পশ্চিমারা সাদ্দামকে ইরান ও কুর্দিদের উপর লেলিয়ে দিয়ে পরে নিজেরা কুয়েত ফাঁদ পেতে তাকে গোটা দেশসহ ধংস করে।
ঠিক তেমনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে তুরস্ককে ব্যবহার করে অন্য কোন ফাঁদ পাতা হলো কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা বাড়িয়ে দিয়েছে তুরস্ক। গত শনিবার সিরিয়ার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই অভিযোগ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা নিয়ে আসাদ-মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের টানাপড়েনের মধ্যেই এই অভিযোগ এলো। এদিকে, সিরীয় সীমান্তে যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার পর গুলিতে নিহত রুশ পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওলেগ পেশকভের মৃতদেহ রাশিয়ার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে তুরস্ক। এছাড়া গত শনিবার সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিতে তুরস্ক সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আমেরিকা। তুরস্ক হয়ে আইএস জঙ্গিদের ইউরোপে প্রবেশ বন্ধ করতেই এই আহ্বান জানানো হয়েছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, আল-জাজিরা
বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, আইএস এবং আসাদবিরোধী অন্যান্য দলের লুট করা তেল এবং প্রাচীন শিল্পকর্মের বিনিময়েই তুরস্ক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ করেছে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর। তাদের দাবি, সিরিয়ায় যেসব মানবিক সাহায্য পাঠানোর দাবি করছে তুরস্ক, সেগুলোর মধ্যেই বিদ্রোহীদের জন্য অস্ত্র পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘বিদ্রোহীরা আমেরিকায় তৈরি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ব্যবহার করছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, এগুলো সৌদি আরবের অর্থে কেনা। বিদ্রোহীদের হাতে এগুলো পেঁৗছে দেয়ার কাজটি করেছে তুরস্ক।’ গত শনিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে আরো দাবি করা হয়, ‘তুরস্ক ইচ্ছাকৃতভাবেই সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্ত অশান্ত করে রাখে, যাতে সন্ত্রাসীরা সহজেই সিরিয়া থেকে ইউরোপে পালিয়ে যেতে পারে।’ এছাড়া তুরস্ক ভূখ- থেকে গত শুক্রবার রাতে লাতাকিয়া প্রদেশে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে অনেকগুলো হামলা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
ইদলিবে রুশ বিমান হামলা : নিহত ৪০
এদিকে, সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের একটি ব্যস্ত বাজারে রোববার রাশিয়ার বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় সকালে ইদলিব শহরের ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে আরিহা শহরের একটি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, রাশিয়ান ফাইটার জেট থেকে ক্লাস্টার বোমা বর্ষণ করা হয়েছে। ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক রামি আবদুর রাহমানের দাবি, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৬০ জন। এছাড়া আরো অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আরিহা শহরটি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা সমর্থিত নুসরা ফ্রন্টের দখলে রয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে আইএস দমনে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থনে সিরিয়ার বিমান হামলা পরিচালনা করছে রাশিয়া।
তুরস্কের ওপর আনুষ্ঠানিক অবরোধ রাশিয়ার
রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার প্রতিবাদে অবশেষে তুরস্কের ওপর অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন গত শনিবার ওই অবরোধ আদেশে সই করেন। নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এই অবরোধ আরোপ করা হচ্ছে।’
এই অবরোধের ফলে তুরস্ক থেকে রাশিয়ায় পণ্য আমদানি, তুরস্কের কোম্পানিগুলোর রাশিয়ায় কাজ করা এবং তুরস্কের নাগরিকদের কোনো রুশ কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ হারাতে হচ্ছে। এছাড়া ওই ডিক্রিতে দুই দেশের মধ্যে তালিকাভুক্ত বিমানের ফ্লাইটগুলোও বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাশিয়া তাদের ট্রাভেল কোম্পানিগুলোকে তুরস্কে ভ্রমণ প্যাকেজ পরিচালনা না করার নির্দেশ দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় তুরস্ক থেকে ‘বিশেষ কিছু পণ্য’ আমদানি এবং তুরস্কের প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোকে রাশিয়ার ভূখ-ে ‘বিশেষ তৎপরতা’ চালানো নিষিদ্ধ করা হলেও এই পণ্য ও তৎপরতাগুলো আসলে কী কী, তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রুশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ভাবছে রাশিয়া। এর মধ্যে কৃষ্ণ সাগর এলাকায় গ্যাস পাইপলাইনের নির্মাণকাজ এবং তুরস্কে রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে নির্মীয়মাণ একটি পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়াও যুক্ত হতে পারে।
রাশিয়ার এই নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরানের পর রাশিয়াই তুরস্কের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সহযোগী। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ জানিয়েছেন, তুরস্কের প্রায় ৯০ হাজার নাগরিক রাশিয়ায় কাজ করেন। তাদের পরিবারের সদস্যসহ রাশিয়ায় থাকা তুর্কিদের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এছাড়া প্রতি বছর প্রায় ৪৫ লাখ রুশ পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণে যান, যা দেশটির অর্থনীতির একটি বড় ভিত্তি। এছাড়া বিমান ভূপাতিত করার ঘটনার পরদিনই তুরস্কের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে রুশ সামরিক বিভাগ। এমনকি বিমান দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য স্থাপিত ‘হটলাইন’ও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।