শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ১০:৩৬
Home / অনুসন্ধান / মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা যু্বাইর আহমদ আনসারী আপডেট…

মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা যু্বাইর আহমদ আনসারী আপডেট…

(আনসারীনামা-১) বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৫, রাত ৭টা।

রশীদ জামীল ::

12246654_986225154768727_5853463222757960804_nঅপারেশনের আগেই ডাক্তার জানিয়েছিলেন, সাতদিন পর দেখতে হবে রিপলেসমেন্টের কী অবস্থা? এ ধরণের রিপ্লেসিং অপারেশনে ক্ষতটি একটু শুকিয়ে আসার পর অস্থিতে যখন টান পড়ে, তখন স্বাভাবিকভাবেই একটু সেটিং সমস্যা হয়। তখন আবার মাইনর একটা অপারেশন করে সেটিং ঠিক করে দিতে লাগে। গতকাল ছিল অপারেশনের অষ্টম দিন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নেয়া হল অপারেশন কক্ষে। (এটাকে অপারেশন কক্ষ না বলে সেটিং কক্ষও বলা যায়) ঘণ্টা দু’য়েক লাগিয়ে ডাক্তাররা তাদের ঘঁষামাজার কাজ যেটুকু করা দরকার, করলেন। তারপর ফিরিয়ে দিলেন কেয়ার ইউনিটে।

এর আগে বলা হয়নি। দোয়া করার জন্য রোগিকে জানা দরকার। রোগের ডিটেইলস না জানলেও চলে। তাই বিস্তারিতকরে সেভাবে বলা হয়নি। যে কারণে জিজ্ঞাসার অন্ত থাকছে না। আজ একটু বলি।

মুখে সামান্য ক্ষত ছিল তাঁর। সেটাও ছিল তিন যুগ আগের। গেলবার ব্যাংকক-ওয়ালারা উল্টা-পাল্টা অপারেশন করে কেঁচোকে সাপ বানিয়ে দিয়েছিল। দু’মাস আগে নিউইয়র্ক আসার পর দেখা গেল, ক্ষতটি গোশত থেকে হাড্ডি ষ্পর্শ করে ফেলেছে। স্পেশালিষ্টগণ জানালেন, আক্রান্ত হাড্ডিটি এভাবে থাকলে অপারেশন করে লাভ হবে না। সাময়িক সুস্থতা আসলেও কিছুদিন পর আবারো সমস্যা হবে।
-তাহলে কীভাবে কী করা লাগবে?
-হাড্ডিটি কেটে ফেলে দিয়ে নতুন হাড্ডি লাগাতে হবে
-হাড্ডি কোথায় পাওয়া যায়?
-পায়ে। পা থেকে হাড্ডি কেটে এনে জোড়া লাগানো হবে।
-শরীর থেকে হাড্ডি কেটে…
যাকে বলে সমাধানের ভেতরেই সমস্যা তৈরি করা। অবশ্য সেটা ছিল আমাদের বিবেচনায়। ডাক্তারদের কাছে এটি নাকি ডাল-ভাতের সাথে ভাজা মরিচের মত। সামান্য একটু ঝাল লাগে আবার মজাও লাগে।

ডাক্তার আরো যা জানালেন তার অর্থ, মানুষের শরীরে অতিরিক্ত কিছু রগ দেয়া আছে। ব্লকজনিত অপারেশনের ক্ষেত্রে সেই স্টক থেকে রগ এনে কাজ করা হয়। একইভাবে শরীরের কিছু অংশে দ্রুত বর্ধনশীল কিছু হাড্ডি আছে। ইন কেইস অব ইমার্জেন্সি সেখান থেকে হাড্ডি কেটে এনে কাজ করা যায়।

আল্লাহপাক মহান! পরম মমতায় মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি প্রক্রিয়াটাও ছিল অদ্ভুত! যেখানে ‘হও’ বললেই হয়ে যেত, বেলে-পলি-এটেল-দোয়াশ মাটির মিশ্রণে নিজের কুদরতি হাত লাগিয়ে তৈরি করলেন মানুষ। মর্যাদা দিলেন। থাকতে পাঠালেন পৃথিবীতে। সাথে দিলেন বিধান। দিলেন সকল উপকরণও। তিনি স্রষ্টা, তিনি জানেন তাঁর নিজহাতে তৈরি বান্দারা অসুস্থ হলে অপারেশনের টেবিলে হাড় বা রগ সমস্যায় পড়বে। তাই শরীরে আগে থেকেই অতিরিক্ত কিছু রগ আর হাড় দিয়ে রেখেছেন! ও মানুষ! তবুও তোমরা বুঝলে না! তবুও তোমরা জাগলে না!

প্রাসঙ্গিকভাবে জানিয়ে দেয়া যায়, আমরা মানুষরা নানা অনিয়ম করে, বিশেষত খাওয়া ও ঘুমের অনিয়ম করে রোগ-বালাই ডেকে আনি। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী মানুষের শরীরের অভার আশি পারসেন্ট রোগের জন্ম হয় খাবার থেকে। এর পরেও এই দুনিয়ার মানুষ খাবারের পেছনেই ঘুরে।

আনসারীর মুখের ইনফেকশন অপারেশন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাড়টি কেটে ফেলে ডান হাটু এবং গোড়ালির মাঝামাঝি অংশ থেকে হাড় কেটে নিয়ে ওখানে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে। ১২ ঘণ্টা তো আর এমনি এমনি লাগেনি! গলা থেকে উপরের অংশকে নিশ্বাস-জনিত ডিউটি থেকে সম্পূর্ণ ফ্রি করেই করা হয়েছিল অপারেশন। যে কারণে উনার পক্ষে কথা বলার ক্ষমতা ছিল না। ডাক্তারও চাননি সেটা। কথা বলতে পারলে বরং সমস্যা হত। গতরাত নয়টার দিকে যান্ত্রিক সাপোর্টে কথা বলালেন। অপারেশনের পর এই প্রথম স্বকণ্ঠে কথা বললেন তিনি। এটি একটি ভাল খবর।

নিউইয়র্ক হল ওয়ার্ল্ড ভিজিয়েস্ট নগরী। ব্যস্ত এই নগরিতে সবাই ব্যস্ত। যার যার অবস্থান অনুযায়ী ব্যস্ততা সবারই আছে। কেউ ফ্রি নেই এখানে। আবার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ছাড়া আনসারীও এখানে একা। সঙ্গত কারণেই তাঁর কাছে কাউকে থাকা উচিত। আবার দশ/বারো জনের মিছিলের বিরুদ্ধে ডাক্তারদের কড়া আলটিমেটাম চলছে। ত্রিমুখি সমস্যা বলা যায়। যে কারণে মাওলানা রফিক আহমদ রেফাহী এবং ইকবাল আহমদ মাহবুব, দু’জনে পরামর্শ করে একটা স্ক্যাজুয়েল ঠিক করেছিলেন। যার অংশ হিশেবে অপারেশন চলাকালীন আমাকে নিউইয়র্কের কিছু দায়িত্ব দিয়ে উনারা ছিলেন সাথে। ১৭ তারিখ ছিল অপারেশন। ঠিকটাকভাবে সবকিছু হওয়ার পর ১৮ তারিখ আমাকে সেখানে ডেকে নিয়ে উনারা চলে আসেন নিউইয়র্ক। আমি ছিলাম ২০ তারিখ পর্যন্ত। পেটের ধান্ধাজনিত কারণে যেহেতু আমারও সেখানে পড়ে থাকার উপায় ছিল না(অবশ্য দরকারও ছিল না) তাই সেখানে প্রতিদিন খোঁজ-খবর নেয়ার দায়িত্ব দিয়ে আসা হয়, বয়সকে পরাজিত করা ষাটোর্ধ তরুণ মীর হুসাইন শেখ খুরসান এবং এনাম আহমদের উপর। তারা আন্তরিক পরিচর্যায় কমতি করেননি। তাছাড়া অভিভাবকত্বে যথারীতি ড, আব্দুল মালেক সাহেব তো আর ছিলেনই। রাতের দেখাশোনার জন্য নর্থপেন মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু রাশেদ এবং মাওলানা মোজ্জামিল বিন জাকির, শরিফ উদ্দিন, ফয়েজুল হক, আলাউদ্দিনসহ অন্যরা যারা প্রতিদিন কষ্ট করছেন, ফোনে নিয়মিত খোজ-খবর রাখছেন মুফতি লুৎফুর রহমান কাসিমি এবং হাফিজ আহমাদ আবু সুফিয়ান, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

গতকাল কিছুক্ষণের জন্য পেনসিলভেনিয়া হসপিটাল হয়ে গিয়েছিল ওয়াজ মাহফিল। কাল ওখানে ছিলেন মাওলানা রফিক সাহেব এবং ইকবাল মাহবুব। জনাব ইকবাল মাহবুব খুব জলদি মানুষের সাথে মিশে যেতে পারেন। এই ক’দিনে পেনসিলভেনিয়া হসপিটালের ডাক্তার-নার্সদের সাথে মোটামুটি ভালোই খাতির জমিয়ে তুলেছেন। গতকাল রাতে রোগিকে ঘিরে ছিলেন ডাক্তার নার্সরা। ছিলেন ডাক্তার আব্দুল মালিক সাহেব, ডিউটি ডাক্তার, ডিউটি নার্সবৃন্দ। অন্য সেক্টরে ডিউটি থাকা একটি মুসলিম নার্স মেয়েও সালাম দিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো। মজমা জমে যাওয়ার পর এই রোগী যে একজন সুবক্তা, পপুলার ইসলামিক স্পিকার, ইউটিউবে তাঁর অনেক লেকচার রয়েছে, সেটা তাদেরকে মনে করিয়ে দেয়া হল। মাহবুব সাহেব বললেন, উনি অনেক ভাল বলেন। তোমরা কি শুনতে চাও?
তারা শুনতে চাইলো।
তিনি দেরি না করে সাথে সাথে ইউটিউবে গিয়ে আনসারীর একটি ওয়াজ চালু করে দিলেন। তারা সবাই তন্ময় হয়ে শুনল। বেশ কয়েক মিনিট চলল ডিজাটাল এই ওয়াজ মাহফিল। তারা শুনছিল আর বিস্মিত হচ্ছিল। একবার তাকাচ্ছিল বেডে শুয়ে থাকা রোগি আনসারীর দিকে আর আরেকবার মোবাইল স্কিনের আনসারীর দিকে। আর বারবার একটি বাক্যই উচ্চারণ করছিলো- ওয়াও! এক্সেলেন্ট! আমার বিশ্বাস কালকের পর থেকে এই রোগির প্রতি তাদের যত্নটা আরেকটু বেড়ে যাবে।

হাসপাতালে থাকতে হবে আরো সপ্তাহখানেক। তারপর ডাক্তারি ট্রিটমেন্ট এবং নিয়মানুবর্তীতার ভেতর থাকতে হবে সপ্তাহ/ দুই সাপ্তাহ।। তারপর একদম নির্ভেজাল রেস্ট দরকার মাসখানেক। এবং তারপর অন্তত চার/ছয় মাস থাকতে হবে মোটামুটি রেস্টে। বেশি লোকজনের ঝামেলা থেকে দূরে। এই হল অবস্থা। তাই উনার সাথে এবং উনার ফ্যামিলির সাথে কথা বলে ঠিক করা হয়েছে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর কিছুদিন রাখা হবে কোনো একটি নার্সিং হোমের আন্ডারে। একটু শক্ত-সাক্ত হয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন নিউইয়র্কে, রেখে দেওয়া হবে রেস্টের জন্য। তারপর দেশবাসীকে জানতে না দিয়ে দেশের বিমানে উঠিয়ে দেয়া হবে!( দেশের শুভাকাঙ্খিগণ রাগ করলেও কিচ্ছু করার নাই। আপনারা জেনে ফেললে দলে দলে এসে দেখা করে অশেষ সওয়াব হাসিল করতে থাকবেন। আর ওদিকে দেখা দিতে দিতে আর কথা বলতে বলতে রোগীর অবস্থা আবার সাড়ে এগারোটা বেজে যাবে। কাজটা কি ঠিক হবে?

লেখক: কথা সাহিত্যিক, গ্রন্থাকার ও চিন্তক।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...