে এদেশে যে ক’জন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছিল এবং যারা দেশজুড়ে ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রেখে গেছেন, তাঁদের মধ্যে শায়খে বর্ণভী রাহ. অন্যতম। শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি সাহেব যথার্থই বলেছেন, “সায়্যিদুল মুরসালিন নাবীয়্যুল আখিরীন হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সা.’র রেখে যাওয়া আমানত সুসংহত ও সুরক্ষার সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী বিকশিত করার দায়িত্ব নায়েবে রাসূল উলামাগণ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। হযরত বর্ণভী রাহ. ছিলেন এ ধারারই একজন মহান ব্যক্তিত্ব। যিনি ছিলেন কুতবুল আলম আল্লামা সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানী রাহ.’র একজন বিশিষ্ট খলীফা। যাঁর সিলসিলাসূত্র রাসূল সা. পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। হযরত বর্ণভী রাহ. ছিলেন এমন একজন নায়েবে নবী ও আল্লাহর ওলী, যাঁর উত্তম আদর্শ, হৃদয়স্পর্শী বয়ান ও মুনাজাতে পথহারা মানুষ হেদায়াতের আলোকিত রাজপথে ওঠে আসতো। হযরত বর্ণভী রাহ. ও তাঁর মধ্যকার সুপ্ত প্রতিভা অনুধাবনে তাঁকে খুব অল্প বয়সেই খেলাফত দান করেছিলেন কুতবে আলম মাদানী রাহ.।”
মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত বরুণা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি পরিবারে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে হযরত লুৎফুর রহমান শায়খে বর্ণভী রাহ. জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী আব্দুল হামিদ। তিনি ছিলেন একজন পরহেজগার শিক্ষক। তাঁর মাতা হালিমা বেগম ধর্মপ্রাণ গৃহবধূ ছিলেন। হযরত বর্ণভী রাহ. প্রাথমিক দ্বীনি তালিম পিতার নিকট থেকে লাভ করেন। স্থানীয় মক্তব থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর ১৩৩৬ বাংলায় তিনি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী গাছবাড়ি জামেউল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হন। ইলমের পিপাসায় শায়খে বর্ণভী রাহ. সর্বদা মশগুল থাকতেন। পড়ালেখা ছাড়াও তাঁর অনুপম আচার-আচরণ লক্ষ করে উস্তাদবৃন্দ ও সহপাঠীরা বিস্মিত হতেন। ছাত্রদের মধ্যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভব হলে বালক শায়খে বর্ণভী এমনভাবে সমাধান দিতেন, যা অবলোকন করে শিক্ষকগণও চমকে যেতেন। এভাবে তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে।
১৩৪১ বাংলায় হযরত শায়খে বর্ণভী রাহ. উপমহাদেশের বিখ্যাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দারুল উলূম দেওবন্দ গমন করেন। সেখানে তিনি উপমহাদেশের অন্যতম শায়খুল হাদিস ইসলামী চিন্তাবিদ ও আধ্যাত্মিক বুযূর্গ হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রাহ. ও আরো অনেক আলিম-উলামার ঘনিষ্ট সংস্পর্শে আসেন। উপযুক্ত উস্তাযবৃন্দের তত্ত্বাবধানে শায়খে বর্ণভী রাহ. মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। এ প্রসঙ্গে কুতবে আলম হযরত মাদানী রাহ. একদা মন্তব্য করেছিলেন, “দারুল উলূম দেওবন্দের সত্তর বছর বয়েসে সম্ভবত এরকম মেধাবী ও আমল-আখলাকে উন্নত ছাত্রের সমাবেশ আর কখনো ঘটেনি।” ১৩৪৬ বাংলায় হযরত মাদানী (রহ.) হজ্জে যাবার প্রাক্কালে শায়খে বর্ণভী (রহ.) কে ডেকে নিয়ে বললেন, “তোমাকে ইজাযত প্রদান করলাম!” তা শুনেই বর্ণভী রাহ.’র চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। তিনি বিনীতভাবে বললেন, হযরত! আমার পক্ষে কি এই খেদমত আঞ্জাম দেয়া সম্ভব? আমি তো এর যোগ্য নই!” জবাবে কুতবে আলম হযরত মাদানী রাহ. বললেন, “আল্লাহ তোমাকে যোগ্য বানিয়ে দেবেন।”
দারুল উলূম দেওবন্দে দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময়কাল অত্যন্ত নিষ্ঠা ও মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন ও রূহানিয়্যাতের সবকগ্রহণ শেষে ১৩৮৮ বাংলায় বর্ণভী রাহ. দেওবন্দ ছেড়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরেই তিনি মৌলভীবাজার দারুল উলূম মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে একাধারে দশবছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শিক্ষকতার পর নিজ গ্রাম বরুণায় “হামিদনগর বরুণা মাদ্রাসা” নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকেন। তাঁর ইন্তেকালের পর উক্ত মাদরাসার নাম রাখা হয় “জামেয়া ইসলামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলূম হামিদনগর বরুণা।” মাদরাসায় শিক্ষকতার সাথে সাথে তিনি তদানীন্তন ভারতের মুসলমানদের ঐক্য ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে “আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম” নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার ও প্রসারে শায়খে বর্ণভী রাহ. ছিলেন শীর্ষস্থানীয় ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া। কুতবুল আলম হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রাহ.’র সান্নিধ্যে অবস্থান করে তিনি তাযকিয়ায়ে ক্কলবের মেহনতের মাধ্যমে কামালিয়্যাতের উচ্চস্তরে পৌঁছাতে সক্ষম এবং খেলাফত লাভে ধন্য হয়েছিলেন। ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শায়খে বর্ণভী রাহ. ছিলেন লাখো মুসলিমের আধ্যাত্মিক রাহবার। তিনি কখনো প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যে কটুক্তিমূলক কোন শব্দ উচ্চারণ করতেন না। হিকমত ও তীক্ষ্ণ ধীশক্তির বলে তিনি শত্রুকেও ইসলামের বিশুদ্ধ অনুসারী হতে অনুপ্রাণিত করতে পারতেন। সমকালে তিনি কুতবে জামান হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। শায়খে বর্ণভীর অসাধারণ বাগ্মীতা, মধুর কণ্ঠ ও হৃদয়গ্রাহী ওয়াজ মানুষকে হেদায়াতের আলোর দিকে টেনে নিয়ে যেতো। মুনাজাতে তাঁর ভাবগম্ভীর বিনয় ও আকুতির নমুনা ছিল কল্পনাতীত।
বর্তমানকালে দেশজুড়ে আয়োজিত অধিকাংশ ওয়াজ-মাহফিলে প্রবেশ করেছে অর্থ, প্রচারণা, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি। এখানে বক্তার খুলুসিয়াত, আমলিয়াত ও রূহানিয়াতের কোন বালাই নেই। ফলে এসব মাহফিল থেকে আশানুরূপ সুফলও পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু শায়খে বর্ণভী রাহ.’র ওয়াজ-মাহফিল ছিল আর্থিক লেনদেন, যশ ও প্রচার প্রতিপত্তির সম্পূর্ণ উর্ধ্বে।
১৯৭১সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে বালাগঞ্জ উপজেলায় পাকবাহিনী শান্তি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে এক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। এতে এই অঞ্চলের অনেক শীর্ষস্থানীয় আলিম-উলামা উপস্থিত হন। সবাই বাধ্য হয়ে পাক সেনাদের প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু শায়খে বর্ণভী রাহ. ঈমানী জযবায় জুলুম-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, “মজলুম আদম সন্তানদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। তাদের ফরিয়াদ আল্লাহ ফিরিয়ে দেবেন না। অবিলম্বে জুলুম-নির্যাতন বন্ধ না করলে তোমাদের ধ্বংস অনিবার্য। দেশ দু’টুকরা হয়ে যাবে।” স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাক্কালে পাক বাহিনীর জুলুম-নির্যাতনের শিকার এতদ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল শায়খে বর্ণভী রাহ.’র বাড়ি। এলাকার যেসব সংখ্যালঘু তখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র, মূল্যবান অলংকার ও টাকা পয়সা বর্ণভী রাহ.’র কাছে আমানত রেখে গিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে তাদেরকে সেসব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
শায়খে বর্ণভী রাহ. অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল ও বিনয়ী ছিলেন। একদা জনৈক আলিম এসে তাঁকে বললেন যে, অমুক পীরসাহেব বলেছেন আপনার ঈমান নেই, কাফির হয়ে গেছেন! এতে তিনি বিন্দুমাত্র ক্ষুদ্ধ না হয়ে শান্ত কণ্ঠে বললেন, “এতো বড় একজন আলিম যখন বলেছেন যে আমি কাফির হয়ে গেছি, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন আমি আবার কলেমা পাঠ করে মুমিন হচ্ছি” বলেই তিনি কালেমা পাঠ করতে লাগলেন।
সমকালীন উলামায়ে কেরামের মধ্যে ছোটখাটো বিষয়ে মতানৈক্য থাকা স্বাভাবিক। হযরত আল্লামা ফুলতলীর পীরসাহেবের সাথে বর্ণভী সাহেবেরও কিছু বিষয়ে মতানৈক্য ছিল। একবার ফুলতলীর পীরসাহেব রাহ. বরুণা গ্রামে এক মাহফিলে তাশরীফ নিয়েছিলেন। তখন বর্ণভী সাহেব সফরে ছিলেন। ক’দিন পর বাড়ি এসে তিনি জানতে পারলেন যে, ফুলতলীর পীরসাহেব রাহ. বর্ণভী রাহ.’র বাড়ির সামনা দিয়ে মাহফিলে আসা-যাওয়া করেছেন। কিন্তু বর্ণভী রাহ.’র বাড়ির কেউ তাঁকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে নি। এতে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজ পুত্রদের বলতে লাগলেন, “আমার সন্তান হয়েও একজন আলিমের কদর বোঝলে না! বাড়ির সামন দিয়ে পীরসাহেব গেলেন আর তুমি তাঁকে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেলে না?” বলতে বলতে তিনি আফসোস করতে থাকলেন। ধর্মীয় কিছু গৌণ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতভিন্নতা দোষনীয় নয়। বলা হয়, “ইখতিলাফুল উলামায়ে রাহমাতুন” অর্থাৎ উলামাদের মতভিন্নতা রাহমাত স্বরূপ। কারণ, ইলমি ও বুদ্ধিবৃত্তিক এখতেলাফের ফলে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও চর্চা বৃদ্ধি পায়। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই পরমত সহিষ্ণুতা ও পরস্পর সম্মানবোধ বজায় রাখতে হবে। হযরত শায়খে বর্ণভী রাহ. এক্ষেত্রে ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আজীবন লালিত এ স্বপ্ন তিনি খুব সহজে পদ্যে প্রকাশ করেছেন-
মতভেদ আর দলাদলি/ পায়ের নিচে দিব ফেলি/ মধুর তানে তান ধরিব/ ইল্লাল্লাহর আযান/ পাগল হয়ে নামবো মোরা/ করবো পাগল বিশ্ব সারা/ জগৎটাকে জানাই দিব/ আমরা মুসলমান।
গাছবাড়ি জামে উলূম মাদরাসায় একদা একজন উস্তাযের কিতাব পড়ানো নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়। অধিকাংশ ছাত্র মুহতামিম সাহেবের কাছে উক্ত উস্তাযের নিকট থেকে কিতাবটি পাল্টানোর দাবি জানান; কারণ তারা উক্ত উস্তাযের পড়ানো নাকি বোঝতে পারেন না। বর্ণভী রাহ. ঐ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিলেন। মুহতামিম সাহেব বর্ণভী রাহ.’র মতামত জানতে চান। এতে বর্ণভী রাহ. মহাসংকটে পড়েন। কারণ, এতে তাঁর সুপ্ত রূহানী শক্তি প্রকাশ পাবার সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে উস্তাযের বিরুদ্ধে শেকায়েত করাও অনৈতিক। অবশেষে তিনি জবাব দিলেন যে, উস্তাযগণ যখন কিতাব পড়ান, তখন কিভাবে পড়াচ্ছেন, সেদিকে নজর না দিয়ে তিনি মহান আল্লাহর রহমতের ধ্যানে মগ্ন থাকেন, যাতে পঠিত ইলম তার অন্তরে স্থান পেয়ে যায়। সুতরাং উস্তাযের পড়ানোর ব্যাপারে বর্ণভী রাহ.’র কোন অভিযোগ নেই। তাঁর এ জবাব শুনে উস্তায-ছাত্র সবাই বিস্মিত হয়ে যান। এতে তাঁর সুপ্ত রূহানী শক্তি প্রকাশ হয়ে যায়। উস্তাযের মর্যাদা রক্ষার্থে তিনি তা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হযরত বর্ণভী রাহ. একদিকে মানুষের দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করতেন অপরদিকে মানুষকেও তিনি হাদিয়া দিতেন। বানিয়াচং উপজেলায় একবার এক দরিদ্র মহিলা হযরতকে একটি টাকা হাদিয়া প্রদান করেছিলেন। সাথে সাথে তিনি দরিদ্র মহিলাকে পাঁচটাকা দান করেছিলেন। বরুণা মাদরাসা এলাকার সন্নিকটস্থ গ্রামগুলোয় সকল বাড়িতেই মাদরাসা ছাত্ররা জায়গীর থাকতেন। এমনকি হতদরিদ্র ঘরেও একজন ছাত্র জায়গীর দেয়া হতো। হযরত শায়খে বর্ণভী রাহ. দরিদ্র জায়গীরদাতার দিনাতিপাতের ব্যাপারে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে খোঁজ খবর নিতেন। অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র জায়গীরদাতাকে ছাত্রের খাবারের সমমূল্য অর্থ অতি সংগোপনে দান করতেন।
ইলম অর্জনের সাথে সাথে রূহানিয়াতের উচ্চ স্তরে পৌঁছার ফলে মানুষ যখন আল্লাহ সোবহানা তা’য়ালার পূর্ণ সন্তুষ্টি লাভে উত্তীর্ণ হন; তখন আল্লাহর অনুগ্রহে সিদ্ধ পুরুষ কর্তৃক কেরামত প্রদর্শন সম্ভব হয়। শায়খে বর্ণভী রাহ. জীবনে অসংখ্য কারামত প্রদর্শন করে গেছেন, যার প্রত্যক্ষদর্শী দায়িত্বশীল ব্যক্তি এখনো জীবিত আছেন। আল্লাহর রহমতে তিনি পাগড়ি বিছিয়ে অনেকবার নদী পার হয়েছিলেন, পুলিশ বেশে রহমতের ফেরেশতা তাঁকে শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করেছিল, তাঁর দোয়ায় পুকুরের দূষিত পানি বিশুদ্ধ হয়েছিল, তাঁর দোয়ায় গভীর রাতে পথিমধ্যে উপস্থিত হিংস্র বাঘ লেজ গুটিয়ে চলে গিয়েছিল, ট্রেন থেমে যায়, পেছন দিকে চলে আসে ইত্যাদি অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা। হযরত লুৎফুর রহমান শায়খে বর্ণভী রাহ.’র অসংখ্য যোগ্য ছাত্রদের মধ্য থেকে বিপুলসংখ্যক সফল উস্তায ও অনেক রুহানিয়াতের উচ্চস্তর অর্জন করেছেন এবং তারা নায়েবে রাসূলের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
হযরত শায়খে বর্ণভী রাহ. ১৯৭৭ সালের ১৭ মে মঙ্গলবার এ পৃথিবীত থেকে মহান মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান। আল্লাহ তাকে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করুন। আমীন।
আরও পড়ুন- (আকাবির-আসলাফ ১৬) আল্লামা শায়খে গাজিনগরী রাহ.।