শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৬:০৩
Home / কবিতা-গল্প / দুই কিশোরের বিরত্বগাঁথা ইতিহাস

দুই কিশোরের বিরত্বগাঁথা ইতিহাস

Ehsan Bin _Komashishaএহসান বিন মুজাহির ::
বদর প্রান্তর। চলছে তুমুল লড়াই। একে একে শত্রুপক্ষের অনেক সরদার ও সাধারণ সৈন্য ভূশায়িত হলো। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রা. বলেন, আমি সামনের কাতারে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার দুই পার্শ্বে দুই কিশোর এমন ভঙ্গিমায় এসে দাঁড়ালো, তাদের হাব-ভাব দেখে মনে হলো ওরা খুব ক্ষিপ্ত। নির্দিষ্ট কাউকে যেন তারা খুঁজছে। হযরত আব্দুর রহমান রা. তাদের দেখে আফসোস করলেন, আর মনে মনে ভাবলেন এই দুই কিশোরের পরিবর্তে যদি আমার সমবয়সী আরও দু’জন যোদ্ধা থাকতো, তাহলে কতইনা উপকার হতো। ওরা এত ছোট, যুদ্ধে আমাদের সহযোগীতা করবে দূরের কথা, উল্টো তাদের খেয়াল রাখতে হবে। তাদের খেয়াল রাখা আমার জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। এরা কী আর করবে! তিনি এসব মনে মনে ভাবছেন, এমন সময় তাদের একজন আব্দুর রহমান বিন আউফ রা.কে জিজ্ঞেস করলো, চাচা! আপনি কি আবু জাহালকে চিনেন?
তিনি মুচকি হেসে বললেন- হ্যা, চিনি। কেন ?

তখন তাদের একজন বলল, চাচা! আমরা শুনেছি সে নাকি রাসুলের সা. এর কঠিন দুশমন এবং নামাযরত অবস্হায় তাঁর মাথার ওপর উটের ভূঁড়ি তুলে দেয়? আরও শূনেছি সে নাকি তার সন্ত্রাস বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে হুজুর সা. এর শরীর মোবারককে রক্তাক্ত করেছে? যে শরীর মোবারকে রোদ্রতাপ এমনকি মশামাছি বসাও হারাম, সে শরীর মোবারককে নাপাক অপবিত্র কাফেরদের দ্বারা রক্তাক্ত হবে আর আমরা বেঁচে থাকবো এটা কিভাবে হয়?

আল্লাহর কসম করে বলছি, আমাদের শরীরে রক্তের শেষবিন্দু থাকা পর্যন্ত আবু জাহালকে ছাড়বো না। শুধু একবার দেখতে পেলেই হল। হয়তো আমরা মরবো অথবা তাকে মারবো ইনশাআল্লাহ। আমার আম্মা আমাদেরকে শিয়ালের পরবিবর্তে সিংহ করে গড়ে তুলেছেন। খেলনার বদলে হাতে তীর বল্লম ও তরবারী তুলে দিয়েছেন। আমাদের আব্বা মদীনার আমর আনসারী রা.। তারই ছেলে আমরা দু’ভাই, মুয়াজ ও মায়াজ।

সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবেন আউফ রা. বললেন, তখন ওদের ঈমানদীপ্ত কথা ও জিহাদে উজ্জীবিত চেতনা ও শাহাদতের দৃপ্ত প্রতিশ্রুতির কথা শুনে আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় ও যারপরনাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ইতিমধ্যে দেখি আবু জাহাল ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। আমি কালবিলম্ব না করে তখনই কিশোরদ্বয়কে পরিচয় করে দিলাম- ওই যে দেখা যাচ্ছে সে হলো তোমাদের কাঙ্খিত শিকার আবু জাহাল।

আল্লাহু আকবার! তাদের ঈমান ও শপথের এতই তেজ; একমুহুর্তও তারা নষ্ট করতে চাইল না। কথা শুনামাত্রই বাজপাখির ন্যায় ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো আবু জাহালের ওপর। মুয়াজ এককোপ বসিয়ে দিলো ঘোড়ার ওপর, মায়াজ  গিয়ে আরেক কোপ বসিয়ে দিল আবু জাহালের পায়ে। আঘাতের সাথে সাথেই পঙ্গু হয়ে আবু জাহাল মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। মুয়াজ রা. আরো একটি আঘাত বসিয়ে দিলো। রক্ত ঝরতে ঝরতে আবু জাহালের দেহটি প্রাণহীন হয়ে গেল। তখনই আবু জাহাল মৃত্যুবরণ করলো। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লো ইথারে ইথারে। আল্লাহু আকবার!

দুই কিশোরদের ঈমানদীপ্ত ও বিরত্বগাঁথা ইতিহাসটি যুগযুগান্তর মুসলিম শিশু-কিশোরদের হৃদয়ে জিহাদী চেতনা ও ত্যাগের নজরানা চিরজাগরুক থাকবে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিষ্ট।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...